গল্পঃ শেষবেলা। অণুগল্প

গল্পঃ শেষবেলা।

অণুগল্প

Tania

বৃদ্ধাশ্রম থেকে সমিরের বাড়িতে তার মায়ের জিনিসগুলো পাঠিয়েছে। মা গত হয়েছেন দিন হলো। প্রায় একবছর ছিলেন তিনি সেখানে। সমিরের কাছ থেকে তনু(সমিরের স্ত্রী) জিনিসপত্র গুলো নিয়ে স্টোররুমে রেখে দিল। আপাতত এসবের কোনো দরকার নাই তাদের। ঘরে আবর্জনার স্তুপ হয়ে থাকার চেয়ে স্টোররুমে থাকায় ভালো।

মাঝরাতের দিকে সমির বুঝতে পারে তার বুকে ব্যথাটা বেড়েছে। এইটা নতুন না। তার মা মরার পর থেকেই এই ব্যথাটা অনুভব করছে সে। জগটা চেক করে দেখে পানি নাই। তাই সে তনুকে ডাক দেয়।

তনু একটু পানি এনে দাও তো।

দেখতে পাচ্ছো না ঘুমাচ্ছি। নিজে গিয়ে খেয়ে নাও।

কোনো উপায় না পেয়ে নিজে উঠে আসে। ডাইনিং টেবিলে বসে এক গ্লাস পানি খেয়ে ঘরের দিকে হাটা ধরে। কি মনে করে যেন আবার থেমে গিয়ে স্টোর রুমের দিকে হাঁটতে শুরু করে।  

সেখান গিয়ে তার মায়ের থলেটার দিকে চোখ পরে। একটা কাপড় দিয়ে মোড়ানো আছে সবকিছু। সেই জিনিস গুলো বাচ্চাদের ঘরে এনে রাখে। আসলে আগে এটা তার বাবা মায়েরই রুম ছিল। বৃদ্ধাশ্রম পাঠানোর পর থেকে এই রুমে তার ছেলে মেয়ে থাকে।

বৃদ্ধাশ্রমে থাকাকালিন তেমন খোঁজ নিত না সে তার মায়ের। তবে জিনিস গুলো সে স্টোররুমে ফেলে রাখতে পারলো না। হয়তো বিবেকে বাঁধা লাগছিল।

পরেরদিন তার ছেলে মেয়ে একটা ফ্রেম সহ ছবি নিয়ে তার কাছে দৌড়ে আসে।

বাবা দেখো দাদিমা। দেখো বাবা।

বাচ্চাদের হাত থেকে ছবিটা নেই সে। তার মা বাবার ছবি। অনেক আগের ছবিটা। সাথে একটা বাচ্চাও আছে। সেটা আর কেউ না। সে নিজেই। ছবিটার দিকে এক পলক তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো

কোথায় পেলে এইটা?

আমাদের ঘরে। আসো দেখাচ্ছি।

টানতে টানতে নিজেদের ঘরে নিয়ে এলো। তার মায়ের জিনিসপত্র গুলো এলোমেলো হয়ে আছে। হয়তো বাচ্চারা কৌতুহলবসত এই অবস্থা করছে। তাড়াতাড়ি সব গুছিয়ে রাখতে হবে নয়তো তনু চেচামেচি শুরু করে দেবে।

  সব এক জায়গায় করার সময় তার চোখ পরে একটা নীল ডায়রির দিকে। ডায়েরিটা খুলতেই প্রথম পৃষ্ঠাতে তার ছোটবেলার ছবি দেখতে পায়। ডায়েরিটা হয়তো তার মায়ের। সে সেটা নিজের কাছে রেখে বাকি সবকিছু গুছিয়ে রাখে।

অনেক রাত হয়েছে। সবাই ঘুমিয়ে পরেছে। তনুও ঘুমাচ্ছে। সমির আস্তে করে উঠে তার মায়ের ডায়েরিটা নিয়ে বসলো। কয়েকটা পাতা উল্টে পড়তে শুরু করলো।

এই বাড়িতে বউ সেজে এসেছিলাম প্রায় ১৬ বছর বয়সে। কেবল এসএসসি পরিক্ষা শেষ করতে না করতেই পরিবার থেকে বিয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কেবলই বড় হয়ে উঠছিলাম। চোখে হাজারটা স্বপ্ন। বড় হওয়ার,  
 

নিজের পায়ে দাঁড়ানোর, নিজেকে যোগ্য প্রমান করার। কিন্তু ভাগ্য সাথ দেয়নি। মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে ছিলাম। এতো স্বপ্ন পূরনের সামর্থ্য কোথায়? তিনবেলা নিশ্চিন্তে খেতে পেতাম এটাই অনেক। আমার পরেও আমার আরো দুটো বোন ছিল। সবার কথা বড় হয়েছি, আর কতো খরচ চালাবে বাবা। আমার ছোট বোনদেরও তো বিয়ে দিতে হবে। তাছাড়াও আমি দেখতে সুন্দর ছিলাম না। 

 গায়ের রংটা হালকা চাপা। আর আমার জামাই ছিল ফর্সা। উচ্চতার দিক দিয়েও পারফেক্ট। বয়স ২৫। সে একজন ফার্মেসিস্ট ছিল। বেসরকারি চাকরি তবুও চল্লিশ হাজার টাকা বেতন। আমার পরিবারের কাছে এর থেকে ভালো প্রস্তাব আর হতো না। আমি বিয়েতে না বললে তারা বলে তোর মতো মেয়েকে বিয়ে করতে চেয়েছে এটাই অনেক। এমন ছেলে নাকি আমি জীবনেও পাবো না।

আমি এমনিতেও দেখতে খারাপ। তাই মাথার বোঝা হয়ে ছিলাম। সেটা যতো তাড়াতাড়ি নামানো যায় ততোই মঙ্গল। তাই আমার কথা না শুনেই বিয়ে দিয়ে দেই। বান্ধবীদের সামনে গর্ব করে বলতাম আমার পরিবার কখনোই বাল্য বিয়ে দেবে না। তারা আমার স্বপ্ন পূরন করবে। 

তাই বিয়ের দিন লজ্জায় তাদের মুখ দেখাতে পারিনি। তাদের সাথে কোনো কথাও বলিনি। মনের মধ্যে একটা রাগ হয়েছিল। নিজের প্রতি, পরিবারের প্রতি। অল্প না অনেকটাই রাগ হয়েছিল। বিদায়কালে কারো সাথে কোনো কথাও বলিনি।

একদিকে নিজের স্বপ্ন গুলোকে বলি দেওয়ার দুঃখ অন্যদিকে নিজের পরিবারের প্রতি রাগ সবকিছু মিলে যেন ঘৃণায় পরিনত হয়েছিল। যাকে বিয়ে করেছি তার প্রতি ঘৃনা জন্মে গেছিল।

বাসর রাতে ফল কাটার চাকুটা নিজের বালিশের নিচে চাপা দিয়ে রাখি। সে ঘরে এসে বিছানায় বসতেই চাকুটা বের করে নিজের হাতের উপর ধরেছিলাম। আমাকে এভাবে দেখে সে অনেকটা ভয় পেয়ে গেছিল। হয়ে দাড়িয়ে ছিল। কিছুক্ষণ পর আমার হাত থেকে চাকুটা কেড়ে নিতে আসতেই আমি বলেছিলাম

আমাকে স্পর্শ করার চেষ্টা করলে আমি কিন্তু হাত কেটে দেবো।

সে আমাকে আস্বস্তি দিয়েছিল আমাকে আমার পারমিশন ছাড়া স্পর্শ করবে না। তারপর আস্তে করে আমার হাত থেকে চাকুটা নিয়েছিল। সেই রাতে আমাদের আর কোনো কথা হয়নি। 

পরেরদিন সকালবেলা ঘুম থেকে জেগেই তাকে ডেকে একটা রিকুয়েষ্ট করছিলাম। অবশ্য গত রাতের অমন আচরনের পর এইটা মানায় না। তবুও এটা ছাড়া যে আমার উপায় ছিল না। আমার ডাকে অনেকটা বিরক্তবোধ নিয়ে ঘুম থেকে উঠে।

কি?

একটা রিকুয়েষ্ট করতাম।

বলো।

দেখুন সরাসরি বলছি। আমি আর আমার বাবার বাড়ি যেতে চায় না। এমনকি আজও না। প্লিজ আমাকে হেল্প করুন প্লিজ।

এইটা বিয়ে বাড়ি। এখানে আমাদের কোনো কথা চলবে না। বড়রা যা ভাববে তাই করতে হবে।

আপনিও তো বড়। এমন কি আমার থেকে অনেক বড়।

আমার কথায় একটু দাঁত কেলিয়ে হেঁসে জিজ্ঞেস করেছিল

তার বদলে আমি কি পাবো?

 

যা চাইবেন তাই।

সত্যিই তো?

,,,,,উম,,, হুম।

কিছুক্ষণ পর বাইরে থেকে এসে আমাকে বলেছিল প্যাকিং করো।

আমি শুনে একটু অবাক হয়েছিলাম। প্যাকিং কেনো করবো? আমি তো আর বাড়ি যেতে চায় না। তাদের মুখ অব্দি দেখতে চায় না। আমাকে বলেছিলছোট মানুষ ছোট মানুষের মতোই থাকো। আর যা বলছি তা করো।সে আমাকে নিয়ে পাবনায় রওনা দেয়। আসলে সে পাবনায় জব করতো। আমার জন্য সবাইকে মিথ্যে বলেছিল। আর্জেন্ট কাজের বাহানা দিয়ে আমাকে হেল্প করেছিল। কেনো যেতে চাই না, কি সমস্যা এমন কোনো প্রশ্ন করেনি।

তারপর শুরু হয় আমাদের সংসারের জীবন। মানুষ দেখানো স্বামী স্ত্রী ছিলাম। আমাদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক ছিল না। তবুও তার সংসার আমাকেই সামলাতে হতো। ছোট মানুষ আমি। কোনোদিন রান্না করতে গিয়ে হাত জ্বালিয়ে ফেলতাম, কোনোদিন আবার তারকারি, ভাত। 

 তবে আস্তে আস্তে সামলে নিয়েছিলাম। তিনি আমার রান্নার তেমন গুন গাইতেন না। অবশ্য রান্না ভালো হলে তো মানুষে গুন গাই। চলার মতো রান্নার আর কিই বা প্রশংসা করবে? তেমনি সে কখনো কোনো অভিযোগও করতো না। কতোদিন দেখেছি রান্না মুখে তোলার যোগ্য না,

 তবুও সে আমাকে কিছু বলতো না। হয় চুপচাপ খেয়ে উঠে যেতো, না হয় খেতো না। শুক্রবারের দিন আমাকে সাহায্য করতো। কাজ থেকে আসার সময় খুবই অল্প দামের গিফ্ট নিয়ে আসতো। কখনো বেলি ফুলের মালা, কখনো চুড়ি, কখনোবা টিপের পাতা। ছোট ছিলাম। সেগুলোই অনেক দামী মনে হতো। আমার অনেক ভালো লাগতো। সে যখন অফিস থেকে ফিরতো, আমি তার হাতের দিকে তাকিয়ে বসে থাকতাম।

আমাকে অনেক কেয়ার করতো। কখনো কটু কথা বলতো না। কোনো কোনোদিন আবার রাতে মাথায় তেল দিয়ে দিত। তার এই ছোট ছোট কেয়ার গুলো খুব ভালো লাগতো আমার। হয়তো তার কেয়ার গুলোই আমাকে তার দিকে অাকর্ষন করতো। একটু একটু করে তার প্রতি দূর্বল হয়ে পরছিলাম। রাতে সে যখন ঘুমিয়ে পরতো আমি জেগে জেগে তার মুখ দেখতাম। 

মায়া কাজ করতো একটা। বুঝতে পেরেছিলাম আমি তার প্রেমে পরে গেছি। অফিস যাওয়ার পর যেকোনো বাহানায় বার বার ফোন করতাম। কারন জিজ্ঞেস করলে বলতাম আমার বাড়িতে একা থাকতে ভয় করে।

আমার ছেলে মানুষি গুলো দেখে সে শুধু হেসে মাথায় একটা টোকা দিয়ে বলতো পাগলি। আমিও তার সাথে তাল মিলিয়ে হাসতাম। ভালো লাগতো তাকে হাসতে দেখলে। আর যখন বুঝতে পারতাম আমার জন্য হাসছে তখন আরো বেশি ভালো লাগতো।

আমাদের মাঝে সবকিছু ঠিকঠাক হতে প্রায় বছরখানেক সময় লেগেছিল। ততোদিনে সবকিছু সামলাতে শিখে গেছিলাম। আর তেমন রান্না জ্বলতো না। ভালোই রান্না হতো। কিন্তু কোনোদিন প্রশংসা করতো না।

বিয়ের অনেকদিন পরও বাচ্চা না হওয়ার কারনে আমরা ডাক্তারের কাছে যায়। ডাক্তার বাচ্চা নেওয়ার ইচ্ছেটাকে মুছে ফেলতে বলেছিল। বাচ্চা হবে না তা না, অনেক রিস্ক আছে। 

 তার থেকে না নেওয়ায় ভালো। প্রবলেমটা আমার ছিল। উনিতো সরাসরি না বলে দিয়েছিলেন। তবে আমার জিদের বসে নিতে বাধ্য হয়েছিল। অবশ্য এর জন্য অনেক কষ্ট করে তাকে রাজি করাতে হয়েছিল। প্রায় দুইদিন আমি না খেয়ে ছিলাম রাগ দেখিয়ে। বাধ্য হয়ে বলেছিলেন নেবেন বাচ্চা।

 

নয় মাস পার করেছিলাম অনেক কষ্টে। আমি একায় কষ্ট করিনি উনিও করেছিলেন আমার সাথে সাথে। অফিস সামলিয়ে সংসার সামলাতেন। আমাকে তেমন কাজ করতে দিতেন না। সব কষ্ট যেন মুছে গিয়েছিল সমিরের মুখ দেখে।

ডেলিভারির পর আমার নাকি তিনদিন জ্ঞান ফিরে নি। আইসিইউতেও নেওয়া হয়েছিল আমাকে। জ্ঞান ফিরার পর একজন নার্স আমাকে বলেছিল

আপনি সত্যিই লাকি যে এমন একজন স্বামী পেয়েছেন। সবসময় আপনার সিটের পাশে বসে থাকতো। আপনার সেবা করতো।

বাড়ি আসার পর আমিও সেটা বুঝতে পারি। এক হাতে আমাকে সামলাতো, অন্য হাতে সমিরকে। বিছানা থেকে উঠতে দিতো না। সেইদিন বুঝতে পেরেছিলাম সত্যি বাবা মা ঠিক বলেছিল। এর থেকে বেটার ছেলে আমি সারাজীবন অপেক্ষা করলেও পেতাম না।

ডেলিভারির পর যেন শরীরের শক্তি কমে গেছিল। বেশি ভারি কাজ করতে পারতাম না। একটুতেই নিজেকে দূর্বল ফিল করতাম। তবে আমার শক্তি উনি হয়েছিলেন। শারীরিক মানসিক সব দিক দিয়ে আমাকে সাপোর্ট করতেন।

আস্তে আস্তে সমির বড় হতে থাকে। বাবা ছেলে মিলে বেশ খেয়াল রাখতো আমার। আমার হাত ধরে উনি বলতেন

আমার হাত দুটো কখনো ছেড়ো না।

আমি হয়তো আমার কথা রাখতাম। তবে সে নিজেই ছেড়ে দিয়েছিল আমার হাত। আমাকে একা ফেলে চলে যায়। সার্থপর সে। কি করে একা চলে যেতে পারে? ছেলের বাবাকে হারিয়ে ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে সবকিছু সহ্য করে নিয়েছিলাম।

তবে ধিরে ধিরে ছেলেটাও পর হতে শুরু করেছে। তার বিয়ে দেওয়ার পর ভেবে ছিলাম একটু নিশ্চিন্তের জীবন কাটাবো। ছেলে আমাকে এমন নিশ্চিন্তের জীবন দিয়েছে ভাবার কথা নয়।

প্রতি রাতে সে তার বউয়ের সাথে ঝগড়া করতো আমাকে নিয়ে। অশান্তি বেড়েই চলছিল। তাই আমি নিজে গিয়েই তাকে বলেছিলাম আমাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসতে।

বাড়ি থেকে আসতে মন চাইছিল না। এটাতো সেই বাড়ি যেখানে আমরা সারাজীবন একসাথে কাটাতে চেয়েছিলাম। এটাতো আমাদের তিলে তিলে গড়ে তোলা সংসার। কিভাবে ছেড়ে থাকবো এসব? অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে যে এই বাড়ির প্রতিটা ইটের সাথে। কি করে ভুলে যাবো?

কি আর করবো। ছেলের সুখের জন্য এটুকুতো করতেই পারি। সব মায়া কাটিয়ে চলে এসেছি সেখান থেকে। সত্যি মায়ায় পরে গেছিলাম আমি। সংসারের মায়ায়। যে সংসার থেকে একসময় পালানোর চেষ্টা করতাম, সেই সংসার আমাকে তার সাথে বেধে ফেলেছে। তাই তো ছেড়ে আসার সময় অনেক কষ্ট হচ্ছিল।

জানেন এখানের ঘর গুলো অনেক ছোট। পরিবেশটা অনেক অগোছালো। আপনি তো জানেনই আমি একদম অগোছালো পরিবেশে থাকতে পারি না। তবে চিন্তা নাই মানিয়ে নিয়েছি। ছেলেটা আমাকে একবারও দেখতে আসে না। তার মুখটা দেখতে খুব ইচ্ছে করে৷

জানেন ছেলেটা অনেক বড় হয়েছে। ছেলে মেয়েও হয়েছে।

 

আমার কাছে তার কোনো ফটো নাই। সেই ছেলেবেলার মাত্র দুইটা ফটো আছে। বড় হওয়ার পর তো সে আমার সাথে ফটো তুলেই না। আমাকে কারো সামনে নিয়ে যেতো

না। তাদের নাকি লজ্জা করতো। আমিও তাদের আর লজ্জা দিতে চাইতাম না। তাই কখনো তার সাথে ছবি তোলার ইচ্ছের কথা বলা হয়নি।

কিছুদিন থেকে শরীরটা ভালো যাচ্ছে। ডেলিভারির পর যে মাজার ব্যথাটা হতো সেটা আবার বেড়েছে৷ ঠিক মতো দাড়াতেও পারি না। মনে হয় আপনার কাছে যাওয়ার সময় হয়ে এসেছে। জানি না আর কতোদিন আপনার থেকে দূরে থাকবো। তবে মনে হচ্ছে খুব শীঘ্রই আপনার কাছে চলে যাবো। যাওয়ার আগে ছেলেটার মুখটা যদি একবার দেখে যেতে পারতাম....!!!

ডাইরিটা বন্ধ করে সমির মাটিতে লুটিয়ে পরে। চিৎকার করে কাঁদতে থাকে। তার কান্না শুনে তনুও জেগে যায়।

এই কি হয়েছে তোমার? কাঁদছো কেনো?

তুমি আমার সামনে থেকে যাও। তুমি আমার মাকে আমার থেকে কেড়ে নিয়েছো। যাও। আমি তোমার মুখ দেখতে চায় না।

নিজের ছেলে-মেয়েদের মুখের দিকে তাকিয়ে তারা একসাথে আছে। তবে কোনো একটা অনুশোচনা তাদের কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে।

(সমাপ্ত)

মানুষ বড় আজব। কথায় আছে না দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম বুঝে না। পরে নিজেকে দোষ দেওয়া ছাড়া আর কোনো পথ থাকে না। বাবা মা পরিবারের বোঝা না, তারা পরিবারের অন্যতম সদস্য। এই পৃথিবীতে যাদের বাবা মা নাই তারাই বোঝে মা বাবা হারানোর কষ্ট।

ছোটকালে তারা আমাদের অনেক কষ্ট করে বড় করে। আমাদের কি উচিত বৃদ্ধ বয়সে তাদের দূরে ঠেলে দেওয়া? বিবেকে বাধে না আমাদের? যাদের কারনে এই পৃথিবীতে আসতে পারি তাদেরকেই কষ্টের দিকে ঠেলে দিই নিজে সুখে থাকার জন্য? কেনো? তারা আপনার পরিবারে থাকলে কি এমন ক্ষতি হয়ে যাবে?

আজ আপনি তাদের বৃদ্ধাশ্রমে পাঠাচ্ছেন, আপনারও তো সন্তান আছে নাকি? নিজেও তো একদিন বৃদ্ধ হবেন?

মনে রাখবেন পাপ কখনো বাপকেও ছাড়ে না।

গল্পঃ শেষবেলা। অণুগল্প গল্পঃ শেষবেলা। অণুগল্প Reviewed by NINDOOK LIFE on September 09, 2020 Rating: 5

No comments:

Powered by Blogger.