বিষন্ন_বিকেল Part-02 |
বিষন্ন_বিকেল
part:2
Tania
সন্ধ্যার দিকে বাবা ও মামুনি হাসপাতাল থেকে আসে। আমি বাবাকে জিজ্ঞেস করলাম
বাবা কেমন হয়ে আছে সে?
অবস্থা খুব একটা ভালো না।(বাবা)
তোর তো খুশি হওয়ার কথা। অনেক খুশি হয়েছিস? দুধ দিয়ে আমি কাল সাপ পুষেছি। তার মাসুল আমাকে দিতে হচ্ছে৷ আর কতো ক্ষতি করবি আমাদের?
তুমি এসব বন্ধ করো তো। আমার ভালো লাগছে না। (বাবা)
হ্যা আমিই চুপ থাকি। তোমরা তো সবাই চাও যেন আমি মরে যায়। আজ আমার ভাইটা পুলিশ না হলে তোমার মেয়েকে জেলে থাকতে হতো। তাকে জেলে পাঠানোই উচিত হতো। এমন একজন খুনিকে বাড়িতে রাখায় ভুল।
কেনো মারতে গেলি তুই তাকে?(বাবা)
বাবা ও আমাকে জোর করে....। নিজেকে বাঁচানোর জন্য vase টা তুলেছিলাম। কিন্তু কিভাবে কি হয়ে গেলো বুঝতে পারিনি।
তাকে মারার চেষ্টা করে এখন সাধু সাজা হচ্ছে। সব দোষ তার ঘাড়ে চাপিয়ে দিচ্ছে। তোর মতো মেয়ে আমি জীবনেও দেখিনি।
একটু চুপ করবে??(বাবা)
তোমার লাই পেয়েই সে মাথা চড়েছে। দাড়াও নূরকে সুস্থ হতে দাও। আমি নিজে তাকে দিয়ে পুলিশের কাছে complain করাবো। আমিও দেখতে চাই তুমি তোমার আদরের মেয়েকে কিভাবে বাঁচাও?
এইটা বলে মামুনি চলে গেলো। আমি তখনো নিচ দিকে মুখ করে দাড়িয়ে আছি। বাবা আমার কাঁদে হাত রেখে বললো
তুই যা বলছিস সব সত্যি?
হ্যা বাবা। আমাকে বিশ্বাস করো তুমি....
যা হয়েছে কাউকে বলিস না। পুলিশকে জানানোর ও দরকার নাই। নূরের থেকে একটু দূরে থাকিস। আর চিন্তা করিস না। আমি সব সামলে নেবো।
বাবা নিজের ঘরে চলে গেলো। অশ্রুভরা চোখ দুটো অপলকভাবে শুধু বাবার দিকেই চেয়ে রইল। অনেক কিছু আশা করেছিলাম। ভেবেছিলাম কেউ সাপোর্ট না করলেও বাবা অন্তত করবে। আর যাইহোক সে তো আমার বাবা। কিন্তু ভুল ছিলাম আমি। কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকার পর মুখের কোণে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটে উঠলো। নাহ, বাবার প্রতি না, নিজের প্রতি। কতো কি আশা করেছিলাম আমি। ভুলেই গেছিলামআমার আশা করার অধিকার নাই। নিজের হাত দিয়েই চোখের পানি মুছলাম। আমার চোখের পানি মুছিয়ে দেওয়ার মতো কেউ নাই।
পরেরদিন সকালবেলা মামুনি একটা লাল কালারের শাড়ি এনে আমার সামনে রাখলো।
এইটা বিকেলে পরবি।
কেনো?
পারছি না আমি তোকে সহ্য করতে। আমাকে এবার মুক্তি দে। আর বিদায় হ আমার বাড়ি থেকে।
বিকেল বেলা কয়েকজন লোক আমাকে দেখতে এলো। আজকের মতো আমি জীবনেও সাজিনি। হয়তো সাজার সু্যোগ পায়নি। আমাকে বাইরে এসে বসানোর পর শুরু হলো প্রশ্নোত্তর। একটার পর একটা প্রশ্ন করেই যাচ্ছে। আর আমি চুপচাপ উত্তর দিয়ে যাচ্ছি। যার বিয়ে l mean বর আসেনি। উনার নাকি কি কাজ আছে। তার ফ্যামেলি জানিয়ে গেলো আমাকে তাদের পছন্দ হয়েছে। এবং বিয়ের দিনও ঠিক করে গেলো।
রাতে আমি বাবাকে গিয়ে বললাম
বাবা এসবের দরকার কি এখনই ছিল?
বাবাকে থামিয়ে মামুনি উত্তর দিল
আর কতোদিন বাবার ঘরে বসে বসে খাবি? নিজের একটু খারাপও লাগে না। তোর ভাগ্য ভালো যে এমন ঘর থেকে প্রস্তাব এসেছে।
সবসময় বেশি কথা না বললে হয়না তোমার? (আমার দিকে তাকিয়ে) দেখ মা বড় হয়েছিস তুই। মেয়ের বিয়ে দেওয়া বাবা মায়ের দায়িত্ব। তৃষাও তো বড় হলো নাকি?
আমি আর বাবাকে কিছু বললাম না। এমনিতে এই বাড়িতে থাকার কোনো ইচ্ছা নাই। যতো তাড়াতাড়ি এখান থেকে দূরে কোথাও যেতে পারবো ততোই ভালো আমার জন্য। তাই মুখ বুজে সব সহ্য করে নিলাম।
তাড়াহুড়ো করে বিয়েও হয়ে গেলো। তেমন কোনো আয়োজন করা হয়নি। আমি তাদের মাথার বোঝা। আমার জন্য আর কতো টাকা খরচ করবে? তাই অল্প খরচেই বিয়ে সেড়ে ফেলেছে।
শুনেছি যার সাথে বিয়ে হচ্ছে তার আগের পক্ষের ৪ বছরের একটা বাচ্চা আছে। লোকটার নাম সাকিল। আমার থেকে মোটামুটি দশ বছরের বড়। তাদের আসল বাড়ি সিলেট। তবে তিনি তার মেয়েকে নিয়ে ঢাকা উত্তরায় থাকেন। তার আগের স্ত্রী মারা যাওয়া নাকি এক বছর হয়েছে।
রাতে আমাকে বাসর ঘরে বসানোর পরই বাচ্চা মেয়েটা এলো। ঘরে কেউ নাই। সে একটু দূরে দাড়িয়ে আছে আমার থেকে। আমি তাকে কাছে ডাকলাম। এই পৃথিবীতে মা ছাড়া বাচার কষ্ট আমি জানি। যেহেতু সবকিছু মেনে নিতে হচ্ছে তাহলে এই নিষ্পাপ বাচ্চাটাকে মেনে নিতে কি? আমি তাকে আমার কোলে তুলে নিলাম। হয়তো তার নিজের মায়ের মতো হতে পারবো না। কিন্তু চেষ্টা করবো হওয়ার।
তোমার নাম কি?
মেঘা। আর তুমি?
আমি? আমি তোমার আম্মু।
কিন্তু আমার আম্মু তো আছে।
আচ্ছা? আমি আরেকটা আম্মু।
কিন্তু আম্মু তো একটাই হয়। দেখো
বলে তার গলার লোকেটটা আমার দিকে এগিয়ে দিল। একপাশে তার বাবার ফটো অন্যপাশটাই একটা মহিলার।
এটা তোমার আম্মু?
হুম।
তাহলে আমি কে?
তুমি আমার নতুন আম্মু।
তাই?
হুম।
আমার দিকে একটা চকলেট এগিয়ে দিয়ে বললো
এটা তোমার জন্য।
আমি নেবো না। তুমি খাও।
আমার জন্য আরেকটা আছে।
বলে আমার হাতে ধরিয়ে দিল। আমিও তার গালে একটা চুমু দিলাম। এতো কিউট মেয়েকে কেউ দূরে ঠেলে রাখতে পারবেই না। তাছাড়াও আমি জানি মা না থাকলে বেচে থাকা কত কঠিন৷ আমি চাই না এই নিষ্পাপ বাচ্চাটা আমার মতো জীবন পাক। তার ভালোমন্দ এখন থেকে আমার উপর সেটাও আমি জানি। আর আমি তাকে আমার মতো জীবন কিছুতেই পেতে দেবো না।
গল্প করতে করতে মেঘা আমার কোলেই ঘুমিয়ে পরেছে। আমি তার কপালে একটা চুমু দিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলাম। আমাকে যদি মামুনি এভাবে আগলে নিত তাহলে হয়তো আজ আমার জীবনটা অন্যরকম হতো। একটা বড় নিশ্বাস ফেললাম। ততোক্ষণে উনি মানে মেঘার আব্বু চলে এসেছে। তাকে দেখে আমি একটু ঠিক হয়ে নড়েচড়ে বসলাম।
ঘুমিয়ে গেছে মেঘা?
হুম।
উনি আমার থেকে প্রায় কয়েক হাত দূরে বিছানায় বসলেন। আমার সামনে কয়েকটা কাগজ রেখে বললেন
আপনাকে কয়েকটা কথা বলতে চাই। অবশ্য সেসব কথা বিয়ের আগেই বলা উচিৎ ছিল। তবে বলার সুযোগ পায়নি।
জি বলুন।
আমার পরিবার আপনাদের একটা মিথ্যে বলেছিল।
আমি কিছু বললাম না, শুধু উনার দিকে কপাল ভাঁজ করে তাকালাম।
হুম। আপনাদের বলা হয়েছিল আমার স্ত্রী মারা গেছে। আসলে.....আমার স্ত্রী এখনো জীবিত আছে।
উনার কথা আমার মাথায় ঢুকলো না। উনার স্ত্রী জীবিত আছে। মানে মেঘার মা বেঁচে আছে। তাহলে আরেকটা বিয়ের কারন কি? কেনো করলেন আমাকে বিয়ে? অনেকগুলো প্রশ্ন মাখা চোখ নিয়ে আমি তার দিকে তাকালাম। উনি হয়তো তা বুঝতে পেরেছেন। তাই আবার বলতে শুরু করলেন।
To be continue...
No comments: