বিষন্ন_বিকেল Part-01 |
বিষন্ন_বিকেল
part:1
Tania
এই বাড়িতে সবাই জমিদারের মতো দুপুর বারোটা অব্দি পরে পরে ঘুমাবে আর আমাকে চাকরের মতো পরিশ্রম করে মরতে হবে। বলি মহারানির ঘুম কি আজ ভাঙবে?(রাবেয়া বেগম)
চেচামেচি শুনে তাড়াহুড়ো করে ঘুম থেকে উঠে পরি। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি মাত্র ছয়টা বাজছে। ফ্রেশ হয়ে বাইরে আসতেই আমাকে দেখে মামুনি মুখ ঘুরিয়ে নিল।
মামুনি কোনো সাহায্য লাগবে?
তোমরা সারাদিন পরে পরে ঘুমাও এতেই হবে। না জানি আমার কপালে কোথা থেকে এসে জুটে এসব। মরেও মনে হয় আমি শান্তি পাবো না।
এসব কি বলছো মামুনি? আমাকে বলো কি করতে হবে আমি করে দিচ্ছি।
কোন কাজটা ঠিকভাবে করিস তুই? কাল রাতে আমি তোকে বললাম ঠিক করে বাইরের দরজা লক করতে। করেছিলি? বুঝতে পারি না তোর মতো মেয়েকে কেউ জন্ম দেয় কেনো?
কিন্তু মামুনি আমিতো লক করেছিলাম। একবার চেকও করেছিলাম। হয়তো আহান বাইরে গেছিল।
তুই সব দোষ আমার ছেলের উপর চাপাতে ভালোবাসিস? কেনো রে কি শত্রুতা তার সাথে?
আরে মামুনি আমিতো শুধু বলছি......
আমাদের চেচামেচি শুনে বাবা বাইরে আসে।
তোমরা আবার শুরু করেছো? শান্তিতে একটু ঘুমাতেও দেবে না?
দেখো না তোমার মেয়ে কেমন করে ঝগড়া করছে আমার সাথে। (মামুনি)
আমি তো জাস্ট....
তিথি কতোবার তোমাকে বলতে হবে উনি তোমার মা। কেনো এইটা মেনে নিতে পারছো না তুমি? কি সমস্যা তোমার?
বাবা আমি তো....
অনেক হয়েছে। এখনি সরি বলো তাকে।
মুখটা মলিন করে সরি বলে ঘরে চলে এলাম। এমনই আমার জীবন। কোনো দোষ থাক বা না থাক, সরি আমাকেই বলে হবে। আমার ঠিক মনে আছে আমি রাতে দরজা লক করেছিল। আর আমি সিয়র আহানই রাতে বাইরে গেছিল। আহান হলো আমার ভাই,
সৎ ভাই। আমি তাকে নিজের ভাই মনে করলেও সে মনে করে না। আর কিই বা মনে করবে? সারাক্ষণ নেশায় ডুবে থাকে। প্রতিরাতে নেশা করার জন্য তাকে বাইরে যেতেই হবে। বাবা অনেক চেষ্টা করেও তাকে সঠিক পথে আনতে পারেনি। অবশ্য তার মায়ের অতি অাদরের ফল এইটা।
তবে মায়ের আদর কাকে বলে আমি জানি না। মাকে জন্মের সময়ই হারায়। আমার খেয়াল রাখার জন্য আরেকটা বিয়ে করে বাবা। তারপর উনি তার নতুন সংসারে ব্যস্ত হয়ে পরেন। এতোটাই ব্যস্ত যে, তার যে আগের একটা মেয়ে আছে সেটাই ভুলে যায় কোনো কোনো সময়।
মায়ের সাথে সাথে বাবাকেও হারিয়েছি আমি। এতোটাই পোড়া কপাল আমার। লোক দেখানো ভালোবাসে আমাকে সবাই। সারাদিন কোনো না কোনো ব্যাপার নিয়ে আমার উপর চেচামেচি করে মামুনি।
আর বাবা বাসায় থাকলে এমন অভিনয় করে যেন সে আমাকে খুব ভালোবাসে, আমি তাকে মানতে পারি না। যাইহোক এটাই আমার ভাগ্য। একটা বড় নিশ্বাস ফেলে দেওয়ালে টাঙানো মায়ের ছবিটার দিকে তাকালাম। অনুভব করলাম চোখের কোণায় জল জমেছে। সেটা মুছতেই তৃষা(সৎ বোন) আমার পাশে এসে বসলো।
আপু তুমি কাদছো?
কই নাতো।
তুমি কাঁদছো। আবার মা কিছু বলেছে?
ছাড় তো। তুই আজ স্কুল যাবি না? যা গিয়ে রেডি হ। আমি তোকে নামিয়ে দিয়ে কলেজ যাবো।
হুম।
এই বাড়িতে একমাত্র তৃষাই আমার মনের কথা বুঝতে পারে। বাকি সবাই নিজের স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত। চোখের পানি মুছে নিয়ে রান্নাঘরের দিকে যায় । থালাবাসনগুলো পরিষ্কার করে নাস্তা তৈরির কাজে হাত লাগাতে হবে।
থাক লাগবে না। তুই যা।(মামুনি)
কেনো মামুনি কি হয়েছে?
আমি একাই সব করতে পারি।
আমি একটু সাহায্য করলে কি সমস্যা?
সাহায্য করবি তো এতোক্ষণ ঘরে বসে বসে কি করছিলি?
কাজ করছিলাম।
তোর কাজ আগে না আমার কাজ?
আসলে....
হয়েছে। আর বাহানা করতে হবে না। কাজে হাত লাগা।
এভাবেই চলতে থাকে আমার জীবন। এবাড়িতে যতোদিন থাকবো আমার লাইফ চেঞ্জ হবে না। আমার কপালেই হয়তো এইসব লেখা আছে। আমাকে সহ্য করতেই হবে। সহ্য না করে উপায় আছে নাকি? কার কাছে অভিযোগ করবো? বাবাকে বললে উল্টে বাবা-ই বকা দেয়।
বলে আমি নাকি মানুষের সাথে চলে জানি না। তার থেকে চুপ থাকায় ভালো। কি বা করতে পারি এটা ছাড়া। আমি যে অসহায়। সব কিছু মুখ বুজে সহ্য করতেই হবে। সারাদিনের অপমানের কষ্টগুলো রাতে বেরিয়ে আসে। চোখের পানিতে বালিশটা ভিজে উঠে। এটাই আমার প্রতিবাদ। পরেরদিন আবার সেই একই ঘটনা।
কয়েকদিন পর মামুনির বোনের ছেলে বেড়াতে আসে এখানে। ছেলেটার নজরটা ভালো না। কেমন করে যেন তাকায় আমার দিকে। আমার একদম ভালো লাগে না।
পরের দিন কলেজ থেকে এসে খেয়াল করি বাড়িতে কেউ নাই। ছেলেটা একায় সোফায় বসে আছে। আমি চুপচাপ আমার ঘরে চলে গেলাম। কিছুক্ষণ পর সে আমার ঘরে আসে।
কি হয়েছে? আমার ঘরে কি?
মজা।
কিহ?
বাড়িতে কেউ নাই। একটু মজা করলে প্রবলেম কি?
কি বলতে চাইছেন কি আপনি?
নেক্যা সাজা হচ্ছে? আমি কি বলছি বুঝছো না?
দেখুন আপনি যেমন ভাবছেন আমি সেই রকম না। আমার কাছে আসবেন না।
আসলে...
আমি কিন্তু চিৎকার করবো।
করো। কেউ আসবে না তোমার চিৎকার শুনে।
সে আরেকটু সামনে আসতেই আমি flower vase টা তুলে চোখ বন্ধ করে তার মাথায় মারি। চোখ খুলে দেখি নিচে পরে আছে। মাথা দিয়ে রক্ত পরছে। আমার পুরো শরীর এখন থরথর করে কাপছে। অজানা একটা ভয় কাজ করছে। নড়াচড়া করারও শক্তি নাই আমার।
কাপা হাতটা তার নাকের কাছে নিয়ে যায়। নাহ, মরেনি। বেঁচে আছে সে। কি করবো আমি এবার? চোখ অন্ধকার দেখছি আমি। মাথা দিয়ে ঘাম ঝড়ছে। গলা শুকিয়ে গেছে। আমি ধপাস করে বিছানায় বসে যায়। এভাবে কতক্ষণ বসে থেকেছি মনে নাই। মামুনির চিৎকার শুনে খেয়াল ফিরে আমার।
নুর কি হয়েছে তোর? নুর?কি করেছিস তুই ওর সাথে?
(আমার দিকে তাকিয়ে)
আমি কিছু করিনি। ও আমাকে....
আহানের বাবা কোথায় তুমি? দেখো তোমার মেয়ে কি করেছে। সে নুরকে মেরে ফেলেছে। এই রাক্ষসীটা মেরে ফেলেছে আমার নুরকে।
আমার মুখের কথা যেন আঁটকে গেছে। অনেক কষ্টে এটাই বললাম
বেঁচে আছে ও।
ততোক্ষণে বাবা দৌড়ে চলে এসেছে। আমাদের এভাবে দেখে অনেকটা অবাক হয়েছে সেটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
আমি বাবাকে বললাম
বাবা বিশ্বাস করো আমি নিজ ইচ্ছায় করিনি। ও আমাকে জোর করে...
বাবা আমার কথা না শুনে অ্যাম্বুলেন্সের জন্য ফোন করলো। তারপর তাকে তাড়াহুড়ো করে নিয়ে চলে গেলো।
চলবে নাকি??
সারা পেলে পরের part লেখবো। অনেক চেষ্টা করেও কেন জানি আপনাদের মনের মতো গল্প লেখতে পারি না। তাই বলছি গল্পে ভুল থাকলে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ রইল।
No comments: