একটি মডার্ন মেয়ের গল্প...
আমার স্বামী একজন হুজুর মানুষ। কখনও ভাবি নি আমার হুজুর টাইপের
কারো সঙ্গে বিয়ে হবে। আমার ইচ্ছা না
থাকা সত্ত্বেও পরিবারের চাপে বিয়ের
পিঁড়িতে বসতে হলো। আমি মর্ডান
মেয়ে। আর বিয়ে করবো কিনা একজন
হুজুরকে? ভাবতেই কেমন যেনো সংকোচ
বোধ হচ্ছিলো। এমনিতেই বিয়ে করতে
ইচ্ছা করছিলো না। তাতে আবার এক
বান্ধবি এসে বললো, কিরে রিয়া তুই
হুজুরকে বিয়ে করলি? আর পাত্র খুঁজে
পাস নি? আরেক ভাবি এসে কানে
ফিসফিস করে বললো, তোর বরের তো
সারা মুখেই দাড়ি কিস করবি কোথায়?
এসব শুনে খুব বিরক্ত লাগছিলো। ইচ্ছা
করছিলো এখনই আসন থেকে উঠে যাই।
হঠাৎ পায়ের ঠক ঠক আওয়াজে ঘোমটার
ফাঁক দিয়ে আঁড়চোখে দেখলাম একজন
লোক আসছে। তার বেশভুষা আর গঠন
দেখে বুঝলাম উনি আমার স্বামী।
অনিচ্ছা সত্ত্বেও উঠে গিয়ে পায়ে হাত
দিয়ে সালাম করলাম। থাক থাক বলেআমার বাহুতে হাত দিয়ে তুলে বিছানায়
বসালো আর বললো,
তোমার নাম কী? খুব ইচ্ছা করছিলো বলতে আমার নাম না জেনেই আমাকে বিয়ে করেছেন?
বললাম, রিয়া!
– সুন্দর নাম! কিন্তু তুমি কি জানো
রিয়া নামের অর্থ কী? মেজাজটা
খারাপ হওয়ার উপক্রম।
বললাম, না।
– শোনো, আরবিতে রিয়া শব্দের অর্থ
অহংকার, লোক দেখানো। আর মানুষকে
যে জিনিসগুলা ধ্বংস করে দেয় তার
মধ্যে রিয়া অন্যতম। তাই আজ থেকে
আমি তোমাকে মিম বলে ডাকবো।
নাহ, আর মেজাজটা ঠিক রাখতে পারছি
না। বাসর রাতে আমার স্বামী আমাকে
অর্থ শেখাচ্ছে! কারও মাথা ঠিক থাকার
কথা?
একটু বিরক্ত স্বরে বললাম, আপনার যেটা
ভালো লাগে সেটাই ডাকিয়েন। বুঝতে
পারছে মনে হয়। বললো তোমার মনে হয়
খারাপ লাগছে। তুমি ঘুমিয়ে পড়ো।
*********************
ঘুম ভাঙলো গুন গুন আওয়াজে। কান খাড়া
করে আওয়াজটা শুনতে চেষ্টা করলাম।
বুঝলাম কেউ কোরআন পড়ছে। তাকিয়ে
দেখলাম আমার স্বামী। তার সুমধুর কণ্ঠে
কোরআন তেলাওয়াত শুনতে ভালোই
লাগছিলো। তাই একটু উঠে বসলাম।
আমাকে উঠে বসতে দেখে
তেলাওয়াত বন্ধ করে বললো, আসসালামু
আলাইকুল। শুভ সকাল! ঘুমটা কেমন হলো?
সালাম নিয়ে বললাম, জি ভালো
হয়েছে। এভাবেই কাটছিলো দিনগুলা। এর
মাঝে উনি আমাকে নানাভাবে নামাজ
পড়ার কথা বলতো। এতো ধৈর্য আর এত
ভালো করে বুঝিয়ে বলতো যে, আমি
নিজেই খুব অবাক হয়ে যেতাম। তার সব
চেষ্টাকে সফল করে একদিন নামাজ পড়া
শুরু করলাম। দেখলাম তার মুখটা খুশিতে
ভরে উটেছে। তার হাসি-মাখা মুখটা
দেখতে ভালই লাগত। নামাজ ৫ ওয়াক্ত
হলেও আমি ৪ ওয়াক্ত পড়তাম। ফজরের
নামাজ পড়তাম না। খুব আলসেমি
লাগতো। উনি আমাকে ডাকতেন শুনেও
জাগতাম না। এটা উনি বুঝতে পেরেছিল
যে, আমি ইচ্ছা করেই উঠি না। তাই
আমাকে কাছে ডেকে পাশে বসিয়ে
বললো, দেখো তুমি এভাবে প্রতিদিন ৮
ঘণ্টা করে ঘুমাও। দিনের ৩ ভাগের ১
ভাগ তুমি ঘুমিয়ে কাটাচ্ছো। যদি
তোমার আয়ুকাল ৬০ বছর হয়, তাহলে তুমি
৩ ভাগের এক ভাগ মানে ২০ বছর ঘুমিয়ে
কাটাচ্ছো। আল্লাহ তো তোমাকে এই
দীর্ঘ সময় ঘুমিয়ে কাটাতে পৃথিবীতে
পাঠান নি। তারপর অনেকগুলা ভালো
ভালো কথা আর কোরআনের বাণী
শুনালেন।
এতো ভালো কথা
শুনিয়েছিলেন যে, শুনে আমার চোখে
পানি এসে গিয়েছিল। তারপর থেকে আজ
পর্যন্ত ১ ওয়াক্ত নামাজও আমি কাজা
করি নি।সর্বদাই ধর্মীয় অনুশাসন মেনে
চলি। আজ আমি অনুতপ্ত নই। গর্ববোধ করি
আমার স্বামীর জন্য। সত্যিই আমি খুব
ভাগ্যবতী।”
No comments: