আমাদের
এই নাতিশীতোষ্ণ দেশে কনকনে শীতের পর গরমের প্রথম অবস্থাটা একটু মনোরম
দেখালেও গরমের মাঝামাঝি সময়ে এসে শরীর ও মন দুটোই ঠিক রাখা মুশকিল হয়ে যায়।
ঘর্মাক্ত ও ক্লান্ত শরীরে দিনের সামান্যতম কাজটাও যেন বিশাল ঝামেলা হয়ে
দেখা দেয়। এছাড়া খাবারের প্রতি অনীহা, বিভিন্ন উৎকট রোগবালাইয়ের প্রকোপ
ইত্যাদি অনেক কারণেই আমাদের অনেকেই গরমকালটার জন্য খুব আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা
করেন বলা যাবে না। এর মধ্যে আবার স্বাস্থ্যসচেতন থাকা, নিজের ফিটনেস ধরে
রাখা বা ব্যক্তিগত রুটিন মেনে চলা মোটেই সহজ মনে হয় না।
তবে নিজেকে ভালো রাখতে হলে এই অস্থির সময়েও খানিকটা স্বাস্থ্যসচেতনতা আপনাকে অনেক ভালো ফল দেবে। কিছু নিয়ম মেনে চললেই এই গ্রীষ্মেও আপনি ভালো থাকতে পারবেন এবং গরমের ক্লান্তি আর আপনাকে ছুঁতে পারবে না। আসুন জেনে নেই গ্রীষ্মে ফিটনেস ধরে রাখতে কী কী করবেন।
গ্রীষ্মে ডায়েট:
ফিট থাকার প্রধানতম শর্ত হচ্ছে ডায়েট। গ্রীষ্মকালে আমাদের ডায়েটে বেশ খানিকটা পরিবর্তন আনা দরকার, যাতে ডিহাইড্রেশন ও হজমের গোলমাল আমাদের জীবনে ও কাজকর্মে প্রভাব না ফেলে।
গ্রীষ্মকালীন ফল ও শাকসবজি:
গ্রীষ্মকালে সবচেয়ে বেশি ভয় থাকে পানিশূন্যতার। শরীরকে হাইড্রেটেড রাখা তাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই পানি তো বেশি করে খাবেনই একই সঙ্গে গ্রীষ্মকালীন বিভিন্ন ফলমূল ও শাকসবজিও আপনার শরীরের পানির চাহিদা অনেকাংশে পূরণ করবে। এছাড়াও গরমের ক্লান্তি ও অস্বস্তির ভাব দূর করে এমন অনেক উপাদান রয়েছে ফল ও সবজিতে। কমলা ও অন্যান্য লাল ফল যেমন আম, তরমুজ ইত্যাদিতে বেটা ক্যারোটিন রয়েছে, যা রোদের তাপ থেকে আমাদের ত্বককে রক্ষা করে। আর বিভিন্ন কালো ও লাল সবজিতে থাকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা আমাদের গরমে হজমের সমস্যা কমিয়ে আনে। এছাড়াও কড়াইশুঁটি, ব্রকোলি, বিট, ছোলা, বিভিন্ন ধরনের ডাল, চানা, তিল, কুমড়ো ইত্যাদি সবজিও গরমকালে খুবই উপকারী স্বাস্থ্যের জন্য। এছাড়া ফলের জুস ও স্মুদি গরমের ক্লান্তি দূর করার জন্য পারফেক্ট। আনারস, নারকেল, ডাব, বেল, বাঙ্গি, লেবু ইত্যাদির জুস বা স্মুদি তৈরি করা খুব সহজ এবং একই সঙ্গে এসব ফলের শর্করা ক্লান্তি ও অবসন্নতা দূর করে। তবে রাস্তায় যেসব পানীয় বিক্রি হয় তা না কেনাই ভালো।
হালকা খাবার গ্রহণ:
গরমে হজমের সমস্যা হয় অনেকের। গরমে প্রায়ই শরীর ডিহাইড্রেটেড থাকে দেখে মশলাযুক্ত খাবার, ফাস্টফুড ইত্যাদি সহজে হজম হয় না। তাই গরমে হালকা খাবার খাওয়াই বেশি ভালো। তেল, মশলাযুক্ত ভারী খাবার যতটা সম্ভব বর্জন করতে হবে এই সময়টাতে। কারণ শুধু হজমের সমস্যাই না, গরমে ভারী খাবার খেলে মেদ বাড়ার ঝুঁকিও বেশি থাকে। হালকা খাবারের মধ্যে রয়েছে সিদ্ধ মাংস, মাছ, ভাত, বিনস, ডিম, স্যামন, আটার রুটি, দুধ, মাখন ইত্যাদি। ঘরে বানানো খাবারের ওপর বেশি জোর দিন বছরের এ সময়টাতে।
এক্সট্রা টিপ : ডিটক্স ডায়েট কোনো একটি নির্দিষ্ট ডায়েট চার্ট ফলো করতে চাইলে গ্রীষ্মকালে ডিটক্স ডায়েট ফলো করতে পারেন। এই ডায়েটের উদ্দেশ্য শরীরের অতিরিক্ত টক্সিন ও বর্জ্য পদার্থ ডিটক্সিফাই করে ফেলা। যথেষ্ট পরিমাণ প্রাকৃতিক খাবার রয়েছে এই চার্টে, যা গরমকালে শরীরের অতিরিক্ত টক্সিন সরিয়ে ফেলতে সাহায্য করে। এছাড়াও ডিটক্স ডায়েট আপনার মনকেও রাখবে প্রফুল্ল, অতিরিক্ত ঘাম এবং শরীরের দুর্গন্ধও দূর করবে। শাকসবজি, ফলমূল ইত্যাদি এই ডায়েটের স্টেপল, সঙ্গে পানিও খেতে হবে প্রচুর পরিমাণে। জুস ও স্মুদি পান করতে হবে চিনি ছাড়া।
২. গ্রীষ্মের পোশাকে-আশাকে স্বাস্থ্যসচেতনতা স্বাস্থ্য শুধু ডায়েটের ওপরই নির্ভর করে না। আপনার ক্লোদিং চয়েসও ফিট থাকার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। কারণ পোশাক আমাদের ত্বক, চোখ, চুল ও শরীরের বিভিন্ন অংশকে রোদ, তাপ ও ধুলাবালি থেকে রক্ষা করে। বিভিন্ন সিজন অনুযায়ী পোশাক পরার ধরন বিভিন্ন রকম হয়।
ঢোলা ও সুতির কাপড়:
গরমকালে আঁটসাঁট ও ভারী পোশাক পরে নিমন্ত্রণে যাওয়ার অভিজ্ঞতা কার না হয়েছে? এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমরা গরমে অতিষ্ঠ হয়ে যাই এ রকম পোশাকে। তবে নিমন্ত্রণে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে ভারী ও টাইট পোশাক পরলেও বাড়িতে বা কর্মক্ষেত্রে; যেখানে আমরা দিনের বেশিরভাগ সময় কাটাই, সেখানে এ রকম পোশাক পরলে ঘাম, হিটস্ট্রোক, শরীরে দুর্গন্ধ, অস্বস্তি ইত্যাদি নানা সমস্যা হতে পারে।গরমকালে ঢোলা ও সুতি কাপড় পরা সবচেয়ে আরামদায়ক। এছাড়াও ঢোলা পোশাকে বাতাস চলাচল ভালো হয় বলে আমাদের শরীর ঠা-া থাকবে। সুতি কাপড় আমাদের সানবার্ন থেকে রক্ষা করে।
রোদে সানগ্লাস পরুন চোখ ভালো রাখাও অত্যন্ত জরুরি। তাই গ্রীষ্মের প্রচ- রোদে বাইরে বের হলে সানগ্লাস পরতে ভুলবেন না। সানগ্লাস ছাড়া রোদে বেশি সময় কাটালে চোখে লং-টার্ম সমস্যা হতে পারে। এছাড়াও চোখে অতিরিক্ত সূর্যের আলো পড়লে প্রচ- মাথাব্যথাও হতে পারে।
মাথায় ক্যাপ বা টুপি:
বাইরের রোদ ও ধুলাবালি আমাদের চুল ও স্ক্যাল্পের জন্যও বেশ ক্ষতিকর। এছাড়া মাথায় ঘাম হলে দ্রুত চুল পড়ে যেতে পারে। তাই বাইরে বের হলে কাপড়ের ক্যাপ বা টুপি পরতে পারেন। তবে অনেকের ক্যাপ পরলেও মাথায় ঘাম হয়। সেক্ষেত্রে ছাতা নিয়েও বাইরে বের হতে পারেন।
সান্সক্রিন বা লোশন:
গরমে মেকআপ গলে যাওয়ার ভয় কে না করে? প্রচুর ঘাম হলে মেকআপ তো নষ্ট হয়ে যায়ই, এছাড়া ত্বকেও বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। তাই বিভিন্ন সানক্রিন বা লোশন ব্যবহার করতে পারেন। এতে ত্বক যেমন রোদে পুড়ে যাওয়া থেকে বাঁচবে, ত্বক থেকে অতিরিক্ত তেল দূর হবে, তেমনি গরমে ঘর্মগ্রন্থি বন্ধ হয়ে ত্বকের নিচে ঘাম জমার ভয়ও থাকবে না।
৩. গ্রীষ্মে ব্যায়াম করুন:
নিয়মিত গরমকালে সারাদিনের ক্লান্তি নিয়ে ব্যায়াম করা মোটেই সহজ কথা নয়। তাছাড়া দৌড়ানো, খেলাধুলা, ব্যায়াম ইত্যাদি বাড়তি কাজগুলো গরমে অতিরিক্ত করলে অসুস্থ হয়ে যাওয়ার ভয়ও থাকে। তবে আপনার যদি নিয়মিত ব্যায়ামের বা খেলাধুলার অভ্যাস থাকে, তবে তা ছেড়ে দেয়াও উচিত হবে না মোটেই, তাতে অভ্যাস নষ্ট হওয়া থেকে শুরু করে শরীরে মেদ জমা বিভিন্নরকম সমস্যা হতে পারে। তবে উপায়? সাঁতার কাটুন নিয়মিত গরম আর ব্যায়ামের মধ্যে সবচেয়ে ভালো বোঝাপড়াটা হয় বোধহয় সাঁতারে। এতে আপনার গরম লাগারও আশঙ্কা নেই এবং ব্যায়াম হিসেবেও সাঁতার খুব ভালো। আর যদি সাঁতার না জানেন, তাহলে শিখে নিন এই উপলক্ষে। তবে সাঁতার কাটার আগে ও পরে প্রচুর পানি পান করতে হবে।
ডাইনামিক থেকে স্ট্যাটিক:
বছরের অন্যান্য সময় জোর দিয়েছেন বিভিন্ন ডাইনামিক ব্যায়ামের ওপর যেমন ওজন তোলা, কার্ডিও ইত্যাদি। গরমে জোর দিন স্ট্যাটিক ব্যায়ামের ওপর যেমন ইয়োগা, স্ট্রেচিং। তবে ওজন তোলা, কার্ডিও ইত্যাদিও চলতে পারে, সেক্ষেত্রে নিজের শরীরকে গরমের সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার সময় দিন, তাড়াহুড়ো করবেন না।
ঘরে ব্যায়ামের অভ্যাস করুন:
গরমকালে ব্যায়ামের জন্য বাইরে বের না হওয়াই ভালো। অল্প খরচে বা কোনো খরচ ছাড়াই আপনি ঘরে ব্যায়ামের পরিবেশ তৈরি করে নিতে পারবেন। রেজিস্ট্যান্স ব্যান্ড, গ্র্যাভিটি বল, ইয়োগা ম্যাট ইত্যাদি দিয়ে যেকোনো প্রফেশনাল জিম সেটিংয়ের মতোই ব্যায়াম করা সম্ভব। এছাড়াও ঘরে ফ্রিহ্যান্ড ব্যায়াম বা যোগব্যায়াম করে নিজেকে ফিট রাখতে পারবেন। আর নিতান্তই বাইরে ব্যায়াম করতে গেলে সানস্ক্রিন ও ব্যায়ামের পোশাক পরে বের হবেন। ব্যায়ামের পর:
ব্যায়ামের পর তোয়ালেতে বরফ জড়িয়ে শরীরে বা ঘাড়ের চারপাশে ধরে রাখলে শরীর ঠাণ্ডা হবে। এছাড়া ফলের জুস বা পোস্ট-ওয়ার্কআউট শেক খেতে পারেন ব্যায়ামের পর, তাতে ভারী ব্যায়ামের পরও কাজ করার এনার্জি আসবে শরীরে। ব্যায়ামের পর আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করে গোসল করে নেয়া উচিত।
৪. গ্রীষ্মে রোগবালাই ও তার প্রতিরোধ:
গরমকালে অনেকরকম রোগবালাই হতে পারে। এ সময় জীবাণুদের বংশবৃদ্ধি হয় খুব দ্রুত। এছাড়াও তাপমাত্রা পরিবর্তনে আমাদের শরীরের বিভিন্ন পরিবর্তন হয়, তাই আমাদের শরীর অনেক নাজুক থাকে। এ সময় রোগ এড়াতে অধিক সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। গ্রীষ্মে কী কী রোগ হতে পারে এবং কীভাবে আমরা তা প্রতিরোধ করতে পারব তা সবারই জেনে নেয়া উচিত।
সর্দি-কাশি ও ভাইরাস জ্বর:
এ সময় সর্দি, কাশি, ভাইরাসজনিত জ্বর হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি থাকে। বাইরে অনেকক্ষণ থাকলে শরীরে ঘাম হতে পারে এবং সেই ঘাম না মুছে গোসল করলে সর্দি-কাশি হওয়ার আমঙ্কা রয়েছে। তাই বাইরে থেকে এসে প্রথমে শরীর শুকিয়ে নিয়ে এরপর গোসল করতে হবে। এছাড়া ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত মানুষের সঙ্গে বেশিক্ষণ সময় কাটালে আপনারও জ্বর হতে পারে। তাই সবসময় বাইরে বের হলে ফেস মাস্ক পরে থাকা দরকার। বাইরে থেকে এসে বা যেকোনো কাজ করে সবসময় হাত ধুয়ে ফেলতে হবে।
ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও এনসেফালাইটিস:
গরমে মশার উৎপাত অনেক বৃদ্ধি পায়, তাই মশাবাহিত রোগে ধরার আশঙ্কাও বেড়ে যায়। রাত্রে ঘুমানোর আগে সবসময় মশারি টাঙিয়ে ঘুমানো উচিত। বাড়িতে কোথাও পানি জমতে বা কিছু পচতে দেয়া যাবে না। আশপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন সবসময়। বাড়ির আশপাশে মশার প্রজননক্ষেত্র থাকলে তা ধ্বংস করে দিন।
ডায়রিয়া, টাইফয়েড, হেপাটাইটিস:
পানিবাহিত রোগগুলো গরমের আরেকটি বিশাল সমস্যা। গরমে আমাদের প্রচুর পানি পান করতে হয়, কিন্তু বিশুদ্ধ পানি সবসময় পাওয়া যায় না। অনেকে রাস্তার পাশের দোকান থেকে পানি পান করেন, যা বেশিরভাগ সময়ই বিভিন্ন পানিবাহিত রোগের জীবাণু বহন করে। এছাড়াও গরমে খাবার দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়, সেসব খাবার খেলেও পেটের অসুখ হতে পারে। খাবার না খেলে সবসময় ফ্রিজে রেখে দেবেন।
খানিকটা সতর্ক হয়ে চললে গরমে স্বাস্থ্য ঠিক রাখা খুব বেশি কঠিন কিছু নয়। ভালো স্বাস্থ্য আপনার কাজ ও জীবনে উন্নতি করতেও সাহায্য করবে। তাই গরমে ক্লান্তি আর অবসাদকে তাড়িয়ে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয়ে উঠুন এই টিপসগুলো অনুসরণ করে।
তবে নিজেকে ভালো রাখতে হলে এই অস্থির সময়েও খানিকটা স্বাস্থ্যসচেতনতা আপনাকে অনেক ভালো ফল দেবে। কিছু নিয়ম মেনে চললেই এই গ্রীষ্মেও আপনি ভালো থাকতে পারবেন এবং গরমের ক্লান্তি আর আপনাকে ছুঁতে পারবে না। আসুন জেনে নেই গ্রীষ্মে ফিটনেস ধরে রাখতে কী কী করবেন।
গ্রীষ্মে ডায়েট:
ফিট থাকার প্রধানতম শর্ত হচ্ছে ডায়েট। গ্রীষ্মকালে আমাদের ডায়েটে বেশ খানিকটা পরিবর্তন আনা দরকার, যাতে ডিহাইড্রেশন ও হজমের গোলমাল আমাদের জীবনে ও কাজকর্মে প্রভাব না ফেলে।
গ্রীষ্মকালীন ফল ও শাকসবজি:
গ্রীষ্মকালে সবচেয়ে বেশি ভয় থাকে পানিশূন্যতার। শরীরকে হাইড্রেটেড রাখা তাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই পানি তো বেশি করে খাবেনই একই সঙ্গে গ্রীষ্মকালীন বিভিন্ন ফলমূল ও শাকসবজিও আপনার শরীরের পানির চাহিদা অনেকাংশে পূরণ করবে। এছাড়াও গরমের ক্লান্তি ও অস্বস্তির ভাব দূর করে এমন অনেক উপাদান রয়েছে ফল ও সবজিতে। কমলা ও অন্যান্য লাল ফল যেমন আম, তরমুজ ইত্যাদিতে বেটা ক্যারোটিন রয়েছে, যা রোদের তাপ থেকে আমাদের ত্বককে রক্ষা করে। আর বিভিন্ন কালো ও লাল সবজিতে থাকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা আমাদের গরমে হজমের সমস্যা কমিয়ে আনে। এছাড়াও কড়াইশুঁটি, ব্রকোলি, বিট, ছোলা, বিভিন্ন ধরনের ডাল, চানা, তিল, কুমড়ো ইত্যাদি সবজিও গরমকালে খুবই উপকারী স্বাস্থ্যের জন্য। এছাড়া ফলের জুস ও স্মুদি গরমের ক্লান্তি দূর করার জন্য পারফেক্ট। আনারস, নারকেল, ডাব, বেল, বাঙ্গি, লেবু ইত্যাদির জুস বা স্মুদি তৈরি করা খুব সহজ এবং একই সঙ্গে এসব ফলের শর্করা ক্লান্তি ও অবসন্নতা দূর করে। তবে রাস্তায় যেসব পানীয় বিক্রি হয় তা না কেনাই ভালো।
হালকা খাবার গ্রহণ:
গরমে হজমের সমস্যা হয় অনেকের। গরমে প্রায়ই শরীর ডিহাইড্রেটেড থাকে দেখে মশলাযুক্ত খাবার, ফাস্টফুড ইত্যাদি সহজে হজম হয় না। তাই গরমে হালকা খাবার খাওয়াই বেশি ভালো। তেল, মশলাযুক্ত ভারী খাবার যতটা সম্ভব বর্জন করতে হবে এই সময়টাতে। কারণ শুধু হজমের সমস্যাই না, গরমে ভারী খাবার খেলে মেদ বাড়ার ঝুঁকিও বেশি থাকে। হালকা খাবারের মধ্যে রয়েছে সিদ্ধ মাংস, মাছ, ভাত, বিনস, ডিম, স্যামন, আটার রুটি, দুধ, মাখন ইত্যাদি। ঘরে বানানো খাবারের ওপর বেশি জোর দিন বছরের এ সময়টাতে।
এক্সট্রা টিপ : ডিটক্স ডায়েট কোনো একটি নির্দিষ্ট ডায়েট চার্ট ফলো করতে চাইলে গ্রীষ্মকালে ডিটক্স ডায়েট ফলো করতে পারেন। এই ডায়েটের উদ্দেশ্য শরীরের অতিরিক্ত টক্সিন ও বর্জ্য পদার্থ ডিটক্সিফাই করে ফেলা। যথেষ্ট পরিমাণ প্রাকৃতিক খাবার রয়েছে এই চার্টে, যা গরমকালে শরীরের অতিরিক্ত টক্সিন সরিয়ে ফেলতে সাহায্য করে। এছাড়াও ডিটক্স ডায়েট আপনার মনকেও রাখবে প্রফুল্ল, অতিরিক্ত ঘাম এবং শরীরের দুর্গন্ধও দূর করবে। শাকসবজি, ফলমূল ইত্যাদি এই ডায়েটের স্টেপল, সঙ্গে পানিও খেতে হবে প্রচুর পরিমাণে। জুস ও স্মুদি পান করতে হবে চিনি ছাড়া।
২. গ্রীষ্মের পোশাকে-আশাকে স্বাস্থ্যসচেতনতা স্বাস্থ্য শুধু ডায়েটের ওপরই নির্ভর করে না। আপনার ক্লোদিং চয়েসও ফিট থাকার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। কারণ পোশাক আমাদের ত্বক, চোখ, চুল ও শরীরের বিভিন্ন অংশকে রোদ, তাপ ও ধুলাবালি থেকে রক্ষা করে। বিভিন্ন সিজন অনুযায়ী পোশাক পরার ধরন বিভিন্ন রকম হয়।
ঢোলা ও সুতির কাপড়:
গরমকালে আঁটসাঁট ও ভারী পোশাক পরে নিমন্ত্রণে যাওয়ার অভিজ্ঞতা কার না হয়েছে? এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমরা গরমে অতিষ্ঠ হয়ে যাই এ রকম পোশাকে। তবে নিমন্ত্রণে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে ভারী ও টাইট পোশাক পরলেও বাড়িতে বা কর্মক্ষেত্রে; যেখানে আমরা দিনের বেশিরভাগ সময় কাটাই, সেখানে এ রকম পোশাক পরলে ঘাম, হিটস্ট্রোক, শরীরে দুর্গন্ধ, অস্বস্তি ইত্যাদি নানা সমস্যা হতে পারে।গরমকালে ঢোলা ও সুতি কাপড় পরা সবচেয়ে আরামদায়ক। এছাড়াও ঢোলা পোশাকে বাতাস চলাচল ভালো হয় বলে আমাদের শরীর ঠা-া থাকবে। সুতি কাপড় আমাদের সানবার্ন থেকে রক্ষা করে।
রোদে সানগ্লাস পরুন চোখ ভালো রাখাও অত্যন্ত জরুরি। তাই গ্রীষ্মের প্রচ- রোদে বাইরে বের হলে সানগ্লাস পরতে ভুলবেন না। সানগ্লাস ছাড়া রোদে বেশি সময় কাটালে চোখে লং-টার্ম সমস্যা হতে পারে। এছাড়াও চোখে অতিরিক্ত সূর্যের আলো পড়লে প্রচ- মাথাব্যথাও হতে পারে।
মাথায় ক্যাপ বা টুপি:
বাইরের রোদ ও ধুলাবালি আমাদের চুল ও স্ক্যাল্পের জন্যও বেশ ক্ষতিকর। এছাড়া মাথায় ঘাম হলে দ্রুত চুল পড়ে যেতে পারে। তাই বাইরে বের হলে কাপড়ের ক্যাপ বা টুপি পরতে পারেন। তবে অনেকের ক্যাপ পরলেও মাথায় ঘাম হয়। সেক্ষেত্রে ছাতা নিয়েও বাইরে বের হতে পারেন।
সান্সক্রিন বা লোশন:
গরমে মেকআপ গলে যাওয়ার ভয় কে না করে? প্রচুর ঘাম হলে মেকআপ তো নষ্ট হয়ে যায়ই, এছাড়া ত্বকেও বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। তাই বিভিন্ন সানক্রিন বা লোশন ব্যবহার করতে পারেন। এতে ত্বক যেমন রোদে পুড়ে যাওয়া থেকে বাঁচবে, ত্বক থেকে অতিরিক্ত তেল দূর হবে, তেমনি গরমে ঘর্মগ্রন্থি বন্ধ হয়ে ত্বকের নিচে ঘাম জমার ভয়ও থাকবে না।
৩. গ্রীষ্মে ব্যায়াম করুন:
নিয়মিত গরমকালে সারাদিনের ক্লান্তি নিয়ে ব্যায়াম করা মোটেই সহজ কথা নয়। তাছাড়া দৌড়ানো, খেলাধুলা, ব্যায়াম ইত্যাদি বাড়তি কাজগুলো গরমে অতিরিক্ত করলে অসুস্থ হয়ে যাওয়ার ভয়ও থাকে। তবে আপনার যদি নিয়মিত ব্যায়ামের বা খেলাধুলার অভ্যাস থাকে, তবে তা ছেড়ে দেয়াও উচিত হবে না মোটেই, তাতে অভ্যাস নষ্ট হওয়া থেকে শুরু করে শরীরে মেদ জমা বিভিন্নরকম সমস্যা হতে পারে। তবে উপায়? সাঁতার কাটুন নিয়মিত গরম আর ব্যায়ামের মধ্যে সবচেয়ে ভালো বোঝাপড়াটা হয় বোধহয় সাঁতারে। এতে আপনার গরম লাগারও আশঙ্কা নেই এবং ব্যায়াম হিসেবেও সাঁতার খুব ভালো। আর যদি সাঁতার না জানেন, তাহলে শিখে নিন এই উপলক্ষে। তবে সাঁতার কাটার আগে ও পরে প্রচুর পানি পান করতে হবে।
ডাইনামিক থেকে স্ট্যাটিক:
বছরের অন্যান্য সময় জোর দিয়েছেন বিভিন্ন ডাইনামিক ব্যায়ামের ওপর যেমন ওজন তোলা, কার্ডিও ইত্যাদি। গরমে জোর দিন স্ট্যাটিক ব্যায়ামের ওপর যেমন ইয়োগা, স্ট্রেচিং। তবে ওজন তোলা, কার্ডিও ইত্যাদিও চলতে পারে, সেক্ষেত্রে নিজের শরীরকে গরমের সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার সময় দিন, তাড়াহুড়ো করবেন না।
ঘরে ব্যায়ামের অভ্যাস করুন:
গরমকালে ব্যায়ামের জন্য বাইরে বের না হওয়াই ভালো। অল্প খরচে বা কোনো খরচ ছাড়াই আপনি ঘরে ব্যায়ামের পরিবেশ তৈরি করে নিতে পারবেন। রেজিস্ট্যান্স ব্যান্ড, গ্র্যাভিটি বল, ইয়োগা ম্যাট ইত্যাদি দিয়ে যেকোনো প্রফেশনাল জিম সেটিংয়ের মতোই ব্যায়াম করা সম্ভব। এছাড়াও ঘরে ফ্রিহ্যান্ড ব্যায়াম বা যোগব্যায়াম করে নিজেকে ফিট রাখতে পারবেন। আর নিতান্তই বাইরে ব্যায়াম করতে গেলে সানস্ক্রিন ও ব্যায়ামের পোশাক পরে বের হবেন। ব্যায়ামের পর:
ব্যায়ামের পর তোয়ালেতে বরফ জড়িয়ে শরীরে বা ঘাড়ের চারপাশে ধরে রাখলে শরীর ঠাণ্ডা হবে। এছাড়া ফলের জুস বা পোস্ট-ওয়ার্কআউট শেক খেতে পারেন ব্যায়ামের পর, তাতে ভারী ব্যায়ামের পরও কাজ করার এনার্জি আসবে শরীরে। ব্যায়ামের পর আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করে গোসল করে নেয়া উচিত।
৪. গ্রীষ্মে রোগবালাই ও তার প্রতিরোধ:
গরমকালে অনেকরকম রোগবালাই হতে পারে। এ সময় জীবাণুদের বংশবৃদ্ধি হয় খুব দ্রুত। এছাড়াও তাপমাত্রা পরিবর্তনে আমাদের শরীরের বিভিন্ন পরিবর্তন হয়, তাই আমাদের শরীর অনেক নাজুক থাকে। এ সময় রোগ এড়াতে অধিক সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। গ্রীষ্মে কী কী রোগ হতে পারে এবং কীভাবে আমরা তা প্রতিরোধ করতে পারব তা সবারই জেনে নেয়া উচিত।
সর্দি-কাশি ও ভাইরাস জ্বর:
এ সময় সর্দি, কাশি, ভাইরাসজনিত জ্বর হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি থাকে। বাইরে অনেকক্ষণ থাকলে শরীরে ঘাম হতে পারে এবং সেই ঘাম না মুছে গোসল করলে সর্দি-কাশি হওয়ার আমঙ্কা রয়েছে। তাই বাইরে থেকে এসে প্রথমে শরীর শুকিয়ে নিয়ে এরপর গোসল করতে হবে। এছাড়া ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত মানুষের সঙ্গে বেশিক্ষণ সময় কাটালে আপনারও জ্বর হতে পারে। তাই সবসময় বাইরে বের হলে ফেস মাস্ক পরে থাকা দরকার। বাইরে থেকে এসে বা যেকোনো কাজ করে সবসময় হাত ধুয়ে ফেলতে হবে।
ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও এনসেফালাইটিস:
গরমে মশার উৎপাত অনেক বৃদ্ধি পায়, তাই মশাবাহিত রোগে ধরার আশঙ্কাও বেড়ে যায়। রাত্রে ঘুমানোর আগে সবসময় মশারি টাঙিয়ে ঘুমানো উচিত। বাড়িতে কোথাও পানি জমতে বা কিছু পচতে দেয়া যাবে না। আশপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন সবসময়। বাড়ির আশপাশে মশার প্রজননক্ষেত্র থাকলে তা ধ্বংস করে দিন।
ডায়রিয়া, টাইফয়েড, হেপাটাইটিস:
পানিবাহিত রোগগুলো গরমের আরেকটি বিশাল সমস্যা। গরমে আমাদের প্রচুর পানি পান করতে হয়, কিন্তু বিশুদ্ধ পানি সবসময় পাওয়া যায় না। অনেকে রাস্তার পাশের দোকান থেকে পানি পান করেন, যা বেশিরভাগ সময়ই বিভিন্ন পানিবাহিত রোগের জীবাণু বহন করে। এছাড়াও গরমে খাবার দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়, সেসব খাবার খেলেও পেটের অসুখ হতে পারে। খাবার না খেলে সবসময় ফ্রিজে রেখে দেবেন।
খানিকটা সতর্ক হয়ে চললে গরমে স্বাস্থ্য ঠিক রাখা খুব বেশি কঠিন কিছু নয়। ভালো স্বাস্থ্য আপনার কাজ ও জীবনে উন্নতি করতেও সাহায্য করবে। তাই গরমে ক্লান্তি আর অবসাদকে তাড়িয়ে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয়ে উঠুন এই টিপসগুলো অনুসরণ করে।
গ্রীষ্মকালীন ফল ও শাকসবজি
Reviewed by NINDOOK LIFE
on
December 09, 2019
Rating:
No comments: