সন্ধ্যা নেমে আসে শহরের বুকে। ধীরে ধীরে রাত হয়। ঘুটঘুটে অন্ধকারের কালো রাত।
সন্ধ্যা নেমে আসে শহরের বুকে। ধীরে ধীরে রাত হয়। ঘুটঘুটে অন্ধকারের কালো রাত। রক্তে ভিজে যায় শীতের মাটি। ধর্ষকের অত্যাচারে মুমূর্ষু ৮ বছরের টোকাই মেয়েটা বাঁচার তাগিদে জোরে জোরে শ্বাস নিতে থাকে।
দূর থেকে ভেসে আসে আযানের ধ্বনি।এশারের আযান। জামিল খানিকটা রুক্ষ কন্ঠে বলে উঠে, "আযান দেওয়ার আর সময় পেল না, হারামজাদা "। নির্জন জায়গাটায় কেউ ই শুনতে পায় না তার কন্ঠস্বর।
টোকাই মেয়েটির কানে অস্পষ্ট আওয়াজ ভেসে যায়। চোখে ঝাপসা লাগে মেয়েটির।চিৎকার করে উঠতে চায় কিন্তু কন্ঠস্বর রূদ্ধ হয়ে গেছে।দুচোখের জল আর রক্ত মিশে একাকার হয়ে যায়।
আযান শেষ হতে না হতেই চিরতরে পৃথিবীকে বিদায় জানায় ছোট্ট মেয়েটি। জামিল খানিকটা বিকৃত হাসি দিয়ে বিড়বিড় করে বলে উঠে, " আল্লাহ্, বাঁচাইলো "।
"খাচ্চর মা*" বলতে বলতেই ঘেমে ঘেমে উঠে তার শরীর। শীতের কুয়াশা আর রাতের অন্ধকারে কারোর চোখেই পড়ে না তার ঘামে ভেজা শরীর। পড়বেই বা কি করে!
এই নির্জন জায়গায় কেই বা আসবে! আল্লাহ্ র রহমতে পাইছিলাম একটা খাসা মাল ! জামিলের এই এক অভ্যাস
, কথায় কথায় আল্লাহ্ র নাম নেয়।তার ধারনা খারাপ কাজ করেও আল্লাহ্ র নাম নিলে গুনাহ্ সব মাফ হয়ে যায়।এতে যে একজন স্রষ্টার পবিত্রকে কুলশিত করা হয় তা সে মানতেই নারাজ।
ফোনের আলোয় লাশটিকে পাশের ডোবায় ফেলে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলে রক্তের দাগ।পানি আর ডোবার জলের রং মিলে কি যেন এক রংয়ের আবির্ভাব ঘটে তা এই অন্ধকারে চোখে পড়ে না।
হনহন করে হাঁটা দেয় জামিল ।রুমালে বারবার মুছে তার ঘামে ভেজা শরীর।যেতে যেতে বিবেকের সাথে খানিকটা দ্বন্দ্ব হয় তার।
বিবেকঃ দরকার হলে আরেকটা বিয়ে করতি তাই বলে মেয়ের জীবনটা এভাবে শেষ করে দিলি?
জামিলঃবিয়ে করতে টাকা লাগে, ধর্ষণ করতে টাকা লাগে না।তাছাড়া আমিতো খারাপ কোনো কাজ করি নাই।
আমি তাকে খাবার খাওয়ানোর কথা বলে একটু মজায় তো করছি, তাতে দোষের কি আছে,হুম! এতে আমার যেমন লাভ হল তেমনই মেয়েটিরও লাভ হয়েছে।একদিন না একদিন তো টোকাই মেয়েটি খেতে পড়তে না পেরে ধুকে ধুকে মরেই যেত।আমি কাজটা সহজ করে দিলাম। বুঝলা বিবেক, বুঝলা।
হঠাৎই ক্রিং ক্রিং করে বেজে ওঠে তার ফোন। রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে তার মা বলে উঠে, "বাবা,বউমা কেমন যেন করছে তাড়াতাড়ি হসপিটালে আয় ( হসপিটালটার নামটা বলে)।
জামিল হসপিটালে পৌঁছাতে না পৌঁছাতেই জন্ম নেয় তার প্রথম সন্তান। কন্যা সন্তান। মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে খুব আনন্দ হয় জামিলের, টোকাই মেয়েটার কথা এখন আর তার মনে নেই।
পরম স্নেহে চুমো খায় মেয়েটির (তার মেয়ে) কপালে অথচ এ ঠোঁটের আঘাতে মরে গেছে একটা বাচ্চা মেয়ের সম্ভ্রম। পরম আনন্দে বুকে জড়িয়ে ধরে মেয়েটিকে (তার মেয়ে)। অথচ কয়েকঘন্টা আগে বাচ্চা একটা মেয়ে বাঁচার তাগিদে এ বুকেই আচড় কেটেছিল!
জামিলের মেয়েটির বয়স এখন ৮ পেরিয়েছে। স্কুলে যায়। বাড়ির পাশে ছোট্ট গলিটাতে খেলাধুলা করে।পাড়ার কোনো বখাটে যুবক মেয়েটার দিকে কুদৃষ্টিতে তাকালে,
তার চোখ তুলে নেওয়ার হুমকি দেয় জামিল অথচ তার চোখে তারই মেয়ের বয়সী এক মেয়ের ইজ্জত লুট হয়েছিল। সে কথা তার মনে পড়ে কিনা কেইবা জানে!
এখন শীতকাল চলে এসেছে। অলিগলিতে বাচ্চাদের সাথে খেলে বেড়ায় জামিলের মেয়ে।হঠাৎই একদিন একা পেয়ে এক মধ্যবয়সী চাচা কোলে তুলে নেয় ওকে।
চকলেট দিবে বলে নিয়ে যায় বেডরুমে।হাত,পা, মুখ বেঁধে কেড়ে নেয় ওর সম্ভ্রব।মেয়েটার ধর্ষণ সম্পর্কে ধারণা হয় নি তখনও কিন্তু সে বুঝতে পারে প্রচন্ড ব্যথায় তার শরীর নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে। জ্ঞান হারিয়ে ফেলে মেয়েটি।মাগরিবের আযানের শব্দ ভেসে আসে কানে।
এদিকে
বাড়িতে মেয়েটিকে খুঁজার ধুম পড়ে যায়।কয়েকঘন্টা
খুঁজার পর রাস্তার পাশে
আবিষ্কার করে মেয়েটিকে।হসপিটালে
নেওয়ার কয়েকদিন পর মেয়েটি সুস্হ
হয়,
কিন্তু কি যেন এক জড়তা মেয়েটিকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। শীতের সন্ধ্যায় ওকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। মেয়েটি গুটিসুটি মেরে বসে থাকে বিছানায়, তার চোখদুটো দূর আকাশে একটু খানি আলো খুঁজতে চায়। জামিল মেয়েটির পাশেই দাঁড়িয়ে আছে।
আনমনে হঠাৎ মেয়েটি জামিলকে বলে উঠল,"আমার সাথে কাকু টা এমন করলো কেন, বাবা? জামিলের মুখে কথা নেই। ঘেমে ঘেমে উঠছে ওর শরীর, ঠিক কয়েকবছর আগের সেই কুয়াশাঘেরা রাতটির মতো।
কিন্তু এই ঝরে পড়া ঘাম কি তার হিংস্রতার নাকি অনুসূচনার? তা আর জানা হয় নি।
গল্পঃ পাপিষ্ঠ
লেখকঃ হাবিবা সুলতানা খুশি
৯ই মার্চ,২০১৮
No comments: