মরণ প্রেম"
:
লেখা:- অনন্ত অন্তিম (অবনির আব্বু)
:
(একটি প্রেম কাহিনী)
--------------
- আমাকে তোমার পছন্দ হয়নি, এ কথাটা বিয়ের আগে অন্তত একবার বলতে৷ আমি সেখানেই সব থামিয়ে দিতাম৷ কেন বলনি তখন?
আমি চুপ থাকলাম। সে আবারও বলল,
-বলো, কেন বলনি?
-আমাকে জোর করা হয়েছে। বাধ্য হয়েছি৷ আমার কি খুব সখ আপনার সংসার করার?
আমার কথাটা শুনার সাথে সাথেই পলাশের
মুখটা মলিন হলে গেলো! যেন এমনটা আমার কাছ থেকে আশা করেননি। আমি ভ্রুক্ষেপ করলাম না৷ এসব ন্যাকামো আমার জানা আছে৷ আমি চুপ থাকলাম। সে খানিকটা অসহায় হয়ে বলল,
-চল, তোমাকে গল্পটা বলি। আমার প্রথম প্রেমের গল্প। যেটা তোমার ভীষণ অপছন্দ৷ যার কারণে তুমি আমাকে সহ্য করতে পারো না৷ চিন্তা করো না। ছোট করে বলব। বিরক্ত হইও না৷ কেমন?
রাতঃ-১:৩০
বারান্দায় বসে আছি। বাইরে ঘন অন্ধকার। বৃষ্টি হচ্ছে ভীষণ। মাঝে মাঝে বৃষ্টির ছিটে গায়ে পড়ছে। আমার অসহ্য লাগছে৷ অসহ্য লাগার দুটি কারন, প্রথমটা হলো এই বৃষ্টি। বৃষ্টি খুব একটা ভালো লাগে না৷ এ সময়ে বেশ চমৎকার একটা ঘুম দেওয়া যেতে। কিন্তু আমি তা পারছি না। না পারার কারণের সাথে দ্বিতীয় কারণটা যুক্ত আছে৷ আমার অসহ্য লাগার দ্বিতীয় কারণ হলো আমার স্বামী। নাম শাহ্-পরাণ পলাশ৷ যাকে আমি একদমই সহ্য করতে পারি না৷ দু'চোখে দেখতে পারিনা। নাম মাত্র বিয়ে হয়েছে। তাকে বিয়েও করতে চাইনি। বাবা জোর করলেন। এক প্রকার ব্ল্যাকমেইল বলা চলে। নিজেও উপায়হীন ছিলাম। তাকে বিয়ে না করার মূল কারণ হলো সে বিয়ের পূর্বে প্রেম করছে। ততদিনে প্রেমের প্রতি আমার যথেষ্ট ঘৃণা জন্মে গিয়েছিল। ঘৃণা জন্মানোর কারণ হলো আমার প্রেম। রোহান নামের একটা ছেলের সাথে আমার প্রেম ছিল। গভীর ভালোবাসায় লিপ্ত ছিলাম দুজনে। শেষকালে সে জানালো আমাদের ভালোবাসা পরিপূর্ণ করবে এবং সেটা হবে রুমডেট এর মাধ্যমে। আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম। বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে ও এমনটা বলেছে। দুবছরের প্রেম সেখানেই ইতি টানি আমি। বন্ধুবিরাও বলেছিল, আজকালের প্রেমে এসব খুব সিম্পল ব্যাপার। প্রেম করলে রুমে যেতেই হয়। সেদিন থেকে প্রেম এবং প্রেমিকদের প্রতি আমার বিষদ অনিহা জন্মে গিয়েছিল। ঘৃণা হতো ভীষণ। নিজেকে বহু বুঝাতাম। সবাই এক না। তবুও কেন জানি নিতে পারতাম না। বাবা যখন বললেন বিয়ে দিবেন তখন আমি সোজাসাপটা নিষেধ করে দিয়েছিলাম। তিনি আমার নিষেধাজ্ঞা শুনেন নি। পাত্রপক্ষকে বাসায় দাওয়াত দেন৷ তারা আসে। পাত্রের সাথে আমাকে আলাদা করে কথা বলতে বলা হয়৷ কথা বলি৷ আমার প্রথম প্রশ্ন ছিল,
-প্রেম করেছেন কখনও?
তাকে হতভম্ব দেখলাম। হঠাৎই এমন প্রশ্ন করব বলে ভাবেননি হয়তো। তবুও সে মৃদ্যু হেসে খানিকটা লজ্জা পেয়ে বলল,
-জ্বী!
আমি সেখান থেকে উঠে গিয়ে বাবাকে আড়ালে এনে বলি,
-বাবা,আমি এই ছেলেকে বিয়ে করতে পারব না।
বাবা রেগে গেলেন। বললেন,
-এমন পাত্র হাজারে একটা পাওয়া যায়৷ তুই বলছিস আমি তা হাত ছাড়া করে ফেলব? কী খারাবি এই ছেলের মাঝে বলতো? দেখতে শুনতে তো চমৎকার। খোঁজ খবর নিয়ে দেখেছি। চরিত্রে দাগ নেই তার।
আমার রাগ উঠল। বললাম,
-এসব খোঁজ খবরে বিশ্বাস করে লাভ নেই বাবা। এগুলো সব মিথ্যা আর ছেলে আগে প্রেমও করেছে।
বাবা খানিক চুপ থাকলেন। তার রাগত চেহারা স্বাভাবিক হতে থাকল। আমার ভ্রু কুচকে এল। বাবা বললেন,
-তুই প্রেম করিসনি? বল করিসনি?
আমার আর কিছুই করারা থাকল না। অগত্যা বিয়ের পিড়িতে বসতে হলো৷ খানিকটা ডিপ্রেশনেও ছিলাম৷ তাই জোরাজোরি করিনি৷ বিয়ে করলাম। বাসর ঘরে সে আমাকে কিছু বলতে চাইল৷ সুযোগ দিলাম না৷ স্পষ্ট জানিয়ে দিলাম, আমার কাছ থেকে যেন তিনি কিছু আশা না করেন। এক মাস পেরিয়ে গেল। আজ আমরা এত রাতে এক সাথে বসেছি৷ আমাদের এভাবে আর বসা হয়নি৷ পলাশ জোর করেছে আজ৷ তাই এলাম৷ পলাশ গল্প বলা শুরু করল,
"ক্লাস নাইনে ছিলাম তখন। আমার স্পষ্ট মনে আছে৷ বারই ফেব্রুয়ারি। প্রথম প্রিয়ড। শান্তা মেডামের অংক ক্লাস৷ ম্যাম সবে রোল কল করে শেষ করলেন। এমন সময় হেড স্যার ক্লাসে ঢুকলেন। তার পেছন পেছন একটা মেয়ে ঢুকল। নীল স্কুল ড্রেস পরা, কোমরে-বুকের উপর সাদা বেল্ট লাগানো, কানের কাছে ঘন চুলের দুটি বেণি ঝুলছে, ভাসা ভাসা চোখ দুটোয় গাঢ় কাজল, ঠোঁটে অল্প করে লিপস্টিক লাগানো, মীরা বিশ্বাস করো আমি স্তব্দ হয়ে যাই। আমার বুকের ভেতরটা কেমন জানি করতে থাকে। অদ্ভুত একটা শিহরণ আমার সমস্ত গা কাঁপিয়ে তোলে। বিশ্বাস করো, আমার মনে হলো আমি কোনো পরী দেখছি। এত সুন্দর মেয়ে আমি এর পূর্বে দেখিনি৷ আমার মনে হলো আমি এই মেয়ের জন্যে সব করতে পারব। সব। স্যার মেয়েটিকে পরিচয় করিয়ে দেয়। তার নাম অদ্রিজা আহমেদ অদ্রি। আমার প্রথম এবং শেষ প্রেম সেখান থেকেই শুরু হয়।"
এবার পলাশ একটু থামল। আমি তার দিকে তাকিয়ে থাকলাম৷ একটু আগেও আমার প্রচণ্ড অসহ্য লাগছিল। ভাবছিলাম কখন উঠব এখান থেকে৷ কিন্তু মানুষটার কথা গুলো শুনে আমার সেই অস্থিরতা, অসহ্য লাগা যেন হুট করেই তলিয়ে গেল। ওর চেহারাও যেন চরম পরিবর্তন হতে থাকল৷ একদম অন্যরকম। আমার মনে হলো আমি কখনই এই পলাশকে দেখিনি। কখনই না৷ পলাশ আবার বলতে থাকল,
"প্রথমদিন থেকেই আড় চোখে মেয়েটাকে দেখতাম। লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতাম৷ প্রতিদিনই দেখি। ক্লাসের অধিকাংশ ছেলেই তার প্রতি আগ্রহী ছিল। মুগ্ধ ছিল৷ ওর কলম পড়ে গেলে পাশের বেঞ্চের ছেলেটা দ্রুত গিয়ে সেটি উঠিয়ে দিত৷ মেয়েটা যদি বলত ও এখন আইস্ক্রিম খাবে ক্লাসের অধিকাংশ ছেলে যেন প্রতিযোগিতা করে দৌড়ে যেত। বলা বাহুল্য তাদের মাঝে একজন আমি ছিলাম। কিন্তু কখনই প্রতিযোগিতা চাইনি আমি। আমার তখন অসহ্য যন্ত্রণা হত যখন কোনো ছেলের সাথে ও কথা বলত৷ হাসাহাসি করত। কী দরকার এত কথা বলার!
আমি প্রতিদিন স্কুলে যেতাম। এমনকি শুক্রবারও ইচ্ছে হতো যাওয়ার। তুমি বিশ্বাস করবে না, আমার ভেতর কী ভীষণ উন্মাদনা কাজ করত তাকে দেখার। বুকের ভেতর কেমন জানি করত৷ কী অদ্ভুত এক শিহরণ আমাকে উন্মাদ করে তুলছিল। একদিন আমি ধরা খেয়ে যাই। মেয়েটা বুঝতে পেরে যায় আমি তাকে দেখছি৷ আমি ভয় পেয়ে যাই। মাথা নিচু করে রাখি৷ আড়চোখে দেখি তাকে। সে তখনও আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। আমাদের চোখাচোখি হয়৷ আমার গা কেঁপে উঠে তখন৷ আমার মনে হল ওর চোখে কারেন্ট জাতীয় কিছু ছিল৷ সেটা দূর থেকে আমাকে শক করে। আমি দিন দিন মেয়েটার প্রতি দূর্বল হয়ে যাই৷ মনের ভেতর অদ্ভুত এক দূর্বলতা কাজ করে। আমাদের প্রথম কথা হয়৷ তিন মাস পর। একদিন আমি আমাদের বেঞ্চের কর্ণারে বসেছি। ও নিজেদের বেঞ্চের কর্ণারে বসেছে। আমরা দুজনই কাছাকাছি। ওর গা থেকে মিস্টি একটা ঘ্রাণ আসছিল। দামি ফার্পিউম হবে হয়তো৷ আমি চুপচাপ বসে থাকলাম। এদিকে আমার ভেতরে যেন ঝড় বইছিল। ঘূর্ণিঝড় শুরু হয়েছে। বুকের ভেতর কি যে কাঁপা কাপছিল! আমার যেন দম বন্ধ হয়ে আসবে। আমি কান্না করে দিব। চোখে জল জমবে। এমন অবস্থা৷ ঠিক সে সময়ে অদ্রির মিস্টি স্বর শোনা গেল,
-কেমন আছো পলাশ?
আমার হার্টবিট যেন থমকে দাঁড়ায়৷ মুখ দিয়ে শব্দ আসে না৷ আমি বাক শক্তি হারিয়ে ফেলি৷ ওর দিকে তাকিয়ে হাসি কেবল। ও কেমন আছে এমনটা যে জিজ্ঞেস করব তাও পারিনি৷ বুকের ভেতর তখন কেউ ঢোল বাজাচ্ছিল যেন৷ আমি কেবল স্তব্ধ হয়ে বসে থাকলাম। ঠিক তখনই একটা ছোট্ট কাগজ এসে পড়ে আমার সামনে। আমি সেটা খুলে পড়ি৷ সেখানে লেখা,
'সারাক্ষন তো ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে থাকো। কিছু বলতেও পারো না। যেই না আমি কথা বলতে এলাম ওমনি তোমার ভাব বেড়ে গেল। তুমি জানো? রুমার সাথে এক প্রকার ঝগড়া করেই কর্ণারের সিটটা নিয়েছি৷'
আমি দ্রুত ওর দিকে ফিরলাম। দেখলাম সে অভিমানী দৃষ্টিতে জানার দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। ওর সেই চেহারা সেদিন আমার মনের ভেতর গেঁথে গিয়েছিল৷ আজো আমি সেই চেহারা দেখতে পাই। সেই অভিমানী দু'চোখ! কী মিস্টি দেখায়। মুন্নি? তুমি কী বিরক্ত হচ্ছো?"
আমি কিছু বলতে পারলাম না। কেবল চুপ থাকলাম। আমার মুখ দিয়ে যেন কোনো শব্দই আসছিল না৷ পলাশ বলে উঠল,
"আচ্ছা ঠিকাছে। আমি তোমাকে আরো সংক্ষেপে বলছি। প্লিজ বিরক্ত হইও না৷ তোমাকে বিরক্ত করার ইচ্ছে নেই আমার। শোনো, ওর সাথে আমার প্রেম হয়৷ ক্লাস টেন এর প্রথম দিন থেকে। আমার প্রথম প্রেমের গল্প সেখান থেকেই শুরু হয় গভীর ভাবে। কী আবেগ দুজনের! কত কেয়ার! কত ভালোবাসা দুজন দুজনের জন্যে প্রাণ দিয়ে দিতে পারব। আমরা একই কলেজে ভর্তি হয়৷ কলেজে উঠার পর আমাদের প্রেম আরো গাঢ় হয়। দুজনের প্রতি দুজনের কেয়ার বেড়ে যায়৷ খুব আনন্দঘন দিন কাটতে থাকে আমাদের৷ সেখানে এক পশুর চোখ পড়ে ওর উপর৷ কলেজ ভিপি। আমাকে ধমকায়। আমি যেন সরে যাই অদ্রির জীবন থেকে। আমি সেগুলো এড়িয়ে চলি। নিজের মতো চলতে থাকি। এর জন্য আমাকে মার খেতে হয়৷ এক সময় কলেজ থেকে বের করে দেওয়া হয়। আমি বুঝতে পারি এসব ওই ভিপির চাল। আমি অদ্রিকে সব খুলে বলি। ওকে চিন্তিত দেখায়। আমি ওকে আশ্বাস দেই৷ বলি,
-সব ঠিক হয়ে যাবে। চিন্তা করো না৷
সে বিকেলে আমার কাঁধে কত বিশ্বাসের সহিত মাথা রেখেছিল মেয়েটা। সে একবারই। শেষ বারের মতো। এর প্রায় দু সপ্তাহ পর অদ্রির বান্ধুবি ইরিনা আমাকে একটা চিঠি দেয়৷
আর তাতে লেখা ছিলো!!!!
.
চলবে..…...
*
"
:
লেখা:- অনন্ত অন্তিম (অবনির আব্বু)
:
(একটি প্রেম কাহিনী)
--------------
- আমাকে তোমার পছন্দ হয়নি, এ কথাটা বিয়ের আগে অন্তত একবার বলতে৷ আমি সেখানেই সব থামিয়ে দিতাম৷ কেন বলনি তখন?
আমি চুপ থাকলাম। সে আবারও বলল,
-বলো, কেন বলনি?
-আমাকে জোর করা হয়েছে। বাধ্য হয়েছি৷ আমার কি খুব সখ আপনার সংসার করার?
আমার কথাটা শুনার সাথে সাথেই পলাশের
মুখটা মলিন হলে গেলো! যেন এমনটা আমার কাছ থেকে আশা করেননি। আমি ভ্রুক্ষেপ করলাম না৷ এসব ন্যাকামো আমার জানা আছে৷ আমি চুপ থাকলাম। সে খানিকটা অসহায় হয়ে বলল,
-চল, তোমাকে গল্পটা বলি। আমার প্রথম প্রেমের গল্প। যেটা তোমার ভীষণ অপছন্দ৷ যার কারণে তুমি আমাকে সহ্য করতে পারো না৷ চিন্তা করো না। ছোট করে বলব। বিরক্ত হইও না৷ কেমন?
রাতঃ-১:৩০
বারান্দায় বসে আছি। বাইরে ঘন অন্ধকার। বৃষ্টি হচ্ছে ভীষণ। মাঝে মাঝে বৃষ্টির ছিটে গায়ে পড়ছে। আমার অসহ্য লাগছে৷ অসহ্য লাগার দুটি কারন, প্রথমটা হলো এই বৃষ্টি। বৃষ্টি খুব একটা ভালো লাগে না৷ এ সময়ে বেশ চমৎকার একটা ঘুম দেওয়া যেতে। কিন্তু আমি তা পারছি না। না পারার কারণের সাথে দ্বিতীয় কারণটা যুক্ত আছে৷ আমার অসহ্য লাগার দ্বিতীয় কারণ হলো আমার স্বামী। নাম শাহ্-পরাণ পলাশ৷ যাকে আমি একদমই সহ্য করতে পারি না৷ দু'চোখে দেখতে পারিনা। নাম মাত্র বিয়ে হয়েছে। তাকে বিয়েও করতে চাইনি। বাবা জোর করলেন। এক প্রকার ব্ল্যাকমেইল বলা চলে। নিজেও উপায়হীন ছিলাম। তাকে বিয়ে না করার মূল কারণ হলো সে বিয়ের পূর্বে প্রেম করছে। ততদিনে প্রেমের প্রতি আমার যথেষ্ট ঘৃণা জন্মে গিয়েছিল। ঘৃণা জন্মানোর কারণ হলো আমার প্রেম। রোহান নামের একটা ছেলের সাথে আমার প্রেম ছিল। গভীর ভালোবাসায় লিপ্ত ছিলাম দুজনে। শেষকালে সে জানালো আমাদের ভালোবাসা পরিপূর্ণ করবে এবং সেটা হবে রুমডেট এর মাধ্যমে। আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম। বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে ও এমনটা বলেছে। দুবছরের প্রেম সেখানেই ইতি টানি আমি। বন্ধুবিরাও বলেছিল, আজকালের প্রেমে এসব খুব সিম্পল ব্যাপার। প্রেম করলে রুমে যেতেই হয়। সেদিন থেকে প্রেম এবং প্রেমিকদের প্রতি আমার বিষদ অনিহা জন্মে গিয়েছিল। ঘৃণা হতো ভীষণ। নিজেকে বহু বুঝাতাম। সবাই এক না। তবুও কেন জানি নিতে পারতাম না। বাবা যখন বললেন বিয়ে দিবেন তখন আমি সোজাসাপটা নিষেধ করে দিয়েছিলাম। তিনি আমার নিষেধাজ্ঞা শুনেন নি। পাত্রপক্ষকে বাসায় দাওয়াত দেন৷ তারা আসে। পাত্রের সাথে আমাকে আলাদা করে কথা বলতে বলা হয়৷ কথা বলি৷ আমার প্রথম প্রশ্ন ছিল,
-প্রেম করেছেন কখনও?
তাকে হতভম্ব দেখলাম। হঠাৎই এমন প্রশ্ন করব বলে ভাবেননি হয়তো। তবুও সে মৃদ্যু হেসে খানিকটা লজ্জা পেয়ে বলল,
-জ্বী!
আমি সেখান থেকে উঠে গিয়ে বাবাকে আড়ালে এনে বলি,
-বাবা,আমি এই ছেলেকে বিয়ে করতে পারব না।
বাবা রেগে গেলেন। বললেন,
-এমন পাত্র হাজারে একটা পাওয়া যায়৷ তুই বলছিস আমি তা হাত ছাড়া করে ফেলব? কী খারাবি এই ছেলের মাঝে বলতো? দেখতে শুনতে তো চমৎকার। খোঁজ খবর নিয়ে দেখেছি। চরিত্রে দাগ নেই তার।
আমার রাগ উঠল। বললাম,
-এসব খোঁজ খবরে বিশ্বাস করে লাভ নেই বাবা। এগুলো সব মিথ্যা আর ছেলে আগে প্রেমও করেছে।
বাবা খানিক চুপ থাকলেন। তার রাগত চেহারা স্বাভাবিক হতে থাকল। আমার ভ্রু কুচকে এল। বাবা বললেন,
-তুই প্রেম করিসনি? বল করিসনি?
আমার আর কিছুই করারা থাকল না। অগত্যা বিয়ের পিড়িতে বসতে হলো৷ খানিকটা ডিপ্রেশনেও ছিলাম৷ তাই জোরাজোরি করিনি৷ বিয়ে করলাম। বাসর ঘরে সে আমাকে কিছু বলতে চাইল৷ সুযোগ দিলাম না৷ স্পষ্ট জানিয়ে দিলাম, আমার কাছ থেকে যেন তিনি কিছু আশা না করেন। এক মাস পেরিয়ে গেল। আজ আমরা এত রাতে এক সাথে বসেছি৷ আমাদের এভাবে আর বসা হয়নি৷ পলাশ জোর করেছে আজ৷ তাই এলাম৷ পলাশ গল্প বলা শুরু করল,
"ক্লাস নাইনে ছিলাম তখন। আমার স্পষ্ট মনে আছে৷ বারই ফেব্রুয়ারি। প্রথম প্রিয়ড। শান্তা মেডামের অংক ক্লাস৷ ম্যাম সবে রোল কল করে শেষ করলেন। এমন সময় হেড স্যার ক্লাসে ঢুকলেন। তার পেছন পেছন একটা মেয়ে ঢুকল। নীল স্কুল ড্রেস পরা, কোমরে-বুকের উপর সাদা বেল্ট লাগানো, কানের কাছে ঘন চুলের দুটি বেণি ঝুলছে, ভাসা ভাসা চোখ দুটোয় গাঢ় কাজল, ঠোঁটে অল্প করে লিপস্টিক লাগানো, মীরা বিশ্বাস করো আমি স্তব্দ হয়ে যাই। আমার বুকের ভেতরটা কেমন জানি করতে থাকে। অদ্ভুত একটা শিহরণ আমার সমস্ত গা কাঁপিয়ে তোলে। বিশ্বাস করো, আমার মনে হলো আমি কোনো পরী দেখছি। এত সুন্দর মেয়ে আমি এর পূর্বে দেখিনি৷ আমার মনে হলো আমি এই মেয়ের জন্যে সব করতে পারব। সব। স্যার মেয়েটিকে পরিচয় করিয়ে দেয়। তার নাম অদ্রিজা আহমেদ অদ্রি। আমার প্রথম এবং শেষ প্রেম সেখান থেকেই শুরু হয়।"
এবার পলাশ একটু থামল। আমি তার দিকে তাকিয়ে থাকলাম৷ একটু আগেও আমার প্রচণ্ড অসহ্য লাগছিল। ভাবছিলাম কখন উঠব এখান থেকে৷ কিন্তু মানুষটার কথা গুলো শুনে আমার সেই অস্থিরতা, অসহ্য লাগা যেন হুট করেই তলিয়ে গেল। ওর চেহারাও যেন চরম পরিবর্তন হতে থাকল৷ একদম অন্যরকম। আমার মনে হলো আমি কখনই এই পলাশকে দেখিনি। কখনই না৷ পলাশ আবার বলতে থাকল,
"প্রথমদিন থেকেই আড় চোখে মেয়েটাকে দেখতাম। লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতাম৷ প্রতিদিনই দেখি। ক্লাসের অধিকাংশ ছেলেই তার প্রতি আগ্রহী ছিল। মুগ্ধ ছিল৷ ওর কলম পড়ে গেলে পাশের বেঞ্চের ছেলেটা দ্রুত গিয়ে সেটি উঠিয়ে দিত৷ মেয়েটা যদি বলত ও এখন আইস্ক্রিম খাবে ক্লাসের অধিকাংশ ছেলে যেন প্রতিযোগিতা করে দৌড়ে যেত। বলা বাহুল্য তাদের মাঝে একজন আমি ছিলাম। কিন্তু কখনই প্রতিযোগিতা চাইনি আমি। আমার তখন অসহ্য যন্ত্রণা হত যখন কোনো ছেলের সাথে ও কথা বলত৷ হাসাহাসি করত। কী দরকার এত কথা বলার!
আমি প্রতিদিন স্কুলে যেতাম। এমনকি শুক্রবারও ইচ্ছে হতো যাওয়ার। তুমি বিশ্বাস করবে না, আমার ভেতর কী ভীষণ উন্মাদনা কাজ করত তাকে দেখার। বুকের ভেতর কেমন জানি করত৷ কী অদ্ভুত এক শিহরণ আমাকে উন্মাদ করে তুলছিল। একদিন আমি ধরা খেয়ে যাই। মেয়েটা বুঝতে পেরে যায় আমি তাকে দেখছি৷ আমি ভয় পেয়ে যাই। মাথা নিচু করে রাখি৷ আড়চোখে দেখি তাকে। সে তখনও আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। আমাদের চোখাচোখি হয়৷ আমার গা কেঁপে উঠে তখন৷ আমার মনে হল ওর চোখে কারেন্ট জাতীয় কিছু ছিল৷ সেটা দূর থেকে আমাকে শক করে। আমি দিন দিন মেয়েটার প্রতি দূর্বল হয়ে যাই৷ মনের ভেতর অদ্ভুত এক দূর্বলতা কাজ করে। আমাদের প্রথম কথা হয়৷ তিন মাস পর। একদিন আমি আমাদের বেঞ্চের কর্ণারে বসেছি। ও নিজেদের বেঞ্চের কর্ণারে বসেছে। আমরা দুজনই কাছাকাছি। ওর গা থেকে মিস্টি একটা ঘ্রাণ আসছিল। দামি ফার্পিউম হবে হয়তো৷ আমি চুপচাপ বসে থাকলাম। এদিকে আমার ভেতরে যেন ঝড় বইছিল। ঘূর্ণিঝড় শুরু হয়েছে। বুকের ভেতর কি যে কাঁপা কাপছিল! আমার যেন দম বন্ধ হয়ে আসবে। আমি কান্না করে দিব। চোখে জল জমবে। এমন অবস্থা৷ ঠিক সে সময়ে অদ্রির মিস্টি স্বর শোনা গেল,
-কেমন আছো পলাশ?
আমার হার্টবিট যেন থমকে দাঁড়ায়৷ মুখ দিয়ে শব্দ আসে না৷ আমি বাক শক্তি হারিয়ে ফেলি৷ ওর দিকে তাকিয়ে হাসি কেবল। ও কেমন আছে এমনটা যে জিজ্ঞেস করব তাও পারিনি৷ বুকের ভেতর তখন কেউ ঢোল বাজাচ্ছিল যেন৷ আমি কেবল স্তব্ধ হয়ে বসে থাকলাম। ঠিক তখনই একটা ছোট্ট কাগজ এসে পড়ে আমার সামনে। আমি সেটা খুলে পড়ি৷ সেখানে লেখা,
'সারাক্ষন তো ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে থাকো। কিছু বলতেও পারো না। যেই না আমি কথা বলতে এলাম ওমনি তোমার ভাব বেড়ে গেল। তুমি জানো? রুমার সাথে এক প্রকার ঝগড়া করেই কর্ণারের সিটটা নিয়েছি৷'
আমি দ্রুত ওর দিকে ফিরলাম। দেখলাম সে অভিমানী দৃষ্টিতে জানার দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। ওর সেই চেহারা সেদিন আমার মনের ভেতর গেঁথে গিয়েছিল৷ আজো আমি সেই চেহারা দেখতে পাই। সেই অভিমানী দু'চোখ! কী মিস্টি দেখায়। মুন্নি? তুমি কী বিরক্ত হচ্ছো?"
আমি কিছু বলতে পারলাম না। কেবল চুপ থাকলাম। আমার মুখ দিয়ে যেন কোনো শব্দই আসছিল না৷ পলাশ বলে উঠল,
"আচ্ছা ঠিকাছে। আমি তোমাকে আরো সংক্ষেপে বলছি। প্লিজ বিরক্ত হইও না৷ তোমাকে বিরক্ত করার ইচ্ছে নেই আমার। শোনো, ওর সাথে আমার প্রেম হয়৷ ক্লাস টেন এর প্রথম দিন থেকে। আমার প্রথম প্রেমের গল্প সেখান থেকেই শুরু হয় গভীর ভাবে। কী আবেগ দুজনের! কত কেয়ার! কত ভালোবাসা দুজন দুজনের জন্যে প্রাণ দিয়ে দিতে পারব। আমরা একই কলেজে ভর্তি হয়৷ কলেজে উঠার পর আমাদের প্রেম আরো গাঢ় হয়। দুজনের প্রতি দুজনের কেয়ার বেড়ে যায়৷ খুব আনন্দঘন দিন কাটতে থাকে আমাদের৷ সেখানে এক পশুর চোখ পড়ে ওর উপর৷ কলেজ ভিপি। আমাকে ধমকায়। আমি যেন সরে যাই অদ্রির জীবন থেকে। আমি সেগুলো এড়িয়ে চলি। নিজের মতো চলতে থাকি। এর জন্য আমাকে মার খেতে হয়৷ এক সময় কলেজ থেকে বের করে দেওয়া হয়। আমি বুঝতে পারি এসব ওই ভিপির চাল। আমি অদ্রিকে সব খুলে বলি। ওকে চিন্তিত দেখায়। আমি ওকে আশ্বাস দেই৷ বলি,
-সব ঠিক হয়ে যাবে। চিন্তা করো না৷
সে বিকেলে আমার কাঁধে কত বিশ্বাসের সহিত মাথা রেখেছিল মেয়েটা। সে একবারই। শেষ বারের মতো। এর প্রায় দু সপ্তাহ পর অদ্রির বান্ধুবি ইরিনা আমাকে একটা চিঠি দেয়৷
আর তাতে লেখা ছিলো!!!!
.
চলবে..…...
*
"
মরণ প্রেম" "পর্বঃ-১
Reviewed by NINDOOK LIFE
on
January 28, 2020
Rating:
No comments: