প্রত্যাখ্যান 💔
Israt Jahan Tanni
Part_09
.
পরেরদিন অফিসে এপ্লিকেশন জমা দিয়ে লাঞ্চে বাসায় চলে আসলো নুপুর। ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নিলো আগে। খুব খিদে লেগেছিলো তাই। দোকান থেকে গিয়ে একটা দুই পাউন্ডের কেইক নিয়ে আসলো সে। ঘরটা সুন্দর করে সাজিয়ে নিলো সে। সন্ধ্যার পরে সারা ঘরে ক্যান্ডেলস দিয়ে ভরে দিলো।
রাত ১০ টা..
নুপুর কেইক সামনে নিয়ে একা একা বসে আছে। সামনে একটা ছুরি। মনটা বেশ খারাপ তার। মনে হচ্ছে চোখ ফেটে এখনই পানি বেরিয়ে আসবে। নুপুর আনমনে কেক টার দিকে তাকিয়ে বসে আছে। অনেক কথা ভাবছে সে। নুপুর ছুরি দিয়ে কিছুটা কেক কেটে মুখে পুড়ে নিলো। সাথে সাথে চোখ দিয়ে বৃষ্টি শুরু হলো তার। যা থামার কোনো নামই নেই।
.
রাজ সব সময় বলতো.. তারা তাদের first Marriage Anniversary ঘরোয়া ভাবে কেইক কেটে পালন করবে। কাউকেই ইনভাইট করবে না তারা। যাতে করে ওরা নিজেরা এই সময় টা একাকি যাপন করতে পারে। আজ ওদের বিবাহ বার্ষিকী। রাজের ইচ্ছামতোই নুপুর আয়োজন করেছে, কিন্তু রাজ নেই। নুপুর কেদেই যাচ্ছে। আল্লাহ কেন তাকে এতো কষ্ট দিয়েছে? কেন তার কাছ থেকে আল্লাহ সব প্রিয় মানুষদের কেড়ে নিচ্ছেন? নুপুর কি অনেক পাপী? যার কারণে আল্লাহ নুপুরের উপর রাগান্বিত হয়ে নুপুর কে এই শাস্তি দিচ্ছে?
সে কি কখনো এই কষ্ট থেকে রেহাই পাবে না?
আজ নুপুরের খুব জানতে ইচ্ছে করছে...
রাজ কেমন আছে? আচ্ছা, রাজ কি আমার কথা ভাবে? আমাকে কি মিস করে? আমাকে কি খোঁজে?
.
ধুর, কি ভাবছি আমি এইসব? আমাকে নিয়ে রাজ ভাববে কেন, রাজের জীবনে তো আমার চেয়েও ভালো কেউ আছে। নুপুর তার নিজের পেটে হাত দিয়ে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলো। স্পষ্ট ভাবেই বলতে লাগল..
- কিরে, তুই কি কখনো তোর বাবার পরিচয় জানতে চাইবি? যখন.তুই তোর বাবার কথা জিজ্ঞাসা করবি তখন আমি তোকে কি জবাব দিবো?
আচ্ছা, বাবার পরিচয় ছাড়া শুধু মায়ের পরিচয়ে কি তুই থাকতে পারবি না?
নানান কথা বলতে লাগলো নুপুর। একা একা কথা বলেই যাচ্ছে আর কেদে চলেছে সে। যে কান্নার কোনো শেষ আছে কিনা সে জানেনা।
কেক সামনে নিয়েই ঘুমিয়ে পরে নুপুর। সারারাত সজাগ থেকে শেষ রাতের দিকে ঘুমিয়েছে সে। হটাৎ ই ঘুম ভাংলো তার। ঘরির দিকে তাকিয়ে দেখলো সকাল ১০:১৫ বাজে। মাথায় বাজ পরলো তার। এতো সময় সে ঘুমিয়েছে? এখন অফিস? অফিস তো আটটায় শুরু হয়। তাহলে এখন কি হবে। ঘুম থেকে উঠেই মাথায় এক ঝাক চিন্তা ভর করলো তার। স্যার তো বলেছিলো বিনা নোটিশে অফিস বাধা দিলে চাকরি নট হয়ে যাবে। উফফফ , ভাবতে পারছে না নুপুর। হটাৎ ই মনে হলো.. আজ তো শুক্রবার। মানে অফ ডে। তাহলে এতো চিন্তা কেন? হাফ ছেড়ে বাচলো নুপুর। সারারাত এতো কান্নাকাটি আর টেনশনের কারণে দিনটার কথাও মনে ছিলোনা তার।
দিন যেতে লাগলো। নুপুর এইবার সাত মাস পেরিয়ে আট মাসে গিয়ে পা দিয়েছে। এখন নুপুরের পেট অনেকটা বড় হয়ে গিয়েছে। এই অবস্থায় নুপুরের অফিস করাটাই অনেক কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। বাকি কাজের কথা নাহয় বাদই দিলাম। তাই নুপুরের কলিগ সাথী নুপুরকে ওর বাসায় শিফট করিয়েছে। যদিও নুপুর সেখানে যেতে চায়নি। তবুও সাথীর জোরাজুরির সাথে সে পেরে উঠেনি। অফিস থেকে তাকে চার মাসের চেয়ে কিছু কম মানে ১১২ দিনের ছুটি দিয়েছে। এইটা প্রেগন্যান্সির ছুটি। কিন্তু এখনকার সময়গুলো পার করাই কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে নুপুরের।
..
ওইদিকে রাজ গত দুইমাস ধরে হন্যে হয়ে নুপুরকে খোজছে। নুপুর চলে আসার পর রাজ অনেক গার্লফ্রেন্ড জুটিয়েছিলো। কিন্তু ওরা সবাই ছিলো টাকার কাঙ্গাল। ওরা শুধু টাকার জন্য রাজকে সঙ্গ দিয়েছিলো। যখনই রাজের ব্যাবসা প্রতিনিয়ত লস হতে থাকলো.. ঠিক তখনই ওর সমস্ত গার্লফ্রেন্ড ওকে ছেড়ে চলে যেতে লাগলো। রাজ এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে ঝিনুককে হারানোর কষ্ট। ইদানীং ঝিনুককে ছাড়া সে কিছুই বুঝতে চাইনা। তাইতো খাওয়া নাওয়া ছেড়ে নুপুরকে খোজতে ব্যস্ত হয়ে পরেছে। সারাদিন নুপুরকে খোঁজে, আর সারারাত বাসায় বসে বসে কাদে। মেয়েটা কতো কষ্ট করেছে তার জন্য। শুধুমাত্র ওর ভালোবাসা পাওয়ার জন্য নিজের ফ্যামিলির চিন্তা না করে রাজকে একাই বিয়ে করেছে সে। তার জন্য ওর ফ্যামিলিও ওকে প্রত্যাখ্যান করেছে। তারপরও মেয়েটাকে কতো কষ্ট দিয়েছে সে। এইসব কথা যখনই মনে হয় তখনই বুকে ভীষণ ব্যথা অনুভব করে রাজ। অস্ফুট স্বরে কেদে উঠে সে। হাহাকার করে উঠে তার বুক।
.
কিছুদিন ধরে রাজ একদম খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। যার ফল হয় .. অসুস্থতা।
একনাগাড়ে অনেকদিন না খেয়ে থাকার পরে ভীষণভাবে অসুস্থ হয়ে যায় রাজ।
সেদিন প্রচন্ড অসুস্থতার কারণে অজ্ঞান হয়ে যায় রাজ। তখন দারোয়ান চাচা ডাক্তার কে খবর দিয়ে রাজের বাসায় নিয়ে আসে।
ডাক্তার অনেক চেষ্টার পর রাজের জ্ঞান ফিরাতে সক্ষম হয়। শরীর প্রচন্ড দুর্বল থাকার কারণে জ্ঞান হারায় সে। রাজ উঠে বালিশে হেলান দিয়ে বসে আছে। আর ডাক্তার রাজের মুখোমুখি বসে আছে। ডাক্তার বললো..
- কি ব্যাপার? শরীর এতো দুর্বল হলো কেন?
রাজ কোনো উত্তর দেয়না। চুপ করে বসে আছে। উনি আবারও বললেন..
- খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন কেন? কিছুদিন পর বাচ্চার বাবা হবেন সেই খুশিতে? নাকি বাচ্চার ভবিষ্যতের কথা ভেবে না খেয়ে আয় করছেন?
এতোক্ষন রাজ কিছু না বললেও ডাক্তারের কথা অবাক হওয়ার চুড়ান্ত সীমায় পৌঁছে যায় সে? অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে
- বাচ্চা?
- মজা করছেন কেন? যাইহোক .. ভাবী কোথায়? ডাকুন তো ...দেখি কি অবস্থা উনার। আপনি এতোটা কৃপণ হলেন কেন ভাই?.ভাবীর প্রেগন্যান্সির বয়স তো প্রায় আট মাস হতে চললো.. এর মধ্যে একবারও চেকআপ করাতে নিয়ে গেলেন না যে..?.
রাজ কিছু ভাবতে পারছে না। মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে তার সবকিছু। কাপা কাপা স্বরে ডাক্তার কে জিজ্ঞাসা করলো..
- ও ওর প্রেগন্যান্সির কথা আপনি জানলেন কি করে?
- কি যে বলেন ভাই.. গত আটমাস আগে আমিই তো আপনার বাসায় এসে উনাকে দেখেছিলাম। হটাৎ করে মাথা ঘুরে পরে গেছিলো তাই আপনাদের বাসার দারোয়ান আমাকে খবর দিয়ে আনিয়েছিলো। তখনই উনার প্রেগন্যান্সি ধরা পরেছে।
আচ্ছা যাইহোক .. নিজের প্রতি খেয়াল রাখবেন। আপনি নিজেই যদি এভাবে দুর্বল আর অসুস্থ হয়ে পরে থাকেন তাহলে বউ বাচ্চা সামলাবেন কি করে?
রাজ কিছু বলছে না। থর থর করে তার শরীর কাঁপছে।
ডাক্তার বিদায় নিয়ে চলে গেছে। রাজের সেদিকে কোনো হুশ নেই। তার মাথায় শুধু একটা কথাই ঘুরছে ... নুপুরের পেটে আমার বাচ্চা, আর আমি জানতেও পারলাম না। হাউমাউ করে ছোট বাচ্চাদের মতো কাঁদতে লাগলো রাজ। এতো বড় অমানুষ সে হলো কিভাবে? এতো বড় অন্যায় সে করলো কিভাবে? নুপুর এখন কোথায় আছে? কেমন আছে? ভাবতে পারছে না কিছু রাজ।
নুপুরের উপর সে কতোটা অন্যায় করেছে সেটা তার মাথায় শুধু নাড়া দিচ্ছে। সহ্য করতে পারছে না রাজ।
বার বার নুপুরের কথাগুলো তার কানে বাজছে। বার বার তার চোখের সামনে নুপুরকে দেখতে পাচ্ছে সে। নাহ.. এতো ভেবে সময় নষ্ট করলে হবেনা। যেভাবে হোক, নুপুরকে তার খোঁজে বের করতেই হবে। কিন্তু কোথায় খোজবে সে নুপুরকে? নুপুরের তো এই শহরে কেউ নেই। এক ছিলো ওর ফ্যামিলি, তারা তো অনেক আগেই ওকে প্রত্যাখ্যান করেছে। তারপর ছিলো রাজ.. সেও নুপুরের সাথে সেইম অন্যায়টাই করেছে। এখন এই বেচারির যে আর কেউ নেই। কোথায় যাবে সে? কোথায় আছে আমার নুপুর? . প্রচন্ড জোরে আর্তনাদ করে উঠলো রাজ।
মাথাটা ঝিমঝিম করছে রাজের। রাজ ভাবতে লাগলো.. আচ্ছা, নুপুর ওর বাবার বাসায় চলে গেলোনা তো? শত হলেও তো কোনো বাবা মা নিজের মেয়েকে ফিরিয়ে দিতে পারবে না।
.
পরেরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে না খেয়েই নুপুরের বাবার বাসায় গেলো রাজ। নুপুরের বাবা সোফায় বসে পেপার পড়েছিলেন। আর নুপুরের মা ডাইনিং টেবিলের উচ্ছিষ্ট পরিষ্কার করছিলো। এমন সময় কলিংবেল বেজে উঠলো।
- নীরার মা, দেখোতো কে এসেছে?
- হুম দেখছি ..
নুপুরের মা গিয়ে দরজাটা খোলে দিলো। দরজা খোলেই ভুত দেখার মতো চমকে উঠলেন তিনি। রাজ মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে উনার সামনে। কেউ ঢুকছে না দেখে নুপুরের বাবা জিজ্ঞেস করলো..
- কে এসেছে নীরার মা?
নুপুরের মা কিছু বলছে না। উনার নীরবতা দেখে নুপুরের বাবা পেপার টা সোফায় রেখে নিজেই এগিয়ে গেলেন দরজার সামনে। রাজ কে দেখে রাজ রাগ যেনো মাথায় উঠে গেলো. । চিৎকার দিয়ে বলতে লাগলেন .. তুমি.. এইখানে? কেন এসেছো?
রাজ কিছু বলছে না। মাথা নিচু করে দাড়িয়েই আছে। নুপুরের বাবার রাগ আরো বেড়ে গেলো। তিনি বলতে লাগলেন..
- সং সেজে দাড়িয়ে থাকার জন্য এখানে এসেছো? কথা বলছো না কেন?
রাজ এইবার কেদেই দিলো। রাজের কান্না দেখে ওরা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। নুপুরের মা রাজকে নিয়ে ঘরে এসে বসলো। নুপুরের বাবাও এসে বসলো।
রাজ চোখের পানি ফেলেই যাচ্ছে। নুপুরের বাবা রেগে গিয়ে বললেন..
- আমাদের কে তোমার নাটক দেখানোর জন্য এখানে এসেছো? অনেক তো হলো.. আর কতো তোমার ওই ড্রামা দেখাবে শুনি?
রাজ এইবার মাথা তুলে উনার দিকে তাকালো। বললো..
- নুপুর কি আপনার বাসায়?
- ওই মেয়ের নাম নিবে না আমাদের সামনে। আমাদের নুপুর নামে একটা মেয়ে ছিলো, সে অনেক আগেই মরে গেছে। তাকে আমরা ভুলেও গেছি।
নুপুরের মা রাজের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। তার মনে কু ডাকছে। তার মেয়ের কিছু হলোনা তো? যতোই রাগ থাকুক.. মার মন তো.. । তিনি রাজকে জিজ্ঞাসা করলেন ..
- কেন, কি হয়েছে নুপুরের?
- নীরার মা, তোমাকে কতোবার বলেছি আমার সামনে ওই মেয়ের নাম নিবে না। রেগে গিয়ে বললেন নুপুরের বাবা।
- আপনি চুপ করুন। মেয়েটার নিশ্চয়ই কোনো বিপদ হয়েছে। না হলেতো এমনি এমনি ছেলেটা কাঁদছে না।
- এই কান্নাকাটি করাটা ওর আরেকটা চাল। তুমি বুঝতে না পারলেও আমি ঠিকই বুঝতে পারছি।
- ওর চাল বুঝে তুমি কি করেছো শুনি? যখন তুমি এই ছেলেটার কাছ থেকে টাকার বিনিময়ে মেয়েটাকে কিনেছিলে তখন কি মেয়েটা এইসব দেখেছিলো? নাকি তুমি মেয়েটাকে সাবধান করেছিলে? বাবা হিসেবে তোমার তো উচিত ছিলো মেয়েটাকে সবটা জানানো, কিন্তু জানিয়েছিলে কি? যদি জানাতে তাহলে কি এই অঘটন টা ঘটতো?
এইবার নুপুরের বাবা যেনো কিছুটা নত হলো। সত্যিই তো, তিনি রাজের সম্পর্কে নিজের মেয়েকে অবগত করেন নি। রাজ যে টাকার বিনিময়ে তার ভালোবাসা বিক্রি করে দিয়েছেিলো সেটাও তো তিনি মেয়েকে জানান নি। জানালে তো ওইদিন ওই ঘটনা টা ঘটতো না। তাহলে কি সব দোষ আমার? আমার কারণে কি মেয়েটার আজ কোনো বিপদ হয়েছে?
ভাবনার গভীরে চলে গেলেন নুপুরের বাবা।
..
To be Continue .....
Israt Jahan Tanni
Part_09
.
পরেরদিন অফিসে এপ্লিকেশন জমা দিয়ে লাঞ্চে বাসায় চলে আসলো নুপুর। ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নিলো আগে। খুব খিদে লেগেছিলো তাই। দোকান থেকে গিয়ে একটা দুই পাউন্ডের কেইক নিয়ে আসলো সে। ঘরটা সুন্দর করে সাজিয়ে নিলো সে। সন্ধ্যার পরে সারা ঘরে ক্যান্ডেলস দিয়ে ভরে দিলো।
রাত ১০ টা..
নুপুর কেইক সামনে নিয়ে একা একা বসে আছে। সামনে একটা ছুরি। মনটা বেশ খারাপ তার। মনে হচ্ছে চোখ ফেটে এখনই পানি বেরিয়ে আসবে। নুপুর আনমনে কেক টার দিকে তাকিয়ে বসে আছে। অনেক কথা ভাবছে সে। নুপুর ছুরি দিয়ে কিছুটা কেক কেটে মুখে পুড়ে নিলো। সাথে সাথে চোখ দিয়ে বৃষ্টি শুরু হলো তার। যা থামার কোনো নামই নেই।
.
রাজ সব সময় বলতো.. তারা তাদের first Marriage Anniversary ঘরোয়া ভাবে কেইক কেটে পালন করবে। কাউকেই ইনভাইট করবে না তারা। যাতে করে ওরা নিজেরা এই সময় টা একাকি যাপন করতে পারে। আজ ওদের বিবাহ বার্ষিকী। রাজের ইচ্ছামতোই নুপুর আয়োজন করেছে, কিন্তু রাজ নেই। নুপুর কেদেই যাচ্ছে। আল্লাহ কেন তাকে এতো কষ্ট দিয়েছে? কেন তার কাছ থেকে আল্লাহ সব প্রিয় মানুষদের কেড়ে নিচ্ছেন? নুপুর কি অনেক পাপী? যার কারণে আল্লাহ নুপুরের উপর রাগান্বিত হয়ে নুপুর কে এই শাস্তি দিচ্ছে?
সে কি কখনো এই কষ্ট থেকে রেহাই পাবে না?
আজ নুপুরের খুব জানতে ইচ্ছে করছে...
রাজ কেমন আছে? আচ্ছা, রাজ কি আমার কথা ভাবে? আমাকে কি মিস করে? আমাকে কি খোঁজে?
.
ধুর, কি ভাবছি আমি এইসব? আমাকে নিয়ে রাজ ভাববে কেন, রাজের জীবনে তো আমার চেয়েও ভালো কেউ আছে। নুপুর তার নিজের পেটে হাত দিয়ে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলো। স্পষ্ট ভাবেই বলতে লাগল..
- কিরে, তুই কি কখনো তোর বাবার পরিচয় জানতে চাইবি? যখন.তুই তোর বাবার কথা জিজ্ঞাসা করবি তখন আমি তোকে কি জবাব দিবো?
আচ্ছা, বাবার পরিচয় ছাড়া শুধু মায়ের পরিচয়ে কি তুই থাকতে পারবি না?
নানান কথা বলতে লাগলো নুপুর। একা একা কথা বলেই যাচ্ছে আর কেদে চলেছে সে। যে কান্নার কোনো শেষ আছে কিনা সে জানেনা।
কেক সামনে নিয়েই ঘুমিয়ে পরে নুপুর। সারারাত সজাগ থেকে শেষ রাতের দিকে ঘুমিয়েছে সে। হটাৎ ই ঘুম ভাংলো তার। ঘরির দিকে তাকিয়ে দেখলো সকাল ১০:১৫ বাজে। মাথায় বাজ পরলো তার। এতো সময় সে ঘুমিয়েছে? এখন অফিস? অফিস তো আটটায় শুরু হয়। তাহলে এখন কি হবে। ঘুম থেকে উঠেই মাথায় এক ঝাক চিন্তা ভর করলো তার। স্যার তো বলেছিলো বিনা নোটিশে অফিস বাধা দিলে চাকরি নট হয়ে যাবে। উফফফ , ভাবতে পারছে না নুপুর। হটাৎ ই মনে হলো.. আজ তো শুক্রবার। মানে অফ ডে। তাহলে এতো চিন্তা কেন? হাফ ছেড়ে বাচলো নুপুর। সারারাত এতো কান্নাকাটি আর টেনশনের কারণে দিনটার কথাও মনে ছিলোনা তার।
দিন যেতে লাগলো। নুপুর এইবার সাত মাস পেরিয়ে আট মাসে গিয়ে পা দিয়েছে। এখন নুপুরের পেট অনেকটা বড় হয়ে গিয়েছে। এই অবস্থায় নুপুরের অফিস করাটাই অনেক কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। বাকি কাজের কথা নাহয় বাদই দিলাম। তাই নুপুরের কলিগ সাথী নুপুরকে ওর বাসায় শিফট করিয়েছে। যদিও নুপুর সেখানে যেতে চায়নি। তবুও সাথীর জোরাজুরির সাথে সে পেরে উঠেনি। অফিস থেকে তাকে চার মাসের চেয়ে কিছু কম মানে ১১২ দিনের ছুটি দিয়েছে। এইটা প্রেগন্যান্সির ছুটি। কিন্তু এখনকার সময়গুলো পার করাই কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে নুপুরের।
..
ওইদিকে রাজ গত দুইমাস ধরে হন্যে হয়ে নুপুরকে খোজছে। নুপুর চলে আসার পর রাজ অনেক গার্লফ্রেন্ড জুটিয়েছিলো। কিন্তু ওরা সবাই ছিলো টাকার কাঙ্গাল। ওরা শুধু টাকার জন্য রাজকে সঙ্গ দিয়েছিলো। যখনই রাজের ব্যাবসা প্রতিনিয়ত লস হতে থাকলো.. ঠিক তখনই ওর সমস্ত গার্লফ্রেন্ড ওকে ছেড়ে চলে যেতে লাগলো। রাজ এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে ঝিনুককে হারানোর কষ্ট। ইদানীং ঝিনুককে ছাড়া সে কিছুই বুঝতে চাইনা। তাইতো খাওয়া নাওয়া ছেড়ে নুপুরকে খোজতে ব্যস্ত হয়ে পরেছে। সারাদিন নুপুরকে খোঁজে, আর সারারাত বাসায় বসে বসে কাদে। মেয়েটা কতো কষ্ট করেছে তার জন্য। শুধুমাত্র ওর ভালোবাসা পাওয়ার জন্য নিজের ফ্যামিলির চিন্তা না করে রাজকে একাই বিয়ে করেছে সে। তার জন্য ওর ফ্যামিলিও ওকে প্রত্যাখ্যান করেছে। তারপরও মেয়েটাকে কতো কষ্ট দিয়েছে সে। এইসব কথা যখনই মনে হয় তখনই বুকে ভীষণ ব্যথা অনুভব করে রাজ। অস্ফুট স্বরে কেদে উঠে সে। হাহাকার করে উঠে তার বুক।
.
কিছুদিন ধরে রাজ একদম খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। যার ফল হয় .. অসুস্থতা।
একনাগাড়ে অনেকদিন না খেয়ে থাকার পরে ভীষণভাবে অসুস্থ হয়ে যায় রাজ।
সেদিন প্রচন্ড অসুস্থতার কারণে অজ্ঞান হয়ে যায় রাজ। তখন দারোয়ান চাচা ডাক্তার কে খবর দিয়ে রাজের বাসায় নিয়ে আসে।
ডাক্তার অনেক চেষ্টার পর রাজের জ্ঞান ফিরাতে সক্ষম হয়। শরীর প্রচন্ড দুর্বল থাকার কারণে জ্ঞান হারায় সে। রাজ উঠে বালিশে হেলান দিয়ে বসে আছে। আর ডাক্তার রাজের মুখোমুখি বসে আছে। ডাক্তার বললো..
- কি ব্যাপার? শরীর এতো দুর্বল হলো কেন?
রাজ কোনো উত্তর দেয়না। চুপ করে বসে আছে। উনি আবারও বললেন..
- খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন কেন? কিছুদিন পর বাচ্চার বাবা হবেন সেই খুশিতে? নাকি বাচ্চার ভবিষ্যতের কথা ভেবে না খেয়ে আয় করছেন?
এতোক্ষন রাজ কিছু না বললেও ডাক্তারের কথা অবাক হওয়ার চুড়ান্ত সীমায় পৌঁছে যায় সে? অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে
- বাচ্চা?
- মজা করছেন কেন? যাইহোক .. ভাবী কোথায়? ডাকুন তো ...দেখি কি অবস্থা উনার। আপনি এতোটা কৃপণ হলেন কেন ভাই?.ভাবীর প্রেগন্যান্সির বয়স তো প্রায় আট মাস হতে চললো.. এর মধ্যে একবারও চেকআপ করাতে নিয়ে গেলেন না যে..?.
রাজ কিছু ভাবতে পারছে না। মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে তার সবকিছু। কাপা কাপা স্বরে ডাক্তার কে জিজ্ঞাসা করলো..
- ও ওর প্রেগন্যান্সির কথা আপনি জানলেন কি করে?
- কি যে বলেন ভাই.. গত আটমাস আগে আমিই তো আপনার বাসায় এসে উনাকে দেখেছিলাম। হটাৎ করে মাথা ঘুরে পরে গেছিলো তাই আপনাদের বাসার দারোয়ান আমাকে খবর দিয়ে আনিয়েছিলো। তখনই উনার প্রেগন্যান্সি ধরা পরেছে।
আচ্ছা যাইহোক .. নিজের প্রতি খেয়াল রাখবেন। আপনি নিজেই যদি এভাবে দুর্বল আর অসুস্থ হয়ে পরে থাকেন তাহলে বউ বাচ্চা সামলাবেন কি করে?
রাজ কিছু বলছে না। থর থর করে তার শরীর কাঁপছে।
ডাক্তার বিদায় নিয়ে চলে গেছে। রাজের সেদিকে কোনো হুশ নেই। তার মাথায় শুধু একটা কথাই ঘুরছে ... নুপুরের পেটে আমার বাচ্চা, আর আমি জানতেও পারলাম না। হাউমাউ করে ছোট বাচ্চাদের মতো কাঁদতে লাগলো রাজ। এতো বড় অমানুষ সে হলো কিভাবে? এতো বড় অন্যায় সে করলো কিভাবে? নুপুর এখন কোথায় আছে? কেমন আছে? ভাবতে পারছে না কিছু রাজ।
নুপুরের উপর সে কতোটা অন্যায় করেছে সেটা তার মাথায় শুধু নাড়া দিচ্ছে। সহ্য করতে পারছে না রাজ।
বার বার নুপুরের কথাগুলো তার কানে বাজছে। বার বার তার চোখের সামনে নুপুরকে দেখতে পাচ্ছে সে। নাহ.. এতো ভেবে সময় নষ্ট করলে হবেনা। যেভাবে হোক, নুপুরকে তার খোঁজে বের করতেই হবে। কিন্তু কোথায় খোজবে সে নুপুরকে? নুপুরের তো এই শহরে কেউ নেই। এক ছিলো ওর ফ্যামিলি, তারা তো অনেক আগেই ওকে প্রত্যাখ্যান করেছে। তারপর ছিলো রাজ.. সেও নুপুরের সাথে সেইম অন্যায়টাই করেছে। এখন এই বেচারির যে আর কেউ নেই। কোথায় যাবে সে? কোথায় আছে আমার নুপুর? . প্রচন্ড জোরে আর্তনাদ করে উঠলো রাজ।
মাথাটা ঝিমঝিম করছে রাজের। রাজ ভাবতে লাগলো.. আচ্ছা, নুপুর ওর বাবার বাসায় চলে গেলোনা তো? শত হলেও তো কোনো বাবা মা নিজের মেয়েকে ফিরিয়ে দিতে পারবে না।
.
পরেরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে না খেয়েই নুপুরের বাবার বাসায় গেলো রাজ। নুপুরের বাবা সোফায় বসে পেপার পড়েছিলেন। আর নুপুরের মা ডাইনিং টেবিলের উচ্ছিষ্ট পরিষ্কার করছিলো। এমন সময় কলিংবেল বেজে উঠলো।
- নীরার মা, দেখোতো কে এসেছে?
- হুম দেখছি ..
নুপুরের মা গিয়ে দরজাটা খোলে দিলো। দরজা খোলেই ভুত দেখার মতো চমকে উঠলেন তিনি। রাজ মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে উনার সামনে। কেউ ঢুকছে না দেখে নুপুরের বাবা জিজ্ঞেস করলো..
- কে এসেছে নীরার মা?
নুপুরের মা কিছু বলছে না। উনার নীরবতা দেখে নুপুরের বাবা পেপার টা সোফায় রেখে নিজেই এগিয়ে গেলেন দরজার সামনে। রাজ কে দেখে রাজ রাগ যেনো মাথায় উঠে গেলো. । চিৎকার দিয়ে বলতে লাগলেন .. তুমি.. এইখানে? কেন এসেছো?
রাজ কিছু বলছে না। মাথা নিচু করে দাড়িয়েই আছে। নুপুরের বাবার রাগ আরো বেড়ে গেলো। তিনি বলতে লাগলেন..
- সং সেজে দাড়িয়ে থাকার জন্য এখানে এসেছো? কথা বলছো না কেন?
রাজ এইবার কেদেই দিলো। রাজের কান্না দেখে ওরা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। নুপুরের মা রাজকে নিয়ে ঘরে এসে বসলো। নুপুরের বাবাও এসে বসলো।
রাজ চোখের পানি ফেলেই যাচ্ছে। নুপুরের বাবা রেগে গিয়ে বললেন..
- আমাদের কে তোমার নাটক দেখানোর জন্য এখানে এসেছো? অনেক তো হলো.. আর কতো তোমার ওই ড্রামা দেখাবে শুনি?
রাজ এইবার মাথা তুলে উনার দিকে তাকালো। বললো..
- নুপুর কি আপনার বাসায়?
- ওই মেয়ের নাম নিবে না আমাদের সামনে। আমাদের নুপুর নামে একটা মেয়ে ছিলো, সে অনেক আগেই মরে গেছে। তাকে আমরা ভুলেও গেছি।
নুপুরের মা রাজের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। তার মনে কু ডাকছে। তার মেয়ের কিছু হলোনা তো? যতোই রাগ থাকুক.. মার মন তো.. । তিনি রাজকে জিজ্ঞাসা করলেন ..
- কেন, কি হয়েছে নুপুরের?
- নীরার মা, তোমাকে কতোবার বলেছি আমার সামনে ওই মেয়ের নাম নিবে না। রেগে গিয়ে বললেন নুপুরের বাবা।
- আপনি চুপ করুন। মেয়েটার নিশ্চয়ই কোনো বিপদ হয়েছে। না হলেতো এমনি এমনি ছেলেটা কাঁদছে না।
- এই কান্নাকাটি করাটা ওর আরেকটা চাল। তুমি বুঝতে না পারলেও আমি ঠিকই বুঝতে পারছি।
- ওর চাল বুঝে তুমি কি করেছো শুনি? যখন তুমি এই ছেলেটার কাছ থেকে টাকার বিনিময়ে মেয়েটাকে কিনেছিলে তখন কি মেয়েটা এইসব দেখেছিলো? নাকি তুমি মেয়েটাকে সাবধান করেছিলে? বাবা হিসেবে তোমার তো উচিত ছিলো মেয়েটাকে সবটা জানানো, কিন্তু জানিয়েছিলে কি? যদি জানাতে তাহলে কি এই অঘটন টা ঘটতো?
এইবার নুপুরের বাবা যেনো কিছুটা নত হলো। সত্যিই তো, তিনি রাজের সম্পর্কে নিজের মেয়েকে অবগত করেন নি। রাজ যে টাকার বিনিময়ে তার ভালোবাসা বিক্রি করে দিয়েছেিলো সেটাও তো তিনি মেয়েকে জানান নি। জানালে তো ওইদিন ওই ঘটনা টা ঘটতো না। তাহলে কি সব দোষ আমার? আমার কারণে কি মেয়েটার আজ কোনো বিপদ হয়েছে?
ভাবনার গভীরে চলে গেলেন নুপুরের বাবা।
..
To be Continue .....
প্রত্যাখ্যান- Part_09
Reviewed by NINDOOK LIFE
on
January 26, 2020
Rating:
No comments: