প্রত্যাখ্যান 💔
Israt Jahan Tanni
Part_08
..
এক সপ্তাহ হলো নুপুর চিটাগং এর একটা ভাড়া বাসায় উঠেছে। সাথে টাকাকড়ি কিছু নেই, তাই নিজের শরীরের গয়না গুলো বিক্রি করে বাসার এডভান্স সহ আরো তিনমাসের ভাড়া অগ্রিম দিয়ে রেখেছে। বলা তো যায় না, পরে যদি ম্যানেজ করতে না পারে...
বাকিটাকা গুলো দিয়ে কোনো মতে চলছে সে। ফাকে ফাকে একটা জবের অনুসন্ধান করছে।
এভাবে পনেরোদিন কেটে যায় ... কিন্তু কোনো জব সে পায়না।
একদিন মোবাইলে "বিক্রয় ডট কম" সফটওয়্যার এ চাকরির অনুসন্ধান করছিলো সে। হটাৎ তার নজর যায় একটা চাকরির বিজ্ঞাপনে। একটা কোম্পানিতে "রিসিপসোনিস্ট" পদে লোক নিয়োগ দিচ্ছে তারা। নুপুর ডিটেইল এ গিয়ে দেখলো সেখানে সেই কোম্পানির ফোন নাম্বার ও দেওয়া আছে। নুপুর সাথে সাথে সেই নাম্বারে ডায়াল করলো। একটা পুরুষ রিসিভ করলো..
তার কাছ থেকে ডিটেইলসে জানলো.. পরেরদিন সেই কোম্পানি তে যোগাযোগ করার জন্য বললো..
তবে সমস্যা হলো আরেক জায়গায়। সেই কোম্পানিতে জব করতে হলে সার্টিফিকেটের কপি, চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট অরিজিনাল কপি প্লাস জন্ম নিবন্ধন বা ভোটার আইডি কার্ডের কপি লাগবে।
চিন্তায় পরে গেলো নুপুর। কারণ সবগুলো সার্টিফিকেট রাজের বাসায় আছে। কি করে আনবে সেগুলো। তাহলে কি জব টা পেয়েও হাতছাড়া হয়ে যাবে? মাথা কাজ করছে না নুপুরের। কি করবে সে? এইরকম একটা জব সহজে পাওয়া মুশকিল।
আর তাছাড়া নুপুর এখন চিটাগং এ , আর রাজের বাসা ঢাকায়। পেপার গুলো কালেক্ট করা এতোটাও সোজা না। কি করা যায়, ভাবতে লাগলো নুপুর। হটাৎ তার মাথায় একটা আইডিয়া এলো। কাউকে পাশে না পেলেও দারোয়ান চাচাকে সে নিশ্চয়ই পাবে। উনি নুপুরকে নিজের মেয়ের মতো দেখেন। তিনি নুপুরকে নিশ্চয়ই সাহায্য করবেন।
নুপুর সাথে সাথে কোম্পানির লোকটার কাছে ফোন দিয়ে দুই দিন সময় চেয়ে নিলেন। লোকটি ও সময় দিলো। নুপুর সাথে সাথেই রওনা দিলো ঢাকার উদ্দেশ্যে। বিকেল ৪:৪৫ মিনিটে নুপুর ঢাকায় গিয়ে পৌছালো। একটা রিক্সা নিয়ে রাজের বাসার সামনে গেলো সে।
..
বাসার সামনে যেতেই দারোয়ান চাচাকে দেখতে পেলো সে। মুখে একটা হাসি ফুটে উঠলো তার। রিক্সা ভাড়া মিটিয়ে চাচার সামনে গেলো সে। দারোয়ান চাচা অনেকটাই অবাক নুপুরকে দেখে..
- মারে, তুমি কই থেইক্কা আইলা এতোদিন পর?
- সে অনেক কথা চাচা, আপনি ভালো আছেন তো?
- আমার আর ভালা মন্দ। চোখের সামনে কতো ভালো মন্দ ঘটে, দেইক্কা ও কাঠের মতো থাহন লাগে। এইডারে কি আর ভালা কয়?
- থাক না চাচা এইসব। এখন আপনার কাছে এসেছি আমাকে একটা কাজ করে দিতে হবে।
- কি কাজ কও মা, তোমার মতো একটা ভালা মাইয়ার লাইগা যদি কিছু করতে পারি, তাইলে একটু শান্তি পামু।
নুপুর দারোয়ান চাচার কথায় স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো।
নুপুর চাচাকে বিস্তারিত সব বললো। সার্টিফিকেটের ফাইল টা কোথায় আছে সেটাও বলে দিলো। চাচা বললো..
- সব তো বুঝলাম মা, কিন্তু ওই ঘরে আমি ঢুকমু কেমনে?
নুপুর কিছুটা হেসে নিজের সাইড ব্যাগ থেকে একটা চাবি বের করলো। চাচাকে সেটা দিয়ে বললো.. এইটা রাজের ঘরের ডুব্লিকেট চাবি। এইটা আমার কাছেই থাকতো। ভেবেছিলাম ফেলে দিবো। ফেলবো ফেলবো করে ফেলা হয়নি। আজ কাজে লেগে গেলো। আপনি তারাতাড়ি গিয়ে নিয়ে আসুন। রাজ হয়তো এসে পরবে।
.
নুপুরের কথামতো দারোয়ান চাচা রাজের রুমে গেলো। অনেক খোঁজে শেষে ফাইল টা পেলো। ফাইল টা হাতে নিয়ে হাসিমুখে রুম থেকে বেরিয়ে এলেন তিনি। রুমটা আগের মতো লক করে নিচে ফিরে এলেন। উনার হাতে ফাইলটা দেখে হাসি দিলো নুপুর ফাইল টা নিজের হাতে নিয়ে চাচাকে আবারো ধন্যবাদ জানালো নুপুর। এমন সময় একটা গাড়ি আসলো। গাড়িটা দেখে নুপুর একটা পিলারের পিছনে গিয়ে লুকালো। বাসার গেইটের সামনে এসেই গাড়িটা স্লো হলো, আর দারোয়ান চাচা গিয়ে গেইট টা খোলে দিলো। নুপুর স্পষ্ট রাজকে দেখতে পেলো। রাজকে দেখে দুফোটা পানি গড়িয়ে পরলো চোখ দিয়ে। তখনই চোখ গেলো রাজের পাশের সিটে বসা একটা মডার্ন মেয়ের দিকে। মেয়েটা খুব ঘনিষ্ঠভাবে রাজের সাথে মিশে আছে।
মেয়েটাকে দেখেই নুপুরের বুকে গভীর ব্যাথা অনুভব করলো। ওরা গাড়ি নিয়ে ভিতরে গেলে গেইট টা লাগিয়ে দিলো দারোয়ান। ততোক্ষনে পিলারের পিছন থেকে নুপুর ও বেরিয়ে এলো। দারোয়ান চাচা নুপুরের মুখ আর চোখ দেখেই বুঝে গেলো মেয়েটা কান্না করেছে। সে বললো..
- কানতাছো কেন মা?
- কই, কাদছিনা তো। চোখে কি যেনো পরেছে।
- মারে, এমনি এমনি বুড়ো হয়নি। তোমার মুখ দেখেই বুঝছি কেন কানতাছো। ওই মাইয়াডারে নিজের স্বামীর পাশে দেইখা তোমার কষ্ট লাগতেছে তাইনা? কিন্তু কি কমু মা, তুম যাওনের পর থাইক্কা সাহেব প্রায়ই ওই মাইয়াডারে নিয়া বাসায় আহে। কইতে খারাপ লাগতাছে, তাও কইতাছি.. কোনো কোনো দিন ওই মাইয়াডা রাতে আসে আরেকবার সকালে সাহেবের সাথে যায়।
নুপুর কাঁদছে চাচার কথা শুনে। কিন্তু কাঁদলে আর কি হবে? রাজ যদি এই মেয়েটাকে নিয়ে সুখে থাকে তাহলে থাকুন। আমি আর ওদের মাঝে আসবো না। কথাগুলো মনে মনে বলছে আর কাঁদছে নুপুর। কান্না থামিয়ে চাচাকে বললো..
- চাচা আমাকে আরেকটা কাজ করে দিতে হবে?
- কও মা কি করতে হইবো?
- আমাকে একটা চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট এনে দিতে হবে।
- এখন তো আর আনা যাইবোনা মা। কাল আনতে হইবো। এখন তো পরিষদ বন্ধ কইরা দিছে।
- কাল! কিন্তু এখানে যে কাল পর্যন্ত থাকার জায়গা আমার নেই চাচা। কোথায় থাকবো।
- মাগো, আমি গরীব হইতে পারি, কিন্তু তুমি যদি আমারে চাচা হিসেবে মাইনা থাকো তাইলে আমার মতো এক গরীবের বাসায় থাকতে পারবা।
নুপুর একটা কৃতজ্ঞতার হাসি দিয়ে বললো..
- এই পৃথিবীতে আমার কেউ নেই চাচা। কিন্তু এতোদিন পর মনে হচ্ছে, আমার জন্য কেউ থাকুক আর না থাকুন আপনার মতো একজন চাচা আমার আছে।
- কিন্তু মা, এইগুলান দিয়া তুমি কি করবা?
- চাকরি করবো চাচা। নাহলে চলবো কিভাবে? আর আমার যে সন্তান আসবে তারই বা কি হবে।
- কিন্তু এই শরীর নিয়া কাম করবা কেমনে মা?
-- আল্লাহ সহায় হলে সব পারবো।
-এইডা ঠিক কইছো মা। আল্লাহ চাইলে সবই সম্ভব।
সেদিন রাতে নুপুর দারোয়ান চাচার বাসায় গিয়ে থাকে। পরেরদিন দারোয়ান চাচা রাজের কাছ থেকে জরুরী কাজের কথা বলে দুই ঘন্টার ছুটি নিয়ে ইউপি থেকে নুপুরের জন্য চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট নিয়ে আসে।
নুপুর অনেক কৃতজ্ঞতা জানিয়ে চিটাগং ব্যাক করে বিকেলেই। ..
পরেরদিন সবকিছু নিয়ে সেই অফিসে যায় নুপুর। নানান ধরনের ফর্মালিটি কম্প্লিট করে জব এ জয়েন করে নুপুর। তার কাজটা হলো..রিসিপশন রুম মেইনটেন করা। স্যালারি ধরা হয় ২০০০০ টাকা। তবে ভালো কাজ দেখাতে পারলে সামনে স্যালারি আবার বাড়বে এই আশ্বাস নুপুরকে দেওয়া হয়।
জব টা পেয়ে নুপুর অনেক খুশিই হয়। মনে হতে থাকে সে যেনো চাদ হাতে পেয়েছে।
..
দিন যেতে থাকে। নুপুর ও কাজের মাধ্যে ডুবে আছে। সারাদিন কাজ, আর দিনশেষে বাসায় এসে একাকী সময় যাপন.. রাতের আধারে অতীতের কথা ভেবে চোখের পানি নষ্ট করা, এইটা যেনো নুপুরের নিত্যদিনের সঙ্গি। নুপুরের এখন চার মাস চলছে। স্যালারির টাকা দিয়ে নুপুর তার অনাগত সন্তানের জন্য ঘর গুছাচ্ছে। সে চায় না, তার সন্তান কোনো কিছুর অভাববোধ করুক। তাছাড়া, নিজের সন্তানকে অনেক বড় করতে চায় নুপুর। তাই টাকা জমা করছে সে।
.
প্রতিদিনের মতো আরেকটা দিন শুরু হয় নুপুরের। ভোর পাঁচটায় উঠে সে। ফ্রেস হয়ে নামাজ আদায় করে রান্না বসায়। রান্নার হলে টিফিন ক্যারিয়ারে লাঞ্চের খাবার নিয়ে খেতে বসে সে। খাওয়া কোনোমতে শেষ করে অফিসে দৌড়ায় নুপুর।
খুব তাড়াহুড়া করে যাওয়ায় অফিসে চেয়ারে বসে হাঁপাতে থাকে সে।
এমন সময় একটা মেয়ে এসে নুপুরের সামনে দাঁড়ায়। মেয়েটা নুপুরের কলিগ। নুপুরের সমবয়সীই হবে। এই কয়দিনে দুজনের খুব ভাব হয়ে গেছে। সে নুপুরকে জিজ্ঞেস করে
- কিরে, এইভাবে হাপাচ্ছিস কেন?
- সে কিছু না, তাড়াহুড়ো করে এসেছি তো তাই। - এতো তাড়াহুড়ো করে আসতে গেলি কেন? অফিস টাইম হওয়ার এখনো পনেরো মিনিট বাকি। আস্তে ধীরেই আসতে পারতি।
- ওহ, খেয়াল করিনি, ঘড়ি দেখিনি তো, তাই সময়টা দেখতে পারিনি।
আচ্ছা যাই হোক ..
আমার কাল ছুটি লাগবে। ছুটি চাইলে দিবে তো?
- তুই ছুটি দিয়ে কি করবি?
- দরকার আছে। দিবে কিনা বল।
- জরুরী হলে তো অবশ্যই দিবে। তুই জি.এম. স্যারের কথা বলে দেখ।
- হুম আচ্ছা।
নুপুর তার কাজ শেষ করে জি.এম স্যারের রুমে গেলো। জি. এম স্যার ফাইল চেক করছিলো। নুপুর গিয়ে নক দিলো..
- আসতে পারি স্যার?
- হুম আসো.. গম্ভীর গলায় বললেন জি.এম স্যার।
- স্যার , একটা কথা ছিলো..
- বলে ফেলো.. ফাইল দেখতে দেখতে বললেন তিনি।
- আসলে স্যার... আগামিকাল আমি আসতে পারবো না। আমতা আমতা করে বললো নুপুর।
নুপুরের এই কথায় জি.এম সাহেব মুখ তুলে তাকালেন।
- আসতে পারবে না কেন?
- একটু দরকার আছে।
- পার্সোনাল কিছু?
- পার্সোনাল আবার পার্সোনাল ও না, এইরকম। মাথা নিচু করে বললো নুপুর।
- এইটা আবার কিরকম দরকার? যাইহোক, তুমি এই কোম্পানিতে জয়েন করেছো এখনো তিন মাস হয়নি। আমাদের কোম্পানির একটা রুলস আছে। ছয় মাস না হলে আমরা কারো ছুটি মঞ্জুর করি না। তারপরও যদি কেউ বিনা নোটিশে অফিস কামাই করে তাহলে প্রথম বার বেতন থেকে কেটে নেই, পরেরবার ও যদি এমন করে তাহলে বিনা নোটিশে তাকে বরখাস্ত করা হয়।
.. নুপুর মাথা নিচু করে কথাগুলো শুনছিলো। ছুটি যে সে পাবেনা সেটা ১০০ ভাগ নিশ্চিত হয়ে গেছে নুপুর। জি. এম সাহেব আবারও বললেন...
- তোমার যদি ছুটির বেশিই প্রয়োজন হয় তাহলে হাফ বেলা ছুটি পেতে পারো। চলবে হাফ বেলায়?
- খুব চলবে... খুশি হয়ে বললো নুপুর।
- Ok ... তাহলে আগামীকাল এসে অর্ধবেলা কাজ করে একটা এপ্লিকেশন জমা দিয়ে লাঞ্চে চলে যেও.. কেমন।
- আচ্ছা স্যার।
- হুম.. তাহলে এখন আসো।
- জ্বী।
নুপুর খুশি মনে স্যারের রুম থেকে বেরিয়ে এলো।
..
To be Continue .....
Israt Jahan Tanni
Part_08
..
এক সপ্তাহ হলো নুপুর চিটাগং এর একটা ভাড়া বাসায় উঠেছে। সাথে টাকাকড়ি কিছু নেই, তাই নিজের শরীরের গয়না গুলো বিক্রি করে বাসার এডভান্স সহ আরো তিনমাসের ভাড়া অগ্রিম দিয়ে রেখেছে। বলা তো যায় না, পরে যদি ম্যানেজ করতে না পারে...
বাকিটাকা গুলো দিয়ে কোনো মতে চলছে সে। ফাকে ফাকে একটা জবের অনুসন্ধান করছে।
এভাবে পনেরোদিন কেটে যায় ... কিন্তু কোনো জব সে পায়না।
একদিন মোবাইলে "বিক্রয় ডট কম" সফটওয়্যার এ চাকরির অনুসন্ধান করছিলো সে। হটাৎ তার নজর যায় একটা চাকরির বিজ্ঞাপনে। একটা কোম্পানিতে "রিসিপসোনিস্ট" পদে লোক নিয়োগ দিচ্ছে তারা। নুপুর ডিটেইল এ গিয়ে দেখলো সেখানে সেই কোম্পানির ফোন নাম্বার ও দেওয়া আছে। নুপুর সাথে সাথে সেই নাম্বারে ডায়াল করলো। একটা পুরুষ রিসিভ করলো..
তার কাছ থেকে ডিটেইলসে জানলো.. পরেরদিন সেই কোম্পানি তে যোগাযোগ করার জন্য বললো..
তবে সমস্যা হলো আরেক জায়গায়। সেই কোম্পানিতে জব করতে হলে সার্টিফিকেটের কপি, চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট অরিজিনাল কপি প্লাস জন্ম নিবন্ধন বা ভোটার আইডি কার্ডের কপি লাগবে।
চিন্তায় পরে গেলো নুপুর। কারণ সবগুলো সার্টিফিকেট রাজের বাসায় আছে। কি করে আনবে সেগুলো। তাহলে কি জব টা পেয়েও হাতছাড়া হয়ে যাবে? মাথা কাজ করছে না নুপুরের। কি করবে সে? এইরকম একটা জব সহজে পাওয়া মুশকিল।
আর তাছাড়া নুপুর এখন চিটাগং এ , আর রাজের বাসা ঢাকায়। পেপার গুলো কালেক্ট করা এতোটাও সোজা না। কি করা যায়, ভাবতে লাগলো নুপুর। হটাৎ তার মাথায় একটা আইডিয়া এলো। কাউকে পাশে না পেলেও দারোয়ান চাচাকে সে নিশ্চয়ই পাবে। উনি নুপুরকে নিজের মেয়ের মতো দেখেন। তিনি নুপুরকে নিশ্চয়ই সাহায্য করবেন।
নুপুর সাথে সাথে কোম্পানির লোকটার কাছে ফোন দিয়ে দুই দিন সময় চেয়ে নিলেন। লোকটি ও সময় দিলো। নুপুর সাথে সাথেই রওনা দিলো ঢাকার উদ্দেশ্যে। বিকেল ৪:৪৫ মিনিটে নুপুর ঢাকায় গিয়ে পৌছালো। একটা রিক্সা নিয়ে রাজের বাসার সামনে গেলো সে।
..
বাসার সামনে যেতেই দারোয়ান চাচাকে দেখতে পেলো সে। মুখে একটা হাসি ফুটে উঠলো তার। রিক্সা ভাড়া মিটিয়ে চাচার সামনে গেলো সে। দারোয়ান চাচা অনেকটাই অবাক নুপুরকে দেখে..
- মারে, তুমি কই থেইক্কা আইলা এতোদিন পর?
- সে অনেক কথা চাচা, আপনি ভালো আছেন তো?
- আমার আর ভালা মন্দ। চোখের সামনে কতো ভালো মন্দ ঘটে, দেইক্কা ও কাঠের মতো থাহন লাগে। এইডারে কি আর ভালা কয়?
- থাক না চাচা এইসব। এখন আপনার কাছে এসেছি আমাকে একটা কাজ করে দিতে হবে।
- কি কাজ কও মা, তোমার মতো একটা ভালা মাইয়ার লাইগা যদি কিছু করতে পারি, তাইলে একটু শান্তি পামু।
নুপুর দারোয়ান চাচার কথায় স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো।
নুপুর চাচাকে বিস্তারিত সব বললো। সার্টিফিকেটের ফাইল টা কোথায় আছে সেটাও বলে দিলো। চাচা বললো..
- সব তো বুঝলাম মা, কিন্তু ওই ঘরে আমি ঢুকমু কেমনে?
নুপুর কিছুটা হেসে নিজের সাইড ব্যাগ থেকে একটা চাবি বের করলো। চাচাকে সেটা দিয়ে বললো.. এইটা রাজের ঘরের ডুব্লিকেট চাবি। এইটা আমার কাছেই থাকতো। ভেবেছিলাম ফেলে দিবো। ফেলবো ফেলবো করে ফেলা হয়নি। আজ কাজে লেগে গেলো। আপনি তারাতাড়ি গিয়ে নিয়ে আসুন। রাজ হয়তো এসে পরবে।
.
নুপুরের কথামতো দারোয়ান চাচা রাজের রুমে গেলো। অনেক খোঁজে শেষে ফাইল টা পেলো। ফাইল টা হাতে নিয়ে হাসিমুখে রুম থেকে বেরিয়ে এলেন তিনি। রুমটা আগের মতো লক করে নিচে ফিরে এলেন। উনার হাতে ফাইলটা দেখে হাসি দিলো নুপুর ফাইল টা নিজের হাতে নিয়ে চাচাকে আবারো ধন্যবাদ জানালো নুপুর। এমন সময় একটা গাড়ি আসলো। গাড়িটা দেখে নুপুর একটা পিলারের পিছনে গিয়ে লুকালো। বাসার গেইটের সামনে এসেই গাড়িটা স্লো হলো, আর দারোয়ান চাচা গিয়ে গেইট টা খোলে দিলো। নুপুর স্পষ্ট রাজকে দেখতে পেলো। রাজকে দেখে দুফোটা পানি গড়িয়ে পরলো চোখ দিয়ে। তখনই চোখ গেলো রাজের পাশের সিটে বসা একটা মডার্ন মেয়ের দিকে। মেয়েটা খুব ঘনিষ্ঠভাবে রাজের সাথে মিশে আছে।
মেয়েটাকে দেখেই নুপুরের বুকে গভীর ব্যাথা অনুভব করলো। ওরা গাড়ি নিয়ে ভিতরে গেলে গেইট টা লাগিয়ে দিলো দারোয়ান। ততোক্ষনে পিলারের পিছন থেকে নুপুর ও বেরিয়ে এলো। দারোয়ান চাচা নুপুরের মুখ আর চোখ দেখেই বুঝে গেলো মেয়েটা কান্না করেছে। সে বললো..
- কানতাছো কেন মা?
- কই, কাদছিনা তো। চোখে কি যেনো পরেছে।
- মারে, এমনি এমনি বুড়ো হয়নি। তোমার মুখ দেখেই বুঝছি কেন কানতাছো। ওই মাইয়াডারে নিজের স্বামীর পাশে দেইখা তোমার কষ্ট লাগতেছে তাইনা? কিন্তু কি কমু মা, তুম যাওনের পর থাইক্কা সাহেব প্রায়ই ওই মাইয়াডারে নিয়া বাসায় আহে। কইতে খারাপ লাগতাছে, তাও কইতাছি.. কোনো কোনো দিন ওই মাইয়াডা রাতে আসে আরেকবার সকালে সাহেবের সাথে যায়।
নুপুর কাঁদছে চাচার কথা শুনে। কিন্তু কাঁদলে আর কি হবে? রাজ যদি এই মেয়েটাকে নিয়ে সুখে থাকে তাহলে থাকুন। আমি আর ওদের মাঝে আসবো না। কথাগুলো মনে মনে বলছে আর কাঁদছে নুপুর। কান্না থামিয়ে চাচাকে বললো..
- চাচা আমাকে আরেকটা কাজ করে দিতে হবে?
- কও মা কি করতে হইবো?
- আমাকে একটা চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট এনে দিতে হবে।
- এখন তো আর আনা যাইবোনা মা। কাল আনতে হইবো। এখন তো পরিষদ বন্ধ কইরা দিছে।
- কাল! কিন্তু এখানে যে কাল পর্যন্ত থাকার জায়গা আমার নেই চাচা। কোথায় থাকবো।
- মাগো, আমি গরীব হইতে পারি, কিন্তু তুমি যদি আমারে চাচা হিসেবে মাইনা থাকো তাইলে আমার মতো এক গরীবের বাসায় থাকতে পারবা।
নুপুর একটা কৃতজ্ঞতার হাসি দিয়ে বললো..
- এই পৃথিবীতে আমার কেউ নেই চাচা। কিন্তু এতোদিন পর মনে হচ্ছে, আমার জন্য কেউ থাকুক আর না থাকুন আপনার মতো একজন চাচা আমার আছে।
- কিন্তু মা, এইগুলান দিয়া তুমি কি করবা?
- চাকরি করবো চাচা। নাহলে চলবো কিভাবে? আর আমার যে সন্তান আসবে তারই বা কি হবে।
- কিন্তু এই শরীর নিয়া কাম করবা কেমনে মা?
-- আল্লাহ সহায় হলে সব পারবো।
-এইডা ঠিক কইছো মা। আল্লাহ চাইলে সবই সম্ভব।
সেদিন রাতে নুপুর দারোয়ান চাচার বাসায় গিয়ে থাকে। পরেরদিন দারোয়ান চাচা রাজের কাছ থেকে জরুরী কাজের কথা বলে দুই ঘন্টার ছুটি নিয়ে ইউপি থেকে নুপুরের জন্য চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট নিয়ে আসে।
নুপুর অনেক কৃতজ্ঞতা জানিয়ে চিটাগং ব্যাক করে বিকেলেই। ..
পরেরদিন সবকিছু নিয়ে সেই অফিসে যায় নুপুর। নানান ধরনের ফর্মালিটি কম্প্লিট করে জব এ জয়েন করে নুপুর। তার কাজটা হলো..রিসিপশন রুম মেইনটেন করা। স্যালারি ধরা হয় ২০০০০ টাকা। তবে ভালো কাজ দেখাতে পারলে সামনে স্যালারি আবার বাড়বে এই আশ্বাস নুপুরকে দেওয়া হয়।
জব টা পেয়ে নুপুর অনেক খুশিই হয়। মনে হতে থাকে সে যেনো চাদ হাতে পেয়েছে।
..
দিন যেতে থাকে। নুপুর ও কাজের মাধ্যে ডুবে আছে। সারাদিন কাজ, আর দিনশেষে বাসায় এসে একাকী সময় যাপন.. রাতের আধারে অতীতের কথা ভেবে চোখের পানি নষ্ট করা, এইটা যেনো নুপুরের নিত্যদিনের সঙ্গি। নুপুরের এখন চার মাস চলছে। স্যালারির টাকা দিয়ে নুপুর তার অনাগত সন্তানের জন্য ঘর গুছাচ্ছে। সে চায় না, তার সন্তান কোনো কিছুর অভাববোধ করুক। তাছাড়া, নিজের সন্তানকে অনেক বড় করতে চায় নুপুর। তাই টাকা জমা করছে সে।
.
প্রতিদিনের মতো আরেকটা দিন শুরু হয় নুপুরের। ভোর পাঁচটায় উঠে সে। ফ্রেস হয়ে নামাজ আদায় করে রান্না বসায়। রান্নার হলে টিফিন ক্যারিয়ারে লাঞ্চের খাবার নিয়ে খেতে বসে সে। খাওয়া কোনোমতে শেষ করে অফিসে দৌড়ায় নুপুর।
খুব তাড়াহুড়া করে যাওয়ায় অফিসে চেয়ারে বসে হাঁপাতে থাকে সে।
এমন সময় একটা মেয়ে এসে নুপুরের সামনে দাঁড়ায়। মেয়েটা নুপুরের কলিগ। নুপুরের সমবয়সীই হবে। এই কয়দিনে দুজনের খুব ভাব হয়ে গেছে। সে নুপুরকে জিজ্ঞেস করে
- কিরে, এইভাবে হাপাচ্ছিস কেন?
- সে কিছু না, তাড়াহুড়ো করে এসেছি তো তাই। - এতো তাড়াহুড়ো করে আসতে গেলি কেন? অফিস টাইম হওয়ার এখনো পনেরো মিনিট বাকি। আস্তে ধীরেই আসতে পারতি।
- ওহ, খেয়াল করিনি, ঘড়ি দেখিনি তো, তাই সময়টা দেখতে পারিনি।
আচ্ছা যাই হোক ..
আমার কাল ছুটি লাগবে। ছুটি চাইলে দিবে তো?
- তুই ছুটি দিয়ে কি করবি?
- দরকার আছে। দিবে কিনা বল।
- জরুরী হলে তো অবশ্যই দিবে। তুই জি.এম. স্যারের কথা বলে দেখ।
- হুম আচ্ছা।
নুপুর তার কাজ শেষ করে জি.এম স্যারের রুমে গেলো। জি. এম স্যার ফাইল চেক করছিলো। নুপুর গিয়ে নক দিলো..
- আসতে পারি স্যার?
- হুম আসো.. গম্ভীর গলায় বললেন জি.এম স্যার।
- স্যার , একটা কথা ছিলো..
- বলে ফেলো.. ফাইল দেখতে দেখতে বললেন তিনি।
- আসলে স্যার... আগামিকাল আমি আসতে পারবো না। আমতা আমতা করে বললো নুপুর।
নুপুরের এই কথায় জি.এম সাহেব মুখ তুলে তাকালেন।
- আসতে পারবে না কেন?
- একটু দরকার আছে।
- পার্সোনাল কিছু?
- পার্সোনাল আবার পার্সোনাল ও না, এইরকম। মাথা নিচু করে বললো নুপুর।
- এইটা আবার কিরকম দরকার? যাইহোক, তুমি এই কোম্পানিতে জয়েন করেছো এখনো তিন মাস হয়নি। আমাদের কোম্পানির একটা রুলস আছে। ছয় মাস না হলে আমরা কারো ছুটি মঞ্জুর করি না। তারপরও যদি কেউ বিনা নোটিশে অফিস কামাই করে তাহলে প্রথম বার বেতন থেকে কেটে নেই, পরেরবার ও যদি এমন করে তাহলে বিনা নোটিশে তাকে বরখাস্ত করা হয়।
.. নুপুর মাথা নিচু করে কথাগুলো শুনছিলো। ছুটি যে সে পাবেনা সেটা ১০০ ভাগ নিশ্চিত হয়ে গেছে নুপুর। জি. এম সাহেব আবারও বললেন...
- তোমার যদি ছুটির বেশিই প্রয়োজন হয় তাহলে হাফ বেলা ছুটি পেতে পারো। চলবে হাফ বেলায়?
- খুব চলবে... খুশি হয়ে বললো নুপুর।
- Ok ... তাহলে আগামীকাল এসে অর্ধবেলা কাজ করে একটা এপ্লিকেশন জমা দিয়ে লাঞ্চে চলে যেও.. কেমন।
- আচ্ছা স্যার।
- হুম.. তাহলে এখন আসো।
- জ্বী।
নুপুর খুশি মনে স্যারের রুম থেকে বেরিয়ে এলো।
..
To be Continue .....
প্রত্যাখ্যান -Part_08
Reviewed by NINDOOK LIFE
on
January 26, 2020
Rating:
No comments: