প্রত্যাখ্যান 💔
Israt Jahan Tanni
Part_07
..
পরেরদিন সন্ধ্যে সাত টায় রাজ বাসায় ফিরে।
বাসায় এসে ক্লান্ত দেহ নিয়ে সোফায় বসে আছে রাজ। নুপুর এক গ্লাস পানি হাতে নিয়ে রাজের পাশে এসে বসে।
- এই নাও.. পানিটা খেয়ে নাও..
রাজ এক ঢোকে সবটা পানি শেষ করে ফেলে।
নুপুর শান্তভাবে কিছুক্ষন রাজের দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করে..
- কোথা থেকে আসলা?
- কোথা থেকে আসলাম মানে? অফিস থেকে এসেছি।
- আচ্ছা.. কাল থেকে তুমি অফিসেই আছো! রাতেও অফিসের থেকেছো তাইনা?
- কি বলতে চাও তুমি?
- কাল কোথায় গিয়েছিলে?
- কোথাও যায়নি। কাজ করতে করতে অনেক রাত হয়ে গেছিলো। কখন যে ডেস্কে মাথা রেখে ঘুমিয়ে গেছিলাম বুঝতে পারিনি। ঘুম ভাংলে দেখলাম সকাল হয়ে গেছে। তাই একেবারে আজকের অফিস টা করেই এলাম।
- আজকাল বিকাল ৫ টায় ও অনেক রাত হয়ে যায়, তাইনা?
নুপুরের কথায় রাজ কিছুটা চমকে উঠলো। কয়েকটা ঢোক গিলে বললো..
- কিক কি বলছো এইসব?
- বিকেল পাঁচটায় কোথায় গিয়েছিলা?
- অফিসেই তো ছিলাম। কেন শুধু শুধু এইসব বলছো?
- আমি তোমার অফিসে ফোন দিয়েছিলাম। সেখান থেকে জানতে পেরেছি তুমি পাঁচটায় অফিস থেকে বেরিয়েছো। শুধু তাইনা.. তুমি প্রতিদিন বিকেল পাঁচটায় অফিস থেকে বের হও। কোথায় যাও তুমি? এমন ও রাত যায় তুমি বাসায় ফিরোনা। থাকো কোথায় সারারাত?
- তুমি কি আমাকে সন্দেহ করছো?
- সন্দেহ করার মতো বিষয় হলে সন্দেহ করবো এইটাই স্বাভাবিক তাইনা?
এখন বলো, তুমি যাও কোথায়?
- এখন কি তোমার কাছে আমার কৈফিয়ত দিতে হবে?
- আমি তোমার কাছে কৈফিয়ত চাচ্ছিনা। স্ত্রী হিসেবে তোমার ব্যাপারে জানার অধিকার আমার আছে।
- রাজ এইবার রেগে গেলো। রেগে গিয়ে বললো...
আমার যেখানে খুশি সেখানে যাবো। যখন খুশি তখন বাসায় আসবো। তোর বাপের কি..
তুই মেয়ে মানুষ, মেয়ে মানুষের মতো থাকবি,, আমার বাসায় থাকিস, আমার টাকায় ফুর্তি করিস, আবার আমার সাথেই গরম দেখাস? এতো বড় সাহস তোর? দ্বিতীয় বার এই সাহস দেখাবি, অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে বলে দিলাম। আমার মাথা গরম করবিনা। যত্তসব, আমার টাকায় পুষছি, আবার আমার সাথেই বাড়াবাড়ি .. বলেই বিড়বিড় করতে করতে রুমে চলে গেলো রাজ।
.
নুপুর আগের জায়গাতেই ঠায় দাড়িয়ে আছে। কথাগুলো তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। এইটা কি সেই রাজ, যে রাজ আমার সাথে উচুস্বরে কখনও কথা বলেনি? এইটা কি সেই রাজ, যে রাজ আমাকে না দেখে এক মুহুর্ত থাকতে পারেনি? এইটা কি সেই রাজ, যে রাজ আমাকে খুশি রাখার জন্য, আমার ইচ্ছা পুরনের জন্য কত কিছু করেছে? ভাবতে পারছে না নুপুর। চোখের পানিগুলো ও বাধ মানছেনা। অন্য একটা রুমে গিয়ে বসলো নুপুর... । কি করে পারলো রাজ আমাকে টাকার খোঁটা দিতে? আমিতো ওর বউ, তাহলে ও আমাকে টাকা দিয়ে পুষছে কিভাবে? কাঁদছে নুপুর। কাঁদতে কাঁদতে মাথাটা ব্যাথা করতে লাগলো। না খেয়েই ঘুমিয়ে পরলো সে।
পরেরদিন বেলা ১০ টায় ঘুম থেকে উঠলো নুপুর। ঘড়ি দেখেই চোখ ছানাবড়া... তারাতাড়ি উঠে রাজের রুমে গেলো। রাজ নেই, হয়তো অফিসে চলে গেছে। নিমিষেই মনটা খারাপ হয়ে গেলো নুপুরের।
খুব খিদেও পেয়েছে, রাত থেকে কিছু খায়নি তো..
ওয়াসরুমে ঢুকে তারাতাড়ি ফ্রেস হয়ে বেরিয়ে এলো নুপুর। ফ্রিজ থেকে আগের খাবার বের করে গরম করে খেয়ে নিলো সে। এখন কিছুটা ভালো লাগছে নুপুরের। আবার রাতের কথা মনে পরতেই মুহুর্তেই মনটা খারাপ হয়ে গেলো তার...
একটা চেয়ার নিয়ে বারান্দায় গিয়ে বসলো সে। চোখ বুজে বসে আছে, আর আগের কথা গুলো স্মৃতি চারন করছে।
মাথা ব্যাথাটা এখনও কমেনি। বরং বেড়েই চলেছে। নুপুর রুমে গেলো মাথা ব্যাথার ওষুধ খোজতে। কিন্তু পাচ্ছেনা। ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার গুলোতে খোজলো প্রথমে, কিন্তু পায়নি। তারপর ওয়াড্রবের একটা ড্রয়ারে খোঁজে না পেয়ে যখন দ্বিতীয় ড্রয়ার টা খোললো.. কিছু একটা দেখে চমকে গেলো সে।
তারাতাড়ি কাগজটা হাতে নিয়ে পুরোটা খোললো নুপুর। নুপুরের মাথায় বাজ পরলো। চোখ দিয়ে দুফোটা পানি গড়িয়ে পরতে থাকলো। রাজ এখন আর নুপুরকে চায়না.. । কিন্তু কেন চায়না? সেকি রাজের অযোগ্য? নাকি ওর প্রতি রাজের আর ভালোবাসা নেই। সে কি পুরোনো হয়ে গেছে? কাঁদছে নুপুর। রাজ কি করে পারলো এই ডিভোর্স পেপার টা তৈরি করতে? হ্যাঁ, ডিভোর্স পেপার. । রাজ আর নুপুরের ডিভোর্স পেপার টাই ওয়াড্রব থেকে পেলো নুপুর।
. কিছু ভাবতে পারছে না সে। মাথার যন্ত্রনা টা আরো বেড়ে গেছে। কিন্তু মনের যন্ত্রনা.. সেটা কিভাবে প্রকাশ করবে সে?
নাহ, রাজের সাথে তার আলাপ করতেই হবে। এখন যে তার মধ্যে আরেকজন আছে। রাজ তো সেটা জানেই না। জানলে হয়তো এইরকম করবে না। হয়তো রাগের বশেই এটা করেছে। নানা রকম ভাবে শান্তিনা দিচ্ছে নুপুর নিজেকেই। তবুও শান্তি পাচ্ছে না সে।
চোখ গুলোও বাধ মানছেনা।
..
বিকাল ৫:২০ এ রাজ বাসায় চলে এলো। আজ এতো তারাতাড়ি রাজের আসা দেখে কিছুটা অভাবই হলো সে। তবুও কিছু বললো না। আজ যে অনেক কিছু বলতে হবে রাজকে।
রাজ ফ্রেস হয়ে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। নুপুর কিছুক্ষন পর রুমে এসে রাজের পাশে এসে বসলো। রাজ আড় চোখে দেখলো, কিন্তু কিছু বললোনা। নুপুরই বললো..
- আজ কি তোমার শরীর খারাপ?
- নাহ, কেন?
- এতো তারাতাড়ি চলে এলে যে?
- তাতে তোর কোনো প্রব্লেম? তোকে আগেই বলেছি আমার বাসা, আমি যখন খুশি তখন আসবো।
- এইভাবে বলছো কেন? আমিতো এমনিই জিজ্ঞেস করলাম।
রাজ আর কিছু বললো না। নুপুর আবার বললো..
- তোমাকে কিছু বলতে চাই..
- তারাতাড়ি বল?
- এইটা কি? ডিভোর্স পেপার টা রাজকে দেখিয়ে বললো নুপুর।
নুপুরের হাতে পেপার টা দেখে কিছুটা অবাক হলো রাজ। তারপর নিজেই বললো..
- দেখেই যখন ফেলেছো তাহলে ঢং করছো কেন? বুঝতে পেরেছো নিশ্চয়ই এইটা কি।।।
রাজের এইরকম উত্তরে নুপুর অনেকটাই অবাক হলো। বললো..
- কি বলছো তুমি রাজ? তুমি আমাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছো। তোমার জন্য আমি সবকিছু ছেড়েছি। আর তুমি এখন আমাকে ডিভোর্স দিতে চাচ্ছো রাজ? আমি কি অন্যায় করেছি বলো? কেদে দিলো নুপুর।
- কাদবি না বলে দিলাম। তোর এইসব ঢং দেখলে আমার গা জ্বলে।
- আমি ঢং করছি?
- তা নয়তো কি? আর আমার কথা শুনে রাখ, আমি তোকে নিয়ে থাকতে পারবো না। এই পেপারে সাইন করে এখান বিদায় হো.. তোকে আমার আর সহ্য হচ্ছে না, বুঝেছিস? অনেক সহ্য করেছি।
- পাগল হয়ে গেছো তুমি? কোথায় যাবো বলো? তোমাকে বিয়ে করেছি বলে আমার পরিবার আমাকে প্রত্যাখ্যান করেছে। তুমি ছাড়া আমার আর কেউ নেই। আর তুমিতো আমাকে ভালোবাসো, তাহলে কেন এমন করছো বলো? কেদে কেদে বললো নুপুর।
- ভালোবাসা! তোকে ভালোবাসবো আমি? কি যোগ্যতা আছে রে তোর? তোর বাবা তো তোকে তার সব কিছু থেকে বঞ্চিত করেছে, কিছুই নেই তোর .. শুধু তোর শরীর টা ছাড়া। এইটা আমার আমার লাগবে না। টাকা ছড়ালে তোর চেয়ে আরো ভালো ও সুন্দরীর শরীর পাবো।
- রাজ...!! অস্ফুটস্বরে কেদে দিলো নুপুর। চেচিয়ে উঠলো সে..
- কি বলছো কি রাজ? তুমি কি সেই রাজ যে আমার বাবার সম্পদ না , আমাকেই ভালোবেসেছিলা? আর আমি তোমার বিবাহিত বউ.. আমার সাথে তুমি অন্য মেয়েদের তুলনা দিচ্ছো? ছিঃ।।
- ছিঃ ছিঃ যতো ইচ্ছা করতে থাক,
শুনে রাখ, তুই এখন আমার কাছে শুধুমাত্র একটা বোঝা। তোকে তো তোর বাবা সেদিনই আমার কাছ থেকে কিনে নিয়েছিলো, যেদিন তোর বাসায় গিয়েছিলাম। মনে করে দেখ.. তোকে আর তোর মাকে রুমে পাঠিয়ে আমাকে একা তার সামনে রেখেছিলো..
আর আমাদের মধ্যে তোকে নিয়ে দরদাম হচ্ছিলো। পুরো ২০ লাখ টাকার বিনিময়ে তোর বাবার কাছে আমি তোকে বেচেঁ দিয়েছিলাম। আর সেই তুইই আমার কাছে সেদে সেদে আসলি। আমার আর কি, মাগনা জিনিস তো আর কেউ ছাড়েনা, তাই আমিও তোকে বিয়ে করে নিলাম। এখন তোকে আর আমার ভালো লাগেনা। তুই চলে যা.. কোথায় যাবি না যাবি সেটা তোর ব্যাপার। তবে যাওয়ার আগে এই পেপারে সাইন দিয়ে যা।
নুপুর অবাক চোখে রাজের দিকে তাকিয়ে আছে। আজকের রাজকে সে আগের রাজের সাথে কোনোভাবেই মিলাতে পারছেনা। আর সামান্য টাকার জন্য সেও আমার ভালোবাসাকে প্রত্যাখ্যান করলো? সেদিন কি এজন্যই বাবা বার বার রাজকে লোভী বলছিলো? কাঁদছে নুপুর। মুখে কোনো কথা নেই। ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে রাজের দিকে। রাজ সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। মুখে তার তাচ্ছিল্যের হাসি।
নুপুর কাঁপাকাঁপা হাতে কলম টা হাতে নিলো, পেপার টার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে সই করে দিলো সে। আজ রাজ মুক্ত। কিন্তু নুপুর.. সে কি করবে? ভাবতে পারছে না সে। নুপুরের সিগ্নেচার দেওয়া হলেই রাজ ওর হাত থেকে টান দিয়ে পেপার টা নিয়ে নিলো। মুখে তার বিজয়ের হাসি। নুপুর চলে যাবে বলে দরজার দিকে পা বাড়ালো.. দরজার কাছে গিয়েও আবার রাজের দিকে এগিয়ে আসলো। রাজকে উদ্দেশ্যে করে বললো..
- রাজ..
- হ্যাঁ বলো..
- আজ থেকে তো তুমি মুক্ত তাইনা? তাহলে তো আজ তুমি অনেক খুশি, এখন থেকে আর আমার মতো একটা বুঝাকে নিজের টাকায় পুষতে হবেনা তাইনা? অবশ্য নিজের টাকা বলছি কেন? এইটা তো তোমার ভালোবাসা বিক্রির টাকা.. যেটা নিঃসন্দেহে অবৈধ তাইনা?
রাজ কিছু বললো না, শুধু নুপুরের কথাগুলো বুঝার চেষ্টা করছে..
নুপুর আবারো বলতে লাগলো
- রাজ, আজ আমি কোথায় যাবো আমি জানিনা। কারণ আমার পরিবার তোমার কারনের আমাকে প্রত্যাখ্যান করেছে। সেখানে যাওয়ার কোনো অধিকার আমার নেই। ছিলে তুমি, সেই তুমিও আমাকে আজ টাকার জন্য প্রত্যাখ্যান করলে।
একটা কথা জানো তো? কাউকে কষ্ট দিয়ে কেউ সুখি হয় না। তবে আমি চাই তুমি খুব সুখি হও। কারণ, তোমাকে যে আমি বড্ড ভালোবাসি।
আমার প্রিয় মানুষগুলো আমাকে প্রত্যাখ্যান করেছে। আজ আমি নিঃস্ব.. একা।
শুধু একথাই বলবো..
তোমাকে যেনো কখনো কারো কাছ থেকে প্রত্যাখিত না হতে হয়। এইটার যে অনেক কষ্ট, সেটা তুম সহ্য করতে পারবে না।
ভালো থেকে তুমি।
বলেই দৌড়ে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো নুপুর, এক অজানার উদ্দেশ্যে।
রাজ শুধু অবাক চোখে ওর যাওয়া দেখছে।
.
To be Continue ....
Israt Jahan Tanni
Part_07
..
পরেরদিন সন্ধ্যে সাত টায় রাজ বাসায় ফিরে।
বাসায় এসে ক্লান্ত দেহ নিয়ে সোফায় বসে আছে রাজ। নুপুর এক গ্লাস পানি হাতে নিয়ে রাজের পাশে এসে বসে।
- এই নাও.. পানিটা খেয়ে নাও..
রাজ এক ঢোকে সবটা পানি শেষ করে ফেলে।
নুপুর শান্তভাবে কিছুক্ষন রাজের দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করে..
- কোথা থেকে আসলা?
- কোথা থেকে আসলাম মানে? অফিস থেকে এসেছি।
- আচ্ছা.. কাল থেকে তুমি অফিসেই আছো! রাতেও অফিসের থেকেছো তাইনা?
- কি বলতে চাও তুমি?
- কাল কোথায় গিয়েছিলে?
- কোথাও যায়নি। কাজ করতে করতে অনেক রাত হয়ে গেছিলো। কখন যে ডেস্কে মাথা রেখে ঘুমিয়ে গেছিলাম বুঝতে পারিনি। ঘুম ভাংলে দেখলাম সকাল হয়ে গেছে। তাই একেবারে আজকের অফিস টা করেই এলাম।
- আজকাল বিকাল ৫ টায় ও অনেক রাত হয়ে যায়, তাইনা?
নুপুরের কথায় রাজ কিছুটা চমকে উঠলো। কয়েকটা ঢোক গিলে বললো..
- কিক কি বলছো এইসব?
- বিকেল পাঁচটায় কোথায় গিয়েছিলা?
- অফিসেই তো ছিলাম। কেন শুধু শুধু এইসব বলছো?
- আমি তোমার অফিসে ফোন দিয়েছিলাম। সেখান থেকে জানতে পেরেছি তুমি পাঁচটায় অফিস থেকে বেরিয়েছো। শুধু তাইনা.. তুমি প্রতিদিন বিকেল পাঁচটায় অফিস থেকে বের হও। কোথায় যাও তুমি? এমন ও রাত যায় তুমি বাসায় ফিরোনা। থাকো কোথায় সারারাত?
- তুমি কি আমাকে সন্দেহ করছো?
- সন্দেহ করার মতো বিষয় হলে সন্দেহ করবো এইটাই স্বাভাবিক তাইনা?
এখন বলো, তুমি যাও কোথায়?
- এখন কি তোমার কাছে আমার কৈফিয়ত দিতে হবে?
- আমি তোমার কাছে কৈফিয়ত চাচ্ছিনা। স্ত্রী হিসেবে তোমার ব্যাপারে জানার অধিকার আমার আছে।
- রাজ এইবার রেগে গেলো। রেগে গিয়ে বললো...
আমার যেখানে খুশি সেখানে যাবো। যখন খুশি তখন বাসায় আসবো। তোর বাপের কি..
তুই মেয়ে মানুষ, মেয়ে মানুষের মতো থাকবি,, আমার বাসায় থাকিস, আমার টাকায় ফুর্তি করিস, আবার আমার সাথেই গরম দেখাস? এতো বড় সাহস তোর? দ্বিতীয় বার এই সাহস দেখাবি, অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে বলে দিলাম। আমার মাথা গরম করবিনা। যত্তসব, আমার টাকায় পুষছি, আবার আমার সাথেই বাড়াবাড়ি .. বলেই বিড়বিড় করতে করতে রুমে চলে গেলো রাজ।
.
নুপুর আগের জায়গাতেই ঠায় দাড়িয়ে আছে। কথাগুলো তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। এইটা কি সেই রাজ, যে রাজ আমার সাথে উচুস্বরে কখনও কথা বলেনি? এইটা কি সেই রাজ, যে রাজ আমাকে না দেখে এক মুহুর্ত থাকতে পারেনি? এইটা কি সেই রাজ, যে রাজ আমাকে খুশি রাখার জন্য, আমার ইচ্ছা পুরনের জন্য কত কিছু করেছে? ভাবতে পারছে না নুপুর। চোখের পানিগুলো ও বাধ মানছেনা। অন্য একটা রুমে গিয়ে বসলো নুপুর... । কি করে পারলো রাজ আমাকে টাকার খোঁটা দিতে? আমিতো ওর বউ, তাহলে ও আমাকে টাকা দিয়ে পুষছে কিভাবে? কাঁদছে নুপুর। কাঁদতে কাঁদতে মাথাটা ব্যাথা করতে লাগলো। না খেয়েই ঘুমিয়ে পরলো সে।
পরেরদিন বেলা ১০ টায় ঘুম থেকে উঠলো নুপুর। ঘড়ি দেখেই চোখ ছানাবড়া... তারাতাড়ি উঠে রাজের রুমে গেলো। রাজ নেই, হয়তো অফিসে চলে গেছে। নিমিষেই মনটা খারাপ হয়ে গেলো নুপুরের।
খুব খিদেও পেয়েছে, রাত থেকে কিছু খায়নি তো..
ওয়াসরুমে ঢুকে তারাতাড়ি ফ্রেস হয়ে বেরিয়ে এলো নুপুর। ফ্রিজ থেকে আগের খাবার বের করে গরম করে খেয়ে নিলো সে। এখন কিছুটা ভালো লাগছে নুপুরের। আবার রাতের কথা মনে পরতেই মুহুর্তেই মনটা খারাপ হয়ে গেলো তার...
একটা চেয়ার নিয়ে বারান্দায় গিয়ে বসলো সে। চোখ বুজে বসে আছে, আর আগের কথা গুলো স্মৃতি চারন করছে।
মাথা ব্যাথাটা এখনও কমেনি। বরং বেড়েই চলেছে। নুপুর রুমে গেলো মাথা ব্যাথার ওষুধ খোজতে। কিন্তু পাচ্ছেনা। ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার গুলোতে খোজলো প্রথমে, কিন্তু পায়নি। তারপর ওয়াড্রবের একটা ড্রয়ারে খোঁজে না পেয়ে যখন দ্বিতীয় ড্রয়ার টা খোললো.. কিছু একটা দেখে চমকে গেলো সে।
তারাতাড়ি কাগজটা হাতে নিয়ে পুরোটা খোললো নুপুর। নুপুরের মাথায় বাজ পরলো। চোখ দিয়ে দুফোটা পানি গড়িয়ে পরতে থাকলো। রাজ এখন আর নুপুরকে চায়না.. । কিন্তু কেন চায়না? সেকি রাজের অযোগ্য? নাকি ওর প্রতি রাজের আর ভালোবাসা নেই। সে কি পুরোনো হয়ে গেছে? কাঁদছে নুপুর। রাজ কি করে পারলো এই ডিভোর্স পেপার টা তৈরি করতে? হ্যাঁ, ডিভোর্স পেপার. । রাজ আর নুপুরের ডিভোর্স পেপার টাই ওয়াড্রব থেকে পেলো নুপুর।
. কিছু ভাবতে পারছে না সে। মাথার যন্ত্রনা টা আরো বেড়ে গেছে। কিন্তু মনের যন্ত্রনা.. সেটা কিভাবে প্রকাশ করবে সে?
নাহ, রাজের সাথে তার আলাপ করতেই হবে। এখন যে তার মধ্যে আরেকজন আছে। রাজ তো সেটা জানেই না। জানলে হয়তো এইরকম করবে না। হয়তো রাগের বশেই এটা করেছে। নানা রকম ভাবে শান্তিনা দিচ্ছে নুপুর নিজেকেই। তবুও শান্তি পাচ্ছে না সে।
চোখ গুলোও বাধ মানছেনা।
..
বিকাল ৫:২০ এ রাজ বাসায় চলে এলো। আজ এতো তারাতাড়ি রাজের আসা দেখে কিছুটা অভাবই হলো সে। তবুও কিছু বললো না। আজ যে অনেক কিছু বলতে হবে রাজকে।
রাজ ফ্রেস হয়ে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। নুপুর কিছুক্ষন পর রুমে এসে রাজের পাশে এসে বসলো। রাজ আড় চোখে দেখলো, কিন্তু কিছু বললোনা। নুপুরই বললো..
- আজ কি তোমার শরীর খারাপ?
- নাহ, কেন?
- এতো তারাতাড়ি চলে এলে যে?
- তাতে তোর কোনো প্রব্লেম? তোকে আগেই বলেছি আমার বাসা, আমি যখন খুশি তখন আসবো।
- এইভাবে বলছো কেন? আমিতো এমনিই জিজ্ঞেস করলাম।
রাজ আর কিছু বললো না। নুপুর আবার বললো..
- তোমাকে কিছু বলতে চাই..
- তারাতাড়ি বল?
- এইটা কি? ডিভোর্স পেপার টা রাজকে দেখিয়ে বললো নুপুর।
নুপুরের হাতে পেপার টা দেখে কিছুটা অবাক হলো রাজ। তারপর নিজেই বললো..
- দেখেই যখন ফেলেছো তাহলে ঢং করছো কেন? বুঝতে পেরেছো নিশ্চয়ই এইটা কি।।।
রাজের এইরকম উত্তরে নুপুর অনেকটাই অবাক হলো। বললো..
- কি বলছো তুমি রাজ? তুমি আমাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছো। তোমার জন্য আমি সবকিছু ছেড়েছি। আর তুমি এখন আমাকে ডিভোর্স দিতে চাচ্ছো রাজ? আমি কি অন্যায় করেছি বলো? কেদে দিলো নুপুর।
- কাদবি না বলে দিলাম। তোর এইসব ঢং দেখলে আমার গা জ্বলে।
- আমি ঢং করছি?
- তা নয়তো কি? আর আমার কথা শুনে রাখ, আমি তোকে নিয়ে থাকতে পারবো না। এই পেপারে সাইন করে এখান বিদায় হো.. তোকে আমার আর সহ্য হচ্ছে না, বুঝেছিস? অনেক সহ্য করেছি।
- পাগল হয়ে গেছো তুমি? কোথায় যাবো বলো? তোমাকে বিয়ে করেছি বলে আমার পরিবার আমাকে প্রত্যাখ্যান করেছে। তুমি ছাড়া আমার আর কেউ নেই। আর তুমিতো আমাকে ভালোবাসো, তাহলে কেন এমন করছো বলো? কেদে কেদে বললো নুপুর।
- ভালোবাসা! তোকে ভালোবাসবো আমি? কি যোগ্যতা আছে রে তোর? তোর বাবা তো তোকে তার সব কিছু থেকে বঞ্চিত করেছে, কিছুই নেই তোর .. শুধু তোর শরীর টা ছাড়া। এইটা আমার আমার লাগবে না। টাকা ছড়ালে তোর চেয়ে আরো ভালো ও সুন্দরীর শরীর পাবো।
- রাজ...!! অস্ফুটস্বরে কেদে দিলো নুপুর। চেচিয়ে উঠলো সে..
- কি বলছো কি রাজ? তুমি কি সেই রাজ যে আমার বাবার সম্পদ না , আমাকেই ভালোবেসেছিলা? আর আমি তোমার বিবাহিত বউ.. আমার সাথে তুমি অন্য মেয়েদের তুলনা দিচ্ছো? ছিঃ।।
- ছিঃ ছিঃ যতো ইচ্ছা করতে থাক,
শুনে রাখ, তুই এখন আমার কাছে শুধুমাত্র একটা বোঝা। তোকে তো তোর বাবা সেদিনই আমার কাছ থেকে কিনে নিয়েছিলো, যেদিন তোর বাসায় গিয়েছিলাম। মনে করে দেখ.. তোকে আর তোর মাকে রুমে পাঠিয়ে আমাকে একা তার সামনে রেখেছিলো..
আর আমাদের মধ্যে তোকে নিয়ে দরদাম হচ্ছিলো। পুরো ২০ লাখ টাকার বিনিময়ে তোর বাবার কাছে আমি তোকে বেচেঁ দিয়েছিলাম। আর সেই তুইই আমার কাছে সেদে সেদে আসলি। আমার আর কি, মাগনা জিনিস তো আর কেউ ছাড়েনা, তাই আমিও তোকে বিয়ে করে নিলাম। এখন তোকে আর আমার ভালো লাগেনা। তুই চলে যা.. কোথায় যাবি না যাবি সেটা তোর ব্যাপার। তবে যাওয়ার আগে এই পেপারে সাইন দিয়ে যা।
নুপুর অবাক চোখে রাজের দিকে তাকিয়ে আছে। আজকের রাজকে সে আগের রাজের সাথে কোনোভাবেই মিলাতে পারছেনা। আর সামান্য টাকার জন্য সেও আমার ভালোবাসাকে প্রত্যাখ্যান করলো? সেদিন কি এজন্যই বাবা বার বার রাজকে লোভী বলছিলো? কাঁদছে নুপুর। মুখে কোনো কথা নেই। ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে রাজের দিকে। রাজ সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। মুখে তার তাচ্ছিল্যের হাসি।
নুপুর কাঁপাকাঁপা হাতে কলম টা হাতে নিলো, পেপার টার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে সই করে দিলো সে। আজ রাজ মুক্ত। কিন্তু নুপুর.. সে কি করবে? ভাবতে পারছে না সে। নুপুরের সিগ্নেচার দেওয়া হলেই রাজ ওর হাত থেকে টান দিয়ে পেপার টা নিয়ে নিলো। মুখে তার বিজয়ের হাসি। নুপুর চলে যাবে বলে দরজার দিকে পা বাড়ালো.. দরজার কাছে গিয়েও আবার রাজের দিকে এগিয়ে আসলো। রাজকে উদ্দেশ্যে করে বললো..
- রাজ..
- হ্যাঁ বলো..
- আজ থেকে তো তুমি মুক্ত তাইনা? তাহলে তো আজ তুমি অনেক খুশি, এখন থেকে আর আমার মতো একটা বুঝাকে নিজের টাকায় পুষতে হবেনা তাইনা? অবশ্য নিজের টাকা বলছি কেন? এইটা তো তোমার ভালোবাসা বিক্রির টাকা.. যেটা নিঃসন্দেহে অবৈধ তাইনা?
রাজ কিছু বললো না, শুধু নুপুরের কথাগুলো বুঝার চেষ্টা করছে..
নুপুর আবারো বলতে লাগলো
- রাজ, আজ আমি কোথায় যাবো আমি জানিনা। কারণ আমার পরিবার তোমার কারনের আমাকে প্রত্যাখ্যান করেছে। সেখানে যাওয়ার কোনো অধিকার আমার নেই। ছিলে তুমি, সেই তুমিও আমাকে আজ টাকার জন্য প্রত্যাখ্যান করলে।
একটা কথা জানো তো? কাউকে কষ্ট দিয়ে কেউ সুখি হয় না। তবে আমি চাই তুমি খুব সুখি হও। কারণ, তোমাকে যে আমি বড্ড ভালোবাসি।
আমার প্রিয় মানুষগুলো আমাকে প্রত্যাখ্যান করেছে। আজ আমি নিঃস্ব.. একা।
শুধু একথাই বলবো..
তোমাকে যেনো কখনো কারো কাছ থেকে প্রত্যাখিত না হতে হয়। এইটার যে অনেক কষ্ট, সেটা তুম সহ্য করতে পারবে না।
ভালো থেকে তুমি।
বলেই দৌড়ে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো নুপুর, এক অজানার উদ্দেশ্যে।
রাজ শুধু অবাক চোখে ওর যাওয়া দেখছে।
.
To be Continue ....
প্রত্যাখ্যান- Part_07
Reviewed by NINDOOK LIFE
on
January 26, 2020
Rating:
No comments: