প্রত্যাখ্যান- Part_06

প্রত্যাখ্যান 💔

Israt Jahan Tanni
Part_06
.
সেদিন সারাদিন নিজেকে ঘরবন্দি করে রেখেছে নুপুর। রাজ চলে গিয়েছে অফিসে। অফিস থেকে ফিরেছে রাত আট টায়। তখনও নুপুরের রুম লক করা। রাজের মনের মধ্যে কিছুটা ভয় কাজ করলো। দরজার পাশে গিয়ে দাড়ালো রাজ।
- নুপুর.. এই নুপুর..কথা বলো ।
ওপাশ থেকে কোনো সাড়া পেলোনা রাজ। আবারো ডাকতে লাগলো...
- বাবুইপাখি.. আমাকে মাফ করে দাও। ভুল হয়ে গেছে আমার। তোমাকে অবিশ্বাস করা উচিত হয়নি আমার। দরজাটা খোলো লক্ষিটি।
এতো করে ডাকার পরেও নুপুরের কোনো সাড়া পাচ্ছে না রাজ। মনের মধ্যে তার কু ডাকতে লাগলো.. অনেক চেষ্টা করেও দরজা খোলতে পারছেনা সে। শেষে অনেক জোরে কয়েকটা লাথি দিয়ে দরজাটা ভেঙ্গে ফেললো রাজ।
রুমের ভিতরে লাইট অফ থাকায় কিছু দেখতে পাচ্ছেনা রাজ। নিজের ফোনের লাইট টা জ্বালিয়ে সামনে ধরলো.. নুপুরকে দেখে
তে পাচ্ছে না সে। রীতিমত ভয় পেয়ে গেলো সে। ফ্ল্যাশ লাইটের আলোতে সুইচবোর্ড টা খোঁজে লাইট টা অন করলো তারাতা‌ড়ি। নুপুর বেডের অপজিট পাশে ফ্লোরে বসে বেডে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে। নুপুরকে দেখে দেহে যেনো প্রাণ ফিরে পেলো রাজ। নুপুরের পাশে গিয়ে বসে মাথায় হাত রাখলো সে। বলতে লাগলো..
- বাবুইপাখি , আমাকে মাফ করো। আসলে তোমাক্র বাসায় না পেয়ে আমার মাথা ঠিক ছিলোনা। তুমি তো জানোই তুমি ছাড়া আমি অচল। তোমাকে ছাড়া আমি নিজেকে নিয়ে ভাবতেও পারিনা। তাই ভয় হয়... যদি তোমাকে হারিয়ে ফেলি। এজন্যই আমি এমন করি বাবু। প্লিজ.. নিজের বরটাকে ক্ষমা করো।
.
রাজ একা একা বকবক করেই যাচ্ছে। কিন্তু নুপুরের কোনো রেসপন্স পাচ্ছনা। নুপুরের মাথা টা নিচের দিকে উপুড় হয়ে থাকায় কিছু বুঝতে পারছেনা রাজ। মাথা টাকা ধরে হালকা নাড়া দিতেই মাঠাটা ঢলে পরলো। অস্থির হয়ে গেলো রাজ। তারাতা‌ড়ি নুপুরকে পাজাকোল করে নিয়ে বিছানায় শুয়ালো। তারপর ডাক্তারকে খবর দিলো...
..
৪৫ মিনিট পর...
ডাক্তার বসে আছে নুপুরের সামনে। আর রাজ নুপুরের পায়ের কাছে বসে আছে অনেক টেনশন নিয়ে। নুপুর এখনো সেন্সলেস হয়ে পরে আছে। ডাক্তাত গম্ভীর ভাবে রাজকে বললো..
- মিস্টার রাজ.. আপনি শহরের একজন নামকরা বিজনেস ম্যান। কোনো কিছুর অভাব নেই আপনার। তারপরেও আপনার স্ত্রীয়ের প্রেশার এতো লো কেন? আর প্যাশেন্টের শরীর ও অনেক দুর্বল। এমনটা তো হবার কথানা।
- আসলে, সারাদিন বাসায় একা থাকে তো, তাই হয়তো ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করেনা।
- এমনটা বললে তো হবেনা। আপনি উনার স্বামী। উনার ভালোমন্দ আপনাকেই দেখতে হবে, তা আপনি যতো ব্যস্ততার মাঝে থাকুন না কেন।
যাইহোক ..
উনাকে স্বাভাবিক করার জন্য ঠিকমতো খাওয়াতে হবে, সেটা অবশ্যই time maintain করে খাওয়াতে হবে। আর উনার এনার্জির জন্য ফলমূল খাওয়াবেন। সাথে এই ঔষধ গুলো... বলে প্রেসক্রিপশন টা রাজের দিকে বাড়িয়ে দিলেন ডাক্তার।
- ওর তো এখনো সেন্স ফিরেনি ডাক্তার..
- চিন্তার কারণ নেই। ডিপ্রেশনের কারণে এমনটা হয়েছে। কিছুক্ষন পর এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে।
- ওহ আচ্ছা..
- হুম। আমি তাহলে এবার আসি। উনার প্রতি খেয়াল রাখবেন।
বলেই ডাক্তার চলে গেলো। রাজ অপলকভাবে নুপুরের দিকে তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষন বসে থাকার পর রাজ নিচে ফার্মেসিতে চলে গেলো ওষুধ আনতে। ওষুধ নিয়ে ফিরে এসে দেখে নুপুর বিছানার এক কোনায় গুটিসুটি মেরে বসে আছে। রাজের ঠোঁটের কোনে হাসির রেখা ফুটে উঠলো। দ্রুত নুপুরের পাশে এসে বসলো।
-যাক বাবা, তোমার জ্ঞান ফিরেছে। কি টেনশনেই না ছিলাম। এইবার টেনশন ফ্রী হলাম।
নুপুর কোনো উত্তর দিলো না। ঠায় বসে রইলো। রাজ নুপুরের দিকে এগিয়ে গিয়ে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। নুপুরের কপালে চুমু দিলো। নুপুর কিছু বলছেনা দেখে রাজ বললো..
- ম্যাডাম দেখছি অনেক রেগে আছে। তা ম্যাডাম রেগে থাকলে চলবে? সারাদিন যে কিছু খাওয়া হয়নি,, খেতে তো হবে নাকি?
- খেয়ে নাও তুমি... নুপুর শান্তভাবে জবাব দিলো।
- কিন্তু আমি যে আমার বউটাকে ছেড়ে খাবোনা।
নুপুর রাজের দিকে আহত দৃষ্টিতে তাকালো। রাজ বললো..
- দেখো, তোমাকে বেশি ভালোবাসি বলেই সন্দেহ করি। তোমাকে কষ্ট দিয়ে আমি কি ভালো থাকি? আমিও যে সমান কষ্ট পাই।সেই সকালে তোমাকে কষ্ট দিয়েছি। তাই এখন পর্যন্ত আমিও কিছু খাইনি। এখন তুমি যদি না খাও তাহলে আমিও খাবোনা বলে দিলাম।
নুপুর উঠে চলে গেলো। রাজ তাকিয়ে আছে নুপুরের যাওয়ার দিকে। কিছুক্ষন পর নুপুর হাতে একটা ট্রে নিয়ে রুমে ঢুকলো। ট্রেতে এক প্লেট ভাত আর তরকারির বাটি। রাজ হাসলো। নুপুর রাজের সামনে বসে ভাতে তরকারী ঢেলে মাখিয়ে রাজের মুখের সামনে ধরলো..
- এই নাও খাও..
- খাবোনা
- এখন তো আমিও খাবো, তাহলে খাবেনা কেন?
- হাসিমুখে যদি দিতে তাহলে খেতাম। কিন্তু মুখটাকে এমন বানিয়ে রেখেছো .. বুঝেছি তুমি এখনো আমাকে মাফ করোনি। তাই খাবোনা।
রাজের কথায় নুপুর হাসলো...
নিজেও খেলো আর রাজকেও খাইয়ে দিলো।
..
দিন যেতে থাকলো.. রাজ আরো ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে এখন। আগেতো সারাদিন ব্যস্ত থেকে রাতে বাসায় আসতো। এখন সেই সময় টাও হয়ে উঠেনা রাজের। এমনো রাত যায়... নুপুর ডাইনিং স্পেসে অপেক্ষা করতে করতে সেখানেই ঘুমিয়ে পরে।
মাঝে মাঝে রাতে আসে, আবার কোনোদিন আসেওনা। এখনকার প্রায় রাত গুলোই নুপুর নির্ঘুম কাঁটায়।
সেদিন মার্কেটে যাচ্ছিলো নুপুর। কিছু নরমাল ড্রেস কিনার জন্য। বাসা থেকে বের হয়ে রিক্সায় উঠবে এমন সময় মাথা ঘুরে পরে গেলো এবং সাথে সাথে সেন্সলেস হয়ে পরলো। বাসার দারোয়ান সহ আরও কয়েকজন মিলে বাসার ভিতরে নিয়ে গেলো তাকে। দারোয়ান সাথে সাথে গিয়ে ডাক্তার কে নিয়ে এলো। ততোক্ষনে বাকিরা চলে গেছে। ডাক্তার চেকআপ করছে। ততোক্ষনে নুপুরেরও সেন্স ফিরে এসেছে। ডাক্তার গম্ভীর মুখে নুপুরকে জিজ্ঞাসা করলো..
- আপনার স্বামী কোথায়?
- উনি তো এখন অফিসে। কোনো সমস্যা হয়েছে?
- সমস্যা তো একটা হয়েছেই। খুব গম্ভীর ভাবে বললেন ডক্টর ...
- কি সমস্যা? আমাকে বলুন প্লিজ... খানিকটা ভয় পেয়ে বললো নুপুর।
- সমস্যা টা হলো..
আপনি মা হতে যাচ্ছেন।
- নুপুর খুশিতে কেদে দিলো.. । কি বললেন..? সত্যি বলছেন তো?
- হুম ১০০%
এখন থেকে কিন্তু নিজের প্রতি এক্সট্রা কেয়ার নিতে হবে।
- হুম..
কিছুক্ষন পর ডাক্তার চলে গেলো। নুপুরের মন আজ অনেক খুশি। যেদিন সে রাজকে বিয়ে করেছিলো সেদিনও সে এতোটা খুশি ছিলোনা আজ যতটা খুশি সে। অপেক্ষা করছে রাজের। যদিও এখন আর সে রাজের জন্য তেমনভাবে অপেক্ষা করেনা, তবুও আজ অপেক্ষার প্রহর গুনছে সে। কখন সে রাজকে সংবাদটা দিবে। রাজ নিশ্চয়ই অনেক খুশি হবে। এসব ভাবতে ভাবতেই খুশিতে আটখানা হয়ে যাচ্ছে নুপুর।
.
অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হয়ে গেলো। রাজের কোনো খবর নেই। রাজের নাম্বারে সে সমানে কল করেই যাচ্ছে। কিন্তু ফোন অফ। বার বার কল দিয়েও রাজকে পাচ্ছে না সে। আজ প্রথম সে রাজের অফিসের নাম্বারে ফোন করলো নুপুর। জানতে পারলো.. রাজ নাকি বিকাল ৫ টায় বেরিয়ে গেছে। শুধু আজ না, প্রতিদিন নাকি সে এই টাইমেই অফিস থেকে চলে যায়। নুপুর চিন্তায় আছে। এতো আগে বেরিয়ে গেছে তাহলে কোনো বিপদ হলোনা তো রাজের?
আর প্রতিদিন যদি ৫ টায় চলে আসে অফিস থেকে তাহলে বাকি সময় সে কোথায় থাকে? আর মাঝে মাঝে রাতে বাসায় ও ফিরে না, তাহলে কোথায় যায় সে?
ভাবছে কিছু কোনো উত্তর পাচ্ছে না নুপুর। ...
তখনই কলিংবেল বেজে উঠলো। খুশিতে নুপুর তারাতা‌ড়ি দৌড়ে গিয়ে দরজাটা খোললো। মুহুর্তেই খুশি মুখটা কালো হয়ে গেলো তার। দারোয়ান চাচা দাড়িয়ে আছে দরজার সামনে।
- চাচা, আপনি এতো রাতে?
- হ মা, আমারেই তো ডাক্তার সাহেব ওষুধ আনতে কইছিলো। তখন তো আনি নাই। তাই অহন ওষুধ নিয়া আইলাম।
এই নেন, ধরেন।
- আচ্ছা চাচা।
দারোয়ান চাচ চলে যেতেই নুপুর দরজা লাগিয়ে এসে শুয়ে পরলো। খিদে পেয়েছে তার। তাই খেতে ইচ্ছে করছে না।ঘুমিয়ে পরলো নুপুর।
যখন ঘুম ভাংলো দেখল ১২:৩০ বাজে। রাজ এখনও আসেনি। এদিকে খিদেও পেয়েছে খুব। উঠ কিচেনে গেলো নুপুর। সেখান থেকে খাবার নিয়ে খেতে বসলো। খাবার গলা দিয়ে নামছেনা তার। তবুও জোর করে খেলো। এখন যে তার ভিতরে আরেকটা প্রাণ আছে।
.
To be Continue ....
প্রত্যাখ্যান- Part_06 প্রত্যাখ্যান- Part_06 Reviewed by NINDOOK LIFE on January 26, 2020 Rating: 5

No comments:

Powered by Blogger.