Israt Jahan Tanni
Part_04
..
বন্ধুর সাথে কথা শেষ করে রাজ হোটেলে গিয়ে বিরিয়ানি কিনে আনলো।
বাসায় গিয়ে দেখে নুপুর পেটে চাপ দিয়ে বসে আছে। কিছুটা হাসি পেলো রাজের। হাসি চাপা দিয়ে নুপুরের সামনে গিয়ে বসলো রাজ।
- বেশি খিদে পেয়েছে বাবুইপাকি?
নুপুর মুখ বাকা করলো । কিছু বললো না।
রাজ বিরিয়ানির প্যাকেট টা খুলে প্লেটে নিলো। নুপুর নিজের হাতে খেতে যাবে তখনই রাজ নুপুরের হাত ধরে ফেললো।
- কি হলো? খেতে দিবেনা নাকি?
- নাহ..
- মানে?
- মানে হলো গিয়ে, আমার বাবুইপাখিটাকে আমি নিজের হাতে খাইয়ে দেবো।
নুপুর শুধু হাসলো।
- এই নাও, হা করো ...
রাজ এক লোকমা দুই লোকমা করে নুপুরের মুখে তুলে দিচ্ছে। নুপুর শুধু খেয়েই যাচ্ছে। হটাৎ খেয়াল হলো সে একাই খেয়ে যাচ্ছে। রাজ কিছুই খাচ্ছে না।
- শুধু আমাকেই খাইয়ে দিবে?.তুমি খাবেনা?
- কি করে খাবো? আমার বাবুইপাখিটা যে আমার কোনো খবরই নিচ্ছে না।
- নুপুর হাসলো। নিজের হাতে ছোট্ট একটা লোকমা নিয়ে রাজের মুখে পুরে দিচ্ছে। রাজ তৃপ্তি সহকারে খেলো।
খাওয়া শেষে রাজ বাইরে গেলো বন্ধুদের সাথে দেখা করতে। আর নুপুর ঘর গুছাতে লাগলো। সে যে এখন এক সংসারী রমনী।
..
দুপুরে রান্না বান্না করে টেবিল সাজালো নুপুর। রাজ এসে ফ্রেস হয়ে টেবিলে বসতে বসতে বললো..
- কি রান্না করলে গিন্নি?
নুপুর চোখ কুঁচকে রাজের দিকে তাকালো।
- কি বললে? গিন্নি মানে কি?
- সেটা তোমার জানতে হবে না। খিদে পেয়েছে। খাবো। কি রেধেছো সোনা?
- তোমার ফ্রীজে যা ছিলো তাই রেধেছি।
- কি, মুরগি?
- নিজেই দেখো...
রাজ ঢাকনা টা তুলে দেখলো বাটিতে গরুর গোসত রাখা। এক টুকরো মুখে নিলো রাজ।
- ওয়াও .. তুমিতো বেশ ভালো রাধো। কার কাছ থেকে শিখলে?
- মায়ের কাছ থেকে।
রাজ নুপুরের দিকে তাকালো। নুপুর মন খারাপ করে দাড়িয়ে আছে।
- আবার মন খারাপ করলে? খাবো না কিন্তু বলে দিলাম।
- কই, মন খারাপ করিনি তো। তুমি খাও।
- তুমি খাবেনা?
- আমার খিদে নেই। তুমি খেয়ে নাও।
- ok, আমারও খিদে নেই। রেখে দাও খাবার। অভিমানের সুরে বললো রাজ।
- তুমি এতো জ্বালাও কেন আমাকে?
- তুমি যে আমার কাছ থেকে শুধু পালাতে চাও তাই।
- হয়েছে, আর ঢং করা লাগবে না।
এবার খেয়ে নাও। খেয়ে আমাকে উদ্ধার করো বাপু...
রাজ হাসলো। নুপুর ও হাসলো। অতপর দুজনে খাওয়া শুরু করলো।
..
দেখতে দেখতে তিন দিন কেটে গেলো। রাজ এই তিন দিনে একবারের জন্যও অফিসে যায়নি।
সেদিন রাতে,
খাওয়া দাওয়া শেষ করে রুমে শুয়েছিলো রাজ। নুপুর তার হাতের কাজগুলি শেষ করে রুমে আসলো। রাজ শুয়ে আছে। নুপুর রাজের পাশে এসে রাজের বুকে মাথা রেখে শুলো...
রাজ দুইহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরলো নুপুরকে।
- রাজ,
- হু.. বলো..
- একটা কথা বলবো?
- জিজ্ঞাসা করার কি আছে, বলেই ফেলো।
- তুমি অফিসে যাচ্ছোনা কেন? এই জব টাই তো আমাদের একমাত্র সম্বল। এভাবে অফিস কামাই করলে তো জব টা থাকবে না। তখন কি হবে?
- রাজ মুচকি হাসলো। বললো...
পাগলী, সে চিন্তা তোমাকে করতে হবেনা। আমি অন্য কোনো প্ল্যান করছি।
- আমি চিন্তা করবো না তো কে করবে? আর কি প্ল্যান করেছো?
- জব টা আমি আর করবোনা। ভাবছি, বিজনেস শুরু করবো।
- সেকি, বিজনেস করতে গেলে তো অনেক টাকা লাগবে। এতো টাকা পাবে কোথায় তুমি?
- টাকার ব্যবস্থা আছে আমার কাছে। সেটা নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবেনা। তুমি শুধু দোয়া করো, আমি যেনো আমার লক্ষ্যে success হতে পারি।
- তাতো অবশ্যই। সেটা কি তোমাকে বলতে হবে। আমিও চাই, তুমি অনেক বড় হও।
রাজ মুচকি হেসে নুপুরের কপালে চুমু খেলো। নুপুর চোখ বন্ধ করে ফেললো। রাজ নুপুরকে আরো কাছে নিয়ে গেলো। নুপুরের গলায় নিজের ঠোঁট ছোয়ালো রাজ। এতোক্ষনে নুপুরের নিশ্বাস ভারি হবার উপক্রম। আস্তে আস্তে ওরা দুজন দুজনার মাঝে বিলীন হয়ে গেলো।
.
অনেক দিন পার হয়ে যায়। এর মাঝে রাজ নুপুরকে নিয়ে নানান জায়গায় বেড়িয়ে এসেছে। রাজ সর্বদাই নুপুরের মনকে উৎফুল্ল রাখার চেষ্টা করছে। তাইতো নুপুরের পছন্দের জায়গা গুলোতে তাকে নিয়ে গিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে পছন্দের জায়গাটি হচ্ছে সাজেক ভেলি... ওখানে গিয়ে ওরা তাদের রোমাঞ্চকর মুহুর্ত গুলো কাটিয়েছে। কয়েকদিন সেখানে থেকে আবার নিজেদের গন্তব্যে চলে এসেছে তারা।
..
অনার্স কম্প্লিট করেছিলো নুপুর। মাস্টার্স করা হয়ে উঠেনি। এর আগেই এতোকিছু হয়ে গেছে। রাজকে বলে নুপুর আবারো কলেজে এডমিট নিলো। মাস্টার্স কম্প্লিট করার লক্ষে।
কিছুদিন হলো, রাজ তার বিজনেস দাড় করিয়েছে। রাজ এখন অনেক বিজি। যদিও প্রথম হওয়ায় অনেকটা বিপাকে পরছে সে। কিন্তু হাল ছাড়ছে না। ওর একটাই লক্ষ.. ওকে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। অনেক বড় হতে হবে।
সেই সকালে যায়, আবার রাতে ফিরে। কোনোদিন লাঞ্চ করতে বাসায় আসে, আবার কোনোদিন আসেনা। কি করে আসবে। অনেক ব্যস্ততার মধ্যে থাকতে হয় যে তাকে।
যেদিন বাসায় আসবে না সেদিন আগেই নুপুরকে ফোন করে জানিয়ে দেয়। নয়লে পাগলিটা যে আবার না খেয়ে বসে থাকবে।
..
দিন যায়, নুপুর তার পড়ালেখা আর সংসার নিয়ে ব্যস্ত থাকে।
রাজের বিজনেস এখন আরো বড় করেছে। সফলতা যেনো তাকে হাত পেতে ডাকছে সবসময়। অল্প সময়ে সে শহরের নামকরা ব্যাবসায়ি হয়ে উঠে।
সেদিন দুপুরে,
- হ্যালো রাজ..
- হ্যাঁ বলো..
- দুপুরে বাসায় আসবে না?
- অনেক বিজি। আসতে পারবো না।
- আমি যে আজ তোমার পছন্দের খাবার তৈরি করেছি।
- ওহ, বললাম তো আসতে পারবো না। কান দিয়ে কথা ঢুকে না নাকি? খেয়ে নাও তুমি। বলেই ফোনটা কেটে দিলো রাজ।
নুপুর ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে ছলছল চোখে। ইদানিং রাজ নুপুরের সাথে তেমন একটা ভালো ব্যবহার করেনা। আগের মতো পাগলামি করেনা তার সাথে। ভাবতেই চোখের জল পড়তে লাগলো।
দুপুরে আর খেলোনা নুপুর। না খেয়ে কিছুক্ষন শুয়ে রইলো। শুয়ে থাকতে থাকতে কখন যে ঘুমিয়ে পরলো বুঝতে পারলোনা সে। যখন ঘুম ভাংলো তখন দেখলো ৬ টা বাজে। তারাতাড়ি ঘুম থেকে উঠে ওয়াসরুমে গিয়ে শাওয়ার নিলো নুপুর। নিজেকে কিছুটা হালকা লাগছে নুপুরের।
রাতের রান্না বসালো সে।
রান্না শেষে পড়তে বসলো.. নুপুর পড়ছে আর বার বার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে।
রাত ১০ টা বেজে গেছে। এখনো রাজের আসার কোনো নাম নেই। এতো রাত করেতো কখনো ফিরে না রাজ। চিন্তায় পরলো নুপুর। রাজের ফোনে বার বার ফোন দিতে লাগলো নুপুর। ফোনটা বন্ধ পাচ্ছে। চিন্তার মাত্রাটা আরো বেড়ে গেলো। বইটা রেখে বারান্দায় গিয়ে একটা ইজি চেয়ারে বসলো নুপুর। এখনো ফোনে ট্রাই করে যাচ্ছে ফোনে। কিন্তু লাইন পাচ্ছে না। তন্দ্রা এসে গেলো নুপুরের চোখে।
হটাৎ কলিংবেলের আওয়াজে ঘুম ভেঙ্গে পরেছিলো নুপুর। ঘুম ঘুম চোখে ফোনের দিকে তাকালো। দেখলো ১ টা বাজে। এতো রাতে আবার কে এলো। ভাবতে লাগলো নুপুর। আচমকাই মনে হলো রাজ এখনো ফিরেনি। বসে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে গিয়েছিলো নুপুর।
। কলিংবেল বেজেই যাচ্ছে। নুপুর তাড়াহুড়া করে গিয়ে দরজা খোললো। রাজ অগ্নি চোখে নুপুরের দিকে তাকিয়ে আছে। কখন থেকে ফোন দিচ্ছি, কোথায় ছিলে? বেশ রাগি ভাবে কথাগুলো বললো রাজ। নুপুর বেশ বুঝতে পারলো রাজ ড্রিংকস করেছে। বেশ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো...
- তুমি ড্রিংকস করেছো রাজ?
- হ্যাঁ করেছি, তাতে তোর কি? তোর বাপের টাকায় তো আর করিনি। মাতলামো করে কথাগুলো বলছে রাজ।
- তোমার নেশা হয়ে গেছো। ভিতরে এসো।
- কি বললি তুই? আমার নেশা হয়েছে। বেশ হয়েছে। আরো নেশা করবো। কোনো কথা বলবি না তুই।
বলেই রাজ ভিতরে গিয়ে শুয়ে পরলো। জামাকাপড় কিছুই চেঞ্জ করেনি। এমনকি জুতোজোড়া পর্যন্ত খোলেনি। নেশার ঘোরে থাকায় ঘুমিয়ে পরলো তারাতাড়ি।
.
নুপুর রাজের পায়ের কাছে এসে বসলো। চোখজোরা তার পানিতে ভিজে গেছে। রাজের পা থেকে জুতোজোড়া খোললো নুপুর। তার পায়ে ধরে কাঁদছে নুপুর। কাঁদছে আর একা একাই বলছে ..
- কি হয়েছে তোমার রাজ? তুমি তো এমন ছিলেনা? তোমার নেশা তো আমি ছিলাম। আর আজ ওই বাজে নেশার জন্য আমার সাথেই খারাপ ব্যবহার করছো? আমাকে যা খুশি তাই বলছো। যেই তোমার জন্য আমি আমার বাবা মাকে ছেড়ে চলে এসেছি, আর আজ সেই তুমিই আমাকে আমার বাবাকে নিয়ে কথা বলছো। কাঁদছে নুপুর। রাজের পায়ে মাথা ঠেকিয়ে কাঁদতে লাগলো সে। ফুপিয়ে কাঁদছে। জোরে কাদলে যে রাজের ঘুম ভেঙ্গে যাবে।
ভোর ৬ টায় ঘুম ভাঙ্গে রাজের। আড়মোড়া দিয়ে ঘুম থেকে জাগতেই তার পায়ের উপর কিছু একটার ভার অনুভব করে সে। পায়ের দিকে তাকাতেই সে শক খায়। নুপুর তার পায়ে মাথা দিয়েই ঘুমিয়ে আছে। উঠে বসে রাজ। নুপুরকে ধাক্কা দেয় কিছুটা। নুপুর জেগে উঠে। ।রাজ এখন স্বাভাবিক। নুপুর চোখ কচলাতে কচলাতে রাজের দিকে তাকায়। একনজর রাজের দিকে তাকিয়েই ওয়াসরুমে চলে যায় সে। রাজ কিছু বুঝতে পারছেনা। নুপুর তো তার সাথে কখনো এমন করেনা। পরে ভাবলো, হয়তো ওয়াসরুমে যাওয়া জরুরী তাই এভাবে চলে গেছে।
.
To be Continue .....
Part_04
..
বন্ধুর সাথে কথা শেষ করে রাজ হোটেলে গিয়ে বিরিয়ানি কিনে আনলো।
বাসায় গিয়ে দেখে নুপুর পেটে চাপ দিয়ে বসে আছে। কিছুটা হাসি পেলো রাজের। হাসি চাপা দিয়ে নুপুরের সামনে গিয়ে বসলো রাজ।
- বেশি খিদে পেয়েছে বাবুইপাকি?
নুপুর মুখ বাকা করলো । কিছু বললো না।
রাজ বিরিয়ানির প্যাকেট টা খুলে প্লেটে নিলো। নুপুর নিজের হাতে খেতে যাবে তখনই রাজ নুপুরের হাত ধরে ফেললো।
- কি হলো? খেতে দিবেনা নাকি?
- নাহ..
- মানে?
- মানে হলো গিয়ে, আমার বাবুইপাখিটাকে আমি নিজের হাতে খাইয়ে দেবো।
নুপুর শুধু হাসলো।
- এই নাও, হা করো ...
রাজ এক লোকমা দুই লোকমা করে নুপুরের মুখে তুলে দিচ্ছে। নুপুর শুধু খেয়েই যাচ্ছে। হটাৎ খেয়াল হলো সে একাই খেয়ে যাচ্ছে। রাজ কিছুই খাচ্ছে না।
- শুধু আমাকেই খাইয়ে দিবে?.তুমি খাবেনা?
- কি করে খাবো? আমার বাবুইপাখিটা যে আমার কোনো খবরই নিচ্ছে না।
- নুপুর হাসলো। নিজের হাতে ছোট্ট একটা লোকমা নিয়ে রাজের মুখে পুরে দিচ্ছে। রাজ তৃপ্তি সহকারে খেলো।
খাওয়া শেষে রাজ বাইরে গেলো বন্ধুদের সাথে দেখা করতে। আর নুপুর ঘর গুছাতে লাগলো। সে যে এখন এক সংসারী রমনী।
..
দুপুরে রান্না বান্না করে টেবিল সাজালো নুপুর। রাজ এসে ফ্রেস হয়ে টেবিলে বসতে বসতে বললো..
- কি রান্না করলে গিন্নি?
নুপুর চোখ কুঁচকে রাজের দিকে তাকালো।
- কি বললে? গিন্নি মানে কি?
- সেটা তোমার জানতে হবে না। খিদে পেয়েছে। খাবো। কি রেধেছো সোনা?
- তোমার ফ্রীজে যা ছিলো তাই রেধেছি।
- কি, মুরগি?
- নিজেই দেখো...
রাজ ঢাকনা টা তুলে দেখলো বাটিতে গরুর গোসত রাখা। এক টুকরো মুখে নিলো রাজ।
- ওয়াও .. তুমিতো বেশ ভালো রাধো। কার কাছ থেকে শিখলে?
- মায়ের কাছ থেকে।
রাজ নুপুরের দিকে তাকালো। নুপুর মন খারাপ করে দাড়িয়ে আছে।
- আবার মন খারাপ করলে? খাবো না কিন্তু বলে দিলাম।
- কই, মন খারাপ করিনি তো। তুমি খাও।
- তুমি খাবেনা?
- আমার খিদে নেই। তুমি খেয়ে নাও।
- ok, আমারও খিদে নেই। রেখে দাও খাবার। অভিমানের সুরে বললো রাজ।
- তুমি এতো জ্বালাও কেন আমাকে?
- তুমি যে আমার কাছ থেকে শুধু পালাতে চাও তাই।
- হয়েছে, আর ঢং করা লাগবে না।
এবার খেয়ে নাও। খেয়ে আমাকে উদ্ধার করো বাপু...
রাজ হাসলো। নুপুর ও হাসলো। অতপর দুজনে খাওয়া শুরু করলো।
..
দেখতে দেখতে তিন দিন কেটে গেলো। রাজ এই তিন দিনে একবারের জন্যও অফিসে যায়নি।
সেদিন রাতে,
খাওয়া দাওয়া শেষ করে রুমে শুয়েছিলো রাজ। নুপুর তার হাতের কাজগুলি শেষ করে রুমে আসলো। রাজ শুয়ে আছে। নুপুর রাজের পাশে এসে রাজের বুকে মাথা রেখে শুলো...
রাজ দুইহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরলো নুপুরকে।
- রাজ,
- হু.. বলো..
- একটা কথা বলবো?
- জিজ্ঞাসা করার কি আছে, বলেই ফেলো।
- তুমি অফিসে যাচ্ছোনা কেন? এই জব টাই তো আমাদের একমাত্র সম্বল। এভাবে অফিস কামাই করলে তো জব টা থাকবে না। তখন কি হবে?
- রাজ মুচকি হাসলো। বললো...
পাগলী, সে চিন্তা তোমাকে করতে হবেনা। আমি অন্য কোনো প্ল্যান করছি।
- আমি চিন্তা করবো না তো কে করবে? আর কি প্ল্যান করেছো?
- জব টা আমি আর করবোনা। ভাবছি, বিজনেস শুরু করবো।
- সেকি, বিজনেস করতে গেলে তো অনেক টাকা লাগবে। এতো টাকা পাবে কোথায় তুমি?
- টাকার ব্যবস্থা আছে আমার কাছে। সেটা নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবেনা। তুমি শুধু দোয়া করো, আমি যেনো আমার লক্ষ্যে success হতে পারি।
- তাতো অবশ্যই। সেটা কি তোমাকে বলতে হবে। আমিও চাই, তুমি অনেক বড় হও।
রাজ মুচকি হেসে নুপুরের কপালে চুমু খেলো। নুপুর চোখ বন্ধ করে ফেললো। রাজ নুপুরকে আরো কাছে নিয়ে গেলো। নুপুরের গলায় নিজের ঠোঁট ছোয়ালো রাজ। এতোক্ষনে নুপুরের নিশ্বাস ভারি হবার উপক্রম। আস্তে আস্তে ওরা দুজন দুজনার মাঝে বিলীন হয়ে গেলো।
.
অনেক দিন পার হয়ে যায়। এর মাঝে রাজ নুপুরকে নিয়ে নানান জায়গায় বেড়িয়ে এসেছে। রাজ সর্বদাই নুপুরের মনকে উৎফুল্ল রাখার চেষ্টা করছে। তাইতো নুপুরের পছন্দের জায়গা গুলোতে তাকে নিয়ে গিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে পছন্দের জায়গাটি হচ্ছে সাজেক ভেলি... ওখানে গিয়ে ওরা তাদের রোমাঞ্চকর মুহুর্ত গুলো কাটিয়েছে। কয়েকদিন সেখানে থেকে আবার নিজেদের গন্তব্যে চলে এসেছে তারা।
..
অনার্স কম্প্লিট করেছিলো নুপুর। মাস্টার্স করা হয়ে উঠেনি। এর আগেই এতোকিছু হয়ে গেছে। রাজকে বলে নুপুর আবারো কলেজে এডমিট নিলো। মাস্টার্স কম্প্লিট করার লক্ষে।
কিছুদিন হলো, রাজ তার বিজনেস দাড় করিয়েছে। রাজ এখন অনেক বিজি। যদিও প্রথম হওয়ায় অনেকটা বিপাকে পরছে সে। কিন্তু হাল ছাড়ছে না। ওর একটাই লক্ষ.. ওকে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। অনেক বড় হতে হবে।
সেই সকালে যায়, আবার রাতে ফিরে। কোনোদিন লাঞ্চ করতে বাসায় আসে, আবার কোনোদিন আসেনা। কি করে আসবে। অনেক ব্যস্ততার মধ্যে থাকতে হয় যে তাকে।
যেদিন বাসায় আসবে না সেদিন আগেই নুপুরকে ফোন করে জানিয়ে দেয়। নয়লে পাগলিটা যে আবার না খেয়ে বসে থাকবে।
..
দিন যায়, নুপুর তার পড়ালেখা আর সংসার নিয়ে ব্যস্ত থাকে।
রাজের বিজনেস এখন আরো বড় করেছে। সফলতা যেনো তাকে হাত পেতে ডাকছে সবসময়। অল্প সময়ে সে শহরের নামকরা ব্যাবসায়ি হয়ে উঠে।
সেদিন দুপুরে,
- হ্যালো রাজ..
- হ্যাঁ বলো..
- দুপুরে বাসায় আসবে না?
- অনেক বিজি। আসতে পারবো না।
- আমি যে আজ তোমার পছন্দের খাবার তৈরি করেছি।
- ওহ, বললাম তো আসতে পারবো না। কান দিয়ে কথা ঢুকে না নাকি? খেয়ে নাও তুমি। বলেই ফোনটা কেটে দিলো রাজ।
নুপুর ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে ছলছল চোখে। ইদানিং রাজ নুপুরের সাথে তেমন একটা ভালো ব্যবহার করেনা। আগের মতো পাগলামি করেনা তার সাথে। ভাবতেই চোখের জল পড়তে লাগলো।
দুপুরে আর খেলোনা নুপুর। না খেয়ে কিছুক্ষন শুয়ে রইলো। শুয়ে থাকতে থাকতে কখন যে ঘুমিয়ে পরলো বুঝতে পারলোনা সে। যখন ঘুম ভাংলো তখন দেখলো ৬ টা বাজে। তারাতাড়ি ঘুম থেকে উঠে ওয়াসরুমে গিয়ে শাওয়ার নিলো নুপুর। নিজেকে কিছুটা হালকা লাগছে নুপুরের।
রাতের রান্না বসালো সে।
রান্না শেষে পড়তে বসলো.. নুপুর পড়ছে আর বার বার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে।
রাত ১০ টা বেজে গেছে। এখনো রাজের আসার কোনো নাম নেই। এতো রাত করেতো কখনো ফিরে না রাজ। চিন্তায় পরলো নুপুর। রাজের ফোনে বার বার ফোন দিতে লাগলো নুপুর। ফোনটা বন্ধ পাচ্ছে। চিন্তার মাত্রাটা আরো বেড়ে গেলো। বইটা রেখে বারান্দায় গিয়ে একটা ইজি চেয়ারে বসলো নুপুর। এখনো ফোনে ট্রাই করে যাচ্ছে ফোনে। কিন্তু লাইন পাচ্ছে না। তন্দ্রা এসে গেলো নুপুরের চোখে।
হটাৎ কলিংবেলের আওয়াজে ঘুম ভেঙ্গে পরেছিলো নুপুর। ঘুম ঘুম চোখে ফোনের দিকে তাকালো। দেখলো ১ টা বাজে। এতো রাতে আবার কে এলো। ভাবতে লাগলো নুপুর। আচমকাই মনে হলো রাজ এখনো ফিরেনি। বসে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে গিয়েছিলো নুপুর।
। কলিংবেল বেজেই যাচ্ছে। নুপুর তাড়াহুড়া করে গিয়ে দরজা খোললো। রাজ অগ্নি চোখে নুপুরের দিকে তাকিয়ে আছে। কখন থেকে ফোন দিচ্ছি, কোথায় ছিলে? বেশ রাগি ভাবে কথাগুলো বললো রাজ। নুপুর বেশ বুঝতে পারলো রাজ ড্রিংকস করেছে। বেশ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো...
- তুমি ড্রিংকস করেছো রাজ?
- হ্যাঁ করেছি, তাতে তোর কি? তোর বাপের টাকায় তো আর করিনি। মাতলামো করে কথাগুলো বলছে রাজ।
- তোমার নেশা হয়ে গেছো। ভিতরে এসো।
- কি বললি তুই? আমার নেশা হয়েছে। বেশ হয়েছে। আরো নেশা করবো। কোনো কথা বলবি না তুই।
বলেই রাজ ভিতরে গিয়ে শুয়ে পরলো। জামাকাপড় কিছুই চেঞ্জ করেনি। এমনকি জুতোজোড়া পর্যন্ত খোলেনি। নেশার ঘোরে থাকায় ঘুমিয়ে পরলো তারাতাড়ি।
.
নুপুর রাজের পায়ের কাছে এসে বসলো। চোখজোরা তার পানিতে ভিজে গেছে। রাজের পা থেকে জুতোজোড়া খোললো নুপুর। তার পায়ে ধরে কাঁদছে নুপুর। কাঁদছে আর একা একাই বলছে ..
- কি হয়েছে তোমার রাজ? তুমি তো এমন ছিলেনা? তোমার নেশা তো আমি ছিলাম। আর আজ ওই বাজে নেশার জন্য আমার সাথেই খারাপ ব্যবহার করছো? আমাকে যা খুশি তাই বলছো। যেই তোমার জন্য আমি আমার বাবা মাকে ছেড়ে চলে এসেছি, আর আজ সেই তুমিই আমাকে আমার বাবাকে নিয়ে কথা বলছো। কাঁদছে নুপুর। রাজের পায়ে মাথা ঠেকিয়ে কাঁদতে লাগলো সে। ফুপিয়ে কাঁদছে। জোরে কাদলে যে রাজের ঘুম ভেঙ্গে যাবে।
ভোর ৬ টায় ঘুম ভাঙ্গে রাজের। আড়মোড়া দিয়ে ঘুম থেকে জাগতেই তার পায়ের উপর কিছু একটার ভার অনুভব করে সে। পায়ের দিকে তাকাতেই সে শক খায়। নুপুর তার পায়ে মাথা দিয়েই ঘুমিয়ে আছে। উঠে বসে রাজ। নুপুরকে ধাক্কা দেয় কিছুটা। নুপুর জেগে উঠে। ।রাজ এখন স্বাভাবিক। নুপুর চোখ কচলাতে কচলাতে রাজের দিকে তাকায়। একনজর রাজের দিকে তাকিয়েই ওয়াসরুমে চলে যায় সে। রাজ কিছু বুঝতে পারছেনা। নুপুর তো তার সাথে কখনো এমন করেনা। পরে ভাবলো, হয়তো ওয়াসরুমে যাওয়া জরুরী তাই এভাবে চলে গেছে।
.
To be Continue .....
প্রত্যাখ্যান -Part_04
Reviewed by NINDOOK LIFE
on
January 26, 2020
Rating:
No comments: