প্রত্যাখ্যান -Part_03

প্রত্যাখ্যান 💔

Israt Jahan Tanni
Part_03
...
সিএনজিতে বসে আছে নুপুর ও রাজ। রাজ স্বাভাবিক থাকলেও স্বাভাবিক নেই নুপুর। কেদে কেদে বুক ভাসাচ্ছে বেচারি।
- এভাবে কি সারাক্ষণ কেদেই যাবে বাবুইপাখি? নুপুর কিছু বললো না। কেদেই যাচ্ছে।
- ও বাবুইপাখি কথা বলো... তা না হলে কিন্তু এখন আমিও কেদে দিবো বলে দিলাম।
নুপুর এইবার রাজের দিকে তাকালো।
- হুম বলো কি বলবা?
- মন খারাপ করোনা। আমি আছি তো। সব ঠিক হয়ে যাবে।
- তোমার আশাতেই তো ঘর ছাড়লাম।
- হুম, এইবার একটু হাসো।
নুপুর একটু নড়ে বসলো, কিন্তু হাসলো না।
.
কিছুক্ষণের মধ্যেই সিএনজি একটা বাসার সামনে এসে দাড়ালো। রাজ ভাড়া মিটিয়ে নুপুরকে নিয়ে ভিতরে ঢুকলো। দুইতলা একটা বাসা। রাজ নুপুরকে নিয়ে দুই তলায় উঠলো। ঘরটা অন্ধকার। নুপুর অন্ধকার খুব ভয় পায়, তাই রাজের হাত ধরে আছে শক্ত করে। ভয়ে সে জমে যাচ্ছে। এমন সময় কিছু সব ভয়ানক সাউন্ড আসতে লাগলো নুপুরের কানে। পরিবেশটা মুহুর্তের মধ্যেই ভৌতিক হয়ে গেছে নুপুরের কাছে।
- রাজ, লাইট টা জালাও প্লিজ.. আমার ভয় লাগছে।
- পাচ্ছি না তো লাইট। কোথায় যে রাখলাম।
নুপুরের ভয় ক্রমাগত বাড়তে লাগলো। ভয়ে সে ঘামছে।
আরো ভয় বেড়ে গেলো তার, যখন দেখলো রাজের হাতটা তার হাতের মাঝে নেই।
- রাজ, তুমি কোথায়? মজা করো না আমার সাথে, খুব ভয় করছে আমার। কোথায় তুমি রাজ? ভয়ে চেচাতে লাগলো নুপুর। কিন্তু রাজের কোনো সাড়া নেই। এক পা দুইপা করে পিছাতে লাগলো সে। হটাৎ করেই কিছু একটার সাথে ধাক্কা লাগায় চোখ বন্ধ করে চিৎকার করতে লাগলো নুপুর। আর তখনই লাইট টা জ্বলে উঠলো। চোখ মেলে তাকালো নুপুর।
একি! নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না সে। পুরোটা ঘর ফুল দিয়ে সাজানো। গোলাপ, গাদা, আর রজনীগন্ধা ফুল দিয়ে অপূর্ব ভাবে ঘরটা সাজানো হয়েছে। আর রাজ নুপুরের সামনে পলকহীন ভাবে তাকিয়ে আছে।
- কি? পছন্দ হয়েছে বাসরঘর?
- কখন করলে এগুলো?
- আমি করিনি। আমার ফ্রেন্ডসরা তখন তারাতা‌ড়ি চলে এসেছিলো এটার জন্যই। ওরাই সাজিয়েছে।
- ওহ!
- বললে নাতো, পছন্দ হয়েছে কিনা?
- খুব পছন্দ হয়েছে।
- সত্যি? তাহলে মুখটা এখনো কালো করে রেখেছো কেন? একটু হাসো, আমার সোনা বউটার হাসি মুখটা একটু দেখি।
রাজের কথায় নুপুর অনিচ্ছাস্বত্ত্বেও হেসে দিলো।
- এইতো, এতোক্ষনে আকাশে চাদ উঠেছে, বলে নিজেই হাসলো রাজ।
.
কিছুক্ষন পর রাজ ওয়াসরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে নুপুরকেও ফ্রেশ হয়ে পাঠালো।
ফ্রেশ হয়ে এলে দুজনে মিলে ডাইনিং টেবিলে গেলো খাওয়ার জন্য। খাবার দিয়ে সাজানো ডাইনিং টেবিল। নুপুর কিছুটা অবাক হলো।
- এতো খাবার! কখন করলে এগুলো?
- এগুলোও আমার ফ্রেন্ডসরাই করেছে।
- ওরা খুব ভালো তাইনা? তোমায় খুব ভালোবাসে।
- হ্যাঁ, ছোটবেলার বন্ধু বলে কথা।
- হুম, এখন খাও। অনেক রাত হয়ে গেছে।
- বাব্বাহ! আমার বউয়ের দেখছি খুব তাড়া..! তর সইছে না বুঝি? দুষ্টু হাসি দিলো রাজ।
নুপুর কিছুটা লজ্জা পেলেও তার কথায় কোনো পাত্তা না দিয়ে খাওয়া শুরু করলো। খাওয়া শেষ করে রাজ কোথায় যেনো গেলো।
.
রাত ১১:০০
নুপুর রুমে বসে আছে। কিছুক্ষন আগে পার্লার কর্মীরা এসে নুপুরকে বউ সাজিয়ে দিয়ে গেছে। রাজ ওর জন্য স্টোন কম্বিনেশনে গোল্ডেন পাড়ের একটা সাদা শাড়ি আনিয়েছে তার এক বন্ধুকে দিয়ে। সেই শাড়ি দিয়েই নুপুরকে বউয়ের সাজে সাজিয়ে বাসরঘরে রেখে গিয়েছে তারা। নুপুরের যেনো অবাক হওয়ার কোনো শেষ নেই। রাজ কখন কি করছে সব নুপুরের মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।
দশ মিনিট পর রাজ রুমে আসলো। রাজ এক হাতে করে একটা ফলের ঝুড়ি আনলো, যেখানে আছে অনেক রকমের ফলমূল।
আরেক হাতে একটা মিষ্টির বাটি।
ফলের ঝুড়ি আর মিষ্টির বাটিটা পাশের একটা টেবিলের উপর রাখলো রাজ। ততোক্ষনে নুপুর খাট থেকে নামলো।
- আরে নামছো কেন?
নুপুর কোনো জবাব দিলো না। রাজের পায়ের কাছে নিচু হয়ে বসে মাথাটা উপরের দিকে রেখে রাজের দুইপায়ে হাত দিয়ে সালাম করলো নুপুর।
রাজ নুপুরের দুই বাহুতে ধরে উঠালো।
- আরে বোকা, আমাকে সালাম করা লাগে?
- আজ থেকে আমাদের নতুন জীবন শুরু, তাই তোমাকে সালাম করেই আমি নতুন জীবন শুরু করতে চাই।
রাজ ঝিনুককে আলতো করে জড়িয়ে ধরলো।
- আমি তোমাকে আমার পায়ে নয়, বুকে রাখতে চাই নুপুর।
নুপুরের চোখে পানি চলে আসলো। আজ এমন একটা খুশির দিনে সে যে তার পরিবার থেকে প্রত্যাখ্যান হয়েছে।
রাজ দেখার আগে নুপুর চোখের পানিটা মুছে নিলো।
রাজ নুপুরকে দুহাতে আলতো করে ধরে খাটে বসালো। তারপর সে নিজেও বসলো। নুপুরকে আজ খুটিয়ে খুটিয়ে দেখেছে রাজ। আজ নুপুরকে সম্পুর্ন নতুন লাগছে।
- তোমাকে আজ অনেক সুন্দর লাগছে নুপুর। ইচ্ছে করছে এখনই তোমার মাঝে হারিয়ে যাই।
- এতো উতলা হলে চলে না। আমার জীবন বেরিয়ে যাচ্ছে।
- কেন? কি হইছে তোমার? খানিকটা অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করলো।
- আরে বাবা, কি ভারী একটা শাড়ি আনিয়েছো। আমার থেকেও ভারী এটা। থাকতে পারছি না আমি।
- Oh sorry,
যাও ড্রেস চেঞ্জ করে আসো।
- কোথা থেকে চেঞ্জ করবো শুনি? আমি কি কোনো জামা কাপড় এনেছি নাকি। ন্যাকামি করে বললো নুপুর।
- তুমি না আনালেও তোমার বর আনিয়েছে।
- মানে?
রাজ পাশের রুমে গিয়ে সেখান থেকে একটা শপিং নিয়ে আসলো।
- এই নাও ধরো।
- কি আছে ওটাতে?
- খোলেই দেখো।
নুপুর শপিং থেকে তিনটা প্লাজো, তিনটা কুর্তি + তিনটা ওড়না, ,, সাথে আরো দুইটা নরমাল থ্রীপিস বের করলো। বাসায় পড়ার জন্য রাজ এগুলো এনেছে। অবাক হলো নুপুর..
- তুলনায় জানলে কি করে আমার এগুলো লাগবে?
- Commonsense ... তুমিতো আর বাসা থেকে কাপড় নিয়ে আসোনি। আর আমার বাসাতেও মেয়েদের কোনো কাপড় নেই। তোমার দায়িত্ব আমি নিয়েছি, তাই তোমার কি লাগবে না লাগবে সেটা তো আমাকেই দেখতে হবে তাইনা। আর তোমার যে নরমাল ড্রেস লাগবে সেটা আমি নিজেই বুঝি। তাই কিছুক্ষন আগে নিয়ে এসেছি।
নুপুরের চোখে পানি চলে আসলো, সে মুহুর্তেই রাজকে জড়িয়ে ধরে কেদে দিলো।
- তুমি আমার কথা এতো ভাবো কেন? এতো বুঝো কেন আমাকে?
- আমি যে আমার বাবুইপাখিটাকে খুব ভালোবাসি।
- আমার বাবা মা তো আমাকে বুঝলো না।
- ভেবো না নুপুর, সব ঠিক হয়ে যাবে। এখন যাও ফ্রেশ হয়ে এসো। রাত তো শেষ হয়ে গেলো।
- হুম...
নুপুর একটা কুর্তি আর প্লাজো নিয়ে ওয়াসরুমে চলে গেলো। ড্রেস চেইঞ্জ করে রাজের পাশে এসে বসলো। গা কাঁপছে নুপুরের। তাও সে রাজের কাছ থেকে দুরে যায় নি। রাজ অবাক দৃষ্টিতে কিছুক্ষন নুপুরের দিকে তাকিয়ে রইলো... । আচমকাই রাজ নুপুরকে নিজের বুকে টেনে নিয়ে ওর কপালে চুমু দিলো... নুপুর হারিয়ে গেলো রাজের মাঝে। শুরু হলো তাদের নতুন জীবন।
...
সকাল ছয়টা...
নুপুরের ঘুম ভেঙ্গে গেছে। ঘুমের মধ্যে রাজ নুপুরকে জড়িয়ে ধরে আছে। ঘুমন্ত রাজকে আজ অপরুপ লাগছে নুপুরের কাছে।
নুপুর রাজের হাত গুলো আস্তে আস্তে নিজের শরীরের উপর থেকে সরিয়ে বিছানা থেকে নামলো। নেমে এক পলক রাজের দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে ওয়াসরুমে চলে গেলো।
১৫ মিনিট পর ওয়াসরুম থেকে বেরিয়ে এলো নুপুর।
রাজ এখনো ঘুমাচ্ছে। নুপুর রাজের পাশে এসে বসলো। নিজের ভেজা চুলগুলো রাজের মুখের উপর রাখতেই রাজ ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলো। নুপুরকে অপলক ভবে দেখছে রাজ। সদ্য গোসল করায় আর ভেজা চুলে নুপুরকে অসাধারণ লাগছে এই মুহুর্তে।
রাজ নুপুরকে জড়িয়ে ধরলো।
- আমাকে হার্ট ফেইল করানোর ধান্ধা তাইনা?
- কেনো?
- যে বেশে আমার সামনে এসেছো , আমিতো মরেই যাবো।
- ধুর, কি যে বলো না,
- শুনো, আমার খুব পেয়েছে।
- টয়লেটে যাও। আমাকে বলছো কেন?
- ধুর, আমার কি টয়লেট পেয়েছে নাকি, আমার তো প্রেম প্রেম পেয়েছে। বলেই দুষ্ট হাসি দিয়ে রাজ নুপুরকে আরো কাছে টেনে নিলো। নুপুর যেনো লজ্জায় মরে যাচ্ছে।
তবুও রাজের ডাকে সাড়া দিলো নুপুর।
.
সকাল ৯:৩০
নুপুর নিজের রুমে পেটে হাত দিয়ে খাটের উপর বসে আছে। খিদের জালায় পেটে তার ইঁদুর দৌড়াচ্ছে। রাজ কিছুক্ষন আগে গোসল সেড়ে হোটেলে গিয়েছে খাবার আনতে।
অবশ্য নুপুর নাস্তা বানাতে চেয়েছিলো। কিন্তু রাজ দেয় নি। নতুন বউ তো তাই। অবশ্য নুপুর রাজের কাছ থেকে প্রমিস করিয়ে নিয়েছে যে দুপুর থেকে সেই রান্না করবে। রাজ ও রাজি হয়েছে।
রাজ হোটেলের কাছে যেতেই পিছন থেকে কেউ ডাক দিলো। রাজের বন্ধু দিহান।
- আরে দিহান, কি খবর?
- হুম ভালোই। খুব স্বার্থপর হয়ে গেলিরে।
- কেন? এমন বলছিস কেন?
- বিয়ে করলি, আমাকে শুনালিও না পর্যন্ত।
- আরে আর বলিস না, অনেক ঝামেলার মধ্যে বিয়েটা হয়েছে।
- তাতো বুঝলাম। বিয়েতে ইনভাইট করলি না। এখন কি তোর বউটাকেও দেখাবি না?
- দেখাবো না কেন, অবশ্যই দেখাবো।
- তাহলে চল, ভাবিকে একবার দেখেই যাই।
- এখন যাবি নাকি?
- হুম, কেন কোনো সমস্যা?
- কি যে বলিস? সমস্যা হবে কেন? তবে মাত্র কালই বিয়ে করে আনলাম। এখন তোকে নিয়ে গেলে ও খুব আনইজি ফীল করবে। অন্য একদিন দেখবি। আজ না।
- হুম, বউ পাগলা। ok
...
To be Continue .....
প্রত্যাখ্যান -Part_03 প্রত্যাখ্যান -Part_03 Reviewed by NINDOOK LIFE on January 26, 2020 Rating: 5

No comments:

Powered by Blogger.