প্রত্যাখ্যান -Part_02

প্রত্যাখ্যান 💔

Israt Jahan Tanni
Part_02
..
৩০ মিনিট পার হয়ে গেছে। রাজের কোনো সাড়া শব্দ পাচ্ছে না নুপুর। বাবাও চুপ। কিছুই বুঝতে পারছে না নুপুর। মাও কিছুক্ষন আগে বেরিয়ে গেছে। কি করছে তারা?
নুপুর রুপ থেকে থেকে বেরিয়ে ড্রয়িং স্পেসে গেলো। বাবা বসে আছে আগের মতোই। আর মা নিজের মতোই কাজ করছে। যেনো কিছুই হয়নি এতোক্ষন। কিন্তু রাজ কোথায়? রাজকে কোথাও দেখতে পাচ্ছে না নুপুর।
.
- মা, রাজ কোথায়?
মা কিছু বলছে না। নিজের মতোই কাজ করে যাচ্ছে।
- মা তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করছি আমি?
- আমি বলছি,. রাজ চলে গেছে। পিছন থেকে বাবা উত্তর দিলো।
- চলে গেছে.? নিশ্চয়ই ওকে তোমরা অপমান করেছো তাইনা? তাই ক্ষোভে আমাকে না বলেই চলে গেছে। বলেই কেদে দিলো নুপুর।
- ও একটা লোভী ছেলে। ওকে ভুলে যাও তুমি।
- বাবা, তোমার কাছে রাজ কে পছন্দ হয়নি ভালো কথা, কিন্তু ওকে লোভী বলবে না। ও যে কেমন ছেলে সেটা আমার চেয়ে বেশি তোমরা জানো না।
- তোমার চোখ এখন রঙ্গিন। তাই যা দেখো, রঙ্গিন লাগে।
তাই যা বলছি মেনে নাও। রাজ খারাপ একটা ছেলে, আর লোভীও।
- বাবাআআআ.. প্রচন্ডভাবে রেগে চেচিয়ে উঠে নুপুর।
আবার সাথে সাথেই নিজের রাগকে কন্ট্রোল করে বাবাকে বলে ...
- তোমাদের কাছে টাকাই সব। ভালোবাসার কোনো দাম নেই। তাই টাকাওয়ালা কাউকে পেয়ে তার কাছে আমাকে বিক্রি করতে চাইছো। আমার ভালোবাসাকে কোনো মুল্য দিচ্ছো না। কিন্তু শুনে রাখো, রাজকে ছাড়া আমি কাউকেই বিয়ে করবো না, that's final .
বলেই নুপুর আবার নিজের রুমে চলে এসে দরজা বন্ধ করে কাঁদতে লাগলো।
নুপুরের কথায় নুপুরের মা কিছুটা ঘাবরে যায়। কিন্তু নুপুরের বাবা চোখে নুপুরের মাকে কিছু ইশারা করে। হয়তো শান্তনা দিলো।
..
নুপুর শুধু ভাবছে কিভাবে সে রাজের সাথে দেখা করবে। বাবা হয়তো ওকে অনেক অপমান করেছে। ভাবতে পারছে না নুপুর। ভাবলেই কান্না পাচ্ছে।
এই অবস্থায় নুপুর ওর সাথে দেখাও করতে পারবে না। কারণ বাসা থেকে যে এখন কেউ বের হতে দিবে না তাকে।
নুপুর ফোনটা হাতে নিলো।
রাজের নাম্বারে ডায়াল করছে সে। রিং হচ্ছে, কিন্তু রিসিভ করছে না। হয়তো বাবার কোনো কথায় সে অনেক বেশি কষ্ট পেয়েছে তাই অভিমানে রিসিভ করছে না। পঞ্চমবারের মাথায় রাজ ফোন রিসিভ করলো।
- হ্যালো, হ্যাঁ নুপুর বলো..
- রাজের কন্ঠ শুনে নুপুর কেদে দিলো।
কাঁদতে কাঁদতে জিজ্ঞেস করলো...
- তুমি রাগ করেছো রাজ? আমি জানি বাবা তোমাকে অপমান করেছে। তোমাকে বের করে দিয়েছে। তুমি আমাকে মাফ করে দাও। আমি তোমাকে ছাড়া বাচবো না... কাঁদতে থাকলো নুপুর।
- আরে পাগলী কাদছো কেন? আমি কি একবারও বলেছি তোমার সাথে রাগ করেছি। আমিও তোমাকে অনেক ভালোবাসি। সত্যি বলছি নুপুর। I really Love You....
-সত্যি..??
- হুম। সত্যি...
- তাহলে চলো আজই আমরা বিয়ে করবো। বিয়েটা হয়ে গেলে বাবা মা ঠিকই মেনে নিবেন।
- আজই?
- হুম আজই। কেন, তুমি আমাকে বিয়ে করতে চাও না?
- কি বলছো পাগলি? আমি তোমাকে হারাতে চাই না নুপুর। তুমি বাসা থেকে কিছু একটা বলে বের হয়ে আসো।
- ঠিক আছে, তুমি কোথায় থাকবে?
- তুমি আপাতত একটা রিক্সা নিয়ে তোমার কলেজের সামনে চলে আসো। সেখান থেকেই তোমাকে নিয়ে আমরা কাজি অফিসে চলে যাবো।
- ঠিক আছে। তবে বিয়ের সাক্ষী পাবো কোথায়?
- সেটা আমার উপর ছেড়ে দাও।
- হুম্ম ok ...bye
- bye ...
..
নুপুর অনেক সুযোগ খুঁজছে বাসা থেকে বের হওয়ার জন্য। কিন্তু কিছুতেই কিছু করতে পারছে না। বাবাতো এই সময় অফিসে। নিরা স্কুলে। আর মাকে বলে বের হওয়া যাবেনা। মা দিবেনা বের হওয়ার জন্য। না বলেই বের হতে হবে।
নুপুর পায়চারি করছে কখন সুযোগ মতো বের হতে পারবে। সুযোগ পেয়েও গেলো। মা ওয়াসরুমে গেছে গোসলের জন্য। এই ফাকেই নুপুর বেরিয়ে পড়লো তার নতুন জীবন গঠনের লক্ষ্যে।
..
নুপুর তার কলেজের বড় বটগাছটার নিচে বসে আছে। রাজ এখনো আসেনি তাকে নিতে। রাজের ফোনে সে বার বার ট্রাই করছে। বার বারই রাজ ফোন কেটে দিচ্ছে।
নুপুরের মনে এক অজানা ভয় কাজ করতে লাগলো। রাজ তাকে ঠকাচ্ছে না তো।
আরো ১০ মিনিট বসে অপেক্ষা করার পর রাজের দেখা মিললো। রাজ একটা সিএনজি নিয়ে এসে নুপুরের সামনে দাড়ালো।
- নুপুর, তারাতা‌ড়ি আসো।
নুপুর কোনো প্রশ্ন না করেই সিএনজি তে উঠে বসলো। রাজ কে দেখে তার দেহে যেনো প্রাণ আসলো। কি উল্টা পাল্টাই না ভাবছিলো সে রাজকে নিয়ে।
- এতো লেইট করলে কেন? জানো আমার কতো ভয় হচ্ছিলো? আর ফোনটাও রিসিভ করছিলে না।
- বিয়ের ব্যবস্থা করে আসলাম। বন্ধুদের ওইখানে রেখে এসেছি। তাই একটু ব্যস্ত ছিলাম বাবুইপাখি। আর ফোনটা মনে হয় সাইলেন্ট হয়ে আছে। বুঝতে পারিনি তুমি কল করেছো।
বিয়ের কথা শুনে নুপুর লজ্জায় মাথা নিচু করলো। নুপুরের এই অবস্থা দেখে রাজ মুচকি হাসছে।
- এখনই এতো লজ্জা! তো বিয়ের পর যখন বাসর করবো তখন কি করবা বাবুইপাখি?
দুষ্টুমি করে বললো রাজ।
রাজের এই কথায় নুপুর আরো লজ্জা পেয়ে গেলো। তাই নিজের লজ্জা সংবরণ করে রাজের পিঠে আলতো করে একটা কিল দিলো।
.
প্রায় ২০ মিনিট পর সিএনজি একটা কাজী অফিসের সামনে এসে দাড়ালো। সিএনজি থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে তারা অফিসের ভিতরে প্রবেশ করলো।
রাজের আরো ৪ জন বন্ধু সেখানে আগে থেকেই অপেক্ষা করছে তাদের জন্য।
রাজই তাদের আনিয়েছে।
কাজী সাহেব বিয়ে পড়ানো শুরু করলেন। একে একে সব ধাপ পার করে রাজ ও নুপুরের বিয়ের কাজ সম্পন্ন করলেন কাজী সাহেব।
রাজ ও নুপুরকে রাজের বন্ধুরা সবাই কংগ্রেটস জানালো। নুপুর তো লজ্জায় শেষ। অফিস থেকে বের হয়ে বাকিরা সবাই চলে গেলো। নুপুর আর রাজ দাড়িয়ে আছে।
- আমাদের বাসায় চলো রাজ।
- তোমাদের বাসায় যাবো কেন? আমি তোমাকে বিয়ে করেছি, আমি আমার বাসায় নিয়ে যাবো তোমাকে।
- আহ রাজ, আমি কি সেখানে থাকতে যাবো নাকি? বাবা মার কাছ থেকে দোয়া নিতে যাবো। একা একা বিয়ে করেছি তো। তাই তাদের দোয়া নিয়েই নতুন ঘরে পা দিতে চাই।
- কিন্তু তোমার বাবা যদি মেনে না নেয়।
- অবশ্যই মেনে নিবে। এতোদিন যাইই করুক না কেন, নিজের মেয়েকে বধুবেশে দেখলে বাবা নিশ্চয়ই রাগ করে থাকতে পারবে না।
- এতো কনফিডেন্স?
- হুম
- আচ্ছা, তাহলে চলো।
..
সেই দুপুর থেকে নুপুর বাসায় নেই.. ।
সন্ধ্যা গড়িয়ে এখন রাত হয়ে গেছে। এখনো মেয়েটার কোনো খবর নেই। কোথায় যে গেলো মেয়েটা। এইসব নানান কিছু ভাবতে লাগলো নুপুরের মা।
নুপুরের বাবা বেশ রাগি মুডে বসে আছে ড্রয়িং স্পেসে।
এমন সময় কলিংবেল বাজলো।
বাসার কাজের মেয়েটা দৌড়ে গিয়ে দরজা টা খোলে দিলো।
নুপুর আর রাজ ধীরে ধীরে ঘরে ঢুকলো। নুপুর মাথা নিচু করে আছে।
নুপুরের মা ওদেরকে এই অবস্থায় দেখে থ মেরে দাড়িয়ে গেলো।
তিনি ডাইনিং টেবিলে রাখা প্লেট গুলো মুচছিলেন। নিজের মেয়েকে এই অবস্থায় থেকে হাত থেকে একটা প্লেট নিচে পরে ভেঙ্গে গেলো। সেদিকে তার খেয়াল নেই।
নুপুর রাজকে নিয়ে সামনে এগুতে নিলো..
- যেখানে আছো সেখানেই দাড়াও... আর এক পাও সামনে এগুবে না। নুপুরের বাবা ঝাঁঝালো কন্ঠে কথাটা বললেন।
- বাবা..
- চুপ করো... তোমার সাহস হলো কি করে এই অবস্থায় এই বাড়িতে ঢোকার?
- বাবা, এইটা আমাদের বাড়ি, আর আমি ঢুকবো না?
- নাহ এইটা তোমার বাড়ি না। কিভাবে পারলে নিজের বাবা মায়ের মুখে চুনকালি মেখে ওইরকম একটা লোভী ছেলেকে বিয়ে করতে? ছিঃ, এইটা দেখার আগে আমার মরন হলো না কেন? কথাগুলো বলতে বলতে উনার চোখে পানি এসে গেল। তাও তিনি ভেঙ্গে পরলেন নাহ।
- বাবা, কি বলছো তুমি? আর ওকে লোভীই বা বলছো কেন বার বার? ও আমার স্বামী।
- তাহলে তোমার ওই নামমাত্র স্বামী নিয়ে চলে যাও এই মুহুর্তে। আমি মনে করবো আমার বড় মেয়ে মারা গেছে। রাজ ওই একইভাবে দাড়িয়ে আছে। কিছু বলছে না সে। তার মনের মধ্যে কি চলছে বুঝা মুশকিল।
- এইটা তুমি বলতে পারলে বাবা? কেদে দিলো নুপুর।
- ওই মুখে আমাকে আর বাবা বলবি না।
আজ থেকে আমার একটা মাত্র মেয়ে। আর সেটা হলো নিরা।
- আমি তোমার কেউই হই না বাবা? কেদে কেদে জিজ্ঞেস করলো।
- নাহ, তুই আমার কিছুই হস না। তুই আমার কাছে মরে গেছিস।
এই মুহুর্তে তোকে আমি প্রত্যাখ্যান করলাম।
চলে যা এই বাড়ি থেকে। কখনো আর এমুখো হবি না। কঠোর কন্ঠে নুপুরের বাবা কথাগুলো বললো।
নুপুর ছলছল চোখে তার মায়ের দিকে তাকালো। ওর তাকানো দেখে নুপুরের মা তখনই নিজের রুমে চলে গেলো। সম্ভবত নুপুরের মুখ দেখতে চান না তিনিও। নুপুর কিছুক্ষন পাথরের মতো দাড়িয়ে রইলো।
তারপর রাজকে নিয়ে চিরতরে বেরিয়ে গেলো এ বাড়ি থেকে। এই মুহুর্তে নুপুরের বুকটা ফেটে যাচ্ছে। যাওয়ার আগে আরেকবার নিজেদের বাড়িটা কে ভালো করে অবলোকন করলো।
তারপর কাঁদতে কাঁদতে চলে গেলো।
...
To be Continue ....
প্রত্যাখ্যান -Part_02 প্রত্যাখ্যান -Part_02 Reviewed by NINDOOK LIFE on January 26, 2020 Rating: 5

No comments:

Powered by Blogger.