প্রত্যাখ্যান- Part_01

প্রত্যাখ্যান 💔
Israt Jahan Tanni
#Part_01
...
পার্কের একটু বেঞ্চের উপর অনেক্ষণ যাবত বসে আছে নুপুর ও রাজ । রাজ সেই কখন থেকে বকবক করে যাচ্ছে, কিন্তু নুপুর কোনো উত্তর দিচ্ছে না। নিরব হয়ে বসে আছে। বুঝা যাচ্ছে মন খারাপ তার। রাজ অনেক চেষ্টা করছে নুপুরের মন ঠিক করতে কিন্তু কোনোকিছুতেই কাজ হচ্ছে না।
- কি হলো নুপুর, কথা বলছো না কেন? আমার উপর রাগ করেছো?
- নাহ!
- তাহলে? কেউ কিছু বলেছে তোমাকে?
- নাহ!
- কিছু তো একটা হয়েছে। কি হয়েছে আমাকে বলো।
- রাজ, তুমি কি আমাকে বিয়ে করবে?
- এইটা কেমন কথা বললা? গত দুই বছর ধরে তোমাকে আমি ভালোবেসে এসেছি , তোমাকে বিয়ে করে সংসার করবো সেই আশায়, আর তুমি কিনা আজ আমাকে জিজ্ঞাসা করছো বিয়ে করবো কিনা?
- আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে রাজ। মাথা নিচু করে নুপুর বললো।
- হোয়াট? কি বলছো এইসব নুপুর?
- সত্যি বলছি রাজ, বাবা মা আমার বয়ে ঠিক করেছেন। আমি কতো করে বললাম আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি, কিন্তু তারা আমার কোনো কথায় শুনলো না। বলেই কেদে ফেললো নুপুর।
- কেঁদো না নুপুর। তোমার কান্না আমি সহ্য করতে পারি না। সব ঠিক হয়ে যাবে।
- কিছুই ঠিক হবে না রাজ। আমার বাবা এক কথার মানুষ। তিনি যা বলেন, তাই করেন।
- আমার উপর ভরসা নেই তোমার?
- রাজ! চলো আমরা দুরে কোথাও পালিয়ে যায়। অনেক দুরে, যেখানে আমাদের কেউ খোঁজে পাবে না। আমরা আমাদের মতো করে সেখানে সংসার শুরু করবো।
- পাগল হয়ে গেছো তুমি নুপুর? আমরা তো কোনো অন্যায় করিনি। ভালোবেসেছি। তাহলে চোরের মতো পালিয়ে যাবো কেন?
- তাহলে কি করবো আমরা?
- আমি তোমার বাবা মায়ের সাথে দেখে করবো। তাদেরকে বুঝাবো। দরকার হলে তাদের পায়ে ধরবো যেনো আমাদেরকে আলাদা না করে।
- তুমি পারবে রাজ?
- ভালোবাসতে যখন পেরেছি, তখন এইটুকু তো করতেই পারি।
নুপুর একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো।
- রাজ, এখন আমার যেতে হবে। তুমি কখন যাবে আমাদের বাসায়?
- কাল সকালে যাবো, তুমি কোনো চিন্তা করোনা বাবুইপাখি।
- হুম..
- এসো তোমাকে এগিয়ে দেয়।
- না লাগবে নাহ, তুমি বরং এখন তোমার বাসায় যাও।
কেউ যদি আমাদের একসাথে দেখে ফেলে, আর বাবাকে যদি বলে দেয় তাহলে বিপদ হতে পারে।
- আচ্ছা, সাবধানে যেও।
- হুম bye ...
বিদায় নিয়ে দুজন দুদিকে হাটা দিলো।
..
বিকাল ৫:৪৫
নুপুর বাসার কলিংবেল বাজাতেই বাসার কাজের মেয়েটা দরজা খোলে দিলো।
বাবা মা সোজায় বসে আছে। নুপুর না দেখার ভান করে রুমে যেতে লাগলো..
- দাড়াও...
বাবার ডাকে থমকে দাড়ালো নুপুর।
- বলো বাবা..
- কোথায় গিয়েছিলে?
- ওই আখিদের বাসায় গিয়েছিলেন। দুদিন কলেজে যায় নি তো তাই নোটস গুলো আনতে।
- কবে থেকে মিথ্যা বলা শিখেছো তুমি?
- ম মানে?
- আখির বাসায় আমি ফোন দিয়েছিলাম, সেখানে তুমি যাও নি, শুধু আখি কেন, কোনো ফ্রেন্ডের বাসায়ই তুমি যাও নি। আমি সবখানে খোজ নিয়েছি।
কোথায় গিয়েছিলে বলো?
- নুপুর মাথা নিচু করে আছে। কিছু বলছে না। কি বলবে সে?
- তোর বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। সামনের সপ্তাহে তোর বিয়ে। আর এখনো তুই বাইরে বাইরে ঘুরে বেড়াস? নুপুরের মা বললো
- মা, আমি কতো করে বলবো, এই বিয়ে করবো না। আমি রাজ কে ভালোবাসি। বিয়ে যদি করতে হয় রাজকেই করবো।
- ছিঃ নুপুর,
মা বাবার সামনে দাড়িয়ে তোর প্রেমলীলা শুনাচ্ছিস, তোর কি একটুও লজ্জা করছে না।
নুপুর কিছু বলবো না, রেগে হনহন করে নিজের রুমে গিয়ে ঢুকলো।
--
নিরা খাটের উপর বসে চকলেট খাচ্ছে আর টিভিতে কার্টুন দেখছে। বড় বোনকে ঢুকতে দেখে টিভিটা অফ করে দিলো। এই রাগি মুডে আছে, এখন যদি টিভি অফ না করে হয়তো রাগের চোটে টিভিটাই ভেঙ্গে ফেলবে।
নিরা সাহস নিয়ে নুপুর কে বললো..
- আপু , তোর মন খারাপ কেন?
- কেন রে? আমার কি মন খারাপ থাকতে পারে না?
- নাহ, কিছুদিন পর তোমার বিয়ে, এখন তো তোমার খুশি থাকার কথা। কিন্তু তা না করে গাল ফুলিয়ে আছো যে...
- খাবি এক থাপ্পড় .. । যা এখান থেকে ফাজিল। রেগেমেগে বললো নুপুর।
- যাচ্ছি যাচ্ছি, এখনো বিয়েই হয় নি, তাও পর করে দিচ্ছো, বিয়ের পর না জানি কি করো ।
নিরা চলে গেলো। নুপুর বসে আছে আর নিরবে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে।
বিয়েটা হয়ে গেলে সব শেষ হয়ে যাবে। কিভাবে থাকবে সে রাজ কে ছাড়া? নাহ, সে কিছুতেই রাজ কে ছাড়া থাকতে পারবে না। রাজ নিশ্চয়ই কাল এসে বাবাকে রাজি করাবে। রাজের উপর সেই বিশ্বাস আছে আমার।
--
নুপুর শুয়ে আছে। কিছুই ভালো লাগছে না তার। রাত ১০:০০ টা বাজে। এখনো খায়নি।
নিরা বার বার বলছে খেতে যাওয়ার জন্য। কিন্তু তার কথায়, সে খাবেনা।
কিছুক্ষন পর মা এলো নুপুরের রুমে। ও এখনো শুয়েই আছে।
- কিরে, কখন থেকে ডাকছি, আসছিস না কেন? ভাত খাবি না?
- বললাম না, খাবো না। তাও বার বার ডাকছো কেন?
মা এবার নুপুরের পাশে বসে ওর মাথায় হাত রাখলো। নরম সুরে বললো..
- মারে, কোনো মা বাবাই তার সন্তানের অমঙ্গল চায় না। যে ছেলেটির সাথে তোর বিয়ে ঠিক করেছি, সে অনেক ভালো। অনেক টাকার মালিক। বিদেশে পর্যন্ত ওদের বিজনেস আছে। ওর সাথে বিয়ে হলে তুই রাজরানী হয়ে থাকবি দেখে নিস।
- দরকার নেই আমার রাজরানী হবার। এতো শখ থাকলে নিরাকে বিয়ে করিয়ে দাও।
আমি রাজকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করবো না। দরকার হলে বিষ খেয়ে মরে যাবো।
নুপুরের কথায় মা প্রচন্ড রেগে গিয়ে সজোরে থাপ্পড় দেয় নুপুরের গালে।
... কিছু না বলেই সেখান থেকে চলে যায় মা।
নুপুর নিজের গালে হাত দিয়ে বসে আছে। চোখের বাধ মানছে না তার। কাঁদতে কাঁদতে কখন ঘুমিয়ে পরে বুঝতেও পারেনা।
..
পরেরদিন দিন সকালে জোর করে নাস্তা খাওয়ায় নুপুরের মা । নুপুরের এক কথা, সে বিয়ে করবে না। মা সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে নুপুরকে খাইয়েই চলেছে।
এমন সময় বাসার কলিংবেল বেজে উঠলো।
নুপুরের বাবা নিজের রুমে ছিলো।
নিরা গিয়ে দরজাটা খোলে দেয়। রাজ এসেছে।
রাজকে দেখে নুপুর যেনো আশার আলো খোঁজে পায়।
নুপুরের মা ছেলেটাকে চিনলো না। বললো..
- তুমি কে বাবা?
- আম রাজ!
নামটা শুনে নুপুরের মা চমকে উঠে।
কারো কথার শব্দ পেয়ে নিজের রুম থেকেও বেরিয়ে আসে নুপুরের বাবা।
- ছেলেটা কে নিলু? ( নিলুফা রহমান, নুপুরের মা)
নুপুরের মা কিছু বলে না। ছেলেটা বললো..
- আংকেল, আমি রাজ।
নামটা শুনে নুপুরের বাবা রেগে যায়।
- কেন এসেছো তুমি এখানে? রেগে গিয়ে ছেলেটিকে জিজ্ঞেস করে নুপুরের বাবা।
- আংকেল, আমি নুপুরকে ভালোবাসি। নুপুর ও আমাকে ভালোবাসে। আর...
- আর কি?
- আমরা দুজন দুজনকে বিয়ে করতে চাই। মাথা নিচু করে বলে রাজ।
- তুমি কি জানো নুপুরের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে?
- জানি..
- জানো? জানার পরেও আসছো এই কথা বলতে?
- আমরা দুই বছর ধরে দুজন দুজনকে ভালোবেসে এসেছি। আপনি এভাবে আমাদের ভালোবাসাকে নষ্ট করে দিবেন না আংকেল প্লিজ।
- আচ্ছা..
তুমি কি করো?
- একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে জব করি।
- সেলারি কত?
- ৩০ হাজার।
- তুমি কি জানো আমার নুপুরের দৈনিক খরচ কতো?
মাথা নিচু করে আছে রাজ।
- যাইহোক, তোমার কে কে আছে?
- আমি একাই। মা বাবা ছোটবেলায় মারা গেছেন।
- ওহ, so sad ...
নুপুর তুই একটু ঘরে যা। নিলু.. তুমিও যাও..
বাবার কথায় নুপুর আর নুপুরের মা রুমে চলে গেলো ঠিকই ... কিন্তু নুপুরের মনটা এখানেই পড়ে আছে। রাজের সাথে বাবা একা কি কথা বলছে? রাজ কে অপমান করবে না তো বাবা? ভাবছে নুপুর।
..
To be Continue .....

প্রত্যাখ্যান- Part_01 প্রত্যাখ্যান- Part_01 Reviewed by NINDOOK LIFE on January 26, 2020 Rating: 5

No comments:

Powered by Blogger.