পিরিয়ড
বিয়ের পর যখন প্রথম পিরিয়ড হয়েছিল খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। ওর সামনে আসতেই ভয় পাচ্ছিলাম। এমনকি এমন অবস্থা হয়েছিল বিছানায় বসা, ওকে খাবার বেড়ে দেওয়া এসবও পারছিলাম না।
সাধারণত আমি যতক্ষণ ইয়াসিরকে ভাত বেড়ে দিই না ততক্ষণ সে টেবিলে বসে থাকে। ভাত দেওয়ার পর ওর পাশে টেবিলে বসে না থাকলে ওর ভাল লাগে না। আমাদের সংসারের বয়স তিন মাস, তিন মাস থেকেই এটাই হয়ে আসছে।
বেশ ভাল লাগে!!
সেদিন ইয়াসির অফিস থেকে আসার পর, ওকে ভাত দিয়ে রুমে চলে আসি, ওর অভিমান ভরা দুটো চোখ বার বার আমার বেড রুমের দরজার দিকে লক্ষ্য রাখছিল। কেন আমি পাশে বসিনি।
শেষে কিছুক্ষণ পরে রুমে এসে, একটু রেগে বললো,
: সুমু পানি দাও,
পানি টেবিলেই ছিল, তাও আমায় যখন বললো, আমি পানি এনে দিই। সাধারণত কোন কিছু লাগলে সে আমাকে আদেশের সুরে কিছু বলে না। যা দরকার নিজেই নিয়ে নেয়। কিন্তু অভিমান হলে এসব ইচ্ছে করেই করে।
আমি পানি দিয়ে দৌড়ে চলে যাচ্ছিলাম সে হাতটা ধরে বললো,
: বস,
আমি না বসেই নীচের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলাম।
সে আমার দিকে পূর্ণ দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে বললো,
: সুমাইয়া, কি হয়েছে তোমার? তুমি এমন করছ কেন? তুমি আমার পাশে না বসলে ভাত খেতে ইচ্ছে করে না। তুমি জান, তাও আমাকে ভাত দিয়ে কোথায় চলে গেছ? কাছে আসছ না? পাশে বসছ না? কি হয়েছে বল? না বললে আমি কীভাবে বুঝব বলো। আমি সারাদিন তো অফিসেই ছিলাম, আমি কীভাবে জানব?
আমি তাও চুপ, একটা শব্দও বলিনি। সে আবার বললো,
: তুমি টেবিলে গিয়ে দেখেছ? আমি ভাত খেয়েছি কি না? খায়নি। তুমি পাশে না থাকলে আমি খেতে পারি না।
এবার আমি নিজেকে আর ধরে রাখতে পারিনি। খুব কষ্ট হচ্ছিল। নিজের উপর অনেক রাগ। সে খুদা সহ্য করতে পারে না। খুদা লাগলেই কিছু খেতে হয়। এখন এগারটা বাজে সে এখনো খায়নি।
--আগে খেতে চল। তারপর বলতেছি।
সে প্রচণ্ড অভিমান নিয়ে বললো,
: না, আমি খাব না। আগে বল, কি হয়েছে? তোমার মন খারাপ কেন? আমার কাছে আসছ না কেন? ভালো আছ তো?
ইয়াসিরকে অনেকভাবে খেতে যেতে বলার পরও যখন সে খায়নি বললাম,
--আমার পিরিয়ড শুরু হয়েছে।
সে শব্দ করে হেসে আমাকে কাছে টেনে নিতে চেয়ে বললো,
: তো কি হয়েছে? তোমার খুব ব্যথা হচ্ছে কি?
--না। আমি নাপাক, নির্দিষ্ট জায়গায় বসতে হবে। সোফা, চেয়ারে বসা যাবে না। খাটের নির্দিষ্ট জায়গায় বসতে হবে।
: এগুলো কে বলেছে?
-- আপুর শ্বশুর বাড়িতে তো এমনই নিয়ম। এগুলোই হয়। পিরিয়ড থেকে সুস্থ হওয়ার পর, পুরো বাড়ি মুছে দিতে হবে। মোড়া, চেয়ার সব পানি দিয়ে মুছে দিতে হবে। বেড,,,,
: ব্যস, ব্যস, আর বলতে হবে না। কিন্তু আমাদের বাড়িতে এই নিয়ম নেই।
ছোট বেলায় যখন থেকে রোজা রাখতে শুরু করেছি, রমজাম মাসে আপুরা সেহেরি খেতে না উঠলে, রোজা না রাখলে মা'কে বলতাম, আপু কেন রোজা রাখছে না?
মা বলতো,
: আপুকে আল্লাহ নামাজ থেকে ছুটি দিয়েছেন। এমনকি সব মেয়েদের মাসের নির্দিষ্ট সময়ে আল্লাহ নামাজ, রোজা, কোরান তেলাওয়াত থেকে ছুটি দিয়ে দেন।
বুঝতাম না, কিন্তু চুপ থাকতাম। আরেকটু যখন বড় হলাম, লক্ষ্য করলাম, একদিন মা আপুকে খুব যত্ন করে দুধ, ডিম, ভালো খাবার খেতে দিচ্ছিলেন।
আমি জেলাস হয়ে, মায়ের সাথে খুব রাগ করেছিলাম। আপুকে কেন বেশি দিচ্ছে। মা সেদিন বলেছিলেন,
: বলেছিলাম, মেয়েদেরকে আল্লাহ ছুটি দিয়ে দেন, কেন ছুটি দেয় জানিস?
:: নাহ,
: কারণ, তখন মেয়েদের অনেক কষ্ট হয়, অনেক যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে প্রতিটি সেকেন্ড অতিবাহিত করতে হয়। ওই সময় মেয়েদের বিশ্রাম নিতে হয়। যথাসম্ভব ভালো খাবার দিতে হয়। এমন সময় আসলে যখন বুঝবি , কখনো আপুকে কষ্ট দিয়ে কথা বলবি না। শুধু আপুকে নয়, কোন মেয়েকেও না। যদি কখনো বুঝিস কোন মেয়ে এই সময়টা অতিক্রম করতেছে, তখন তাকে সম্মান প্রয়োজনের চেয়ে বেশি দিতে হবে। কারণ এই সময়টার কারণেই প্রতিটি মেয়ে মা হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করে।
: বুঝলাম, কিন্তু ছুটি চলতেছে সেটা কীভাবে বুঝবো?
মা মুচকি হেসে বললো,
: সেটা এখন না বুঝলেও চলবে। সময় হলেই বুঝতে পারবি।
মা গরম পানির বেগে পানি ভরতে ভরতে কথা বলছিলেন, গরম পানির ব্যগটা হাতে দিয়ে বললেন,
: যা, এটা তোর আপুকে দিয়ে আস।
আমি আপুর কাছে সেটা দিয়ে বললাম,
: আপু কিছুর দরকার হলে আমাকে বলিও। তুমি এখন রেস্ট নাও। আমি তোমার খাবারে ভাগ বসাব না। তোমাকে জ্বালাব না। আমি জানি তোমার অনেক কষ্ট হচ্ছে।
আপু খুব খুশি হয়েছিলেন সেদিন। আর এখন আমার বউটাকে খুশি করার, যত্ন করার দায়িত্ব আমার। বলে আমাকে জড়িয়ে ধরতে চাচ্ছিলো, আমি একটু দূরে সরে গিয়ে বললাম,
--আমার আনইজি লাগতেছে। এই অবস্থায় তোমার পাশে,,,,
: এই অবস্থা মানে কী হুহ, জানো?
রাসুল (সা:) প্রায় সময় উম্মুল মু’মিনীন খাদিজা (রা:) এর কোলে মাথা রাখতেন, এবং তাঁর মৃত্যুর পর আয়শা (রা:) এর উরুর উপর মাথা রেখে শুতেন। যখন আয়শা (রা:) ঋতুবর্তী অবস্থায় উপনীত হতেন, তখন তিনি (সা:) তাঁর উরুর উপর শুয়ে কোর’আন তিলাওয়াত করতেন।
হযরত আয়শা (র:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
আমি পিরিয়ড অবস্থায় পনি পান করতাম এবং পানির পাত্রটা রাসুল (স:) এর দিকে এগিয়ে দিতাম। তিনি পানির পাত্রে সে জায়গায় মুখ লাগিয়ে পানি পান করতেন যে জায়গায় মুখ
লাগিয়ে আমি পানি পান করেছি। আমি হায়েজ (পিরিয়ড) অবস্থায় হাড্ডি থেকে গোশত ছিড়ে খেতাম অত:পর তা রাসুল (স:) কে দিতাম তিনি সেখানে মুখ লাগিয়ে গোশত
ছিড়তেন যেখানে মুখ লাগিয়ে আমি গোশত
ছিড়েছি। (মুসলিম- ৭১৮)
আল্লাহ বলেন,
“আর তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে হায়েয (ঋতু)
সম্পর্কে। বলে দাও, এটা ‘আযা’। কাজেই তোমরা
হায়েয অবস্থায় স্ত্রীগমন(সহবাস) থেকে বিরত থাক। তখন পর্যন্ত তাদের নিকটবর্তী হবে না, যতক্ষণ না তারা পবিত্র হয়ে যায়। যখন উত্তম রূপে পরিশুদ্ধ হয়ে যাবে, তখন গমন কর তাদের কাছে, যেভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে হুকুম দিয়েছেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারী এবং অপবিত্রতা থেকে যারা বেঁচে থাকে তাদেরকে পছন্দ করেন”।(সুরা বাকারাহ, ২২২)
সুতরাং বুঝতে পারছ? আমি কিন্তু সব কিছু করতে পারবো। বলে মুচকি হেসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
--উঁহু, সব কিছু পারবে না কিন্তু,
বলে, লজ্জা পেয়ে সরে যাচ্ছিলাম, সে কাছে টেনে নিয়ে বললো,
: জানি তো রানী সাহেবা। লজ্জা পাচ্ছ কেন? কোরানে আছে,
"আল্লাহ সত্য বলতে লজ্জাবোধ করেন না। (সূরা আহযাব-৫৩)"
সুতরাং এসব
পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে নীচের চারটি কাজ অবশ্যই বর্জন করুন- ১। পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে ঠান্ডা পানি, কোমল পানীয় এবং নারিকেল খাবেন না। ২। এসময় মাথায় শ্যাম্পু ব্যাবহার করবেন না। কারণ পিরিয়ডের সময় চুলের গোড়া আলগা হয় ফলে লোমকূপ উন্মুক্ত হয়ে পড়ে। শ্যাম্পু ব্যাবহার এসময় অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং দীর্ঘস্থায়ী মাথাব্যথার কারণ হতে পারে। ৩। এসময় শশা খাবেন না। কারণ শশার মধ্যে থাকা রস পিরিয়ডের রক্তকে জরায়ু প্রাচীরে আটকে দিতে পারে। যার ফলে আপনার বন্ধ্যা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ৪। এছাড়াও লক্ষ্য রাখবেন, পিরিয়ডের সময় যেন শরীরে শক্ত কিছুর আঘাত না লাগে, বিশেষত পেটে। পিরিয়ডের সময়টায় জরায়ু খুব নাজুক থাকে ফলে অল্প আঘাতেই মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। যার ফলে পরবর্তীতে জরায়ু ক্যান্সার, জরায়ুতে ঘাঁ কিংবা বন্ধ্যাত্যের ঝুঁকি থাকে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে ঠান্ডা পানি পান করার ফলে পিরিয়ডের রক্ত বের না হয়ে জরায়ু প্রাচীরে জমাট বাঁধতে পারে। যা পরবর্তী ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে জরায়ু টিউমার বা ক্যান্সারের আকার ধারণ করতে পারে। দয়া করে এই তথ্যটুকু আপনার স্ত্রী, মা, কন্যা, প্রিয়তমা সকলের কাছে পৌছে দিন। আপনার শেয়ার করার মাধ্যমে যদি একজন নারীও উপকৃত হয় সেটাও পরম পাওয়া। জরায়ু ক্যান্সার ও বন্ধ্যান্ত মুক্ত হোক আমাদের মা বোনেরা।
বিয়ের পর যখন প্রথম পিরিয়ড হয়েছিল খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। ওর সামনে আসতেই ভয় পাচ্ছিলাম। এমনকি এমন অবস্থা হয়েছিল বিছানায় বসা, ওকে খাবার বেড়ে দেওয়া এসবও পারছিলাম না।
সাধারণত আমি যতক্ষণ ইয়াসিরকে ভাত বেড়ে দিই না ততক্ষণ সে টেবিলে বসে থাকে। ভাত দেওয়ার পর ওর পাশে টেবিলে বসে না থাকলে ওর ভাল লাগে না। আমাদের সংসারের বয়স তিন মাস, তিন মাস থেকেই এটাই হয়ে আসছে।
বেশ ভাল লাগে!!
সেদিন ইয়াসির অফিস থেকে আসার পর, ওকে ভাত দিয়ে রুমে চলে আসি, ওর অভিমান ভরা দুটো চোখ বার বার আমার বেড রুমের দরজার দিকে লক্ষ্য রাখছিল। কেন আমি পাশে বসিনি।
শেষে কিছুক্ষণ পরে রুমে এসে, একটু রেগে বললো,
: সুমু পানি দাও,
পানি টেবিলেই ছিল, তাও আমায় যখন বললো, আমি পানি এনে দিই। সাধারণত কোন কিছু লাগলে সে আমাকে আদেশের সুরে কিছু বলে না। যা দরকার নিজেই নিয়ে নেয়। কিন্তু অভিমান হলে এসব ইচ্ছে করেই করে।
আমি পানি দিয়ে দৌড়ে চলে যাচ্ছিলাম সে হাতটা ধরে বললো,
: বস,
আমি না বসেই নীচের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলাম।
সে আমার দিকে পূর্ণ দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে বললো,
: সুমাইয়া, কি হয়েছে তোমার? তুমি এমন করছ কেন? তুমি আমার পাশে না বসলে ভাত খেতে ইচ্ছে করে না। তুমি জান, তাও আমাকে ভাত দিয়ে কোথায় চলে গেছ? কাছে আসছ না? পাশে বসছ না? কি হয়েছে বল? না বললে আমি কীভাবে বুঝব বলো। আমি সারাদিন তো অফিসেই ছিলাম, আমি কীভাবে জানব?
আমি তাও চুপ, একটা শব্দও বলিনি। সে আবার বললো,
: তুমি টেবিলে গিয়ে দেখেছ? আমি ভাত খেয়েছি কি না? খায়নি। তুমি পাশে না থাকলে আমি খেতে পারি না।
এবার আমি নিজেকে আর ধরে রাখতে পারিনি। খুব কষ্ট হচ্ছিল। নিজের উপর অনেক রাগ। সে খুদা সহ্য করতে পারে না। খুদা লাগলেই কিছু খেতে হয়। এখন এগারটা বাজে সে এখনো খায়নি।
--আগে খেতে চল। তারপর বলতেছি।
সে প্রচণ্ড অভিমান নিয়ে বললো,
: না, আমি খাব না। আগে বল, কি হয়েছে? তোমার মন খারাপ কেন? আমার কাছে আসছ না কেন? ভালো আছ তো?
ইয়াসিরকে অনেকভাবে খেতে যেতে বলার পরও যখন সে খায়নি বললাম,
--আমার পিরিয়ড শুরু হয়েছে।
সে শব্দ করে হেসে আমাকে কাছে টেনে নিতে চেয়ে বললো,
: তো কি হয়েছে? তোমার খুব ব্যথা হচ্ছে কি?
--না। আমি নাপাক, নির্দিষ্ট জায়গায় বসতে হবে। সোফা, চেয়ারে বসা যাবে না। খাটের নির্দিষ্ট জায়গায় বসতে হবে।
: এগুলো কে বলেছে?
-- আপুর শ্বশুর বাড়িতে তো এমনই নিয়ম। এগুলোই হয়। পিরিয়ড থেকে সুস্থ হওয়ার পর, পুরো বাড়ি মুছে দিতে হবে। মোড়া, চেয়ার সব পানি দিয়ে মুছে দিতে হবে। বেড,,,,
: ব্যস, ব্যস, আর বলতে হবে না। কিন্তু আমাদের বাড়িতে এই নিয়ম নেই।
ছোট বেলায় যখন থেকে রোজা রাখতে শুরু করেছি, রমজাম মাসে আপুরা সেহেরি খেতে না উঠলে, রোজা না রাখলে মা'কে বলতাম, আপু কেন রোজা রাখছে না?
মা বলতো,
: আপুকে আল্লাহ নামাজ থেকে ছুটি দিয়েছেন। এমনকি সব মেয়েদের মাসের নির্দিষ্ট সময়ে আল্লাহ নামাজ, রোজা, কোরান তেলাওয়াত থেকে ছুটি দিয়ে দেন।
বুঝতাম না, কিন্তু চুপ থাকতাম। আরেকটু যখন বড় হলাম, লক্ষ্য করলাম, একদিন মা আপুকে খুব যত্ন করে দুধ, ডিম, ভালো খাবার খেতে দিচ্ছিলেন।
আমি জেলাস হয়ে, মায়ের সাথে খুব রাগ করেছিলাম। আপুকে কেন বেশি দিচ্ছে। মা সেদিন বলেছিলেন,
: বলেছিলাম, মেয়েদেরকে আল্লাহ ছুটি দিয়ে দেন, কেন ছুটি দেয় জানিস?
:: নাহ,
: কারণ, তখন মেয়েদের অনেক কষ্ট হয়, অনেক যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে প্রতিটি সেকেন্ড অতিবাহিত করতে হয়। ওই সময় মেয়েদের বিশ্রাম নিতে হয়। যথাসম্ভব ভালো খাবার দিতে হয়। এমন সময় আসলে যখন বুঝবি , কখনো আপুকে কষ্ট দিয়ে কথা বলবি না। শুধু আপুকে নয়, কোন মেয়েকেও না। যদি কখনো বুঝিস কোন মেয়ে এই সময়টা অতিক্রম করতেছে, তখন তাকে সম্মান প্রয়োজনের চেয়ে বেশি দিতে হবে। কারণ এই সময়টার কারণেই প্রতিটি মেয়ে মা হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করে।
: বুঝলাম, কিন্তু ছুটি চলতেছে সেটা কীভাবে বুঝবো?
মা মুচকি হেসে বললো,
: সেটা এখন না বুঝলেও চলবে। সময় হলেই বুঝতে পারবি।
মা গরম পানির বেগে পানি ভরতে ভরতে কথা বলছিলেন, গরম পানির ব্যগটা হাতে দিয়ে বললেন,
: যা, এটা তোর আপুকে দিয়ে আস।
আমি আপুর কাছে সেটা দিয়ে বললাম,
: আপু কিছুর দরকার হলে আমাকে বলিও। তুমি এখন রেস্ট নাও। আমি তোমার খাবারে ভাগ বসাব না। তোমাকে জ্বালাব না। আমি জানি তোমার অনেক কষ্ট হচ্ছে।
আপু খুব খুশি হয়েছিলেন সেদিন। আর এখন আমার বউটাকে খুশি করার, যত্ন করার দায়িত্ব আমার। বলে আমাকে জড়িয়ে ধরতে চাচ্ছিলো, আমি একটু দূরে সরে গিয়ে বললাম,
--আমার আনইজি লাগতেছে। এই অবস্থায় তোমার পাশে,,,,
: এই অবস্থা মানে কী হুহ, জানো?
রাসুল (সা:) প্রায় সময় উম্মুল মু’মিনীন খাদিজা (রা:) এর কোলে মাথা রাখতেন, এবং তাঁর মৃত্যুর পর আয়শা (রা:) এর উরুর উপর মাথা রেখে শুতেন। যখন আয়শা (রা:) ঋতুবর্তী অবস্থায় উপনীত হতেন, তখন তিনি (সা:) তাঁর উরুর উপর শুয়ে কোর’আন তিলাওয়াত করতেন।
হযরত আয়শা (র:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
আমি পিরিয়ড অবস্থায় পনি পান করতাম এবং পানির পাত্রটা রাসুল (স:) এর দিকে এগিয়ে দিতাম। তিনি পানির পাত্রে সে জায়গায় মুখ লাগিয়ে পানি পান করতেন যে জায়গায় মুখ
লাগিয়ে আমি পানি পান করেছি। আমি হায়েজ (পিরিয়ড) অবস্থায় হাড্ডি থেকে গোশত ছিড়ে খেতাম অত:পর তা রাসুল (স:) কে দিতাম তিনি সেখানে মুখ লাগিয়ে গোশত
ছিড়তেন যেখানে মুখ লাগিয়ে আমি গোশত
ছিড়েছি। (মুসলিম- ৭১৮)
আল্লাহ বলেন,
“আর তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে হায়েয (ঋতু)
সম্পর্কে। বলে দাও, এটা ‘আযা’। কাজেই তোমরা
হায়েয অবস্থায় স্ত্রীগমন(সহবাস) থেকে বিরত থাক। তখন পর্যন্ত তাদের নিকটবর্তী হবে না, যতক্ষণ না তারা পবিত্র হয়ে যায়। যখন উত্তম রূপে পরিশুদ্ধ হয়ে যাবে, তখন গমন কর তাদের কাছে, যেভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে হুকুম দিয়েছেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারী এবং অপবিত্রতা থেকে যারা বেঁচে থাকে তাদেরকে পছন্দ করেন”।(সুরা বাকারাহ, ২২২)
সুতরাং বুঝতে পারছ? আমি কিন্তু সব কিছু করতে পারবো। বলে মুচকি হেসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
--উঁহু, সব কিছু পারবে না কিন্তু,
বলে, লজ্জা পেয়ে সরে যাচ্ছিলাম, সে কাছে টেনে নিয়ে বললো,
: জানি তো রানী সাহেবা। লজ্জা পাচ্ছ কেন? কোরানে আছে,
"আল্লাহ সত্য বলতে লজ্জাবোধ করেন না। (সূরা আহযাব-৫৩)"
সুতরাং এসব
পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে নীচের চারটি কাজ অবশ্যই বর্জন করুন- ১। পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে ঠান্ডা পানি, কোমল পানীয় এবং নারিকেল খাবেন না। ২। এসময় মাথায় শ্যাম্পু ব্যাবহার করবেন না। কারণ পিরিয়ডের সময় চুলের গোড়া আলগা হয় ফলে লোমকূপ উন্মুক্ত হয়ে পড়ে। শ্যাম্পু ব্যাবহার এসময় অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং দীর্ঘস্থায়ী মাথাব্যথার কারণ হতে পারে। ৩। এসময় শশা খাবেন না। কারণ শশার মধ্যে থাকা রস পিরিয়ডের রক্তকে জরায়ু প্রাচীরে আটকে দিতে পারে। যার ফলে আপনার বন্ধ্যা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ৪। এছাড়াও লক্ষ্য রাখবেন, পিরিয়ডের সময় যেন শরীরে শক্ত কিছুর আঘাত না লাগে, বিশেষত পেটে। পিরিয়ডের সময়টায় জরায়ু খুব নাজুক থাকে ফলে অল্প আঘাতেই মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। যার ফলে পরবর্তীতে জরায়ু ক্যান্সার, জরায়ুতে ঘাঁ কিংবা বন্ধ্যাত্যের ঝুঁকি থাকে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে ঠান্ডা পানি পান করার ফলে পিরিয়ডের রক্ত বের না হয়ে জরায়ু প্রাচীরে জমাট বাঁধতে পারে। যা পরবর্তী ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে জরায়ু টিউমার বা ক্যান্সারের আকার ধারণ করতে পারে। দয়া করে এই তথ্যটুকু আপনার স্ত্রী, মা, কন্যা, প্রিয়তমা সকলের কাছে পৌছে দিন। আপনার শেয়ার করার মাধ্যমে যদি একজন নারীও উপকৃত হয় সেটাও পরম পাওয়া। জরায়ু ক্যান্সার ও বন্ধ্যান্ত মুক্ত হোক আমাদের মা বোনেরা।
যন্ত্রণাদায়ক পিরিয়ড- কেন হয় এবং কাদের ঝুঁকি বেশি?
Reviewed by NINDOOK LIFE
on
January 07, 2020
Rating:
No comments: