"উপমান ও উপমিত"

"উপমান ও উপমিত"
বর্তমান প্রজন্মের বেশির ভাগ ছেলে মেয়েদেরই মুভির প্রতি আলাদা একটা আকর্ষণ আছে। তাই প্রথমে মুভি দিয়েই শুরু করি।
বর্তমান মুভির প্লট চিন্তা করলে দেখা যায় যে কমবেশি সবগুলোতেই দেখা যায় প্রতিশোধ নেওয়ার মত বা রিভেঞ্জ টাইপ স্ক্রিপ্ট। একটা পরিবার আপনার কাজে বাধা দিয়েছে তাই আপনি সেই পরিবারটাকে ধ্বংস করার জন্যে নানা রকম পরিকল্পনা করার পরে যে কোন একটাতে আপনি সফল হলেন। কিন্তু তারপরেও পরিবারটাকে পুরোপুরি ধ্বংস করতে পারলেন না। সিনেমার চিরাচরিত নিয়ম অনুযায়ী হয় পরিবারের কোন ছেলে বা মেয়ে বেঁচে যায়। যেটা কোন কারণেই হোক আপনার কাছে তা অজানা থাকে । সেই ছেলেটি বা মেয়েটি পরবর্তীতে বড় হয়ে সে তার পরিবার কে নিশ্চিহ্ন করার প্রতিশোধ কিন্তু ঠিকই নেয়। আর তার পরিণতিতে আপনার ভাগ্যে মৃত্যুই লেখা থাকে।
মুভির প্রতি আকর্ষণ থাকলেও ক্রিকেটপ্রেমীদের সংখ্যাও কিন্তু কম না! এবার তাহলে এই খেলাটা নিয়ে একটু আলোচনা করি।
ক্রিকেট খেলাতে অনেক কিছুর হিসাব নিকাশ থাকলেও জয়-পরাজয় টাই মুখ্য বিষয় হিসেবে বিবেচিত হয়। টান টান উত্তেজনাকর একটা ম্যাচ!
আপনার প্রতিপক্ষ যথেষ্ট পরিমাণ শক্তিশালী। আপনাকে পরাজিত করার ক্ষমতা রাখে। আপনার টিমও কোন অংশে কম না কারণ আপনি তাদের প্রত্যেককেই খুব কাছ থেকে চেনেন। এই খেলাতে বোলিং করার সময় সবথেকে মনোযোগ দিতে হয় টপ অর্ডারের ব্যাটসম্যানদের দিকে। তারপরে আসে মিডল অর্ডারদের হিসাব। আপনি তাদের প্রতিরোধ করার মত কৌশল ঠিকই জানেন। সে অনুযায়ী বোলার দলেও আছে। আপনার টিমের সেই দুর্দান্ত বোলারের তান্ডবে খুব অল্পতেই টপ অর্ডার সহ মাঝের ভাল ব্যাটসম্যানও আউট হয়ে গেল। এতে করে কি হবে? স্বাভাবিক ভাবেই দলের সবাই একটু রিলাক্স মুড এ থাকবে। কিন্তু আপনি চাইবেন যে তাড়াতাড়িই তো সবাই আউট হয়ে গেল ওই বোলার কে আর এক ওভার করিয়ে অলআউট করে দেই। আপনার সে ইচ্ছা আর পূরণ হলো না বিপক্ষ দলের শেষের দিকের সেই ব্যাটসম্যান এর কারণে। সে তো আউট হলোই না বরং তোমার বোলারের গতিপথ সম্পর্কে পূর্ণ ধারনা পেল। তারপরে সেই বোলারকে কিছুক্ষণ বসিয়ে রেখে আলাদা বোলার দিয়ে বোলিং করার পরেও তাকে আর আউট করা গেল না। খেলার পরিসমাপ্তির দিকে সেই বোলারকে যখন পুনরায় বল করেত দিলেন তখন আর শেষ রক্ষাটা হলো না। কারণ বোলার তো তাকে আউট করতেই পারলো না, তার বিপরীতে বেশ কয়েকটা ছক্কা হাকিয়ে ম্যাচটাই নিজের করে নিল। বাস্তবে আমি এমন অনেক ম্যাচ দেখেছি যেটা ১০ নাম্বার ব্যাটসম্যান এর দু তিন ওভারের তান্ডবে পুরো ম্যাচের দৃশ্য পাল্টে ফেলতে। ওপেনিং ব্যাটসম্যানকেও দেখেছি অনেক বল খেয়ে ফেলার পরে শেষ দিকে বলের থেকে তিন চারগুন বেশি রান নিয়ে ম্যাচে জয়লাভ করেছে। এর বাস্তব প্রমাণ যদি দিতে হয় তাহলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর ইংল্যান্ডের টি টুয়েন্টির ফাইনালে করা বেন স্টোকস এর বোলিং এ ব্রাথওয়েট এর উদাহরণ সবচেয়ে বেশি যুক্তিযুক্ত।
আমার জানামতে ক্রিকেট খেলার থেকেও একটা খেলাতে জনপ্রিয়তা আরো বেশি। সেটা হলো ফুটবল খেলা। এই খেলা নিয়ে যদি কিছু না বলি তাহলে কেমন একটা হয়!
ফুটবলেও খেলাকে নির্ধারন করা হয় বিজয়ী বিজেতা হিসেবেই। কে কতোটা ফাউল করলো, কে কয়টা গোল করলো? সেটার হিসাব থাকলেও যে দল বিজয়ী তাদের নামটাই আগে আসে। যারা ফুটবল খেলার সম্পর্কে জানে তারা দল গঠনে যথেষ্ট ধারণা আছে। গোলকিপার, ডিফেন্স, মিডফিল্ডার, ফরোয়ার্ড সেই সাথে প্রয়োজন অনুযায়ী স্ট্রাইকার নিয়ে দল গঠিত হয়। এই খেলাতে জিততে হলে গোল দেওয়ার পাশাপাশি নিজের গোলপোস্টকেও সুরক্ষিত রাখতে হয়। আর যার দায়িত্বে থাকে গোলকিপার আর সুরক্ষিত দেয়াল হিসেবে ডিফেন্স থাকে আর সাথে মিডফিল্ডার সহযোগী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। যখন কঠিন কোন প্রতিপক্ষের সম্মুখীন হবেন আর তাতে যদি আপনাকে অনিবার্য জয় প্রয়োজন হয় তখন কি করবেন?
আপনি তখন সেরা ও বুদ্ধিমান গোলকিপার, দক্ষ ও শক্তিশালী ডিফেন্স, পরিশ্রমী ও চৌকস মিডফিল্ডার, দ্রুতগামী ও অপ্রতিরোধ্য ফরোয়ার্ড বা স্ট্রাইকার কেই বেছে নিবেন। তাহলে আপনার জয় আর কেউ টেকাতে পারবে না। যদিওবা ক্লাব ফুটবলে হোম ও অ্যাওয়ে ম্যাচ বলতে একটা বিষয় আছে। খেলা শুরুর পরে চীনের মহাপ্রাচীরের মত ডিফেন্স থাকার কারণে তোমার দুর্গে তো আঘাত হানতেই পারলোই না তার বিপরীতে মিডফিল্ডার এর প্লেমেকারদের সুবাদে দুরন্ত ফরোয়ার্ড বা স্ট্রাইকারে প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগকে তছনছ করে বেশ কিছু স্কোর করলো বিরতির আগেই। যেহেতু অর্ধেক খেলাতেই জয় নিশ্চিত হয়ে গেছে ভেবে আপনি আর চাইবেন না যে আপনার স্ট্রাইকার কোন বিপদে পড়ুক। তাই বিরতির পরে তাকে উঠিয়ে একটা ডিফেন্স নামালেন। এর ফলে কি হলো বলতে পারবেন?
আপনার আক্রমণভাগ দুর্বল হলেও রক্ষণভাগ কিন্তু আগের থেকে বেশি শক্তিশালী হলো। যেহেতু জয় এখন সময়ের ব্যাপার তাই দলের সবার মাঝেই একটা দায়সারা ভাব চলে আসবে। সেই সুযোগটাই নিবে বিপক্ষ দলের খেলোয়ারেরা। আর তাছাড়া তারা তোমার গেম প্ল্যানের খুঁটিনাটি মোটামুটি জেনেই ফেলেছে। যার ফলশ্রুতিতে একের পর এক আঘাত হানবে তোমার দুর্গের প্রাচীরে। কতটা আক্রমণ সামলাবে তুমি? একটা না একটা সময় সেটা দুর্বল হয়েই পড়বে। যেটার ফলাফল পরাজয় ছাড়া আর কোন অবকাশ থাকবে না। যারা নিয়মিত খেলা দেখে তারা ঠিকই দেখেছে যে শেষ কয়েক মিনিটে দুই গোল পিছনে থেকেও খেলা শেষে এক গোলের ব্যবধানে জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে।
অনেকক্ষণ লেকচার দিয়ে ফেলেছি তাই এবার মূল কথায় আসি। মানব দেহ ও তার ভিতরে বসবাসকারী রোগ জীবাণুর কথা একটু চিন্তা করেন। পৃথিবীতে এমন কোন মানুষ পাওয়া যাবে না যার কোন প্রকার রোগ বালাই হয়নি। আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে, অসুস্থ মানুষের সাথে নিয়মিত চলাফেরাতে, নিজের অসাবধানতা বশত সবারই কমবেশি ছোট বড় অসুখ হয়ে থাকে। আবার এর মাঝে এমনও অনেকে আছে যাদেরকে এক মাসের ভিতরেই কোন না কোন অসুস্থতার কারণে ডাক্তারের কাছে যেতেই হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে লক্ষ্য করবেন এমনও কেউ আছে যে চিকিৎসা করছে তারপরেও তার রোগ সহজে নিরাময় হচ্ছে না। এমনটা কেন হয় বলতে পারবেন?
বর্তমান পরিস্থিতির দিকে তাকালে একটা বিষয় বুঝতে পারবেন যে ছোট বড় যেটাই হোক কেন তা নির্মূল এর জন্যে সর্বপ্রথম যেই কথাটি মাথায় আসে সেটা হলো অ্যান্টিবায়োটিক। সেটা খাবার জন্যে আবার ডাক্তারের প্রয়োজন হয় না। ভিডিও টিউটোরিয়াল দেখে পছন্দ মত কিনে ইচ্ছা মত সেবন করে। তারা আসলে এটাও জানে না যে কোন কারণে আর কি রোগে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়। রোগ চিহ্নিত না করে ঔষুধ সেবন করার হিসাব নাহয় বাদই দিলাম। সবজান্তার মত নিজেই নিজের ট্রিটমেন্ট করে প্রথম ভুলের সূচনা নিয়ে যখন সুস্থ হতে পারে না তখন গিয়ে ডাক্তারের শরণাপন্ন হন। ডাক্তার চেকআপ করার পরে অবস্থা বেগতিক দেখে অ্যান্টিবায়োটিক প্রেসক্রিপশন করেন। যখন দুই ডোজ খেয়ে সুস্থতাবোধ করে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া বন্ধ করে দেন তখন দ্বিতীয় ভুলটি করে বসেন। এখন অনেকে বলতে পারে দু এক ডোজ খেয়ে সুস্থ হবার পরে আবার অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হবে কেন?
এই জন্যেই খেতে হবে যে আপনি প্রথমে যে পোজ নিয়েছেন তাতেই জীবাণুর বেশির ভাগ নিষ্ক্রিয় বা বিনষ্ট হয়ে গেছে। কিন্তু কিছু জীবাণু বা ব্যাকটেরিয়া অবশিষ্ট আছে। পরবর্তীতে যদি আর ডোজ না নেন তাহলে তারা বেঁচে থাকবে এবং তারা অ্যান্টিবায়োটিক এর ক্ষমতা সম্পর্কে পূর্ণ ধারনা লাভ করবে এবং তাকে প্রতিরোধ করার জন্যে নিজেকে প্রস্তুত করে নিবে। পুনরায় একই ব্যাকটেরিয়া জনিত কারণে যখন ডোজ নিবেন তখন আর তা কাজ করবে না। কারণ সেটাকে প্রটেকশন করার মত ক্ষমতা বা পদ্ধতি সে শিখে নিয়েছে । ঘটনাটি ঠিক পুরো পরিবারকে ধ্বংস করার লক্ষ্যে কাজ করলেও একজন বেচেঁ যাওয়া আর টপ অর্ডার ও মিডল অর্ডাদের আউট করার পরে শেষ ব্যাটসম্যান টিকে থাকার মতই কাহিনী ঘটবে।
আর একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে ভাইরাসজনিত রোগের জন্যে কখনই অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণযোগ্য না। কারণ ভাইরাস প্রতিরোধে না ব্যাকটেরিয়া জনিত কাজের জন্যেই শুধুমাত্র অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়। আর শুধুমাত্র অ্যান্টিবায়োটিক এর সঠিক প্রয়োগেই সেটাকে নির্মূল করা সম্ভব। আর তা যদি না করা হয় মানে ফুল কোর্স শেষ না করেই বাদ দিয়ে দেওয়া হয় তাহলে অবশিষ্ট জীবাণু কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স এ পরিণত হবে। আর সেটা যদি হয়ে থাকে তাহলে পরবর্তীতে সেই অ্যান্টিবায়োটিক আর কোন ক্ষতি করতে পারবে না। ফুটবলের ওই ম্যাচের মতই প্রথমার্ধে নিজের জয়ের পাল্লা ভারি হলেও দ্বিতীয়ার্ধে সেই রেজিস্ট্যান্স এর তান্ডবে আপনার শরীরকে অসহনীয় পর্যায়ে নিতে যাবে যার পরিনতি ভয়ংকর রুপ ধারণ করবে যা শুধু আপনার জন্যে না, আপনার আশেপাশে থাকা মানুষের জন্যে, আপনার পরবর্তী প্রজন্মের জন্যেও হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।
মানুষ আর পশুর রোগমুক্তিতে অ্যান্টিবায়োটিক এর অবদানের শেষ নেই। কিন্তু খাল কেটে যদি কুমির আনেন তাহলে তো নিজের মরণকে নিজেই ডেকে আনবেন। তাই অ্যান্টিবায়োটিক এর যথেষ্ট প্রয়োগ করে নিজেকে এবং আগামী প্রজন্মকে এর হাত থেকে রক্ষা করি।

"উপমান ও উপমিত" "উপমান ও উপমিত" Reviewed by NINDOOK LIFE on December 21, 2019 Rating: 5

No comments:

Powered by Blogger.