পুষ্প গম্ভীরস্বরে বলল, --"তারমানে আমাকে তোমার ভালো লাগে না?
--"আমি তো একবারও সেটা বলিনি!" ইতস্তত করে নীল উত্তর দিলো।
--"আমি দেখতে শ্যামলা। ধবধবে ফর্সা মেয়ে পছন্দ তোমার?
--"জি না।
--"তাহলে সমস্যা কী? আমার অনেকগুলো ভাইবোন, বিয়ে হলে সম্পত্তির ভাগ কম পাবে সেটা?"
নীল এবার বিরক্তিতে ভ্রু কুঁচকালো। পুষ্প বলল,
--"চুপ করে আছ কেন? কারণ দর্শাও।
নীল বলল,
--"আপনি যে আমার চেয়ে একবছরের সিনিয়র, এই তথ্য কী জানেন?"
পুষ্প নিচের ঠোঁট কামড়ে অন্যদিকে তাকালো। নীল আত্মবিশ্বাসের সাথে আবার বলল,
--"নিশ্চয়ই জানতেন না। কিন্তু এখনতো জানলেন। এবার আপনিই বলুন, এটা কী সম্ভব?"
পুষ্প আর কিছু বলল না। হঠাৎ করেই ওর কথা বলার আগ্রহটা চলে গিয়েছে। ক্যানটিন থেকে বের হয়ে সে ক্লাসের দিকে হাটা ধরলো। মাঝে একবার পেছন ফিরে নীলের দিকে তাকালো। এই ছেলেটার কাছাকাছি থাকবে বলে সে একবছর ড্রপ দিয়ে ওর লেভেলে অর্থাৎ একই ইয়ারে চলে এসেছিল। অথচ ছেলেটা কি সুন্দর সিনিয়র জুনিয়রের বাহানা বানাচ্ছে। আর কোনো কারণ পেল না! একবছর আগে পৃথিবীতে এসে পড়ায় এত বড় অপরাধ হয়ে গেল?
.
বাসায় ঢুকতে গিয়ে দরজার সামনে চারজোড়া জুতো আবিস্কার করলো পুষ্প। তিন জোড়া মেয়েদের, আর একজোড়া ছেলেদের। এই চারজোড়া জুতা ওর মুখস্থ। একদম বাম দিকের জুতোটা ওর ছোটখালার। গতসপ্তাহেই খালাকে সাথে নিয়ে কিনে দিয়েছিল। বাকি তিনজোড়া জুতার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলল পুষ্প। একবছরে শুধু খালার জুতাই পরিবর্তন হয়েছে। বাকিদের আগেরগুলোই চলছে।
ড্রয়িং রুমে উঁকি দিতেই খালার পাশে শাহেদকে দেখতে পেল পুষ্প। শাহেদের পাশে তার ছোটবোন মাসুমা। মাসুমার পাশেই অন্য সোফায় বসে আছেন শাহেদের মা অর্থাৎ খালার বান্ধবী জাহেদা চৌধুরী। প্রতি মাসেই তারা একবার করে পুষ্পদের বাসায় আসেন। চা-নাস্তা খাওয়ার পর খালার বান্ধবী জাহেদা বেগম হাসিমুখে পুষ্পের মাকে বলেন, "পুষ্প যতদিন পর্যন্ত না হ্যাঁ বলছে ততোদিন আমরা অপেক্ষা করবো। কোনো সমস্যা নেই।"
গত একবছর ধরেই এই কাহিনী ঘটছে। পুষ্প ভ্রু কুঁচকে শাহেদের দিকে তাকালো। কিন্তু শাহেদ একদৃষ্টিতে ফ্যানের দিকে তাকিয়ে আছে। শাহেদ খেয়াল না করলেও মাসুমা ঠিকই পুষ্পকে দেখতে পেয়েছে। ভাইয়ের মাথায় ঠোকা মেরে মাসুমা বলল,
--"পুষ্প আপু এসেছে।"
শাহেদ অবাকচোখে পুষ্পের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো। পুষ্পকে দেখলেই সে অবাক হয়। কারণে অকারণে অবাক হয়। আর পুষ্প হয় বিরক্ত। কারণেই বিরক্ত হয়। একটা মানুষ যদি দেখা হওয়ামাত্র তার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকে তাহলে বিরক্ত হওয়াই স্বাভাবিক। পুষ্প সবাইকে সালাম দিয়ে ডাইনীং রুমের সাথে লাগোয়া ব্যালকনিতে এসে দাড়ালো। ওর পেছন পেছন শাহেদও চলে এলো। দুটো কিটক্যাট পুষ্পের দিকে বাড়িয়ে দিলো। চকলেটগুলো হাতে নিতে নিতে পুষ্প বলল,
--"আমাকে আপনার বাচ্চা মনে হয়?
--"হুঁ।
--"কীভাবে?
--"তোমার পছন্দ দেখে।
--"আমার এসব চকলেট মোটেও পছন্দ না।
--"বাচ্চা বাচ্চা ছেলেদের তো পছন্দ।
--"নীলকে আপনি বাচ্চা ছেলে বলছেন?
শাহেদ হেসে ফেলল। পুষ্প বলল,
--"আমি ওকেই বিয়ে করবো।
--"আচ্ছা করো।
--"আমি কিন্তু সিরিয়াস
--"আমি জানি তুমি সিরিয়াস।
--"তাহলে শুধু শুধু সময় নষ্ট করছেন কেন?
--"এই নষ্ট সময়গুলোর স্মৃতি নিয়েই তুমিহীন বাকি জীবন বেচে থাকবো তো, তাই।
--"আহা! কাব্য করার চেষ্টা হচ্ছে?
--"সে তোমার যা মনে হয়।
--"আপনি কবিতা লিখতে পারেন?
--"নাহ! তবে তুমি চাইলে লিখা শুরু দেবো।
--"আমার হয়ে নীলের জন্য একটা কবিতা লিখে দিন তো। দেখি পটাতে পারি কিনা।"
শাহেদ কিছু না বলে চোখ বুজে আস্তে আস্তে মুখটা 'হা' করলো। তারপর পুষ্পের মুখের সামনে বিকট শব্দে একটা হাঁচি দিয়ে সেখান থেকে বিদায় নিলো।
.
ভার্সিটির উত্তরদিকে দাঁড়িয়ে থাকা বিশাল আমগাছটার নিচে বসে নীল বলল,
--"কাল লাইব্রেরিতে আপনার সাথে একটা ছেলেকে দেখলাম। ছেলেটা কে জানতে পারি?
পুষ্প হেসে বলল,
--"কেন! হিংসে হচ্ছে নাকি?
--"আস্তাগফিরুল্লাহ! আমার হিংসে হবে কেন! আপনি বলতে না চাইলে বলতে হবে না।
--"উনি আমার খালার বান্ধবীর ছেলে। বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে প্রতি মাসে একবার করে আমাদের বাসায় আসেন।
--"তাই!
--"হ্যাঁ। যতদিন না আমার বিয়ে হচ্ছে ততোদিন এটা চলতে থাকবে।
--"ইন্টারেস্টিং তো!
নীল উঠে দাঁড়াতেই পুষ্প দৌড়ে ওর পাশে এসে দাঁড়ালো।
--"দেখো তো! কেউ বলতে পারবে যে আমি তোমার সিনিয়র?
--"কেউ বলবে কেন? আমি তো জানি।
পুষ্প বিরক্ত হয়ে বলল,
--"আচ্ছা তোমার সমস্যাটা কি?
--"সমস্যা হচ্ছে, আমি কখনোই কোনো সিনিয়র মেয়েকে বিয়ে করবো না। প্রেম করা তো দূরের কথা। আমি যাকে বিয়ে করবো তাকে অবশ্যই জুনিয়র হতে হবে। ব্যাস! আর কিছুনা। "
পুষ্প টলমল চোখে নীলের দিকে তাকালো। ঐ টলমল চোখের দিকে তাকিয়ে নীলের কেমন যেন মায়া মায়া লাগছিল।
.
মন খারাপ হলেই পুষ্প লাইব্রেরিতে যায়। সেদিনের মতো আজও লাইব্রেরিতে শাহেদকে পাওয়া গেল। প্যান্টের ডান পকেট থেকে বাদাম বের করে ছিলে খাচ্ছে। আর বাদামের খোসাগুলো বাম পকেটে ঢুকিয়ে রাখছে। পুষ্পকে দেখতে পেয়ে অবাক চোখে কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে থাকার পর শাহেদ বলল,
--"বাচ্চা ছেলেটা আবার কষ্ট দিয়েছে নাকি?
পুষ্প চুপ করে রইলো। চেয়ার টেনে নিরুর পাশে বসতে বসতে শাহেদ বলল,
--"আচ্ছা এইযে সারাক্ষণ এত নীল নীল করো! ছেলেটার মধ্যে তোমাকে নিয়ে সত্যি কোনো অনুভূতি আছে কি-না সেটা তো আগে জানা উচিত, তাইনা?
--"আমি জানি।
--"কি জানো?
--"সে আমাকে পছন্দ করে।
--"সে তোমাকে বলেছে?
--"না। তবে আমি বুঝতে পারি।
--"তাহলে মেয়েদের মতো এত ন্যাকামি করছে কেন? আমার মনে হয় ওর একটা ধাক্কার প্রয়োজন। "
পুষ্প আবারও চুপ হয়ে গেলো। শাহেদ বলল,
--"আচ্ছা শোনো! তোমাকে একটা কথা বলার ছিল।
--"কী?
শাহেদ ওর কানের কাছে মুখ এনে বলল,
--"কাল সন্ধ্যার পর কাজী ডেকে আমাদের বিয়ে পড়িয়ে দেওয়া হবে। আমাদের কঠিনভাবে নিষেধ দেওয়া হয়েছে যেন কথাটা তোমার কানে না যায়।"
পুষ্প হতভম্ব চোখে শাহেদের দিকে তাকালো। শাহেদ পকেট থেকে বাদাম বের করতে করতে আবার বলল,
--"সিদ্ধান্ত পুরোটাই তোমার বাবার। মা অনেক চেষ্টা করেছিলেন উনাকে বুঝানোর যে, যখন তুমি চাইবে তখনই বিয়ে হবে। কিন্তু আংকেলের মনে হচ্ছে তোমার পাগলামির সাথে তাল মিলিয়ে যথেষ্ট নৃত্য করা হয়েছে। নৃত্য করতে করতে উনি এখন ক্লান্ত। এখন নৃত্য বন্ধ করার সময় এসেছে।"
পুষ্প নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে বলল,
--"এখন আমি কী করব?
শাহেদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
--"কি আর করবে। সন্ধ্যার আগেই নীলের কাছে চলে যাবে। আর আমি বর সেজে তোমাদের বাড়িতে বসে থাকবো। তবে কোনো চিন্তা করোনা। তোমার পালিয়ে যাওয়ার দুঃসংবাদ থেকে শুরু করে যাবতীয় ঝড়সমূহ সব আমি সামাল দেবো।"
এই প্রথম পুষ্প অবাক চোখে শাহেদের দিকে তাকিয়ে থাকলো।
.
বিকেল চারটা। নীলের সাথে সিএনজিতে বসে আছে পুষ্প। সিএনজি কোথায় যাচ্ছে পুষ্প জানেনা। সে এখন মুগ্ধ চোখে নীলের দিকে তাকিয়ে আছে। পুষ্প ভেবেছিল সবকিছু শোনার পর হয়তো নীল অল্প হলেও রেগে উঠবে। কিন্তু সেরকম কিছুই হয়নি। পুষ্পের চোখে চোখ রেখে একবার শুধু বলেছিল,
--"আপনি সত্যি চলে এসেছেন?
পুষ্প নির্দ্বিধায় বলেছিল, "হ্যাঁ।" তারপর আর কোনো কথা বলেনি নীল। পুষ্পের হাত ধরে এলোমেলো ভঙ্গিতে কিছুক্ষণ হাটলো। প্রায় বিশমিনিট হাঁটার পর একটা সিনএনজি ডেকে নিয়ে এলো। পুষ্প জানেনা সে কোথায় যাচ্ছে। সে শুধু জানে তার সাথে নীল আছে। আর কিছু জানার নেই তার।"
.
"এভাবে তাকিয়ে কী দেখছেন?"
নীলের প্রশ্নে ধ্যান ভাঙ্গলো পুষ্পের। বলল,
--"কিছু না। তুমি কিছু বলবে?
--"হ্যাঁ।
--"বলে ফেলো।
গলাটা কেশে নিয়ে নীল বলতে শুরু করলো,
--"সংক্ষেপে আমার জীবনের কিছু কথা বলব। কথাগুলো আপনাকে বলা জরুরি হয়ে পড়েছে। আপনি মনোযোগ দিয়ে শুনবেন। ঠিক আছে?
--"আচ্ছা।
নিজের কপালের চুলগুলোতে হাত বুলিয়ে নীল বলল,
--"আমার বাবার একজন বন্ধু আছেন। নাম শফিক হোসেন। আমার জন্মের দুমাসের মাথায় বাবার একটা একসিডেন্ট হয়। একসিডেন্টে প্রচুর রক্তক্ষরণ হওয়ায় বাবাকে রক্ত দেওয়া জরুরি হয়ে পড়ে। বাবার সাথে শফিক চাচার রক্তের গ্রুপ মিল ছিল এবং স্বাভাবিকভাবে চাচাই বাবাকে রক্ত দেন। কিন্তু বাবার চোখে ব্যাপারটা স্বাভাবিকের চেয়েও অস্বাভাবিকভাবে ধরা পড়লো। তিনি মনে করলেন রক্ত দেওয়ার মতো এমন উদার কাজ পৃথিবীতে আর হতেই পারেনা। যেটা উনার বন্ধু করেছে। বাবা শফিক চাচার প্রতি খুবই দুর্বল হয়ে পড়লেন। তাদের বন্ধুত্ব আরো দৃঢ় হলো। কথায় কথায় রক্তের ঋণের শোধ করতে চান বাবা। চাচা শুধু হাসেন। সেদিনও বাবা কথায় কথায় বললেন,
--"তোর এই রক্তের ঋণ কীভাবে শোধ করি বল তো?" শফিক চাচা তখন সদ্য বিয়ে করেছেন। তো আমাকে কোলে নিয়ে আদর করতে করতে চাচা বললেন,
--" আমার মেয়ে হলে এই ছেলেকে আমার মেয়ের জামাই বানাতে চাই। দিবি তোর ছেলেকে?
বাবার কী হলো জানিনা। হয়তো ঋণ পরিশোধের পথ খুঁজে পেলেন। উত্তেজিত কন্ঠে বললেন,
--"আমার ছেলেই তোর মেয়ের জামাই হবে বন্ধু , কথা দিলাম।"
আসলে এই বিয়ে নিয়ে বাবার আগ্রহ বেশি ছিল।
.
নীল থামলো। পুষ্প হাসতে হাসতে বলল,
--"তারপর?
--"এর কিছুদিনের মাথায় আমার বাবা মারা গেলেন। মায়ের সাথে আমি নানুবাড়িতে চলে গেলাম। শফিকচাচারা ডিভি ভিসা পেয়ে আমেরিকা চলে গেলেন। যোগাযোগটাও বন্ধ হয়ে গেলো। তবে আমার মা কিছুই ভুলেন নি। শফিক চাচার কাছে দেওয়া বাবার প্রতিজ্ঞার কথা তিনি মনে রেখেছেন। বাবার রক্তের ঋণ পরিশোধ করার জন্য এখনও তাদের সন্ধান করেন।"
পুষ্প আফসোস করে বলল,
--"তোমার বাবার রক্তের ঋণ তাহলে আর পরিশোধ করা হবে না!
নীল বলল,
--"কে বলেছে হবেনা!
--"কিভাবে হবে? আমিতো তোমার শফিক চাচার মেয়ে নই। তাইনা!"
নীল কিছু বলার আগেই সিএনজি থেমে গেল। গাড়ি থেকে নামতেই হতভম্ব হয়ে গেল পুষ্প। পুষ্পের নিজের বাড়িতেই তাকে নিয়ে এসেছে নীল। পুষ্প কিছু বলার আগেই নীল বলল,
--"মা বলেছেন, আমার পড়াশোনা শেষ হওয়া অব্দি শফিক চাচাদের সন্ধান চলবে। এরমধ্যে খোঁজ পেয়ে গেলে উনার মেয়ের সাথেই আমার বিয়ে ঠিক হবে। আর আমিও সেটাই করবো।"
পুষ্প হতবাক হয়ে বলল,
--"আর শফিক চাচার যদি কোনো মেয়েই না থাকে তাহলে?
--"না থাকলে তো আর কিছু করার নেই। তবু আমি আপনার মতো কোনো সিনিয়র মেয়েকে বিয়ে করবো না। একদিনের বড় হলেও না।আপনি শাহেদ ভাইকে বিয়ে করে সুখী হোন। উনার সাথে আমার পরিচয় হয়েছে। অসাধারণ মনের একজন মানুষ।"
কথাটা বলে নীল আর একমিনিটও দাঁড়ালো না। হনহন করে সিএনজিতে উঠে চলে গেলো। প্রচন্ড রাগে পুষ্পের শরীর কাঁপতে লাগলো। শাহেদ দূর থেকে এতক্ষন ওদের লক্ষ্য করছিলো। কাছে এসে পুষ্পের ঘাড় স্পর্শ করতেই সে ফুপিয়ে উঠলো। থতমত খেয়ে শাহেদ বলল,
--"বাচ্চা ছেলেটা আবার কষ্ট দিলো তো! অবশ্য ছেলেটারও কোনো দোষ নেই। সে তো আর তোমাকে কোনো প্রতিশ্রুতি দেয়নি। আচ্ছা শফিক চাচার মেয়ের কাহিনীটা কী? দূর থেকে কিছু বুঝতে পারছিলাম না। "
শাহেদের কথার উত্তর না দিয়ে ফুপাতে ফুপাতে পুষ্প বলল,
--"কাজী সাহেব কী এসে পড়েছেন?"
শাহেদ বলল,
--"তোমাকে একটা কথা বলার ছিল!
--"কী?
--"তোমার নিয়ে নীলের ভেতর সত্যি কোনো অনুভূতি আছে কি-না এটা জানার জন্য ছোট্ট একটা প্লান করছিলাম। সবছেড়ে ছুড়ে তুমি নীলের কাছে চলে গেলে সে কী করে সেটাই জানার ইচ্ছে ছিলো। যাইহোক কোনো কাজী টাজী আসেনি। তুমি যতদিন না চাইছো, ততদিন পর্যন্ত এ বিয়ে হবে না। আর আমি....."
কথা বন্ধ করে শাহেদ অবাক হয়ে পুষ্পের দিকে তাকালো। চোখ থেকে টপটপ করে জল পড়ছে মেয়েটির। কাঁদতে কাঁদতে একসময় শাহেদের কাধে নিজের কপাল ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো সে। পুষ্পের পিঠে আলতো করে হাত রেখে শাহেদ বলল,
--"পুষ্প!
শাহেদের শার্টে নাক মুছতে মুছতে পুষ্প বলল,
--"কী?
--"এটা কী কোনো স্বপ্নদৃশ্য?
.
নীলের সাথে পুষ্পের দেখা হলো বছর চারেক পর।
পাশে দাঁড়ানো শাহেদ নামের ছেলেটি তখন তার বর। যাইহোক, কক্সবাজারের সী বিচে খালি পায়ে হাটাহাটি করছিলো নীল। শাহেদই প্রথম দেখলো তাকে। এগিয়ে গিয়ে হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডশেক করল সে।
--"কেমন আছ নীল?
চিনতে পেরে নীলও হাসার চেষ্টা করলো,
--"ভালো। আপনি একা এসেছেন?
--"একা নই। পুষ্পও এসেছে। ঐযে পেছনে।"
হাতের ইশারায় পুষ্পকে ডাকলো শাহেদ। নিতান্তই অনিচ্ছায় পুষ্প এগিয়ে এলো। ও আসতেই শাহেদ আবার বলল,
--"মনে মনে তোমাকে কত খুঁজি আমি। কিন্তু পাইনা।"
নীল হেসে বলল,
--"তাই! কেনো বলুন তো?
--"শেষপর্যন্ত কাকে বিয়ে করলে সেটাই জানবো বলে। পুষ্প সব বলেছে আমাকে। আচ্ছা শফিক চাচার মেয়েকে খুঁজে পেয়েছ? তোমার তো পড়শোনা শেষ। নিয়ম অনুযায়ী শফিক চাচার মেয়ে অথবা কোনো এক জুনিয়র মেয়েকে বিয়ে করার কথা। তা কোনটা করলে?"
শাহেদের একের পর এক প্রশ্ন করে যাচ্ছে। কিন্তু নীল সেগুলোর উত্তর দেওয়ার আগেই ভেজা বালির মধ্যে ধুম করে মাথা ঘুরে পড়ে গেল। পুষ্প আৎকে উঠে শাহেদের দিকে তাকিয়ে বলল,
--"কি হলো ওর?
শাহেদ বিরক্ত হয়ে বলল,
--"আমি কী করে বলব!
পুষ্প কপাল কুচকে বলল,
--"নিশ্চয়ই ওর বড় ধরণের কোনো অসুখ হয়েছে। বেশিদিন বাচবেনা। তাইতো আমাকে সবসময় দূরে দূরে ঠেলে দিয়েছে! এসব শফিক চাচার মেয়ে-টেয়ে আসলে কিছুই না।"
শাহেদ হতাশ দৃষ্টিতে পুষ্পর দিকে তাকিয়ে রইলো।
.
ঘুমের ঔষধ খাইয়ে নীলকে ঘুম পাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা আর দুর্বলতা থেকেই এমনটা হয়েছে। নীলের বন্ধু ইমন, শাহেদের দিকে তাকিয়ে বলল,
--"হাসপাতালে নিয়ে আসার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। কিন্ত নীলকে আপনারা কীভাবে চেনেন?
শাহেদ আগ্রহী কণ্ঠে বলল,
--"সেটা নাহয় পরে বলি। তার আগে বলুন তো ওর কী বিয়ে হয়েছে?
ইমন ভারী নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
--"জি না।
--"কেন? শফিক চাচার মেয়েকে খুঁজে পায়নি? আচ্ছা আদৌ উনার কোনো মেয়ে আছে?"
শাহেদের প্রশ্নে ইমন হেসে ফেলল। পরক্ষনেই আবার হাসি মুছে করুন মুখে বলল,
_"আসলে এমন পরিস্থিতিতে আমার হাসা উচিত নয়। শফিক চাচার সন্ধান তারা পেয়েছে এবং উনার এক মেয়েও আছে। আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে শফিক চাচা নাকি এসব বিয়ের কথাবার্তা একেবারেই ভুলে গিয়েছিলেন। কিন্তু মেয়ের জন্মের পর থেকেই নাকি তিনি তার মৃত বন্ধু অর্থাৎ নীলের বাবাকে দেখতে থাকেন। এবং নীলের বাবা বারবার ঐ বিয়ের কথা স্মরণ করিয়ে দেন। এরপর থেকে শফিক চাচাও নীলদের খুঁজতে থাকেন। অবশেষে খুঁজেও পেলেন। মেয়ের বয়স আঠারো হলেই শফিক চাচা তাকে দেশে নিয়ে আসবেন। মৃত বন্ধুর ইচ্ছা তিনি পূরণ করবেন বলে ঠিক করেছেন। আর নীলের মাও তাই চান।"
শাহেদ বিস্মিত হয়ে বলল,
--"মেয়ের বয়স কত?
--"সমস্যা তো এখানেই। মেয়েটার বয়স মাত্র এগারো। আসলে ব্যাপার হচ্ছে, শফিক চাচার দুটি জময ছেলের জন্মের বেশ কয়েক বছর মেয়েটির জন্ম হয়েছে তো! যাইহোক শাহেদ ভাই, আপনার সাথে কথা বলে আমার ভালো লেগেছে। বিশ্বাস করে ওর সব কথা খুলে বললাম। কিন্তু নীল যেন কখনো এসব জানতে না পারে। আসলে ও চায়না এই ব্যাপারটা কেউ জানুক।"
শাহেদ পুষ্পের দিকে তাকিয়ে ফ্যাকাশে হাসি হাসলো। আর ঘুমন্ত নীলের দিকে করুন চোখে তাকিয়ে রইলো পুষ্প।
.
নীলের ঘুম ভাঙলে খানিকক্ষণ তারা গল্প করলো। তারপর একসময় পুষ্পের হাত ধরে শাহেদ বলল,
--"উঠি তাহলে?
নীল হেসে বলল,
--"জি ভাইয়া।
--"এভাবেই সবসময় হাসিখুশি থাকবে, কেমন?
--"জি ভাইয়া।
--"জীবনে যত চাপই আসুক, মুখে যেন হাসি থাকে।
--"জি ভাইয়া।
--"এখানে কোনো সমস্যায় পড়লে আমার নাম বলবে। আমার পরিচিত এলাকা। অনেকেই চেনে আমাকে।"
--"জি ভাইয়া।
--"আর সাতবছর দেখতে দেখতেই কেটে যাবে। এ নিয়ে এত দুশ্চিন্তা করোনা। মনে রাখবে, আর যাইহোক মেয়েটা কিন্তু তোমার জুনিয়র! ঠিক আছে?"
শাহেদের এই কথাটা বুঝতে নীলের বিশ সেকেন্ড সময় লাগলো। তারপর কঠিন চোখে ইমনের দিকে তাকিয়ে থেকে গম্ভীরস্বরে বলল, জি ভাইয়া...........!
পুষ্প গম্ভীরস্বরে বলল,
Reviewed by NINDOOK LIFE
on
December 21, 2019
Rating:
No comments: