অতঃপর গণিকার সাথে।। পার্ট ঃ ১০ ( অন্তিম পর্ব )



লেখিকা ঃ পেত্নী আমার ফুটফুটে ছোট্ট মেয়েটার নিথর দেহ পড়ে আছে। আমি কাঁদতে পারছিলাম না কেমন যেন পাথর হয়ে চেয়ে রইলাম। এদিকে স্বামী বলতেছে , মাইয়াটারে এখন মাটি দিতে হইব। তুই রেডি হো। খুব সুন্দর কইরা সাজবি যেন সাহেবের তরে দেইখা মন ভরে। শুনছি সাহেবের নাকি মেলা টেকা। আজকে রাইত সাহেবের সাথে তোর থাকতে হইব । ভালা কইরা সাহেবের যতন করিছ। এই কথা গুলো বলেই আমার নিষ্ঠুর পাষাণ স্বামী মরা মাইয়াটা লইয়া চলে গেল । আমি একদৃষ্টিতে শুধু চাইয়া রইলাম । মাইয়াটার মুখ বার বার চোখের সামনে ভাসতে লাগলো। মাইয়াটাকে মাটি দিবার পর স্বামী ঘরে ফিরে আমাকে বলল, আজকের মতো আপদ বিদায় করলাম । যা তুই রেডি হয়ে আয়। এখনই যাইতে হইবো , অনেক দূরের রাস্তা । সময় মতো না পৌঁছলে সাহেব রাগ হইবো। তার কথাগুলো আমার কানে বারবার ঘন্টার আওয়াজের মতো বাজতে লাগলো। লোকটার প্রতি খুব ঘৃণা আর প্রতিশোধের নেশা চেপে বসলো । আমি আর সহ্য করতে পারছিলাম না । ঠিক এই সময় একদল লোক আমাদের ঘরে আসলো । এসেই আমার স্বামীকে মারধর করতে লাগলো আর অশ্রাব্য ভাষায় নোংরা গালাগালি করতে লাগলো। আমি তখনো কিছুই বললাম না, শুধু দেখছিলাম । আমার স্বামী ওদের পায়ে ধরে কান্নাকাটি করতে লাগলো। লোকগুলোর কাছ থেকে নাকি অনেকগুলো টেকা নিছিল আমার স্বামী কিন্তু ওদের টেকা ফেরত দেয় নি বরং টেকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করলো। তাদের একজন একটা লাঠি দিয়ে আমার স্বামীর মাথায় আঘাত করলে স্বামী অজ্ঞান হয়ে যায়। একপর্যায়ে ভয় পেয়ে ওরা পালিয়ে যাই। স্বামীর অজ্ঞান দেহ মাটিতে পরে আছে আর আমার সামনে মৃত সন্তানের মুখ ভসতে থাকে। আমি তখন বারান্দায় রাখা বড় রডটা এনে এই প্রথম তার মাথায় আঘাত করলাম , সে একটু নড়েচড়ে উঠলো। তার রক্ত মাটিতে পরতে লাগলো । তখন আমি দা নিয়ে আসলাম , প্রচন্ড ঘৃণা নিয়ে ওর গলাটা বডি থেকা আলাদা করলাম । রক্তে ঘর ভেসে যাচ্ছিল। আমি তখন একেক করে ওর দেহ থেকে অঙ্গগুলো আলাদা করলাম। কোনো কষ্ট হচ্ছিল না, কোনো মায়া লাগেনি তার প্রতি । একটা বস্তা নিয়ে এসে ওর দেহেরটুকরোগুলো ভরলাম তারপর একটা ময়লার ড্রেনে চুপিচুপি বস্তাটা রেখে আসলাম । বাড়িতে ফিরে সমস্ত ঘর পরিস্কার আর রক্তের দাগ গুলো অনেক সময় নিয়ে ভালো করে মুছে ফেললাম। কিন্তু বস্তা ফেলার সময় কেউ একজন আমায় দেখে ফেলেছিল। পুলিশ এসে ময়লার ড্রেন থেকে ওর মৃতদেহের অংশ গুলো উদ্ধার করে ও আমাকে খুঁজতে বাড়িতে আসে। আমি পুলিশ আসার খবর শুনে ঐ রাতেই পালিয়েছিলাম। অল্প দিন কেইস চলল তারপর কেইসটা চাপা পরল। আমি তখনো পালিয়ে বেড়াচ্ছি, আমার মাঝে কোনো অনুশোচনা ছিল না। তার পাপকর্মের প্রতিফল আমি তাকে ফিরিয়ে দিয়েছি ভেবে মনটা একটু শান্তি লাগলো । আমার জীবন নষ্ট করে যে আমাকে সমাজের চোখে গণিকা ( পতিতা ) বানিয়েছে, আমার বেঁচে থাকার শেষ অবলম্বন আমার ছোট্ট মেয়েটাকে গলা টিপে হত্যা করেছে সেই স্বামী নামের অমানুষটাকে নিজ হাতে হত্যা করেছি। তার পাপের শাস্তি আমি তাকে দিয়েছি। কিছুদিন পালিয়ে থাকার পর আমি পেটের ক্ষুধায় অনেকের কাছে সাহায্য চাইছি কিন্তু কেউ সাহায্য করে নি। সবাই শুধু আমার দেহটার দিকেই নজর দিচ্ছিল। বড়বড় চোখ করে তাকাতো দেহের দিকে মনে হতো যেন চিঁরে খাবে । তাই বাধ্য হয়ে আমি মর্জিনা আফার কাছে গেলাম। মর্জিনা আফায় আমারে কইলো, তুৃৃমি আমার বাসায় থেকে ব্যাবসা করবা । আমি নিজে তোমারে কাস্টমার যোগাড় কইয়া আইনা দিমু। তুমি যা পাবা তার অর্ধেক আমাকে দিতে হবে। ওখানে ছিলাম বছর খানেক। তারপর অল্পকিছু টেকা জমিয়ে উজানপুর বস্তিতে নিজের একখান ঘর তুললাম। এখন আমি ওখানেই থাকি। মাঝে মাঝে কাস্টমার আমার ওখানেই আসে আবার কোনো কোনো সময় আমি নিজে গিয়ে রাইত কাটাই। এই হলো আমার জীবন কাহিনী ভাইজান । এতক্ষন মায়ার কথাগুলো নির্ঝর নিশ্চুপ হয়ে মনোযোগ দিয়ে শুনছিল। মায়ার কথাগুলো শেষ হতেই কি বলবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না। কেমন যেন ভাবনার সাগরে চলে গেলাম, ভাষা হারিয়ে ফেললাম । ট্রেন চলে এসেছে উজানপুর রেলওয়ে স্টেশনে। মায়া ট্রেন থেকে নেমে আমাকেও জোর করে তার বাড়ি দেখাতে নিয়ে গেলো। আমি মায়ার সাথে তার বাড়িতে গিয়ে দেখি ছোট্ট একটা ঘর কিন্তু ঘুছানো ও খুব সুন্দর। উঠানের ধারে একটা ছোট বাগান, সে বাগানে কয়টা লাল গোলাপ ফুটেছিল। লাল গোলাপ দেখে রিতুর কথা মনে পরলো। মেয়েটা লাল গোলাপ খুব পছন্দ করতো। এদিকে মায়া আমার জন্য নিজের হাতে তৈরি করে খাবার নিয়ে আসল। আমি খেতে না চাইলে বলল, ভাইজান পতিতার বাড়িতে খাইতে কি আফনের লজ্জা লাগে? আমি তখন মায়ার মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু না ভেবেই খেতে শুরু করলাম । সত্যি মায়ার হাতের রান্নার মজাই আলাদা। খেতে খেতে চোখে পরলো দেয়ালে ঝুলানো একটা ফুটফুটে ছোট্ট মেয়ের ছবি। মায়া বলল, ভাইজান এটা আমার মাইয়ার ছবি। মায়া গোছল করে চোখে কাজল দিয়ে আমার পাশে এসে বসলো, মায়াকে খুব মায়াবী ও সুন্দর লাগছিল। কেনো জানি মায়াকে একটা কথা বলতে ইচ্ছা হলো। আমি কিছু না বলে ওর হাতটা ধরে বললাম, মায়া তুমাকে একটা সুস্থ সুন্দর জীবন ফিরিয়ে দিতে চায়। আমি তোমাকে বিয়ে করতে চায়, প্লিজ তুমি আর না করো না। মায়া বলল, ভাইজান তা হয় না, আমি একজন পতিতা। আর আপনাকে তো আমি আমার জীবনের সব কিছুই বললাম তারপরও কেন এসব বলছেন? আমি তাকে বুকে টেনে নিয়ে বললাম, চুপ করো তুমি। আমি তোমাকে বিয়ে করবো, আজ থেকে তুমি আর পুরনো কথা মনে করবে না। আমি তোমাকে সারা জীবনের জন্য আমার পাশে চাই । আর সেই দিনই আমি মায়াকে বিয়ে করি। মায়াকে বাসর রাতে বউয়ের সাজে স্বর্গের অপ্সরী লাগছিল । আমি তাকে নিয়ে জোস্নার আলো উপভোগ করলাম দুজনে পাশাপাশি এক সাথে বসে। মায়া আমাকে অনেক ভালোবাসে। আমিও মায়াকে ছাড়া থাকতেই পারি না। বারবার তার চাঁদ মুখটা দেখার জন্য নানান বাহানায় কাজের মাঝেও আমার মিষ্টি বউটাকে দেখতে আসি। বিয়ের একবছরের মাঝে আমাদের একটা ফুটফুটে পুতুল মেয়ে হয়। মায়ার নামের সাথে মিলিয়ে নাম রাখলাম মহুয়া। খুব ভালোই চলছে মায়া মহুয়াকে নিয়ে আমাদের সুখের সংসার। ( সমাপ্ত )
অতঃপর গণিকার সাথে।। পার্ট ঃ ১০ ( অন্তিম পর্ব ) অতঃপর গণিকার সাথে।। পার্ট ঃ ১০ ( অন্তিম পর্ব ) Reviewed by NINDOOK LIFE on July 13, 2019 Rating: 5

No comments:

Powered by Blogger.