লেখিকা ঃ পেত্নী।। স্বামী বাইরে যাবার আগে আমাকে বলে গেল, শুন তোর বাচ্চা নষ্ট করবি। যদি নষ্ট না করিস তাহলে বাচ্চাসহ তোর পেটে লাথি দিয়ে দরকার হলে তোকে খুন করে রাস্তায় ফেলে রেখে আসব। আমার দরকার টাকা আর এ বাচ্চাটা কার তাও তো জানা নাই । জারজ সন্তান রেখে লাভ কি, বলে বাইরে বের হয়ে গেল। আমি একা ঘরে বসে কাঁদতে লাগলাম আর আমার অদৃষ্টকে দোষারোপ করছিলাম । কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম নিজেই জানি না। এদিকে প্রতিনিয়ত অত্যাচারের মাত্রা বাড়তেই থাকে। সন্তান পেটে আসার পরও আমাকে দিয়ে ব্যাবসা করাতো। খুব কষ্ট হচ্ছিল আর মনে মনে ভয় লাগছিল বাচ্চাটা যদি নষ্ট হয়ে যায়। একদিন স্বামী বাসায় ফিরে দেখে আমি শুয়ে আছি। তখন কোনো কথা না বলেই চুলের মুঠি ধরে টেনে হিঁচড়ে মাটিতে আছাড় মারল। নোংরা ভাষায় অকথ্য গালাগালি শুরু করলো। বারান্দায় একটা রড ছিল দৌড়ে তা নিয়ে এসে মারতে লাগল। একটা বারি গিয়ে মাথায় লাগে। সাথে সাথে মাথা ফেটে রক্ত পরতে লাগে। আশেপাশের মানুষ ছুটে এসে কোনোরকমে আমাকে উদ্ধার করে। নিজের জন্য ভয় পাচ্ছিলাম না, ভয় পাচ্ছিলাম পেটের নিষ্পাপ শিশুটার জন্য। যাকে কিনা পৃথিবীর আলো দেখার আগেই নষ্ট করতে বলছে । জন্মের আগেই নিষ্পাপ একটি প্রাণ ঝরে যাবে, মা হিসেবে আমি কিছুতেই তা হতে দিতে পারি না। আমি যখন ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা আমার স্বামী তখন একলোক ধরে নিয়ে আসলো। লোকটি আমার অবস্থা দেখেই ভয় পেয়ে স্বামীকে ডেকে বলে, আপনার স্ত্রীর শরীরের এই অবস্থায় আমি কিছুতেই তার সাথে রাত কাটাতে পারবো না, যদি শেষে মা ও বাচ্চা মারা যায়।লোকটি চলে যাবার পর স্বামি আমাকে অনেক মারে আর বলে, তোকে না বলছিলাম বাচ্চা নষ্ট করতে, তুই করিসনি কেন? টাকা কি তোর মরা বাপ মায় এসে দিয়ে যাবে? সকালে রেডি থাকিস তোকে নিয়ে বাচ্চা নষ্ট করতে হাসপাতালে যাবো। আমার স্বামী ঘুমিয়ে পরলো কিন্তু আমি জেগে জেগে কাঁছিলাম। সকাল হলে জোর করে আমাকে নিয়ে হাসপাতালে গেলো। হাসপাতালের বড় ডাক্তার আফা আমাকে দেখেই বললেন রোগীর অবস্থা খুব খারাপ। এ অবস্থায় কিছুতেই বাচ্চা নষ্ট করতে পারবো না, এতে মার ও মারা যাবার সম্ভাবনা আছে। আপনি আপনার বউকে বাড়ি নিয়ে গিয়ে যত্ন করেন যেন বাচ্চাটা ভালোভাবে পৃথিবীতে আসতে পারে। বাড়িতে এসেও রাগারাগি করলো। তবে এটা ভেবে একটু শান্তি লাগলো বাচ্চাটা নষ্ট করতে পারে নি। আমার সন্তান পৃথিবীতে আসবে। এর মাঝে কেটে গেল ৪ মাস। একদিন সকালবেলা প্রচন্ড ব্যথায় ছটফট করছিলাম। এটা দেখে পাশের বাসার চাচী এক মহিলাকে নিয়ে আসলো । কিছুক্ষণ পর একটা বাচ্চার কান্নার আওয়াজ ভেসে আসলো। চোখ মেলে দেখি খুব সুন্দর ফুটফুটে একটা মেয়ে হয়েছে আমার। মেয়ে হবার পরও একা হাতেই সব কিছু আমাকেই সামলে নিতে হয়েছে। স্বামী আমাকে আর আমার মেয়েকে দেখতে পারতো না। এমনকি বাচ্চা হবার ২ মাসের মাঝেই আবার বাসায় লোক নিয়ে আসতে থাকে। আমি রাজি না হলে আমার বাচ্চাটাকে মেরে ফেলার ভয় দেখাতো। বাচ্চাটাকে ঠিকমতো বুকের দুধও খেতে দিতো না। বয়স যখন ৩ মাস তখন বাচ্চাটা খুব অসুস্থ হয়ে পরে। আমার স্বামী চিকিৎসার কোনো টেকা দিত না বরং বলতো, তোর বাচ্চার কই মাছের জান। ওটা সহজে মরবে না। আমার কাছে অল্প কিছু টেকা জমানো ছিল । ওই টেকা দিয়ে ডাক্তার দেখালাম কিন্ত রোগ সারলো না।পরে আর টেকার অভাবে ডাক্তার দেখাতে পারি নি। আমাকে দিয়ে লোকজনের থেকে যা আসতো সব স্বামী নিয়ে নিতো । বাচ্চাটা খুব অসুস্থ মন সায় দিলো না ওকে অসুস্থ অবস্থায় একা রেখে কাজে যেতে। কেমন জানি মনটা অস্থির লাগছিল কিন্তু স্বামীর জোরাজোরিতে বাধ্য হয়ে কাজে যাই। এসে দেখি আমার বাচ্চাটা চুপ হয়ে বিছানায় পড়ে আছে। দৌড়ে গেলাম ওর কাছে, বিছানায় বাচ্চাটার নিথর দেহ পরে আছে। আমার পৃথিবীটা কয়ের মুহূর্তের জন্য থমকে গেল, পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেল। মৃত বাচ্চাটাকে আঁকড়ে ধরে কাঁদতে লাগলাম। এদিকে স্বামী মদের বোতল হাতে মদ খেতে খেতে ঘরে ডুকে বলল, আজ জন্মের মতো তোর মাইয়াডারে চুপ করাইয়া দিছি। আমি বললাম, কি করেছ তুৃমি আমার মেয়ের? সে মাতাল হইয়া ঢলতে ঢলতে বললো , রোজরোজ তোর পুচকি মাইয়ার চিৎকার ভাল্লাগে না। মাইয়াটা জোরেজোরে কাইনদ্যা আমার ঘুম ভাঙছে। তাই গলা চাইপা ধইরা চুপ করাইয়া দিছি। তুই রেডি হো, আজ একজনে টেকা দিয়ে কইলো, তোকে রাতে পাঠাইয়া দিতে। আমি কোনো কথা বলতে পারছিলাম না, আমার মাথায় এই প্রথম প্রতিশোধের নেশা চেপে বসলো
অতঃপর গণিকার সাথে।। পার্ট -৯।।
Reviewed by NINDOOK LIFE
on
July 13, 2019
Rating:
No comments: