রোমান্টিক গল্প আপনি যদি একটু বাইরে যেতেন তাহলে আমি চেইঞ্জ করতাম।

রোমান্টিক গল্প
.
-- আপনি যদি একটু বাইরে যেতেন তাহলে আমি
চেইঞ্জ করতাম।
-- তুমি চেইঞ্জ করবে এর জন্য আমাকে বাইরে
যাওয়া লাগবে কেনো? একটু পর তো আমার
সামনে এমনিই তোমার জামা কাপড় খোলা লাগবে।
তাহলে এখন আমার সামনে চেইঞ্জ করতে সমস্যা
কোথায়? আমি তো তোমার হাজব্যান্ড,তাইনা?
তীব্রের মুখে এমন কথা শুনে লজ্জায় কুঁকড়ে
গেলো কুয়াশা। আজকে পারিবারিক ভাবে তীব্র আর
কুয়াশার বিয়ে হয়েছে। বিয়ের আগে সেইভাবে
কথাবার্তা বা দেখাসাক্ষাৎ হয়নি দুজনের।
কুয়াশা প্রচণ্ড চঞ্চল আর দুষ্টু একটা মেয়ে।
ফ্রেন্ডদের সাথে সবসময় ইয়ার্কি ফাজলামি করে।
ফ্রেন্ড সার্কেল এ বলতে গেলে ফাজলামির গুরু
সে। কতকিছু ভেবে রেখেছিলো বিয়ের রাতে
বরের সাথে শয়তানি করবে, বোকা বানাবে বরকে।
অথচ বিয়ের পর সব চঞ্চলতা হারিয়ে গেলো নাকি?
তীব্রের একটা কথায় এতো লজ্জা পাচ্ছে
কেনো? লজ্জায় তাকাতে পারছেনা তীব্রের
দিকে।
-- কি হলো চুপ করে আছো যে, এখন কি
চেইঞ্জ করবে? নাকি পরে একেবারে,, (তীব্র)
-- না পরে। (কুয়াশা)
-- শোনো আমার বউ হিসেবে লাজুক মেয়ে
পছন্দ। তোমার লজ্জাটা দেখতে চেয়েছিলাম। তুমি
আজকে টায়ার্ড, তোমার ওপর সারাদিনে অনেক
ধকল গেছে,ফ্যামিলি মেম্বার দের ছেড়ে
এসেছো। আজকে কিছু করবোনা। আমি বাইরে
যাচ্ছি। চেইঞ্জ করে নাও। আজকেই কিন্তু লাস্ট।
কাল থেকে আমাকে বাইরে বের করে দিয়ে
চেইঞ্জ করার সুযোগ পাবেনা আর। একা একা শাড়ি
পড়তে পারবে তো?
-- হ্যা পারবো।
তীব্র বাইরে যাওয়ার পর কুয়াশা দরজা দিতে যাচ্ছিলো
তখন তীব্র দরজা ঠেলে আবার ভেতরে
ঢুকলো। তারপর খাটের নিচে উকি দিলো।
তীব্রের কাজিন রিয়াদ আর ছোট ভাই দীপ্র
খাটের নিচে লুকিয়ে ছিলো। তীব্র ওদের কান
ধরে বের করে আনলো।
-- উঁহু ভাইয়া ছাড়ো লাগছে তো। ভাবী ভাইয়াকে
একটু বলো ছেড়ে দিতে। (দীপ্র)
-- ওদের ছেড়ে দেন। (কুয়াশা)
-- পাজি ছেলে। কাল সকালেই বাবার কাছে নালিশ দিচ্ছি
তোদের দুটোর বিরুদ্ধে। আর কুয়াশা তুমি, ওদের
কে ছেড়ে দিতে বলছো কেনো? কিভাবে
বাসররাত করো এটা কি দেবরদের দেখানোর খুব
শখ? ওদের যখন এতো দেখার শখ আর তোমার
দেখানোর, তাহলে ভিডিও করে রাখবোনে।
সবাইকে দেখিও।(তীব্র)
-- ভাইয়া মাফ করে দাও। ভুল হয়ে গেছে আমাদের।
-- বাইরে চল।
তীব্র ওদের বাইরে নিয়ে গেলো। কুয়াশার এখন
আরও বেশী লজ্জা লাগছে। তীব্র ওকে যা
বলেছে সব তো বোধহয় শুনে ফেলেছে
ওরা। ভাগ্যিস ওদের কে দেখেছিলো নাহলে কি
যে হতো!!
.
তীব্র ঘরে এসে কুয়াশার দিকে পেছন ঘুরে
শুয়ে পড়লো। কুয়াশা বসেই আছে। কি করবে
ভাবছে। তীব্র তো কোনো কথা বলছেনা আর।
ও কি রেগে আছে?
-- আপনি কি রেগে আছেন? ওরা ছোট মানুষ ভুল
করে এমন করে ফেলেছে। (কুয়াশা)
তীব্র কুয়াশার দিকে ফিরলো তারপর ওকে শুইয়ে
দিয়ে ওর একদম কাছাকাছি চলে এলো। কুয়াশা ভয়ে
চোখটা বন্ধ করে ফেললো।
--ওদের হয়ে সাফাই গায়তে হবেনা তোমাকে।
আমি কি বাঘ নাকি ভাল্লুক? তোমাকে কি খেয়ে
ফেলবো? ভয় পাচ্ছো কেনো এভাবে? উঠে
বসো।
-- আপনি না ছাড়লে কিভাবে উঠবো?
-- তুমি করে বলো তারপর ছাড়ছি। এভাবে থাকতে
আমার কিন্তু সমস্যা নেই।
-- আচ্ছা বলছি। ছাড়ো, উঠবো আমি।
কুয়াশা উঠে বসলো আর ভাবছে দাড়াও চান্দু কয়দিন
পর তুমি টের পাবে এই কুয়াশা কি জিনিস। আমার এতো
ভয় লাগছে কেনো ওকে? একদম ভেজা বেড়াল
মনে হচ্ছে নিজেকে।
-- নামাজ পড়তে হবে, চলো ওজু করে আসি।
(তীব্র)
তীব্রদের বাসাটা বেশ পুরানো এজন্য ওর ঘরের
সাথে লাগোয়া কোনো বাথরুম নেই। তাই ওজু করার
জন্য বাইরে গেলো ওরা। বাইরে এসে দেখলো
রিয়াদ আর দীপ্র কান ধরে উঠবস করছে। তীব্র
রিয়াদের মাকে বললো,
-- ফুপু এবার ছেড়ে দাও ওদের, লজ্জা থাকলে ওরা
এমন কাজ করবেনা আর।
.
নামাজ পড়া শেষ হয়ে গেলে কুয়াশা তীব্রকে
জিজ্ঞাসা করলো
-- এই সামান্য ব্যাপার নিয়ে ওদের এতোক্ষণ কান
ধরে উঠবস করালো? (কুয়াশা)
-- এটা তোমার কাছে সামান্য ব্যাপার মনে হচ্ছে? ফুপু
কতো রেগে গেছে তুমি কি জানো? আমার বাবা
শুনলে ওদের অনেক পিটুনি দেবে। আমার নিজের
কাছেও এটা প্রচণ্ড রাগ হয়। এটা একটা বাজে অভ্যাস
অন্যের বাসরঘরে আড়ি পাতা।। আমাদের মধ্যে
টুকটাক যেসব কথা হয়েছে ওরা তো শুনে
ফেলেছে। আমি না দেখলে ওরা তো সারারাত
এভাবে লুকিয়ে থাকতো আর আমাদের কথা
শুনতো। তারপর ধরো আজকে আমাদের দুজনের
মধ্যে যদি কিছু একটা হতো। ওরা খাটের নিচে
থেকে দেখতে না পারলেও বুঝতে তো
পারতো। ওদের সামনে লজ্জায় যেতে পারতে
তুমি? নাকি আমি পারতাম?
-- ওরা আমাদের কথা শুনে ফেলেছে এটাতেই
তো আমার অনেক লজ্জা লাগছে।
-- তাহলে তুমি ভাবো, এটা কি সামান্য ব্যাপার? আচ্ছা যাই
হোক ওদের কথা আর না বলি। এখন শুধু তোমার,
আমার আর আমাদের কথা হবে।
-- হুম।
-- আচ্ছা কুয়াশা, তোমাকে তো কাঁদতে দেখলাম না
আজকে। নাকি মেকআপ নষ্ট হওয়ার ভয়ে কাঁদোনি?
-- কই কেঁদেছি তো।
-- বিয়ের কণেরা যেভাবে হাউমাউ করে কাঁদে
সেভাবে তো কাঁদোনি।
-- আমি লোকজনের সামনে জোরেজোরে
কাঁদতে পছন্দ করিনা। আমার কান্নার স্টাইল আলাদা। যখন
খুব বেশী কান্না পায় তখন কাথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে
শুয়ে কাঁদি আর নাহয় বাথরুমের ট্যাপ ছেড়ে দিয়ে
হাটুতে মুখ গুঁজে বসে কাঁদি।
-- বাহ,বেশ ইন্টারেস্টিং তো!! শোনো এখন
থেকে জোরে কান্না পেলে আমাকে জড়িয়ে
ধরে কাঁদবে। দরকার হয় কাঁদতে কাঁদতে শার্ট
ভিজিয়ে ফেলো আমার। তোমার হাসি, কান্না, লজ্জা
সবকিছু দেখার অধিকার তো আমার। তাইনা?
-- হুম।
-- চলো ঘুমিয়ে পড়ি। ভোরবেলা উঠতে হবে
তো।
-- ভোরবেলা কি হবে?
-- আরে পাগলি, নামাজ পড়তে হবেনা?
তীব্র পেছন থেকে কুয়াশাকে জড়িয়ে ধরলো।
কুয়াশার এখন আর তীব্রকে ভয় লাগছেনা, এমনকি
রাগও হচ্ছে, কেমন জানি ভালোলাগা কাজ করছে ওর
প্রতি।
.
ভোরবেলা নামাজ পড়া হয়ে গেলে তীব্র কুয়াশা
কে বললো হাটতে যাবে।
-- আমি গেলে বাসার কেউ কিছু বলবেনা তো?
(কুয়াশা)
-- কি বলবে? চলে আসবো তো তাড়াতাড়ি।
আজকে তোমার সাথে আমার প্রথম সকাল শুরু
হচ্ছে। তোমার সাথে এরপর কখনো হাটতে বের
হলেও আজকের দিনটা কিন্তু আর ফিরে আসবেনা।
চলো তো। (তীব্র)
-- আমার না খালি পায়ে রাস্তায় হাটতে অনেক
ভালোলাগে। কিন্তু,,,
-- কোনো সমস্যা নেই মহারাণী। আজকে খালি
পায়ে হাটবো আমরা। মনে করো আমি হিমু আর তুমি
রূপা।
তীব্রের প্রতি মুগ্ধতা বেড়েই যাচ্ছে কুয়াশার। কাল
প্রথমে কতো রাগ লাগছিলো,ওকে টাইট দিতে
চেয়েছিলো আর এখন আস্তে আস্তে
প্রেমে পড়ে যাচ্ছে ওর।
-- কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো?
ইগনোর দ্যা কালার অফ মাই পাঞ্জাবী। হলুদ
পাঞ্জাবী কিনে ফেলবো একটা। হাতটা ধরো
আমার।
কুয়াশা তীব্রের হাত ধরে হাটছে। ওর মনে হচ্ছে
যদি এ পথের শেষ না হতো!!!
.
বৌভাতের দিন কুয়াশার বাসার সবাই এসেছে তীব্রদের
বাসায়। কুয়াশা আর তীব্রকে নিয়ে যাবে আজ। কুয়াশার
বান্ধবীরা ও এসেছে।
-- কিরে কুয়াশা কেমন টাইট দিলিরে দুলাভাই কে?
বোকা বানিয়েছিস?(কুয়াশার বান্ধবী তানিয়া)
-- বোকা বানায়নি, আমি নিজে বোকা বনে গেছি। ও
অনেক ভালো।(কুয়াশা)
-- বাহ!! আমাদের কুয়াশা তাসনিম, দ্যা গ্রেট ফাজিল আবার
লজ্জা ও পায়?দুইদিনে এতো চেইঞ্জ!!
-- ওর প্রেমে পড়ে গেছিরে।
-- এজন্য বুঝি এতো ও ও করছিস। নাম ধরতেও লজ্জা
পাচ্ছিস।
.
কুয়াশাদের বাসা থেকে আসার পর
-- শোনোনা আমাকে ঢাকাতে ফিরতে হবে। নতুন
চাকরী তো,বেশী ছুটি পায়নি। (তীব্র)
-- তাহলে ব্যাগ গুছিয়ে ফেলি? (কুয়াশা)
-- আমি একা যাবো, তোমাকে পরেরবার এসে
নিয়ে যাবো। প্রমিস। আমি বাসা নিয়েছি তবে ঘরের
জিনিসপত্র সেইভাবে কিনে গোছানো হয়নি।
নাহলে নিয়ে যেতাম তোমাকে।
-- আচ্ছা আমি ব্যাগ গুছিয়ে দিচ্ছি তোমার। কবে
যাবে? (মন খারাপ করেই বললো কুয়াশা)
-- আগামীকাল যাবো।
কুয়াশা আলমারি থেকে কাপড়চোপড় নিয়ে ব্যাগ
গোছাতে গোছাতে একটা ডায়রি পেলো। এটা ও
বিয়ের রাতে তীব্রকে দেবে বলে
কিনেছিলো কিন্তু দেবো দেবো করে আর
দেয়া হয়নি। তীব্র নিজেই এটা নিয়ে লেখা শুরু
করে দিয়েছে। কুয়াশা ডাইরি টা খুলে দেখলো
প্রথমে ওদের বিয়ের তারিখ টা লেখা, এরপর আরও
বেশ কিছু লেখা ও পড়তে গেলো তখন তীব্র
ঘরে ঢুকলো।
-- ডাইরি টা কিনেছিলাম আমার হাজব্যান্ড কে দেবো
বলে আর সে নিজেই নিয়ে লেখা শুরু করে
দিলো!! (কুয়াশা)
-- কেউ যদি কিনে রেখেই দেয় আমাকে না
দিয়ে, তো কি করবো? এটা যেহেতু আমার জন্য
কেনা তাই নিয়ে লেখা শুরু করলাম।
-- পড়বো আমি??
-- হ্যা অবশ্যই। তোমাকে নিয়েই তো লেখা।
আমার কোনোকিছু তোমার অজানা নয়। এই কয়দিনে
যতটা পেরেছি জানিয়েছি। বাকিটা নাহয় ডায়রি থেকেই
জেনে নেবে।
.
দশ/ বারোদিনের মতো হয়ে গেছে তীব্র
ঢাকাতে গেছে। সারাদিন অফিস নিয়ে ব্যস্ত থাকে।
সন্ধ্যার পর থেকে যেটুকু কথা হয় মন ভরেনা
কুয়াশার। এই কয়দিনে আরও বেশী ভালোবেসে
ফেলেছে তীব্র কে আর অনেক মিস করে।
.
সকালে কলিং বেলের শব্দে ঘুম ভাঙলো
তীব্রের। ও উঠে ঘড়িতে টাইম দেখলো।
"এতো সকালে কে এলো, নামাজ পড়ে কেবলই
তো ঘুমালাম। "
তীব্র দরজা খুলেই দেখলো কুয়াশা এসেছে,
সাথে রিয়াদ আর দীপ্র। কুয়াশা কাঁদতে কাঁদতেই
তীব্রকে জড়িয়ে ধরলো।
-- নতুন বউ ফেলে রেখে এতোদিন শহরে
পড়ে আছো, কষ্ট হয়না বুঝি আমার। (কুয়াশা)
-- কাঁদছো কেনো এভাবে? কয়দিন পর তো
নিয়ে আসতাম। (তীব্র)
-- তুমি তো বলেছিলে কাঁদতে কাঁদতে তোমার
শার্ট ভিজিয়ে ফেলতে। আজকে তোমার শার্ট
তো ভেজাবোই। কাঁদতে কাঁদতে বন্যা বাধিয়ে
ফেলবো।
তীব্র হাসতে হাসতেই বললো
-- ওরে বাবা তাই নাকি? ঘর তো তাহলে ভেসে
যাবে আমার। ছোট ভাইরা রয়েছে, ওরা দেখছে
তো। ওদের সামনে এভাবে,,,
-- দেখুক ওরা, তাতে তোমার কি? আজ ওদের
সামনেই কান ধরে উঠবস করাবো তোমার আমি।
.
.....(সমাপ্ত)...
রোমান্টিক গল্প আপনি যদি একটু বাইরে যেতেন তাহলে আমি চেইঞ্জ করতাম। রোমান্টিক গল্প আপনি যদি একটু বাইরে যেতেন তাহলে আমি চেইঞ্জ করতাম। Reviewed by NINDOOK LIFE on January 28, 2020 Rating: 5

No comments:

Powered by Blogger.