সময়টা এখন বিকেল ৫:০০ টা।খোলা আকাশের দিকে

সময়টা এখন বিকেল ৫:০০ টা।খোলা আকাশের দিকে


তাকিয়ে আধমরা ভেসে আসা বাতাস অনুভব
করছি,আর
অপেক্ষা করছি ক্লিওপেট্রা কখন এসে এই মরা
বাতাসের মতো আমাকে ছুঁয়ে যাবে। অবশেষে অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ঘন্টাখানেক
দেরি করে তিনি এসেছেন।
_ কেমন আছো?
_ ভালো নেই।একধম ভালো নেই।
_ কেউই ভালো নেই!তো,কেনো ভালো
নেই সেটা বলে ফেলো। _ উজ্জ্বল চাঁদ দেখার সময় চাঁদের ঠিক
মাঝখানে
যখন আমার জলছাপ দেখতে পাবে,তখন বুঝবে
আমি কেনো ভালো নেই।
"তিহা মুচকি হাসি দিয়ে বললো 'তুমি ঠিক
আগের মতোই রয়ে গেছো'।
আসলেই একধম আগের মতো আছি।বদলাই নি।বড়
কপালওয়ালা মানুষটা।
বড় কপাল আমার অন্য আরেকটা নাম।কারণ সেটা
চার
আঙুল থেকেও একটু বড়।আর প্রায় সময়ই বড় কপাল বলে বলে তিহা খেপাতো আমাকে।আমি
তখন বলতাম 'কপাল যত বড়ই হোক,তুমি ছাড়া
কেউ
ওখানে থাকতে পারবে না।
আমার মনযোগ ফেরাতে মেয়েটা আস্তে করে
জিজ্ঞেস করলো 'তুমি কী কিছু ভাবছো'? আমিও হ্যা সূচক ভঙ্গিতে মাথা নেড়ে বললাম
'ভাবছি'।
_ আসলেই আমি তখন অনেক বোকা ছিলাম,তাই
না?
কত ছোট বয়সেই না একটা মেয়েকে বিয়ের
কথা বলতাম। _ ও আচ্ছা,তাই!তাহলে এখন তুমি অনেক বড় হয়ে
গেছো?
_ বড় হয়েছি ঠিকই, কিন্তু স্মৃতিগুলো এখনো বড়
হয়ে ওঠে নি।
"জানো,শেষবার যখন তুমি চলে যাচ্ছিলে,
প্রথমে অনেক খারাপ লাগছিলো।শত হলেও ঝগড়া করার
জন্য তো তুমিই ছিলে।
তারপর যখন বলেছিলে তোমার মায়ের পাঠানো
চিঠিগুলোর সাথে তুমিও আমার জন্য চিঠি লিখে
পাঠাবে,তখন নিজেকে শান্তনা দিয়েছি।
তোমার মায়ের পাঠানো সবগুলো চিঠি প্রথমে আমিই খুলে পড়েছি,তারপর আম্মুকে পড়তে
দিয়েছি।
_ আচ্ছা!তুমি নাকি আগে আগে চিঠি খুলে পড়ার
জন্য
চড় খেয়েছিলে দুই তিন বার।
কথাটা বলেই তিহা হিহি করে হাসা শুরু করলো।
বেপারটা আমি ঠিক ভাবে নিতে পারলাম না।
এই
রোমান্টিক মুহূর্তে অন্তত চড় থাপ্পড়ের কথা না
আনলেও পারতো।
ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকলাম কিছুক্ষণ তার দিকে।
তিহাও বুঝতে পেরেছে এমন সময় এগুলো বলা
ঠিক হয় নি।গোটা আট বছর পর দেখা,কোথায়
জমানো সব কথা বলবে।সেটা না করে ঝগড়ার
টপিক
উঠিয়ে বসেছে। _ আসলে....
_আসলে শুনো!
তুমি চলে যাবার বেশ কিছুদিন আমি তোমাকে
ভুলেই
ছিলাম।তখনো বুঝতে পারিনি তুমি কে ছিলে।
ভেবেছিলাম সকালে একবার,দুপুরে খাওয়ার পর,রাতে পুরো রাতটায় মাঝে মাঝে তোমাকে
স্বপ্নে দেখবো।কিন্তু সেটাও হয়ে ওঠে নি
একবারও!
_ আমি জানি আট বছরের অনেক অনেক কথা
তোমার মাঝে জমে আছে।কিন্তু...
_ কিন্তু তুমি সেগুলো শুনতে চাচ্ছো না।তাই তো?
হঠাৎই তিহার মুখটা কেমন মলিন হয়ে আসলো।
আমি
একটুও তার মলিন মুখ দেখতে চাচ্ছিলাম না
তখ।তাই
কথার মাঝে তাকে মনযোগী রাখার চেষ্টা করলাম।
_ তুমি তো একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলার জন্য
এখানে
এসেছ!বল না কী কথা..
_ কেনো তুমি জানো না?
_ কী জানবো! _ আন্টি তোমাকে কিচ্ছু বলে নি?
_ না তো।কিছুই না...
_ ওওও।আসলে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে।
_ ও এই কথা!
কথাটা আমি বেশ হাসিখুশি ভাবেই নিলাম।
যদিও ততক্ষণে আমার ভেতরে না পাওয়ার ঝড় শুরু হয়ে গেছে।
_ তুমি খুশি হও নি আমার বিয়ের কথা শুনে?
_ হ্যা হয়েছি তো।
_ ভালো।
_ তো!বিয়ে হলে এখানে এসেছো কেনো?
_ আম্মু বলছিলো এখানে তো ছোট থেকেই ছিলাম।বিয়েটাও এখানে হয়ে যাক।
_ শুধু বিয়েটাই।এখানের কোনো ছেলে
খুজলেও তো পারতে।
_ হ্যা খুজেছি তো।ছেলেটাও তো এখানকার।
তোমার মতো দেখতে...
আর কথা বাড়ালাম না।খোলা আকাশের দিকে আবারো মনযোগ দিলাম।একটু পর পর বাতাস এসে
কাঁপিয়ে দিয়ে যাচ্ছে।তাই বেশিক্ষণ আর
থাকা হয় নি
ওখানে।
_____
ইদানিং বাসা এসে মা কে না দেখলে বাসাটা কেমন খালি
খালি মনে হয়।আমি না থাকলে মায়েরও এমন
লাগার
কথা।
নাহ!এবার কিছু একটা ভাবা দরকার।যার জন্য
এতদিন অপেক্ষায় ছিলাম সে তো আর থাকছেই না।আমি

বা তাহলে কোন আশায় বসে থাকবো?আর মা'ও
চাচ্ছে ঘরে নতুন কেউ আসুক।
রাতে খাবার টেবিলে বসে মা'কে জিজ্ঞেস
করলাম.. _মা...
_ কী হইছে?
_ 'তুমি না একটা মেয়ের কথা বলছিলা সেদিন'।
_ আমি বললেও কী আর না বললেও কী!কারো
কী আমার কথা কানে নেওয়ার সময় আছে নাকি?
_ আহ মা!রেগে যাচ্ছো কেনো? _ রাগবো না?রাগবো না আবার!!..
_ আচ্ছা শুনো....
_ কী শুনাবি আর!প্রত্যেকবারই তো ঐ একটা
কথাই
শুনে আসছি। না না না.. এটা ছাড়া কী পারিস?
_ আহ!শুনো না একটু... _ হইছে,আর শুনতে হবে না।মেয়েটা সেই
কতগুলো বছর পর ফিরে এসেছে।গিয়ে একটু
কথা বললেও তো পারিস।
_ কতগুলো বছর পর ফিরে এসেছে মানে?কার
কথা বলছো তুমি?কে ফিরে এসেছে?
_ কার কথা বলবো আর!পাশের ঘরে গিয়ে দেখ... খাওয়া বাদ দিয়েই পাশের ঘরে ছুটে গেলাম।
মনে
মনে যাকে ভাবলাম সে-ই!
কিছুক্ষণের জন্য মনে হলো আমিই হয়তো সব
থেকে ভাগ্যবান একটা মানুষ।
মেয়েটা এখানে।সেই মেয়েটাই এখানে।যে হয়তো পৃথিবীর কোন এক প্রান্তে বসে
এতদিন আমার কথা ভেবেছে,আমার মতো করে।
যেমন করে আমি ওকে ভেবেছি।
_ তুমি!
_ হ্যা আমি..
তুমি নিজের উপর বিশ্বাস হারায় ফেলছো তাহলে?
_ একটুও না।
_ খুব তো বলতে, ওই বড় কপালে আমি ছাড়া আর
কেউ থাকবে না।
_ সত্যিই কাউকে থাকতে দিতে চাই নি।তোমার
বিয়ের কথা শুনে... _ শুনো....আমিও তো স্মৃতিগুলোর ওজন বেড়ে
যাবে ভেবে ফেলে দেইনি।বড় হতে
দেইনি...আমার ফিরে আসা দেখেও বুঝতে পারো
নি?কেনো এসেছি!
_ পেরেছি তো।
_ কচু পেরেছো! _ তুমি তো এখানে বর খুজতে এসেছো।
_ খুজে তো পেয়েই গেছি।
_ তাই? তাহলে বিয়ে করছো ক'বে?
_ বর টা মত দিচ্ছো য'বে!!
হা হা হা।
হুমায়ুন স্যারের একটা কথা ভীষণ মনে পড়ছে।'নি'
বিশেষশ্রেনীর ক্ষমতাধর কিছু মানুষ।প্রত্যেক
বছর প্রকৃতিতে একজন'নি' আসে।
আমার বেলায় সেটাই তুমি।প্রত্যেক বছর না
হোক।
আট বছর পর হলেও 'এসেছো তো'!
সময়টা এখন বিকেল ৫:০০ টা।খোলা আকাশের দিকে সময়টা এখন বিকেল ৫:০০ টা।খোলা আকাশের দিকে Reviewed by NINDOOK LIFE on June 17, 2019 Rating: 5

No comments:

Powered by Blogger.