পুলিশরা বোধহয় মেয়ে আসামীর জন্য কিছুটা সুবিধা দিয়ে থাকে ।

পুলিশরা বোধহয় মেয়ে আসামীর জন্য কিছুটা সুবিধা দিয়ে থাকে ।

পুলিশরা বোধহয় মেয়ে আসামীর জন্য কিছুটা সুবিধা দিয়ে থাকে । ধস্তাধস্তি করে না । জোরপূর্বক বেঁধে নিয়েও যায় না । আবার কড়া আদেশও দেয় না ।
দারোগা আবার বললো
-আপনার একান্ত কাজ থাকলে সেরে আসুন । আপনাকে আমাদের সাথে থানায় যেতে হবে ।
দারোগার কথায় উনি অস্থির হয়ে উঠলেন । একটু আগের পৈশাচিক হাসিটা তার মুখে এখন লেগে নেই । তিনি মুখ ভার করে বললেন
-দারোগা সাহেব , জান্নাতের কোনো দোষ নেই । জান্নাত খুন করেনি । খুন করেছি আমি ।
সবাই অবাক হলো । দারোগা বললো
-কি বলছেন এসব । আপনার হাতের ফিঙ্গার তো পাওয়া যায়নি । আপনি নিশ্চিত আপনার স্ত্রীকে বাঁচাতে চেষ্টা করছেন নয়তো আইনকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন ।
-না দারোগা সাহেব আমি সত্যি বলছি ।
-দেখুন মিঃ , আইন প্রমাণের বাইরে কিছুই করে না । আর এখন আমরা সত‍্যটা জানার কাছাকাছি । আমাদেরকে বিভ্রান্ত করার শাস্তিও কিন্তু ভয়ংকর । জানেন তো ?
-হ‍্যাঁ জানি । কিন্তু আপনি যদি এখন আমার কথা না শোনেন তাহলে হয়তো মস্ত বড় ভুল হয়ে যাবে । এতে কারো স্বপ্ন , কারো বেঁচে থাকার ইচ্ছা মরে যাবে । 
দারোগা সাহেব বিভ্রান্তিতে পড়লেন । উনার কপালের মাঝখানে চিনচিনে ব‍্যথা হতে লাগলো । বেশ কিছুদিন কপালের অসহ্য ব‍্যথাটা ছিলনা । হঠাৎ আবার ফিরে এলো বুঝি । তিনি অসহ্য যন্ত্রণা চেপে বললেন
-আপনার কি কথা শুনি ।
-খুনটা আমি করেছি দারোগা সাহেব । আমি খুনি ।
-এটাতো নতুন কথা না ‌। কয়েকবার শুনলাম । নতুন কিছু বলবেন কি ?
-আমি খুনি এই কথা একশোবার বললেও পুরোনো হবে না ।
দারোগা বিরক্ত  হলো ।
-মশাই , ছুরিতে আপনার হাতের ফিঙ্গার পাওয়া যায়নি । তাহলে আপনাকে খুনি হিসেবে গণ্য করবো কিভাবে ? 
-আমার কথা বিশ্বাস করছেন না ?
দারোগা মুখ চেপে বললো
- আপনার কথা বিশ্বাস করছি না ।
-নিতুর সাথে আমার অন্তরঙ্গতা ছিলো । বহু আগে থেকেই ।   আমি জানতাম আমার কোনো বাচ্চা-কাচ্চা হবে না । তাই  !!
এরপর একদিন জানতে পারলাম নিতু গর্ভবতী । আমি নিতুকে বাচ্চা নষ্ট করে দিতে বললাম । নিতু রাজি হলো না । তুহিনের সাথে যুক্তি করে আমার কাছে অনেক টাকা দাবি করে । টাকা না দিলে পুলিশের কাছে যাবে । ওরা কোথা থেকে যেন শুনেছে ডিএনএ টেষ্ট করলে বাচ্চার বাবার পরিচয় পাওয়া সম্ভব । তাই জোর গলায় আমাকে রিতিমত ভয় দেখাচ্ছিল । অনেক টাকা চাচ্ছিলো । আমি এক ঢিলে দুই পাখি মারার চেষ্টা করলাম । প্ল্যান করলাম বাড়ি থেকে বের হবো  কয়েকদিনের উদ্দেশ্যে । বাড়ির চাবি যেহেতু আমার কাছে আছে , তাই বাড়িতে ঢুকতে কোনো সমস্যা হবে না । ঠিক প্ল্যান মতো বাড়ি থেকে বের হলাম চট্টগ্রামে যাওয়ার জন্য এবং সেদিনই  মধ্য রাতে বাসায় ঢুকলাম চট্টগ্রামে না যেয়ে  ।উদ্দেশ্য তুহিন আর নিতুকে খুন করা । টাকাও বাঁচবে সব কিছু গোপনও থেকে যাবে । আমি সুযোগটা হাত ছাড়া করতে চাইলাম না ।
নিতু রান্নাঘরে থাকে ।  তুহিন পাশের রুমে থাকে ।রান্নাঘর অন্ধকার  কিন্তু সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছে ।  দরজা ভেড়ানো সিটকানি লাগানো নেই । আমি রান্নাঘরে ঢুকে দেখি তুহিন আর নিতু অন্তরঙ্গে ব‍্যস্ত । আমি জানি মানুষ এই অবস্থায় খুবই আবেগী ও দূর্বল থাকে । মাথার নিউরণ কম কাজ করে । তাই এটা আমার জন্য উত্তম সময় ।  সুযোগ বুঝে টর্চ জ্বালালাম ।  ওরা দুজন কিছু বুঝে উঠার আগেই ওদের পেটের মধ্যে ছুরি ঢুকিয়ে দিলাম । ব‍্যস ! আমার কাজ শেষ । কিন্তু না ! জান্নাত এই মূহুর্তে রান্নাঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে আছে । জান্নাত কিছু না বলে স্বাভাবিক ভাবে রুমে চলে গেল । আমি জানি জান্নাতের মানসিক সমস্যা আছে । ক্ষণিকের কথাও মনে রাখতে পারে না । সহজেই সব ভুলে যায় । আবার চোখের সামনে গুরুতর কিছু দেখলেও কেয়ার করে না । আমি চাইলাম পুরো ঘটনার দোষ জান্নাতের উপর চাপিয়ে দিতে।
জান্নাত ঘুমিয়ে পরেছে । দরজা লাগাইনি । রুমে ঢুকতে আমার সহজ হলো । নিতু আর তুহিনকে যে ছুরি দিয়ে আঘাত করেছি , সেটা বরাবরই আমি রুমাল দিয়ে ধরে ছিলাম । কাজেই ছু্রিতে আমার হাতের ফিঙ্গার উঠবে না । এটা ভাবাও বোকামি ।
জান্নাত ঘুমিয়ে আছে , নার্ভ গুলোও হয়তো ঘুমিয়ে আছে । তাই জান্নাতকে জাগিয়ে তুলে হাতের ফিঙ্গার নিতে হবে । জান্নাতকে জাগিয়ে তুলে হাতে ছুরি ধরিয়ে দিলাম ।  কাজ শেষ হয়ে গেল । অবশ্য এতটুকু করতে অনেক কষ্ট হয়েছে । জান্নাতের সাথে অনেক ধস্তাধস্তি করতে হয়েছে । তারপর আলমারিতে ছুরিটা রাখি । ফিরে আসতে চাইলাম কিন্তু পারলাম না । জান্নাতের উপর দূর্বল হয়ে পড়লাম । নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিনি ।
সবশেষে আমি যখন বাসা থেকে বের হই তখন প্রায় দেড়টা বাজে ।  আমাকে চট্টগ্রামে যেতে হবে । কিন্তু অর্ধেক রাতের মধ্যে চট্টগ্রামে যাওয়া সম্ভব না । রাজশাহী এয়ারপোর্টে আমার এক বন্ধু থাকে । ওকে কল দিলাম । ভাগ্য ভালো ওর নাইট ডিউটি ছিল । ও জানালো , সকাল ৬:৪৫ মিনিটে চট্টগ্রামে একটা ফ্লাইট আছে । সিটও আছে । আমি টিকিট কনফার্ম করতে বললাম ।  দেশের মধ্যকার এমনকি বাইরে যাওয়ার ভিসাও আমার ছিল ।তাই কোনো প্রকার ঝামেলা হয়নি । আর যা কাগজপাতি দেওয়ার তা মেইল করে দিলাম ।  আমি একটা প্রাইভেট নিয়ে ছয়টার মধ্যে রাজশাহী পৌঁছে গেলাম । এরপর কয়েক মিনিটের ব‍্যবধানে চলে গেলাম চট্টগ্রাম । চট্টগ্রামে যে জান্নাতের সাথে ভিডিও কলে কথা বললাম । জান্নাত আমাকে যে সন্দেহ করেছিল তা নিজের কাছেই ভুল প্রমাণিত করলো ।
দারোগা সাহেব বিস্ময়কর ভঙ্গিতে বললেন
-জান্নাত তো আপনাকে ওইদিন রাতে দেখেছিলেন তাই না ?
-হ‍্যাঁ ! ওর মানসিক সমস্যা আছে । বললাম যে , সঠিক ভাবে কিছুই মনে রাখতে  পারে না । এই জন্য আমি নিশ্চিন্ত ছিলাম । কারণ ও আমার ব‍্যপারটা গুলিয়ে ফেলবেই ।
-আপনি যে আইনকে বিভ্রান্ত করছেন না এটার প্রমাণ কি ?
-প্রমাণ হচ্ছে এটাই যে , আমি খুনি । দুজন মানুষকে আমি খুন করেছি ।
-আপনি মিথ্যা বলছেন । আপনি খুনি নন । আপনি কিছু লুকাতে চেষ্টা করছেন এবং আপনার স্ত্রীকে বাঁচাতে চেষ্টা করছেন ।
-আমি সত্য বলছি এবং কাউকে বাঁচাতে চেষ্টা করছি না ।
-দুটো খুনের জন্য আপনার ফাঁসি হতে পারে । জানেন ?
-হ‍্যাঁ জানি ।
পুলিশ উনাকে (মিনহাজ) থানায় নিয়ে গেল । আমি সত্যিই বুঝতে পারছি না আমার সাথে কি হচ্ছে । উনি এগুলো কি বলে গেলেন ? আজব তো !! আমি সত্যিই অসুস্থ ?

আমার পেট দিন দিন বড় হচ্ছে । পুলিশ উনাকে থানায় নিয়ে যাওয়ার পর প্রায়ই এক সপ্তাহ হতে চললো । উনার সাথে আর যোগাযোগ নেই । আমি যোগাযোগ করার চেষ্টা করিনি । বাবা মাকেও বলিনি । কেন বলিনি জানিনা । আমার এইসব অদ্ভুত কর্মসূচি দেখে যে কেউ বলবে আমি অসুস্থ । আমার নিজেরও মনে হচ্ছে আমি অসুস্থ ।

এর কয়েকদিন পরে থানা থেকে একটা চিঠি এলো । চিঠিটা উনি পাঠিয়েছেন । উনার হাতের লেখা আমার বুঝতে সময় লাগলো না ।

কেমন আছো জান্নাত ? নিশ্চয় ভালো । হ‍্যাঁ ভালো থাকা মানুষের অদম্য প্রচেষ্টা মাত্র । যাইহোক , এতোদিনে খুব করে চেয়েছিলাম তুমি একবার আমাকে দেখতে আসবে । ঘন কুয়াশাচ্ছন ভরে একজন প্রেমিক যেমন তার ভালোবাসার মানুষকে একটি পলক দেখার জন্য রাস্তার পাশে শীতে কাঁপতে কাঁপতে জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে , ঠিক তেমনই আমিও  লোহাদণ্ডের একটু সামান্য  জায়গা ভেদ করে তাকিয়ে ছিলাম । কিন্তু তুমি এলে না । তোমাকে দেখার বাসনা আমার পূর্ণ হলো না । আর হবে কি না কে জানে ।  চিঠিটা লিখলাম খুব কাঠখড় পুড়িয়ে । তুমি তো আবার কাব্য কবিতা , উপমা পছন্দ করো না । এগুলো বলে তোমাকে বিরক্তও করতে চাই না । 
তোমাকে একটা মিথ্যা কথা বলেছি । তুমি ঠিক ধরতে পেরেছো কি না কে জানে । আমার সেই কথাটা খুব লিখতে ইচ্ছা হচ্ছে । তোমার অনুমতি ছাড়াই লিখলাম । বিরক্ত হলে আর পড়ো না ।
আমি সেদিন রাতে বাসায় গিয়েছিলাম ঠিকই কিন্তু নিতু আর তুহিনকে খুন করার জন্য না । আমি খুনি না জান্নাত । আমার চট্টগ্রামে যাওয়া পিছিয়ে গিয়েছিল তাই বাসায় ফিরেছিলাম । বাসায় ফিরে দেখি তুমি রক্ত মাখা একটা ছুরি হাতে দাঁড়িয়ে আছো । আমাকে দেখে আমার দিকেও আঘাত হানার ভঙ্গিতে তেড়ে আসতে চাইলে । আমি তোমাকে ধস্তাধস্তি করে ছুরিটা ফেলে দিলাম । তুমি খুব পাগলামি করছিলে । তোমাকে বিছানায় শুইয়ে হাত পা বেঁধে রেখেছিলাম । তোমার কষ্ট হয়েছে জানি । তবুও তোমার পাগলামীর জন্য এটা করতে আমি বাধ্য ছিলাম।  রান্নাঘরে নিতুর আর তুহিনের লাশ  পড়ে ছিল ।কি করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না । তুমি ঘুমিয়ে পড়লে , ছুরিটা আলমারিতে রেখে তোমার হাতের গিট খুলে দিলাম । ভাবলাম বাসা থেকে চলে যায় ।  তোমার মানসিক অবস্থা যে এত খারাপ তা আমি আগে বুঝতে পারিনি । দুটো মানুষকে খুন করলে কিভাবে বলো তো ?
তোমার অসুস্থ মস্তিষ্ক যে দুটো মানুষকে খুন করতে পারে এটা আমি কখনও ভাবিনি ।
তুমি ওদের কেন খুন করেছো বলোতো ? ওদের সাথে তোমার কোনো শত্রুতা ছিল ? নাকি সবটাই তোমার অসুস্থ মস্তিষ্কের পাগলামি ।
সত্যি সত্যি তুমি অসুস্থ । একজন অসুস্থ মানুষকে অসুস্থ বলতে নেই । আমি তোমাকে বললাম , রাগ করোনি তো ?
তুমি অসুস্থ না হলে তোমার পেটের সন্তানকে বাবাহীন বলতে পারতে ?  তুমি বারবার বলেছো আমাদের মাঝে শারীরিক সম্পর্ক হয়নি । আচ্ছা জান্নাত তোমার কি সত্যিই কিছু মনি নেই ?
আমি বাবা হতে পারবো না এটা ডাক্তার বলেছিলো । কিন্তু তুমি কিভাবে আমাদের সম্পর্ক অস্বীকার করো ।  আমাদের ভালো সময়ের কথাও তুমি ভুলে গেছো নিশ্চয় ।
এখন তুমি বলবে , আমি যদি খুন নাই করি তাহলে খুনের বোঝা মাথায় নিলাম কেন ? শোনো তাহলে ,
বাবা হওয়ার প্রচণ্ড ইচ্ছুক তাড়নায় আমি ভুগছিলাম । অবশেষে তুমি যখন এই সুসংবাদ আমাকে দিলে । তখন পৃথিবীতে আমি একমাত্র সুখী মানুষ আছি বলে মনে হচ্ছিল । আচ্ছা , বাবা হওয়ার আনন্দ কি এমনই ?
এই যে তুমি আমাকে বাবা হওয়ার স্বাদ পূরণ করলে , ধরো এর জন্যই আমি সব দোষ নিজের মাথায় তুলে নিয়েছি  । আমার সন্তান জেলখানায়  মায়ের পেটে কয়েদি বেশে থাকবে এটা আমি কিভাবে মানি বলো ?
আমার হয়তো ফাঁসি হবে । তোমাদের সাথে হয়তো আর দৃশ্যমান হয়ে একসাথে থাকা হবে না । কিন্তু আমি থাকবো তোমাদের পাশে সবসময় ।

চিঠিটা পড়ে আমার কোনো ভ্রুক্ষেপ হলো না । আমি নিজেও জানিনা আমার কি করা উচিৎ ।

জেলাখানার বাইরে কাঠের বেঞ্চে আমি মা বাবা বসে আছি । কেউ কোনো কথা বলছি না । তিনজনেই যেন বোবা মানুষ ।
এতোদিনে আমার পেটটা বেশ উচু হয়ে উঠেছে । হাঁটতে কষ্ট হয় ।  আগের মতো জোরে হাঁটতে পারি না । খুড়িয়ে হাঁটতে হয় ।
আমার বাম হাতটা পেটের উপর রাখা । ডান হাতে একটা খাম । খামের মধ্যে একটা চিঠি । পুলিশ কর্পোরেশন থেকে প্রেরিত । উনার লাশ নেওয়ার জন্য ভোর সাড়ে পাঁচটার মধ্যে জেলাখানার গেটে থাকার কথা । আমাকে বাবা আসতে দিতে চাইনি । আমি জোর করে এসেছি । এখনও জোসনা ভেসে বেড়াচ্ছে খোলা মাঠে ।   তারা জ্বলছে , চারিদিকে শুনশান নিরবতা । আমি ঘড়িতে তাকিয়ে দেখলাম ,ভোর হতে আরও দুই প্রহর বাকি ।।
(সমাপ্ত)
গল্পটা নিতান্তই আমার মস্তিষ্কের ভাবনা মাত্র । সত্য বা কারো সাথে মিলে গেলে লেখক দায়ী নয় । ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন ।


লিখা---মিনহাজ মাহমুদ
পুলিশরা বোধহয় মেয়ে আসামীর জন্য কিছুটা সুবিধা দিয়ে থাকে । পুলিশরা বোধহয় মেয়ে আসামীর জন্য কিছুটা সুবিধা দিয়ে থাকে । Reviewed by NINDOOK LIFE on March 16, 2020 Rating: 5

No comments:

Powered by Blogger.